‘খাদান’ ছবিতে ‘হায় রে বিয়ে হল কেনে’ গেয়ে মাতিয়ে দিয়েছেন জুন বন্দ্যোপাধ্যায়। ছবি: ফেসবুক।
দেবের ছবিতে তাঁর গান প্রথম দিন থেকে জনপ্রিয়। মাঝে ১০ বছরের বিরতি। ফিরেই ‘খাদান’ ছবিতে কণ্ঠ দিলেন জুন বন্দ্যোপাধ্যায়। বাকিটা ইতিহাস। যাঁরা বিয়ে করেছেন তাঁরা তো গাইছেনই ‘হায় রে বিয়ে হল কেনে’! যাঁদের বিয়ে হয়নি তাঁদেরও এই গান মনপসন্দ। গায়িকা জুন বন্দ্যোপাধ্যায় কী ভাবছেন? কোন রসায়নের জোরে দেবের ছবিতে তাঁর গাওয়া প্রত্যেকটি গান হিট? খোঁজে আনন্দবাজার অনলাইন।
প্রশ্ন: ১০ বছর পরে আবারও বাংলা ছবির গানে এবং দেবের ছবিতে...
জুন: পুরোটাই কাকতালীয়। আমার কোনও পরিকল্পনা ছিল না। আমার প্রথম নেপথ্য গান ‘চিরদিনই তুমি যে আমার’ ছবিতে। সেখানেও দেব অতিথি চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন! পরে তো দেবের ছবি মানেই আমার গান। দেবের নায়িকার ঠোঁটে আমার গান। ১০ বছর পরেও সেই ধারা বজায় থাকল, তাতেই খুশি।
প্রশ্ন: গানটি ভীষণ ছন্দোময়, যাকে বলা যায় ‘পেপি’, আপনার কি এই ধরনের গান গাইতেই বেশি ভাল লাগে?
জুন: এই ধরনের গান গাওয়ার আলাদা মজা। তার মানে এই নয়, এই ধারার গানই কেবল পছন্দ। আমার সব ধরনের গান গাইতে ইচ্ছে করে। মেলোডি বা প্রেমের গান, দুঃখের গান—সব সব। এই গানের পিছনেও একটা গল্প আছে...
প্রশ্ন: কী রকম?
জুন: গানটি গাওয়ার আগে ১০ মিনিটও পাইনি! কারণ, স্টুডিয়োয় দু’টি গান রেকর্ডিংয়ের মাঝখানে আমার গানটি রেকর্ড করার কথা ছিল। কিন্তু আগের গানটি শেষ হতে দেরি হয়ে যায়। তখন আমায় বলা হয় গানটি যেন আমি বাড়ি থেকে গেয়ে পাঠাই। কিন্তু আমার ইচ্ছে স্টুডিয়োয় গান গাওয়ার। সকলের উপস্থিতিতে গাইলে গান নিয়ে, গায়কি নিয়ে বাকিদের মতামত জানতে পারব। তাই মিনিট দশেকের মধ্যে নিজেকে প্রস্তুত করে ‘হায় রে বিয়ে হল কেনে’ গেয়েছিলাম।
প্রশ্ন: মাত্র ১০ মিনিটে গাওয়া গান হিট! এর নেপথ্যেও কি দেব-জুনের বিশেষ কোনও রসায়ন?
জুন: (হেসে ফেলে) আমার আসল নাম দেবপ্রিয়া। ডাক নাম জুন। ওই জন্যই বোধহয় দেবের প্রিয়াদের জন্য দেবপ্রিয়া গাইলেই গান হিট! (আবার জোরে হাসি), রসিকতা করলাম। বিশ্বাস করুন, এতে আমার কোনও হাত নেই।
প্রশ্ন: একটু আগেই বললেন, সব সময় সব ধরনের গান গাওয়ার মেজাজ থাকে না। কী করে তৈরি করেন সেই মেজাজ?
জুন: এটাও একটা অভ্যাসের বিষয়। ধরুন, চূড়ান্ত রোম্যান্টিক গান গাইতে হবে। এ দিকে মেজাজ খুবই খারাপ। এক বার বা দু’বার টেকের পর মনের মতো গাইতে না পারলে রেকর্ডিং স্টুডিয়োতেই একটু সময় চেয়ে নিই। মনকে প্রস্তুত করি। তার পর ঠিক গাইতে পারি। কারণ, এখন কারও হাতে সময় নেই। ফলে, মুড নিয়ে বসে থাকলে তো হবে না! তাই আগে নিজেকে শান্ত করি। ঈশ্বরকে স্মরণ করি। দেখি, সব ঠিক হয়ে যায়। একটা ছোট্ট ঘটনা বলি। ‘চিরদিই তুমি যে আমার’ ছবিতে ‘বাতাসে গুনগুন’ গাইব। এ দিকে, সে দিন আমার গলার অবস্থা খুবই খারাপ। সুরকার জিৎ গঙ্গোপাধ্যায় বাড়ি চলে যাওয়ার অনুরোধ জানালেন। আমি কিন্তু বাড়ি যাইনি। চিকিৎসকের কাছে গিয়ে কড়া ডোজ়ের ওষুধ খেয়ে ঠিক সময়ে গেয়েছি। গলা শুনে কেউ বোঝেননি, আমার কী অবস্থা হয়েছিল।
প্রশ্ন: সময় নেই বলে আগের মতো সবাই মিলে গান রেকর্ডিংয়ের চলটাও নেই। এটা ভাল না খারাপ?
জুন: অন্ধকারের মধ্যে তির চালানো বোঝেন? আমাদের ক্ষেত্রে এটাই হয়। আমরা এখন নায়ক বা নায়িকাকেও ভাল করে চিনি না! গল্পের একটা আভাস হয়তো দেওয়া হয়। আমরা একা স্টুডিয়োয় গিয়ে নিজের অংশটুকু রেকর্ড করে চলে আসি! কারও সঙ্গে কারও যোগাযোগ নেই, দেখা নেই। ভাল লাগে না। এতে ভুল হওয়ার আশঙ্কা অনেক বেশি। আমি জানি না, নায়িকা কে বা কেমন। এ বার জোরালো গাইলে হয়তো তাঁর বাচনভঙ্গির সঙ্গে মানানসই হবে না। আবার আস্তে গাইলেও হয়তো উল্টো ফল হবে। আগে সকলের সঙ্গে সকলের আদানপ্রদান ছিল। মহড়া হত, তার পর গাওয়া হত। গানগুলো তাই চিরস্মরণীয় হত। এখনও রিয়্যালিটি শো কিংবা যে কোনও গানের অনুষ্ঠানে হেমন্ত মুখোপাধ্যায়, সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়, কিশোর কুমার, মহম্মদ রফির গান কিংবা নব্বই দশকের গান ঘুরেফিরে গাওয়া হয়।
প্রশ্ন: ১০ বছর পরে বাংলা গানের দুনিয়ায় ফিরে অনেক বদল দেখছেন?
জুন: অনেক, অ-নে-ক বদল! গান, গানের ধারা, গায়কি, মিউজ়িক, প্রচার— এত কিছু আমার মধ্যে ছিলই না। সেই সময় এক বার ছোট পর্দায় দেখানো হত। তার পরেই সোজা বড় পর্দায়। এই প্রচার যদি সেই সময়ে পেতাম তা হলে আমার গান আরও জনপ্রিয় হত। এত হিট গান দিয়েও একটা পুরস্কার পাইনি। কেউ জানতেও চায়নি, কে গেয়েছেন! সকলে জিৎদার নাম জানতেন। তিনি গানগুলো তৈরি করেছেন, সেটাও জানতেন। গায়কের নাম নিয়ে কারও কোনও মাথাব্যথা ছিল না। একের পর এক গান জনপ্রিয় হওয়ায় একটা সময়ের পরে আমার নাম শ্রোতারা জানতে পেরেছিলেন। এখন গায়কের জনপ্রিয় হওয়ার অনেক সুযোগ।
প্রশ্ন: আফসোস হয়?
