উত্তর কলকাতার মেয়ে অভিনেত্রী শ্রীময়ী চট্টরাজ। বড় হয়েছেন পুজোপাঠ, বাঙালি সংস্কৃতির মধ্যে। অক্ষয়তৃতীয়া উপলক্ষে তাই বাড়ির পাঁচ জন বিবাহিতা মহিলাকে সিঁদুর পরান নিয়ম মেনে। স্বামীর দীর্ঘায়ু কামনা করে সারা বছর সিঁদুর পরায়ও বিশ্বাস করেন। এই দিনটা কী ভাবে কাটাবেন সেই গল্পই শোনালেন আনন্দবাজার ডট কমকে।
আরও পড়ুন:
বছরখানেক হয়েছে তিনি বিয়ে করেছেন। এক সন্তানের মা। তাই অক্ষয়তৃতীয়ার মাহাত্ম্য রয়েছে তাঁর কাছে। স্বামীর দীর্ঘায়ু কামনা করেই সারা বছর সিঁদুর, শাঁখা-পলা পরায় বিশ্বাস রাখেন অভিনেত্রী। যদিও শাঁখা-পলা সর্ব ক্ষণ যে পরে উঠতে পারেন, তেমনটা নয়। অভিনয়ের প্রয়োজনেই কখনও কখনও খুলে রাখতে হয় সে সব। কিন্তু তার বাইরে আপ্রাণ চেষ্টা করেন শাখা-সিঁদুর পরে থাকতে।
শ্রীময়ীর কথায়, ‘‘অক্ষয়তৃতীয়ার সকালে উঠে আগে পুজো করতে হয়। আমার মা, দিদি, খুড়তুতো বোন, রান্নার দিদি সকলের কপালে সিঁদুর ছুঁইয়ে দিই। তবে বাড়িতে তেমন কোনও উদ্যাপন করি না। অক্ষয়তৃতীয়া খুব শুভ দিন, তাই মন্দিরে একটি অক্ষয় প্রদীপ জ্বালাই।” অভিনেত্রী জানিয়েছেন, বিয়ের আগে তিনি মন্দিরে পুজো দিতেন। প্রতি বছরের মতো এ বারও কালীঘাটে পুজো দিতে যাবেন।
অক্ষয় শব্দের অর্থ হল অটুট বা অক্ষত, অর্থাৎ যার কোনও ক্ষয় হয় না। তাই মনে করা হয়, এই দিন কোনও কাজ শুরু করলে সেই কাজটির কোনও ক্ষয় হবে না। এই দিন বিবাহিত নারীরা সোনা, রূপার মতো ধাতু কেনেন। আবার সিঁথির সিঁদুর অক্ষয় রাখতে বিবাহিত মহিলাদের অনেকেই পাঁচ জন বিবাহিত মহিলাকে আলতা এবং সিঁদুর দান করেন। শ্রীময়ী আধুনিক এক নারী। তবু শাঁখা-সিঁদুর পরায় স্বচ্ছন্দ বোধ করেন। শ্রীময়ী জানান, তিনি সিঁদুর পরতে ভালবাসেন। তাঁর কথায়, ‘‘আমি বাঙালি মতে সাত পাক ঘুরে যখন বিয়ে করেছি, তখন সিঁদুর পরার প্রয়োজনীয়তা আছে। আগে তো এত আইনি বিয়ের প্রচলন ছিল না। শাঁখা-সিঁদুর দিয়েই বিয়ে হত। সেই সময় কিন্তু মানুষের সম্পর্ক মজবুত ছিল অনেক বেশি।”
শ্রীময়ী জানেন, বর্তমান সমাজে এ ধরনের মন্তব্যকে ‘কুসংস্কার’ বলা হতে পারে। কিন্তু, তিনি কুণ্ঠিত নন। অভিনেত্রীর কথায়, “ছোটবেলা থেকে মা-ঠাকুরমাদের কাছে শুনে এসেছি সিঁদুর পরলে স্বামী দীর্ঘায়ু হন, সেই বিশ্বাসটা আমার মধ্যে সঞ্চারিত হয়েছে। আসলে সিঁদুরের একটা আভিজাত্য ও মাহাত্ম্য আছে। সিঁদুর পরাটা আমার কাছে কোনও ফ্যাশন নয়, মন থেকে পরি।’’
পেশাদার অভিনেতা, তাই চরিত্রের প্রয়োজনে সব সময় যে শাঁখা-পলা পরা সম্ভব হয়, তেমনটা নয়। যদিও শ্রীময়ী জানান, তিনি চেষ্টা করেন সেগুলি নিজের কাছে রাখতে। শরীরের যতটা ছুঁয়ে রাখা যায় ততই শান্তি। ঘটনাচক্রে এই মুহূর্তে যে ধারাবাহিকে অভিনয় করছেন শ্রীময়ী সেখানে শাঁখা-সিঁদুরের প্রয়োজন নেই। অগত্যা, সোনায় বাঁধানো শাঁখা-পলা বাড়িতে খুলে রেখেই শুটিংয়ে যান তিনি। শ্রীময়ীর কথায়, ‘‘প্রয়োজনবিশেষে শাঁখা খুলে রাখলেও সিঁদুর আর নোয়া সব সময় আমার সঙ্গে থাকে।’’
- পুরাণ মতে, অক্ষয় তৃতীয়ার দিনেই কৃষ্ণ দ্বৈপায়ন ব্যাস মহাভারতের কাহিনি বর্ণন করতে শুরু করেছিলেন গণেশকে। এ দিন থেকেই শ্রুতিলিখনের কাজ শুরু করেন গণেশ। বৈশাখ মাসের শুক্ল তৃতীয়া তিথিতেই শ্রীক্ষেত্র পুরীতে শুরু হয় জগন্নাথের রথ নির্মাণ।
- বৈশাখ মাসের শুক্ল তৃতীয়া তিথিটিকে অক্ষয় তৃতীয়া হিসাবে বিবেচনা করা হয়। হিন্দুদের পাশাপাশি জৈন ধর্মাবলম্বীরাও এই দিনটিকে পবিত্র মনে করেন। সৌভাগ্য অক্ষয় হয় এই তিথিতে— এমনই বিশ্বাস। বাঙালি ব্যবসায়ীর কাছে পয়লা বৈশাখের পর এই তিথিতেই হয় বিশেষ উদ্যাপন। দোকানে দোকানে পূজিত হন আরাধ্য দেবতা। মনে করা হয়, এই তিথি যে কোনও দেবতার পুজোর জন্যই প্রশস্ত।
-
রণিতা কি লাখ টাকার সোনা কিনে অক্ষয়তৃতীয়া পালন করলেন?
-
‘আমি ঈশ্বরে বিশ্বাসী, তবে আচার মানি না’, অক্ষয়তৃতীয়ায় কি বিশেষ পুজো করেন লোপামুদ্রা?
-
তখন অবাঙালিদের ধনতেরাস আমাদের অক্ষয়তৃতীয়া! সোনা কেনা, ছবি মহরতের দিন: ইন্দ্রাণী দত্ত
-
কৈশোরে সাদা কাগজের গ্লাসে কমলা রসনা, ওই পানীয় ছাড়া অক্ষয়তৃতীয়াই ফিকে: জিৎ গঙ্গোপাধ্যায়
-
‘কালো রঙের গাড়ি জীবনে কিনিনি’, অক্ষয়তৃতীয়ার শুভ-অশুভ নিয়ে কী জানালেন তৃণা সাহা?