মাদক মামলায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য নার্কোটিকস কন্ট্রোল ব্যুরো (এনসিবি) তাঁকে ডেকে পাঠিয়েছিল। সেই ডাকে সাড়া দিয়ে শনিবার সকালে মুম্বইয়ের এনসিবি দফতরে পৌঁছলেন অভিনেত্রী দীপিকা পাড়ুকোন। সুশান্ত সিংহ রাজপুতের অস্বাভাবিক মৃত্যু মামলায় মাদক-যোগ প্রকাশ্যে আসে। তাতে দীপিকার নামও জড়িয়ে পড়ে। এর পরেই জিজ্ঞাসাবাদের জন্য অভিনেত্রীকে সমন পাঠায় এনসিবি। দীপিকার ম্যানেজার করিশ্মা প্রকাশও এ দিন ফের এনসিবির দফতরে এসেছেন। দু’জনকে মুখোমুখি বসিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে বলে সূত্রের খবর।
মুম্বইয়ের কোলাবা অ্যাপালো বন্দরের এভলিন গেস্ট হাউসে এনসিবি-র বিশেষ তদন্তকারী দলের (এসআইটি) দফতর রয়েছে। এ দিন সকাল পৌনে ১০টা নাগাদ সেখানে পৌঁছন দীপিকা। তিনি উৎকণ্ঠায় ভোগেন বলে জিজ্ঞাসাবাদের সময় তাঁর স্বামী রণবীর সিংহ সঙ্গে থাকতে চেয়েছেন বলে শুক্রবার শোনা গিয়েছিল। তবে এমন কোনও ‘অনুরোধ’ তাঁদের কাছে এসে পৌঁছয়নি বলে জানিয়ে দেন তদন্তকারীরা। এ দিন একাই এনসিবি দফতরে পৌঁছন দীপিকা। তাঁর সঙ্গে দেখা যায়নি রণবীরকে।
সুশান্ত সিংহ রাজপুতের অস্বাভাবিক মৃত্যুর তদন্তে মাদক-যোগ সামনে আসার পর থেকেই তুমুল শোরগোল পড়ে যায় গোটা দেশে। দীপিকার মতো হেভিওয়েট নায়িকা তথা ‘এ লিস্টার’-এর নাম সেই মামলায় উঠে আসার পর থেকে তা অন্য মাত্রায় পৌঁছেছে। চর্চা শুরু হয়েছে তাঁর জীবনযাত্রা নিয়ে। এমন অবস্থায় তাঁর প্রতিটি পদক্ষেপের দিকে যে সকলের নজর রয়েছে, তা জানেন দীপিকা। তাই এ দিন একেবারে সাদামাটা পোশাকেই তিনি এনসিবি-র দফতরে পৌঁছন। তারকা সুলভ কোনও কিছুই দেখা যায়নি তাঁর অভিব্যক্তিতে। কালো চশমায় চোখও ঢেকে রাখেননি। বরং করোনা কালে সতর্কবিধি মেনে মুখ ঢাকা ছিল মাস্কে।
আরও পড়ুন: মাদক সংক্রান্ত হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপের অ্যাডমিন ছিলেন দীপিকাই!
এমনকি এ দিন যে গাড়িতে চেপে তিনি এনসিবি-র দফতরে পৌঁছন, তা-ও ছিল যথেষ্ট সাদামাটা। কোটি কোটি টাকার একাধিক বিলাসবহুল গাড়ির মালিক হলেও, এ দিন ‘হুন্ডাই’-এর একটি সাধারণ মডেলকেই বেছে নেন দীপিকা। সুশান্তের বান্ধবী রিয়া চক্রবর্তীর মতো তথাকথিত ‘ফ্লপ’ নায়িকার দামি ও বিলাসবহুল গাড়ি ব্যবহার নিয়ে এর আগে নানা প্রশ্ন উঠেছিল। গাড়ির ব্যবহারে মানুষের ব্যক্তিত্ব ফুটে ওঠে, তা বিলক্ষণ জানতেন দীপিকা। তাই যে গাড়িতে চেপে এনসিবির দফতরে যাবেন, তা নিয়ে বাড়তি আলোচনা চাননি বলেই তিনি সাধারণ গাড়ি বেছে নেন বলে মনে করা হচ্ছে।
এই একই মামলায় এ দিন এনসিবির দফতরে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য পৌঁছন অন্য দুই অভিনেত্রী সারা আলি খান এবং শ্রদ্ধা কপূরও। তাঁদের বাল্যার্ড এস্টেটে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। বেলা পৌনে ১১টা নাগাদ সেখানে পৌঁছে যান শ্রদ্ধা। সারা সেখানে এসে পৌঁছন সাড়ে ১২টা নাগাদ। এনসিবি সূত্রে খবর, সারাকে সাড়ে ১০টা সময় ডেকে পাঠানো হয়েছিল। কিন্তু তদন্তকারীদের কাছে আরও কিছুটা সময় চেয়েছিলেন তিনি। আইনজীবীর সঙ্গে কথা বলে তবেই তিনি এনসিবি-র দফতরে পৌঁছন বলে খবর।
দীপিকার ম্যানেজার করিশ্মা প্রকাশকেও এ দিন ফের জেরার জন্য ডেকে পাঠানো হয়। এর আগে, শুক্রবার টানা চার ঘণ্টা তাঁকে জেরা করেন তদন্তকারীরা। মাদক-মামলায় নাম উঠে এসেছে আর এক অভিনেত্রী রাকুল প্রীত সিংহেরও। গাঁজা কেনা এবং তা খাওয়া নিয়ে হোয়াটঅ্যাপে তাঁর কথোপকথন তদন্তকারীদের হাতে এসেছে বলে জানা গিয়েছে। সেই নিয়ে গতকাল জিজ্ঞাসাবাদ করা হয় তাঁকেও।
আরও পড়ুন: বিরাট-ব্যর্থতায় অনুষ্কাকে দায়ী করেননি, সাফাই গাওস্করের
গত ১৪ জুন বান্দ্রার বাড়ি থেকে সুশান্ত সিংহ রাজপুতের ঝুলন্ত দেহ উদ্ধার হয়। সেই তদন্ত চলাকালীন সুশান্তের বান্ধবী রিয়া চক্রবর্তীর হোয়াটসঅ্যাপ চ্যাট থেকে অভিনেতার মৃত্যুতে মাদক-যোগ সামনে আসে। জিজ্ঞাসাবাদের সময় রিয়াই সারা এবং শ্রদ্ধার নাম ‘ফাঁস’ করে দেন বলে খবর। যদিও রিয়ার আইনজীবী এই দাবি অস্বীকার করেছেন।
এই মামলায় সুশান্তের প্রাক্তন ‘ট্যালেন্ট ম্যানেজার’ জয়া সাহাকেও জিজ্ঞাসাবাদ করেন তদন্তকারীরা। এনসিবি সূত্রে খবর, সেই সময় জয়া নাকি জানান, মাদক সংক্রান্ত আলোচনার জন্য তিনি একটি হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ তৈরি করেছিলেন। তার সদস্য ছিলেন দীপিকার ম্যানেজার করিশ্মা। গ্রুপের অ্যাডমিন ছিলেন দীপিকাও। সেখানে নিয়মিত মাদক সংক্রান্ত আলোচনা করতেন তাঁরা।
তবে দীপিকা, সারা, শ্রদ্ধা অথবা রাকুল, কারও বিরুদ্ধেই এখনও পর্যন্ত কোনও মামলা দায়ের হয়নি। তদন্তের প্রয়োজনে তাঁদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে বলে জানা গিয়েছে।