জুন: হয়, আবার হয়ও না! যখন দেখি জুনের গান মানেই ‘বাতাসে গুনগুন’ বা ‘উ-লালা’—শ্রোতারা বোঝেন। এখনকার কোনও গান এত বছর ধরে জনপ্রিয় থাকে না।
প্রশ্ন: কেন হয় না?
জুন: এখন প্রায় সকলেই গড্ডলিকা প্রবাহে গা ভাসান। ‘চলতি হাওয়ার পন্থী’ হয়ে এক ধারার গান বানান, এক ধারার সুর করেন। সহজে জনপ্রিয়তা খুঁজতে চান। ‘শর্টকার্টে’ কিন্তু জনপ্রিয়তা আসে না। ঝুঁকি নিতে হবে। নতুন কিছু না কিছু তৈরি করতেই হবে। পরিশ্রম করতে হবে। তবেই এতগুলো বছর ধরে একটা গান থেকে যাবে। যে গান শিল্পীকে ছুঁয়ে যায়, সেই গান চিরদিনের জন্য।
প্রশ্ন: ‘খাদান’ নিশ্চয়ই দেখেছেন... অনেকে বলছেন, ‘পুষ্পা ২’-এর ছায়া নাকি ছবিতে। আপনার মনে হয়েছে?
জুন: না, হয়নি। কারণ, যে কোনও রাজ্যেরই প্রত্যন্ত অঞ্চলে গেলে সেখানকার অধিবাসী, চালচলন, আচরণ, সাজপোশাক, কথাবার্তায় মিল পাবেন। এই ছবির ক্ষেত্রেও সেটাই হয়েছে। দুই ছবিতেই মাটির কাছাকাছি থাকা মানুষদের গল্প। তাই হয়তো কেউ কেউ মিল পেয়েছেন।
প্রশ্ন: আবার বাংলা ছবির দুনিয়ায় ফিরলেন। কলকাতায় এসে প্রচার সারলেন। আবারও দর্শক-শ্রোতাদের ভালবাসা পেলেন। নিজের শহরে ঘটে যাওয়া আরজি কর-কাণ্ড নিয়ে তো কিছু বললেন না! খারাপ লাগেনি?
জুন: অবশ্যই লেগেছে। অবশ্যই প্রতিবাদ জানিয়েছি। আমার সমাজমাধ্যম তার সাক্ষী। তার জন্য কম কটাক্ষের শিকার হইনি। মুম্বইয়ে বাঙালি সম্প্রদায় ঘটনার তীব্র নিন্দা করেছেন, পথে নেমেছেন। শুধু বাঙালিরা নন, অন্য সম্প্রদায়ও পথে নেমেছিলেন। হ্যাঁ, সে সব প্রচার করিনি। আর কলকাতায় ছিলাম না। তাই লোকে কম জেনেছে।
প্রশ্ন: অনেকে বলছেন, বাস্তবে অভিজ্ঞতা আছে বলেই নাকি জুনের গাওয়া ‘হায় রে বিয়ে হল কেনে’ এত মনছোঁয়া?
জুন: বাস্তব শুনে জেনে কিন্তু খুশি হবেন না! আমার বিয়ে হয়ইনি। যার জন্য যথেষ্ট আক্ষেপও রয়েছে। বন্ধুরা কী সুন্দর বর নিয়ে বেড়াতে বেরোয়। এক জোট হলে বন্ধুদের দিয়ে সংসারের গল্প করে! সুন্দর করে সাজে। আমি কিচ্ছু পারি না! আমার গাওয়া উচিত ছিল, ‘হার রে বিয়ে হল না কেনে!’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy