যখনই জেনেছেন, আর ফিরবেন না বর্ষীয়ান পরিচালক, চোখের জল বাঁধ মানেনি!
অঝোরে কাঁদছেন সন্ধ্যা রায়। কান্নায় গলা বুজে আসছেন তাঁর। তরুণ মজুমদারের অবস্থা সঙ্কটজনক। খবর পাওয়া মাত্রই ছুটে গিয়েছিলেন হাসপাতালে। কিন্তু দেখতে পাননি। বর্ষীয়াণ পরিচালক বিশেষ চিকিৎসা ব্যবস্থার মধ্যে ছিলেন। সেখানে সবারই প্রবেশ নিষিদ্ধ। আনন্দবাজার অনলাইনের ফোন ধরেছেন কান্নাভেজা গলায়। আফসোসের সুরে জানিয়েছেন, বহু দিন দেখা নেই। কথাও নেই। তার পরেই হাহাকার, ‘‘কিছু দিন আগেও ঝাড়গ্রামে লোকেশন দেখতে গিয়েছিলেন। কারণ, কাজ ছাড়া থাকতে পারতেন না। সেখান থেকে ফিরে এসেই কি আরও অসুস্থ হয়ে পড়লেন! হঠাৎ কী হয়ে গেল?’’
তরুণবাবুর অসুস্থতার খবর পাওয়ার পরেই ঘুম ভুলেছেন বর্ষীয়ান অভিনেত্রী। ঠায় এক ভাবে বসে ঠাকুরঘরে। সমানে ঈশ্বরের কাছে একটাই প্রার্থনা করেছেন, সমস্ত বাধাবিঘ্ন পেরিয়ে যেন ঘরের মানুষ ঘরে ফিরে আসেন। যখনই জেনেছেন, তা আর হওয়ার নয়, চোখের জল বাঁধ মানেনি! অভিনেত্রীর কথায়, ‘‘ইদানীং, আমরা বাইরে বাইরেই বেশি থাকতাম। উনি চেন্নাই, বেঙ্গালুরু। আমি হয়তো দিল্লি কিংবা মেদিনীপুর। তাই কাজ নিয়ে কথা বা দেখাসাক্ষাতের সুযোগটুকুও পেতাম না।’’
তরুণ মজুমদার সন্ধ্যা রায়ের জীবনে একাধারে স্বামী, পরিচালক, গুরুর ভূমিকা পালন করেছেন। এক সঙ্গে কাজ করতে করতে প্রেম। সেই প্রেম আরও গাঢ় সাতপাকের বাঁধনে। পরিচালক-নায়িকার প্রেম-পরিণয় নতুন নয়। তবে তনুবাবু-সন্ধ্যায় রায়ের প্রেম বহু ভাল ছবি, নতুন নায়ক-নায়িকার জন্ম দিয়েছে। মৌসুমী চট্টোপাধ্যায়, রাখী গুলজার, তাপস পাল, অয়ন বন্দ্যোপাধ্যায়, মহুয়া রায়চৌধুরী, দেবশ্রী রায়, নয়না বন্দ্যোপাধ্যায় প্রমুখ তরুণ মজুমদারের আবিষ্কার। ‘ফার্স্ট লুক’ থেকেই প্রত্যেক নায়িকাকে যত্ন নিয়ে তৈরি করতেন সন্ধ্যা নিজে। অভিনয়ের প্রশিক্ষণও দিতেন দু’জনে। যার ফলাফল একমুঠো জনপ্রিয় ছবি।
সে সব স্মৃতিতে আবারও আচ্ছন্ন বর্ষীয়ান অভিনেত্রী। ধরা গলায় দাবি, ‘‘কী অসম্ভব প্রাণপ্রাচুর্য ছিল। কী অসম্ভব কাজপাগল ছিলেন। অনেক দিন সে ভাবে যোগাযোগ নেই। কিন্তু তাঁর সব খবরাখবরই পেতাম। বড্ড শখ ছিল, শচীন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘জনপদবধূ’ উপন্যাস নিয়ে ছবি বানাবেন। নায়িকা হিসেবে ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত ওঁর প্রথম পছন্দ ছিলেন। পাশাপাশি, ছবিতে নাচের ভূমিকাও ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ ছিল। ছবিটা আর করা হয়ে উঠল না।’’
প্রায় অনেক বছর হয়ে গেল তাঁরা আলাদা থাকেন। তবু প্রবীণ অভিনেত্রী ভুলতে পারেন না, ষাট-সত্তরের দশক ছিল তরুণ মজুমদার-সন্ধ্যা রায় জুটির।
সাল ১৯৬৫। ‘একটুকু বাসা’ এবং ‘আলোর পিপাসা’ ছবি দু’টি বানিয়েছিলেন তরুণ মজুমদার। যথাক্রমে সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় এবং বসন্ত চৌধুরী নায়ক। দু’টি ছবিতেই নায়িকা সন্ধ্যা রায়। এই জুটির জনপ্রিয় ছবি ‘ঠগিনী’, ‘ফুলেশ্বরী’, ‘পলাতক’, ‘নিমন্ত্রণ’, ‘কুহেলি’, ‘সংসার সীমান্তে’। এ ছাড়া, ‘বালিকা বধূ’, ‘দাদার কীর্তি’, ‘শ্রীমান পৃথ্বীরাজ’-সহ তরুণবাবুর প্রায় সমস্ত ছবিতেই সন্ধ্যা রায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকায় অভিনয় করেছেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy