শেখ রিজ়ওয়ান রব্বানী
অঝোর বৃষ্টিতে কলকাতা চষে আইসক্রিম খাওয়ার জন্য পাগলামি করে ফেলেন কখনও। কিন্তু ট্রেডমিলে হাঁটেন না নিয়ম করে। আবার কো-স্টারের সঙ্গে সম্পর্কে জড়ালেও সেখান থেকে বেরোতে তাঁর সময় লাগে না। এতটাই হিসেবি শেখ রিজ়ওয়ান রব্বানী।
কিন্তু বাস্তবে হিসেবি হলেও নিজের স্বপ্নগুলোকে লিমিটলেস বলেই মনে করেন রিজ়ওয়ান। একটা সময়ে ইন্ডিয়ান ক্রিকেট টিমে ক্যাপ্টেন হওয়ার স্বপ্ন দেখতেন। অভিনয়ে আসাটা একেবারেই আকস্মিক। মেডিক্যাল নিয়ে পড়ার ইচ্ছে থাকলেও সুযোগ পাননি। বিদেশে এমবিএ প্রস্তুতির সময়েই ফেসবুকে মেসেজের মাধ্যমে অভিনয়ের প্রস্তাব পেয়েছিলেন রিজ়ওয়ান। ‘ষোলো আনা’-তে অনেকগুলো ট্র্যাকের মধ্যে আমি একটায় করেছিলাম,’’ শুরুটা এ ভাবেই হয়েছিল রিজ়ওয়ানের কথায়। তার পরে কয়েক মাসের ব্যবধানেই ‘আঁচল’-এর কুষান রায়ের চরিত্র। পাশাপাশি চলে ‘ষোলো আনা’ও। ‘‘এখনও অবধি কেউই একসঙ্গে দু’টি লিডিং চ্যানেলের দুটো সিরিয়ালে হিরো হয়নি। আমি ব্যতিক্রম ছিলাম বলেই আলাদা ইমেজ তৈরি করেছিলাম,’’ বললেন টেলিনায়ক। পরিবারে সেই সময়ে মা ছাড়া কারওই সমর্থন মেলেনি— ‘‘শুরুটা বেশ চাপ নিয়েই হয়েছিল। নিরাপত্তাহীনতা ছিল।’’ তাই প্রথম চেক পেয়ে মায়ের হাতে তুলে দিয়েছিলেন। ‘চোখের বালি’র বিহারী করার পরে ইন্ডাস্ট্রিতে তাঁর জায়গাটা আরও পোক্ত হয়। ‘‘প্রথমে বেশ ভয় পেয়েছিলাম বিহারী চরিত্রটা পেয়েই। এই চরিত্রের সঙ্গে নিজেকে মানিয়ে নিতে চার মাসের বিরতি নিয়েছিলাম ছোট পর্দা থেকে। সেই সময়ে চুল বড় করি, দাড়ি কাটিনি। নিজেকে ভেঙে উপন্যাসের চরিত্র হয়ে উঠি। বিরাট চ্যালেঞ্জ ছিল। অনেকেই ওই লুকে আমাকে চিনতেই পারেননি,’’ বললেন রিজ়ওয়ান।
‘চোখের বালি’র পরে লম্বা ব্রেকের কারণটা কী? ‘‘কোনও চরিত্র পাচ্ছিলাম না, যেটা আমার কেরিয়ারের গ্রাফ আরও উপরে নিয়ে যেতে পারে। চরিত্রের উপরে নিজের বিশ্বাস তৈরি না হলে দর্শকের বিশ্বাস অর্জন করব কী করে? আর আমার আগের অভিনীত চরিত্র থেকেও আলাদা হতে হবে। তাই অনেক প্রস্তাব ফিরিয়ে দিয়েছিলাম। ‘প্রতিদান’-এর রণিত ও নীল সেন দু’রকম মানুষ, দ্বৈত চরিত্র না হলেও নিজেকে মেলে ধরার এমন সুযোগ আগে পাইনি,’’ আত্মবিশ্বাসী গলায় বললেন রিজ়ওয়ান। তাই এই সময়টায় কাজ না থাকার ডিপ্রেশন তাঁকে গ্রাস করতে পারেনি। ভিন্ন ধরনের চরিত্র করলেও তাঁর আত্মতুষ্টি আসেনি এখনও। তাঁর কথায়, ‘‘টেলিভিশনে অনেক কাজ করলেও এখনও প্রচুর কাজ বাকি আছে। তবে ধারাবাহিকের বিশেষ কোনও দৃশ্যের শুটিং আমাকে কখনও কখনও অন্য রকম আনন্দ দিয়েছে।’’ ধারাবাহিকের মাঝে তিনটি ছবিও করেছেন তিনি। ইচ্ছে আছে, অমিতাভ বচ্চনের যে কোনও একটি ছবির রিমেকে অভিনয় করার। ‘‘আজকের দিেন ফিল্ম, টেলিভিশন, শর্ট ফিল্ম বিভাজন করে লাভ নেই। ভাল চরিত্র আর দর্শক আমাকে ওই চরিত্রে পছন্দ করছেন কি না, সেটাই আসল কথা। সেই সঙ্গে নিজের ভাললাগাটাও থাকে যেন।’’ তাই ওয়েব সিরিজ়ের সুযোগ এলেও ভাল চরিত্রের অপেক্ষায় রয়েছেন রিজ়ওয়ান।
তিনি ‘সিঙ্গল’ হওয়ায় মেয়েদের কাছ থেকে অহরহ প্রেমের প্রস্তাব আসেই। এক অদ্ভুত ফ্যানের পাল্লায় পড়েছিলেন কিছু দিন আগেই। বাংলাদেশের একটি মেয়ে শুধু তাঁর জন্যই কলকাতায় চলে আসতে চেয়েছিলেন। কোনও মতে মেয়েটিকে নিরস্ত করেন তিনি। ঝামেলা এড়িয়ে চলা আর রাতে নিশ্চিন্তে ঘুমোনোটা বেশি জরুরি রিজ়ওয়ানের কাছে। ইন্ডাস্ট্রির কো-স্টার নয়, ছোটবেলার বন্ধুদের সঙ্গেই সময় কাটাতে পছন্দ করেন তিনি। পছন্দ করেন না পার্টি করতেও। বরং পরিবারের সঙ্গে সময় কাটানোতেই তাঁর বেশি আগ্রহ। এক বার ইদে কাউকে না জানিয়েই পরিবারের সকলের জন্য জামাকাপড় কিনেছিলেন। আজও ওটাই সবচেয়ে আনন্দের মুহূর্ত অভিনেতার কাছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy