প্রতীকী ছবি
অতিমারির ধাক্কায় আরও অনেক কিছুর মতোই এলোমেলো হয়ে গিয়েছেন ওঁরাও। রং-তুলিতে যাঁদের হাতের জাদু রঙিন করে তোলে মানুষের জীবন, তাঁদের অনেকের নিজেদের রোজনামচাই ইদানীং বড্ড বেরঙিন। হাতে কাজ নেই, কেউ নিত্যপ্রয়োজনের রসদটুকু জোগাড় করতেই হিমশিম, কারও আবার নিয়মিত রোজগারের সুযোগ কেড়েছে করোনা-লকডাউন। কলকাতা তথা বাংলার শিল্পীদের অনেকেরই এখন পেট চালানো দায়। সেখানেই খানিকটা আশার আলো দেখাল ছোট পর্দার দুনিয়া। এক নতুন ধারাবাহিকের প্রচারের অঙ্গ হিসেবে একটি গোটা বস্তিকে দেওয়াল-ছবিতে সাজিয়ে তোলার দায়িত্ব পেলেন এ শহরেরই এক দল শিল্পী। তাঁদের নেতৃত্বে কলকাতার খ্যাতনামী শিল্পীদের অন্যতম, সনাতন দিন্দা।
স্টার জলসায় সম্প্রতি শুরু হয়েছে ধারাবাহিক ‘গাঁটছড়া’। শহরের এক নামী পরিবারের ছেলের বিয়ে ঘিরে তার গল্প শুরু। ধারাবাহিকের প্রচারে তাই বিয়ের বিভিন্ন মুহূর্ত, নানা উপচারে বেহালার একটি গোটা বস্তির অলিগলির দেওয়াল সাজিয়ে তোলার পরিকল্পনা করেছিলেন চ্যানেল কর্তৃপক্ষ। তারই ভার দেওয়া হয়েছে সনাতন দিন্দা ও তাঁর শিল্পী দল ‘বেহালা আর্ট ফেস্ট’কে। সনাতন ও তাঁর সঙ্গীরা তাই পৌঁছে গিয়েছিলেন বেহালা বাগানবাড়ির ওই এলাকায়। নোনা ধরা, বিবর্ণ পাঁচিল, সার সার ঘুপচি ঘরের রঙচটা দেওয়ালের দখল চলে গিয়েছিল তাঁদের হাতে। তার পরেই ম্যাজিক! শিল্পীদের সঙ্গেই হাতে হাতে লাগিয়ে গোটা পাড়া মেতেছিল রঙের খেলায়। আর তার ফসল? বিবর্ণ দেওয়ালই ক্যানভাস। নানা রঙে সেজে উঠেছে বস্তির অলিগলি। দেওয়ালে-দেওয়ালে ধরা বিয়ের নানা মুহূর্ত, উৎসবের আমেজ।
উচ্ছ্বসিত শিল্পী সনাতন দিন্দা। আনন্দবাজার অনলাইনকে তিনি বলেন, “চ্যানেলের কাছে এটা ধারাবাহিকের প্রচার। কিন্তু আমি দেখছি, কী ভাবে এই অতিমারিতে বিপর্যস্ত হয়ে পড়া শিল্পীদের জন্য একটা নতুন উপার্জনের পথ খুলে গেল। এমনিতেই শিল্পের জন্য অর্থবরাদ্দ বা চিন্তাভাবনা কম। ঠিকঠাক গ্যালারি নেই, কাজের সুযোগও সীমিত। বড় শিল্পীদের পিছনে তো আরও অনেক শিল্পী আছেন। তাঁদের কাজ কোথায়? আর্ট কলেজ থেকে পাশ করে কেউ সামান্য টিউশন করেন, কেউ বা মাঝেসাঝে কাজ পান। করোনা তা-ও কেড়ে নিয়েছিল। অন্তত চ্যানেলের এই মানবিক উদ্যোগ তাঁদের একটা সুরাহা করে দিল।”
শুধু শিল্পীদের পাশে থাকা নয়, এই উদ্যোগকে শিল্পের পাশে থাকা বলেও অভিহিত করতে চাইছেন সনাতন। তাঁর কথায়, বেহালা বাগানবাড়ি এলাকাকে তাঁরা পুরোপুরি বাংলার নিজস্ব শিল্পরীতি, ঘরানায় সাজিয়ে তুলেছেন। রং আর সামান্য কিছু উপকরণে দেওয়ালে দেওয়ালে এঁকেছেন বাঙালি বিয়ের হরেক মুহূর্ত। সনাতনের কথায়, “বাংলার শিল্পকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া, মানুষের কাছে পৌঁছে দেওয়াটা আমাদের সবারই দায়িত্ব। এমন উদ্যোগে শিল্প যেমন ঘরে ঘরে পৌঁছয়, শিল্পীর সঙ্গেও সাধারণ মানুষের একটা সংযোগ তৈরি হয়। সবাই হাতে হাতে মিলিয়ে কাজ করতে গিয়ে চিনে নেওয়া যায় নতুন প্রতিভা। সেখানেই শিল্পের সার্থকতা। ‘গাঁটছড়া’ ধারাবাহিকের প্রচার তাই আক্ষরিক অর্থে একটা মানববন্ধন হয়ে উঠল। তা ছাড়া, বাঙালি বিয়ে নিয়ে এত বড় মাপের দেওয়াল চিত্র আঁকার কাজও বাংলায় আগে হয়নি বললেই চলে।” আগামীতে এ ভাবেই তাই বিভিন্ন সংস্থাকে শিল্পী ও শিল্পের পাশে পেতে চান তিনি।
ধারাবাহিকে নায়িকা খড়ি নিজেও শিল্পী। তাই এমন উদ্যোগে খুশি ‘খড়ি’ ওরফে শোলাঙ্কি রায়ও । তাঁর কথায়, “ঠিক করলাম, বেহালার চিলতে দেওয়ালগুলোতে রঙে রঙে ধরা থাকবে মানুষের সঙ্গে মানুষের সম্পর্ক। আর তার সঙ্গেই থাকবে উৎসবের আমেজ। আর এই দুই ভাবনাকে এক করলে মানুষের মনে প্রথম যা আসে, তা হল ‘গাঁটছড়া’। মানে বিয়ে। আর সেটাই সম্ভব করে তুললেন সনাতন দিন্দা আর তাঁর বেহালা আর্ট ফেস্ট।”
আর তাই বিয়ের রঙেই রঙিন হল বেহালা বাগানবাড়ির অলিগলি। খুশি এলাকার মানুষ। সনাতনের কথায়, “অতিমারির হাজারো সমস্যা, অবসাদের মধ্যে হঠাৎ একমুঠো রং মনকেও তো রঙিন করে। সেটাও বড় প্রাপ্তি।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy