পুজোর চারটে দিন গর্তে সেঁধিয়ে যায় পুরুষসিংহরা। তাই বাজারহাট করতে যায় বাড়ির মেয়েরাই। কর্তামশাই তখন অনভ্যাসের শাড়ি পরে দরজায় টুকি-টুকি খেলে। আর মিনমিনে গলায় স্ত্রীকে নির্দেশ দেয়, ‘‘তাড়াতাড়ি ফিরে এসো। একা বড্ড ভয় লাগে।’’
ভয়টা ওই ‘স্ত্রী’কে। না, নিজের নয়। কার কে জানে? তবু বাড়ির দেওয়ালে লিখে রাখতেই হয়— ‘‘ওহে স্ত্রী, তুমি কাল এসো।’’ এটাই হয়ে আসছে ফি-বছর। উৎসবের মরসুমে আসে ওই মহিলা। নাম ধরে ডাকে পুরুষদের। আর তাতে সাড়া দিলেই মর্দানি খতম। পড়ে থাকে শুধু তার জামাকাপড়।
মোটামুটি এমনই প্রেক্ষাপটে দাঁড়িয়ে ‘স্ত্রী’। পরিচালক অমর কৌশিকের প্রথম ছবি। ক্যামেরার হাঁটাচলা আর ব্যাকগ্রাউন্ড স্কোর খানিকটা ক্লিশে হলেও গা ছমছমে ব্যাপারটা দাঁড়িয়ে যায়। অস্বস্তি বাড়ায় ওই নিশিডাক। কিন্তু এই মহিলা সবার নাম জানে কী ভাবে? প্রশ্ন শুনেই মেজাজ হারায় সবজান্তা বইওয়ালা (পঙ্কজ ত্রিপাঠী)। মুখ ভেটকে বলে, ‘‘ওর কাছে সবার আধার লিঙ্ক করা আছে।’’ রসিকতা। কিন্তু ওতেই বোঝা যায়, এ ছবি শুধু ভয় দেখাতে নয়।
স্ত্রী পরিচালনা: অমর কৌশিক অভিনয়: রাজকুমার রাও, শ্রদ্ধা কপূর, পঙ্কজ ত্রিপাঠী ৫.৫/১০
হরর-কমেডি গোত্রের ছবি বলিউডে বিরল। পরিচালকের চেষ্টাটা তাই প্রশংসনীয়। ঘণ্টা দুয়েকের ছবি মাঝে খানিক গতি হারালেও, মোটামুটি একমুখী বলা যায়। নায়কের চরিত্রে রাজকুমার রাও আবারও মনকাড়া। মেদহীন।
‘নিউটন’-এর সেই ‘আরবান নকশাল’ এখানে নকশা তোলেন ব্লাউজ, লেহঙ্গায়। নাম, ভিকি। পেশায় দর্জি। তবে মর্জিতে আর পাঁচটা পুরুষের চেয়ে বেশ আলাদা। ফিতে লাগে না তার। চোখের দেখায় মেপে নেয় মহিলাদের। অথচ সে দৃষ্টিতে লালসা নেই। ‘স্ত্রী’র হাত থেকে শহরকে রক্ষার ভার চাপে তাই তার কাঁধেই।
কিন্তু কী ভাবে! ছবির দ্বিতীয়ার্ধ জুড়ে সেই অ্যাডভেঞ্চার। তবে তার ফাঁকে ফাঁকে পঙ্কজ, রাজকুমার কিংবা বাকি দুই অভিনেতার অনবদ্য কমিক টাইমিং কিংবা ধারালো সংলাপ না থাকলে নিছক ভূতের গল্প দিয়ে দর্শক ধরে রাখাটা কঠিন হতো।
কিন্তু পুরুষতান্ত্রিক সমাজের বিরুদ্ধে প্রতিশোধ নিতে আসা ওই ‘স্ত্রী’র গল্পটার কী হল? ছবিতে শ্রদ্ধা কপূর আগাগোড়া রহস্যময়ী। অভিনয়ে বিশ্বাসযোগ্য। কিন্তু সে-ই কি ‘স্ত্রী’? রহস্যটা থাক।
আর ভয়? হল থেকে বেরিয়ে এক তরুণী তাঁর পুরুষ সঙ্গীকে বলছিলেন, ‘‘সিটে সিঁটিয়ে ছিলাম। আবার ভালও লাগছিল। এ ভাবেও যদি বছরে চারটে ‘অচ্ছে দিন’ আসে, খারাপ কী! মেয়েরা তো নির্ভয়ে থাকবে।’’
একটু যেন থমকে গেলেন পুরুষটি। ‘‘যত্ত সব গাঁজাখুরি,’’ বলেই হনহনিয়ে হাঁটা লাগালেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy