Advertisement
E-Paper

হিমাচলের পাহাড়ে ‘নজরবন্দি’ ঋতুপর্ণা! সঙ্গে রাজনন্দিনী ও দর্শনা, কেমন চলছে ছবির শুটিং?

হিমাচল প্রদেশের ধর্মশালায় চলছে ‘নজরবন্দি’ ছবিটির শুটিং। ছবির সবক’টি চরিত্রই মহিলা। সম্প্রতি ইউনিটের সঙ্গে দু’দিন কাটিয়ে এল আনন্দবাজার অনলাইন।

image of Rituparna Sengupta

ধর্মশালায় ‘নজরবন্দি’ ছবির শুটিংয়ের ফাঁকে অন্য মেজাজে ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত। ছবি: সংগৃহীত।

অভিনন্দন দত্ত

শেষ আপডেট: ০৩ মার্চ ২০২৫ ০৫:১০
Share
Save

রাত প্রায় সাড়ে ১১টা। হিমাচল প্রদেশের ধর্মশালা শহর অন্ধকারে ডুবে রয়েছে। এ দিকে শহরের প্রান্তে কান্ডি গ্রামে হোটেলে গাড়ি থেকে নামতেই কর্মব্যস্ততা চোখে পড়ল। মোবাইলে ওয়েদার অ্যাপ জানান দিচ্ছে, তাপমাত্রা ৬ ডিগ্রি। কিন্তু হোটেলের রিসেপশনে প্রবেশ করতেই দেখা গেল ফিনফিনে পোশাকে ক্যামেরার সামনে শট দিচ্ছেন অভিনেত্রী ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত। পরিচালক দেবারতি ভৌমিকের নতুন ছবি ‘নজরবন্দি’র প্রেক্ষাপট হিমাচল। ইউনিট প্যাক আপের উদ্যোগ শুরু করেছে। ঋতুপর্ণা হেসে বললেন, ‘‘অনেকটা রাত হয়েছে। আজকে আর কোনও কথা নয়।’’

পরদিন সকাল থেকেই হোটেলের পিছনে সবুজ বাগানে শটের প্রস্তুতি শুরু হয়ে গেল। জানা গেল, ঋতুপর্ণা রূপটান শুরু করেছেন। সেট তৈরি তদারকি করছেন পরিচালক। ‘নজরবন্দি’র প্রেক্ষাপট সাইবার অপরাধ। তবে সেখানে থ্রিলারের মোড়কেই থাকছে একাধিক সম্পর্কের গল্প। দেবারতি নিজে ক্রাইম থ্রিলারের ভক্ত। কিন্তু তিনি চেয়েছিলেন নতুন কিছু করতে। বলছিলেন, ‘‘আমার মনে হয়েছিল, এমন একটা গল্প যদি বলা যায়, যেখানে চুরি বা ডাকাতি থাকবে না। কিন্তু তা সত্ত্বেও দর্শকের জন্য সাইবার অপরাধ নিয়ে একটা ইতিবাচক বার্তা থাকবে।’’

উল্লেখ্য, এই ছবিতে কোনও পুরুষ চরিত্র নেই। এই ভাবনা প্রসঙ্গেও পরিচালকের নিজস্ব যুক্তি রয়েছে। তাঁর কথায়, ‘‘অপরাধের কোনও ছবিতে বেশির ভাগ সময়েই দেখি অপরাধী পুরুষ বা অপরাধ ঘটানো হচ্ছে মহিলাদের উপর। আমার ছবিতে অপরাধী এবং যিনি অপরাধের শিকার হচ্ছেন, প্রত্যেকেই নারী।’’ কিন্তু একই সঙ্গে দেবারতি জানিয়ে দিলেন, ‘নারীবাদ’-এর পক্ষে কোনও জোরালো সমর্থন বা চমক তাঁর উদ্দেশ্য নয়। তবে এই ধরনের কনসেপ্ট ভাবা সহজ হলেও বাস্তবায়িত করা কঠিন। পরিচালকের কথায়, ‘‘এমনও হয়েছে, ফ্রেমে কোনও পুরুষ প্রবেশ করেছেন। আমাকে সে কারণে নতুন করে আবার শট নিতে হয়েছে। এইটুকু চ্যালেঞ্জ তো নিতেই হবে।’’ এই ভাবনা থেকেই ছবিতে জুড়েছেন দর্শনা বণিক, রাজনন্দিনী পাল, লাবণী সরকারের মতো অভিনেত্রীরা। পরিচালক জানিয়ে দিলেন, কিছু গানের দৃশ্য ছাড়া ছবির সিংহভাগ দৃশ্যই এই হোটেলেই শুট করা হবে।

image of Rituparna Sengupta and Rajnandini Paul

পাহাড়ের কোলে ঋতুপর্ণার সঙ্গে আড্ডায় রাজনন্দিনী। ছবি: সংগৃহীত।

কথা শেষ হতে না হতেই ফ্লোরে হাজির হলেন ঋতুপর্ণা। পরনে শাড়ি। হাতে ধরা চিত্রনাট্য। ছবিতে অনামিকা সেনগুপ্ত নামের একজন বিত্তবান চিত্রশিল্পীর ভূমিকায় অভিনয় করছেন তিনি। একজন সাংবাদিকের সঙ্গে তাঁর সাক্ষাৎকারের দৃশ্যের শুটিং করা হবে। কিছু তির্যক প্রশ্ন এবং অনামিকার চাঁচাছোলা উত্তর। কয়েকটি টেকের পরই সন্তুষ্ট হলেন পরিচালক। ঋতুপর্ণা ফিরে গেলেন নিজের ঘরে। জানা গেল, এর পর কয়েক জন মহিলার কিটি পার্টির শট নেওয়া হবে।

ছবিটি থ্রিলার বলেই নির্মাতাদের দাবি, চরিত্রদের লুকের ছবি ফাঁস করা যাবে না। কিন্তু অন্য লুকে যদি ছবি তোলা হয়। আনন্দবাজার অনলাইনের অনুরোধ রক্ষা করলেন ঋতুপর্ণা। বিকেলের আগে তাঁর শট নেই। ফলে পোশাক বদলে হোটেলের সুইমিং পুলের ধারেই ক্যামেরার জন্য তৈরি ঋতুপর্ণা। পরবর্তী ছবির জন্য তাঁর সঙ্গী হলেন রাজনন্দিনী। গাড়িতে করেই হোটেলের কাছের পাহাড়ের কোলে পৌঁছে গেলেন দু’জনে। পাহাড়ে দুপুর থেকেই তাপমাত্রা কমতে শুরু করেছে। দুই অভিনেত্রী হাসিমুখে ক্যামেরার জন্য পোজ় দিলেন। গরম পোশাক না পরার জন্য রাজনন্দিনীকে হালকা বকুনিও দিলেন ঋতুপর্ণা। রাজনন্দিনী হেসে বললেন, ‘‘ঋতু আন্টির হাতে আমাকে ছেড়ে দিয়ে মা একদম নিশ্চিন্ত। বাড়ি থেকে ঘন ঘন ফোন আসছে না।’’ পরবর্তী গন্তব্য হোটেল।

imagae of Darshana Banik

ধর্মশালায় শুটিংয়ের ফাঁকে অন্য মেজাজে দর্শনা বণিক। ছবি: সংগৃহীত।

গল্পে ঋতুপর্ণার বাড়িতে ভাড়াটে হিসেবে আসে দর্শনা এবং রাজনন্দিনী। জানা গেল, সন্ধ্যায় একটি ডিনারের দৃশ্যের শুটিং করা হবে। সেখানেই পরিবারের সকলের সঙ্গে অতিথির আলাপ করিয়ে দেবেন অনামিকা। ডিনারের দৃশ্য, তাই শটের জন্য আলাদা খাবার রান্না করানো হয়েছে। ডিনার টেবিলে একে একে এসে বসলেন ঋতুপর্ণা, লাবণী, দর্শনা (চরিত্রের নাম নম্রতা) এবং রাজনন্দিনী (চরিত্রের নাম নন্দিনী)। সন্ধ্যা থেকে তাপমাত্রা কমছে এবং দর্শনা এবং রাজনন্দিনীর পরনে ফিনফিনে পোশাক। আলাপচারিতার কয়েকটি দৃশ্যের টেক করা হল। শট শেষে অভিনেত্রীদের গায়ে সহায়করা গরম পোশাক পরিয়ে দিচ্ছেন। রাত প্রায় ১০টা। এ দিকে টেবিলে রকমারি খাবার। খিদে পাচ্ছে কি? প্রশ্ন করতেই হেসে উঠলেন ঋতুপর্ণা। লাবণী বললেন, ‘‘এ রকম সময়ে খিদে পায় না। আগে শটগুলো শেষ করি। তার পর যা হয়, ভাবা যাবে।’’ হালকা পোশাকে প্রচণ্ড ঠান্ডায় শুটিং করা কি খুব কঠিন? প্রশ্ন করতেই দর্শনা বললেন, ‘‘মনে হচ্ছে, অসুবিধা হবে না। কারণ সকলে মিলে একটা ভাল কাজই তো করতে এসেছি। মানিয়ে নেব।’’ সহমত পোষণ করলেন রাজনন্দিনীও। কারণ জানা গেল, রাতে সুইমিং পুলে তাঁর একটি জলে নামার দৃশ্যের শুটিং হতে পারে। যদিও সে দিনের মতো দৃশ্যটির শুটিং বন্ধ রাখা হয়েছে। কারণ, তত ক্ষণে ঝিরিঝিরি বৃষ্টি শুরু হয়েছে।

দ্বিতীয় দিন সকাল থেকেই আকাশের মুখ ভার। তাই প্রোডাকশন টিম জানিয়ে দিল, আবহাওয়ার কথা মাথায় রেখেই কিছু দৃশ্যের রদবদল করে হোটেলের মধ্যেই শুটিং করার পরিকল্পনা করা হয়েছে। শটে থাকবেন ঋতুপর্ণা এবং লাবনী। ছবিতে দু’জনে মা-মেয়ের চরিত্রে। ও দিকে খবর এল, রাজনন্দিনীর জ্বর এসেছে। তাই ফটোশুটের জন্য পাওয়া গেল দর্শনাকে। হোটেলের কাছেই বয়ে চলেছে খরস্রোতা নদী। দুপুরে প্রবল ঠান্ডাকে উপেক্ষা করেই স্রোতের পাশে নীল গাউনে ক্যামেরাবন্দি হলেন অভিনেত্রী। জানালেন, এই অভিজ্ঞতা তাঁর কাছে নতুন। তবে নিজের চরিত্র নিয়ে এখনই কিছু খোলসা করতে চাইলেন না দর্শনা। বললেন, ‘‘সময় পেলে ধর্মশালা একটু ঘুরে দেখতে চাই। আগামিকাল শিবরাত্রি। শুনেছি, কাছেই একটা শিব মন্দির রয়েছে। শুটিং শেষ হলে পারলে এক বার প্রণাম করে আসব।’’ আগের দিন ঋতুপর্ণার ঘরে একসঙ্গে ডিনার সেরেছেন দর্শনা এবং রাজনন্দিনী। বললেন, ‘‘ঋতুদির মতো অভিনেত্রীর কাছ থেকে তাঁর সময়ের ইন্ডাস্ট্রির সমস্যার কথা শুনে আমি খুবই অনুপ্রাণিত হয়েছি।’’

image of Rituparna Sengupta

প্রকৃতির কোলে ঋতুপর্ণা। ছবি: সংগৃহীত।

হোটেলে ফিরে পরবর্তী দৃশ্যের তোড়জোড় চোখ পড়ল। ট্যারো কার্ড রিডিংয়ের একটি দৃশ্যের শুটিংয়ের প্রস্তুতি নিচ্ছে ইউনিট। এই দৃশ্যে ঋতুপর্ণা নেই। তাই অভিনেত্রীকে পাওয়া গেল তাঁর ঘরে। গত বছর মাকে হারিয়েছেন ঋতুপর্ণা। উল্লেখ্য, মায়ের সঙ্গে হিমাচলেই শেষ বার একটি ছবির আউটডোরে এসেছিলেন অভিনেত্রী। জানালেন, এ বারে হিমাচলে এসে তাই মায়ের কথাই বেশি করে মনে পড়ছে তাঁর। এই ছবিটি কেন বেছে নিলেন কেন তিনি? ঋতুপর্ণা বললেন, ‘‘প্রথমত, ধর্মশালায় একটি সম্পূর্ণ বাংলার ছবির শুটিং এর আগে হয়নি। দ্বিতীয়ত, ছবিতে সমস্ত চরিত্র মহিলা। এটাও একটা আকর্ষণীয় দিক।’’ তবে অভিজ্ঞতার নিরিখেই যেন সব থেকে প্রাসঙ্গিক কথাটি জুড়ে দিলেন অভিনেত্রী। বললেন, ‘‘বাংলা ছবি নিয়ে তো এখন আমরা নানা কথা শুনছি। সেখানে মুম্বইয়ের একজন প্রযোজক যখন বাংলা ছবি করতে এগিয়ে এলেন। আমার মনে হয়েছিল, পাশে থাকা উচিত।’’

রাত্রে ঘরে নব্বই দশকের বাংলা ছবির গান শুনছিলেন ঋতুপর্ণা। জিজ্ঞাসা করতেই বললেন, ‘‘আউটডোরে এলে আমি রাত্রে চেষ্টা করি গান শুনতে বা কোনও ছবি দেখতে। তাপ পর ঘুমিয়ে পড়ি। পরের দিন একাগ্রতা আরও বেড়ে যায়।’’ এরই মধ্যে বাড়িতে পরিচারিকা থেকে শুরু করে পরবর্তী ছবির প্রচার কৌশল নিয়ে টিমের সঙ্গে ক্রমাগত অনলাইনে মিটিং করে চলেছেন অভিনেত্রী। জিজ্ঞাসা করতেই মুচকি হেসে বললেন, ‘‘আমাকে অনেকেই বলেন মাল্টিটাস্কার। মাঝে মধ্যে সেটা ঝালিয়ে নিই আর কী!’’ এই ছবিতে দর্শনা এবং রাজনন্দিনীর মতো নতুন প্রজন্মের নায়িকাদের সঙ্গেই কাজ করছেন ঋতুপর্ণা। তাই অভিনেত্রী বিশ্বাস করেন, তাঁর দায়িত্ব আরও বেড়ে গিয়েছে। হেসে বললেন, ‘‘আমাকে তো নতুনদের শেখাতেই হবে। দর্শনা যেমন মিশুকে। অন্য দিকে রাজনন্দিনীর জ্বর হয়েছে শুনে জোর করে ওষুধ খাইয়েছি। আসলে ওদের গাইড করতে পেরে আমার নিজেরও খুব ভাল লাগছে।’’ একই ভাবে লাবণীর সঙ্গে ঋতুপর্ণা যখন আড্ডা দিচ্ছেন, তখন সেখানে ফিরে ফিরে আসছে পুরনো দিনের অভিজ্ঞতা।

‘নজরবন্দি’র প্রযোজক মুম্বইয়ের সংস্থা ‘কথা বিন্যাস মিডিয়া’। ছবিতে গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রে অভিনয় করছেন পায়েল সরকার, চান্দ্রেয়ী ঘোষ, দেবলীনা কুমার। সময়ের সঙ্গে তাঁরা যোগ দেবেন ইউনিটে। নির্মাতাদের দাবি, এর আগে পুরুষ বাদ দিয়ে শুধুমাত্র মহিলা চরিত্রদের নিয়ে কোনও ছবি দেশে তৈরি হয়নি। তাই এই ছবি তার কাঙ্ক্ষিত দর্শক খুঁজে নেবে। চলতি সপ্তাহের শেষে ধর্মশালায় ছবির শুটিং শেষ হওয়ার কথা। পরিচালকের আশা, ছবিটি আগামী মে-জুন মাস নাগাদ মুক্তি পেতে পারে।

Rituparna Sengupta Darshana Banik Rajnandini Paul Bengali Films

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

{-- Slick slider script --}}