Advertisement
০৩ নভেম্বর ২০২৪
বড় কহানি ছেড়ে ছোটতে মন। ফের শর্ট ফিল্ম নিয়ে হাজির সুজয় ঘোষ

সত্যজিতের ম্যাজিক অধরা

সত্যজিৎ রায়ের কালজয়ী ছোট গল্প ‘অনুকূল’-এর টানটান উত্তেজনা, রুদ্ধশ্বাস ক্লাইম্যাক্স আর সর্বোপরি ছোট গল্পের চমক কোনওটাই সুজয়ের ২০ মিনিটের ‘অনুকূল’-এ তেমন ভাবে ফুটে ওঠেনি।

পরমব্রত ও সুজয় ঘোষ। ছবি: রণজিৎ নন্দী

পরমব্রত ও সুজয় ঘোষ। ছবি: রণজিৎ নন্দী

মধুমন্তী পৈত চৌধুরী
শেষ আপডেট: ০৫ অক্টোবর ২০১৭ ০০:০০
Share: Save:

গল্প পড়ে ছবি দেখা আর ছবি দেখে গল্প পড়া, দুটো ভিন্ন স্বাদের অভিজ্ঞতা। পড়া গল্পের ভাল লাগার স্বাদ যদি অক্ষুণ্ণ রাখতে চান, তবে সুজয় ঘোষের দ্বিতীয় শর্ট ফিল্ম ‘অনুকূল’ না পড়ে দেখাই শ্রেয়। সত্যজিৎ রায়ের কালজয়ী ছোট গল্প ‘অনুকূল’-এর টানটান উত্তেজনা, রুদ্ধশ্বাস ক্লাইম্যাক্স আর সর্বোপরি ছোট গল্পের চমক কোনওটাই সুজয়ের ২০ মিনিটের ‘অনুকূল’-এ তেমন ভাবে ফুটে ওঠেনি। এই ‘অনুকূল’ পরিচালকের ভাষায়, ‘‘একটু নতুন। রায়বাবুর অনুকূলের মতো অত পরিণত নয়। ওর শিখতে পড়তে সময় লেগেছে।’’

আরএসবিএস লার্জ শর্ট ফিল্মস প্রযোজিত এই ছবির দুর্বলতম অংশ এর চিত্রনাট্য। নতুন উপাদান থাকলেও ক্ষীরটা জমাট বাঁধেনি। সত্যজিতের ‘অনুকূল’-এর ব্যবসায়ী নিকুঞ্জবাবুকে (সৌরভ শুক্ল) ছবিতে হিন্দি শিক্ষক হিসেবে দেখানো হয়েছে। ভৃত্য রোবট অনুকূল (পরমব্রত চট্টোপাধ্যায়) বই পড়তে ভালবাসে। গীতা পড়তে গিয়ে তার মনে প্রশ্ন উঠলে নিরসন করে নিকুঞ্জবাবু। অর্থাৎ অনুকূল ও তার প্রভুর সমীকরণটাই বদলে দিয়েছেন সুজয়। বদলেছেন গল্পের গতিপথ। নিকুঞ্জবাবুর কাকা নিবারণবাবুকে জীবিত অবস্থায় দেখানো হয়নি। নতুন চরিত্র নিকুঞ্জের এক তুতো ভাই রতনের (খরাজ মুখোপাধ্যায়) আগমন ঘটেছে। তৈরি করা হয়েছে অনুকূলের দ্বন্দ্বের আবহ।

কালজয়ী গল্পকে পরিচালক নতুন আঙ্গিকে তুলে ধরবেন, এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু সেই নতুনত্ব যদি ছবির নাটকীয়তায় নয়া মোচড় দিতে না পারে, তবে তা পরিচালকের ব্যর্থতা। সুজয় তাঁর পছন্দের গল্প ‘অনুকূল’ নিয়ে পরীক্ষা করেছেন ঠিকই। তবে নতুন উপাদানগুলি ছবির পক্ষে সহায়ক হয়ে ওঠেনি। বিশেষত, অনেক কিছু নতুন থাকলেও শেষটা তো জানাই। আর সেই সত্যিটা শেষেরও আগেই বলা হয়ে যায়। ছোট গল্পের মতোই শর্ট ফিল্মের প্রাণভোমরা তার ‘সারপ্রাইজ এলিমেন্ট’। সুজয়ের ‘অনুকূল’ দুম করে শেষ হয়। তাও আবার চমক না দিয়েই।

অভিনয়ের দিক থেকে সৌরভ শুক্ল যথাযথ। পরমব্রতের বিশেষ কিছু করার ছিল না। মানুষের মতো অ্যানড্রয়েড রোবটের চরিত্রে অভিনয় করার জন্য তাঁকে স্থির দৃষ্টির দিকে নজর দিতে বলেন পরিচালক। তিনি তা পালন করেছেন। মদ্যপ, বদমেজাজি ভাইয়ের চরিত্রে খরাজ বিশ্বাসযোগ্য।

ছবিতে আবহ সংগীতের ব্যবহারও উচ্চকিত বলে মনে হয়েছে। সত্যজিতের মানুষ-যন্ত্রের চিরন্তন সংঘাতের সঙ্গে সুজয় জুড়েছেন ধর্ম, ঈশ্বর, মৃত্যু আর রোবটের দাপটে চাকরি খোয়ানোর মতো ভাবনা-চিন্তা। টাইমলাইনও বর্তমান সময়। যেটা তিনি ধরতে পারেননি, তা হল গল্পের ম্যাজিক। ‘অনুকূল’ গল্পটাই ম্যাজিক। কিন্তু ছবিটা সেই ম্যাজিকের প্রতিবিম্ব নয়। তাই এই ছবি শেষ হয়। ‘শেষ হইয়াও হইল না...’ বলা যায় না।

তবে সুজয়ের মতো পরিচালকদের এই প্রচেষ্টা যে শর্ট ফিল্ম নিয়ে আগ্রহ তৈরি করছে সেটাই আশার।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE