Advertisement
২৩ ডিসেম্বর ২০২৪
Rituparna Sengupta

Rituparno: ঋতুদা বিয়ের দিন চন্দন পরিয়েছিল আর আমি ঋতুদার শেষ দিনে ওকে সাজিয়েছিলাম

আজও ঋতুপর্ণের স্নেহের কাঙাল ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত। ঋতুদা তাঁকে জন্মদিনে শাড়ি উপহার দেবেন। সাজিয়ে দেবেন। রবিবার লুচি, আলুর দমের আড্ডা বসাবেন...

 ঋতুপর্ণর স্মৃতিচারণে ঋতুপর্ণা।

ঋতুপর্ণর স্মৃতিচারণে ঋতুপর্ণা।

ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত
ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত
কলকাতা শেষ আপডেট: ৩০ মে ২০২২ ১৪:৪৭
Share: Save:

ঋতুপর্ণ ঘোষ আর ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত, একটা সময়ের দোসর! আমার বাবা আর ঋতুদার বাবা প্রায় একই সময়ে চলে গিয়েছিলেন। এই ঘটনা আমাদের একাত্ম করে তুলেছিল। আমার বাড়ির কাছাকাছি ওঁর বাড়ি। তাই সুযোগ পেলেই চলে যেতাম ওঁর কাছে। ঋতুদাও মাঝেমধ্যেই ঢেকে নিতেন রবিবার। আর ওঁর বাড়িতে আড্ডা মানেই সঙ্গে জলখাবার। সেটা লুচি, আলুর দম! ঋতুদার রবিবার এমনই ছিল! এক বার ওঁর বাড়িতে গিয়ে হাতে আঁকা ছবিগুলো দেখতে দেখতে খুব প্রশংসা করেছিলাম। ঋতুদা সঙ্গে সঙ্গে বলেছিল, 'তোর কোনটা পছন্দ বল। আমি তোকে উপহার দেব।' এটাই ‘ব্যক্তি’ ঋতুপর্ণ ঘোষ।

ছবি উপহারটা যদিও আর দিয়ে হয়ে ওঠা হয়নি। তার আগেই তিনি বরাবরের মতো নিরুদ্দেশ। বদলে রেখে গেলেন কত স্মৃতি! আমার জন্মদিন মানেই ঋতুদার শাড়ি। হয় তাঁত, নয় জামদানি। পর্দায় যে ধরনের শাড়িতে আমায় দেখতে চাইতেন, সে রকম। আমার বিয়ের কার্ড ঋতুদার হাতে তৈরি। বিয়ের দিন যে চন্দন সবাই আমার কপালে দেখেছিলেন সেটাও ঋতুদা নিজে এঁকে দিয়েছিলেন। আমার শাড়ির পাড়ের সঙ্গে মিলিয়ে। অদ্ভুত প্রাণবন্ত একটা মানুষ দ্রুত সবাইকে ভালবেসে ফেলতেন। আপন করে নিতেন।

এখনও ঋতুদার ছবি ‘উৎসব’ নিয়ে আমার আমেরিকা ভ্রমণ কিছুতেই ভুলতে পারি না। ওই ছবিতে আমি অভিনয় করেছিলাম। বিভিন্ন জায়গায় গাড়িতে করে এক সঙ্গে যাওয়া। রেস্তরাঁয় খাওয়া। আড্ডা দেওয়া--- কত স্মৃতি।

ঋতুদার নানা বিষয়ে প্রচণ্ড জ্ঞান ছিল। ফলে, অনর্গল নানা বিষয় নিয়ে কথা বলে যেতে পারতেন। সেটা পিকাসোর আঁকা ছবি হোক বা পাশ্চাত্যের চলচ্চিত্র। আড্ডা দিতে দিতেই আমার সাক্ষাৎকারও নিয়ে নিয়েছিলেন।

ঋতুদা সেই সময় প্রথম সারির ম্যাগাজিনের সম্পাদক। শুধু আমি বলে নয়, সবার প্রতি সমান মনোযোগ, টান। যতটা পারতেন সবার আবদার মেটানোর চেষ্টা করতেন। ঋতুদার সঙ্গে এ রকম সম্পর্কের আরও কারণ ছিল। তখন আমি বেশ ছোট। বাণিজ্যিক ধারার ছবি থেকে অন্য ধারার ছবিতে ওঁর হাত ধরেই আমার আসা। ঋতুদার পরিচালনায় ‘দহন’ আমার প্রথম ছবি। প্রথম ছবিতেই জাতীয় পুরস্কার! ভাবলেই গায়ে কাঁটা দেয় আজও। নিজে হাতে গড়েপিটে নিয়েছেন তো। তাই বাড়তি স্নেহ ছিলই।

দ্বিতীয় ২০০০ সালের ছবি ‘উৎসব’। ব্যস, আমার তালিকা শেষ! এই নিয়ে মনখারাপ কম হয়েছে? ঋতুদা ‘চোখের বালি’ আর ‘দোসর’-এ অভিনয়ের জন্য ডেকেছিলেন। আমি পারিনি। আজও হাত কামড়াই তার জন্য। একটা ছবি করবেন ঠিক করেছিলেন দেব, প্রিয়াংশু চট্টোপাধ্যায় আর আমাকে নিয়ে। সেটাও শেষ পর্যন্ত আর হল না। আমারও ঋতুদার সঙ্গে কাজ করা ছবির তালিকা আরও লম্বা হল না। তার পরেই শেষের সে দিন! বাকিদের সঙ্গে আমিও ছিলাম। নিজের হাতে সাজিয়ে দিয়েছিলাম ওঁকে।

জানি না, ঋতুদা নতুন জন্ম নিয়েছেন কিনা। নিলে আবদার করব, যেমন ছিলে তেমনি হয়েই আবার আসবে ঋতুদা? আবারও ঋতুপর্ণ ঘোষ হয়ে? ইদানীং এই যে বিষয়নির্ভর ছবি দর্শকেরা পছন্দ করছেন তার স্বাদ তো প্রথম তুমিই দিয়েছিল। তোমার ছবি মানেই প্রেক্ষাগৃহে দর্শকের উপচে পড়া ভিড়। মন্ত্রমুগ্ধের মতো সবাই দেখতেন তোমার সৃষ্টি। আলাদা ঘরানাই বানিয়ে ফেলেছিলে। সিনেমাকে যেন নতুন করে আবিষ্কারও করেছিলে। ঋতুপর্ণ ঘোষকে আমাদের এখনও খুব দরকার যে!

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তেফলো করুন আমাদের Google News, Twitter এবং Instagram পেজ

অন্য বিষয়গুলি:

Rituparna Sengupta Rituporno Ghosh Actress Director
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy