পরিচালক সংগঠন-ফেডারেশনের কাজিয়া দীর্ঘ কালের। সমস্যা মেটাতে একাধিক পরিচালক গিল্ড তৈরি হয়েছে। কিন্তু সমস্যা মিটেছে কই? কোনও পরিচালক এক পা এগোলে হয়তো দশ পা পিছিয়েছেন। নিজের অস্তিত্ব বিলুপ্তির ভয়ে মাসুল গুনেছেন কাজের খেসারত দিয়ে। প্রকাশ্যে ক্ষমা চেয়েছেন। এমন পরিস্থিতিতে মহিলা পরিচালক বিদুলা ভট্টাচার্য ব্যতিক্রমী। তিনি ফেডারেশনের বিরুদ্ধে একাই লড়ছেন। স্বাধীন পরিচালকো বহু বার ফেডারেশনের নিয়মের গেরোয় প্রযোজক খুইয়েছেন। সেই অভিযোগ নিয়ে তিনি হাইকোর্টের শরণাপন্ন হয়েছেন। বিচারপতি অমৃতা সিংহ গত বৃহস্পতিবার নির্দেশ দিয়েছেন, বিদুলার কাজে কোনও রকম হস্তক্ষেপ করা যাবে না। পরের শুনানি ৩ এপ্রিল।
বিদুলার এই পদক্ষেপ ইতিমধ্যেই অনেক পরিচালকের মনে আশার সঞ্চার করেছে। যার জেরে পরিচালক পরমব্রত চট্টোপাধ্যায়, অনির্বাণ ভট্টাচার্য, ইন্দ্রনীল রায়চৌধুরী লিখিত বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছেন, তাঁরা বিদুলাকে পূর্ণ সমর্থন করছেন। যে কোনও প্রয়োজনে পাশে থাকবেন। স্বাধীন পরিচালককে কুর্নিশ জানিয়েছেন পরিচালক রাজ চক্রবর্তী। আনন্দবাজার ডট কম যোগাযোগ করতেই বিদুলা বলেছেন, “ভাল লাগছে এই সমর্থন, যা আমি একেবারেই আশা করিনি। আমি তাই ব্যক্তিগত ভাবে তিন পরিচালককেই ধন্যবাদ জানিয়েছি।” পরিচালকের আইনজীবী তাঁকে এ-ও জানিয়েছেন, চাইলে এঁরা বিদুলার সঙ্গে জয়েন্ট পিটিশন দিয়ে মামলা লড়তে পারবেন।
লিখিত বিজ্ঞপ্তিতে তিন পরিচালক আরও জানিয়েছেন, তাঁরাও ব্যক্তিগত ভাবে আগামী দিনে বিদুলার পথেই হাঁটবেন। কারণ, কোনও সংগঠন সমস্যা মেটাতে পারেনি। উল্টে সমস্যা বাড়িয়েছে। একই ভাবে ফেডারেশনও কখনও আলোচনায় বসতে রাজি নয়। এ ভাবেই কি তা হলে ন্যায় আসবে? মহিলা পরিচালককে প্রশ্ন করতেই তাঁর জবাব, “জানি না। তবে ইন্দ্রনীলদা, পরমব্রত বা অনির্বাণ যখন একযোগে সমর্থন জানালেন তখন আশা একটু হলেও বাড়ল। শুধুই ওঁরা নন, আরও কিছু পরিচালক একই ভাবে জানিয়েছেন, তাঁরা পাশে আছেন।” একটু থেমে বিদুলা যোগ করেছেন, “আমার সকলের কাছে একটাই অনুরোধ, সমর্থন জানানোর আগে মনস্থির করে নেবেন। একবার এগিয়ে আবার পিছিয়ে যাবেন না। অনেকে তো ফেডারেশন সভাপতি স্বরূপ বিশ্বাসের বিরুদ্ধে আনা মামলা থেকে নাম তুলে নিয়েছেন। এ ভাবে নতুন করে আর লোক হাসাবেন না।”
বিদুলার লড়াই কি তা হলে রাজ্য সরকার এবং ফেডারেশন সভাপতির বিরুদ্ধে? তা-ই হলে তাঁর নিরাপত্তা কে দেবে?
স্বাধীন পরিচালকের দাবি, “না রাজ্য সরকার বা ফেডারেশন সভাপতি— এঁদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করিনি। আমার প্রতিবাদ তৈরি করা আইন বা নিয়মের বিরুদ্ধে। যে হেতু রাজ্য সরকার এর আগে বিষয়টিতে হস্তক্ষেপ করেছে, তাই রাজ্য সরকারের নাম ঘোষিত হয়েছে। একই ভাবে স্বরূপ বিশ্বাসের কাছে একাধিক মেল পাঠিয়েও উত্তর পাইনি। তাই বিচারপতি সে কথা উল্লেখের সময় স্বরূপদার নাম নিয়েছেন।” একটু থমকে, দম নিয়ে সাহসী জবাব দিয়েছেন, “বরাবরের দুঃসাহসী। কোনও দিন ভয় পাই না। নিজেকে সুরক্ষিত রেখেই সব সময় অন্যায়ের প্রতিবাদ জানিয়েছি। পিছু হটিনি। এ বারেও সেটাই হবে।”
বিদুলার মতে, কেউ তাঁর পাশে এসে দাঁড়াবে, এই আশা না করেই আইনের দ্বারস্থ হয়েছেন। যাঁরা এসেছেন তাঁরা আগামী দিনে পাশ থেকে সরে গেলেও তিনি পিছু হটবেন না।