ভাই পরম,
এ বার বিয়েটা করেই ফ্যাল। আস্তে আস্তে সব দিক থেকেই তো এগোচ্ছিস। একটা বৌ না থাকলে কেমন যেন ফাঁকা ফাঁকা দেখাচ্ছে রে! আমার জন্মদিনে রাজ (পরিচালক রাজ চক্রবর্তী) আমার বিয়ে নিয়ে ব্যাপক হইচই করল। সঙ্গে প্রযোজক রানা সরকারও। তিনি আবার ঘোষণাও করলেন, চলতি বছরের সেপ্টেম্বরেই নাকি আমার বিয়ে। তখন বড় মুখ করে আনন্দবাজার অনলাইনকে বলেছিলাম, আমার আগে তোর বিয়ে হবে। কথাটা সত্যি হলেই খুব ভাল লাগবে।
আজ, ফেলে আসা দিনের কথা খুব মনে পড়ছে। তোর বাড়িতে কত আড্ডা! এমনও হয়েছে, একটা সময়ের পরে তুই তোর মতো কাজে ডুবেছিস। আমি আড্ডা মেরেছি তোর মা সুনেত্রা ঘটকের সঙ্গে। তোর বাবা সতীনাথ চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে কথা বলার তেমন সুযোগ কোনও দিনই হয়নি। কারণ, পেশার খাতিরে তিনি সারা ক্ষণ ব্যস্ত। গুণী মা-বাবার সন্তান তুই। ঋত্বিক ঘটক, মহাশ্বেতা দেবীর মতো বহু বিশিষ্টরা তোদের আত্মীয়। সেই পরিবারের ছেলে সংস্কৃতির বিভিন্ন ক্ষেত্রে নিজের ছাপ রাখবে সেটাই স্বাভাবিক। আরও অবাক করা ঘটনা, তুই আমার থেকে ৯ বছরের ছোট। কিন্তু একটা দিনের জন্য সেটা বুঝতে পারিনি। কারণ, তুই প্রচণ্ড পরিণত। বুদ্ধিতে, আচারে-বিচারে।
তাই কি তুই একটু চাপা? মনটা নরম। তাঁর উপরে বুদ্ধি আর জ্ঞানের শক্ত আবরণ। সেই খোলস ভেঙে তুই ধরা দিস না। তোর ব্যক্তিগত জীবন নিয়েও চর্চা কম! তুই মুখ খুলিস না। বলিস না, নারী-পুরুষ উভয়ের মধ্যেই বুদ্ধির ছটা আর জ্ঞানের জৌলুস তোকে সবার আগে টানে। তেমন কাউকে পেলে তুই ঘণ্টার পর ঘণ্টা তার সঙ্গে কথা বলতে রাজি। না হলেই নিজেকে গুটিয়ে নিস। এর জন্য অনেকে তোকে নাকি ‘পরম পাকা’ বলে? বহু জনের দাবি, তোর নাকটা নাকি উঁচু। খুব স্বাভাবিক। তুই যেমন লম্বা তেমনি টিকলো নাক। এমনিতেই তো নাক উঁচু তোর! আমার মতো আকারে ছোটখাটো, চাপা নাক নাকি?
পরম, তোর আমাদের ছেলেবেলার দুষ্টুমিগুলো মনে আছে? সেই যে, একাধিক বার আমরা এক মেয়েকেই ভালবেসে ফেলেছিলাম! কখনও তুই সরে এসেছিস। কখনও আমি। তাই নিয়েও চর্চা। অনুরাগীরা বুঝতে পারেন না, পরিচিতি পাওয়ার পরে আমাদের মেলামেশার গণ্ডিটা ছোট হয়ে যায়। নির্দিষ্ট কিছু মানুষদের সঙ্গে আড্ডা, খাওয়াদাওয়া, হুল্লোড়। ফলে, কখনও কখনও পছন্দটাও মিলে যায়। তবে তাই নিয়ে কোনও দিন আমাদের মধ্যে কিন্তু ঝগড়া হয়নি। তবে ইদানীং আমার একটা বিষয় নিয়ে একটু ভাবনা হচ্ছে। যে হারে তুই বলিউডে জনপ্রিয় হচ্ছিস, আমাদের বৌমা অবাঙালি হবে না তো!
যিনিই আসুন, আমরা তাঁকে সাদরে গ্রহণ করব। বিয়ের মেনুতে কিন্তু তোর পছন্দের চিনে খাবারগুলোই চাই। এখনও মনে আছে, তুই চাইনিজ খেতে বেশি ভালবাসিস। উন্নতি তো তুই আরও করবিই। ব্যস্তও হবি আরও। আমাদের বন্ধুত্বটা এ রকমই থেকে যাক।
রুদ্রনীল।