Advertisement
১৩ নভেম্বর ২০২৪
movie

8/12: সৎ প্রচেষ্টা, তবু লক্ষ্যভেদ দূর

ছবিটি একটি খণ্ডচিত্রের মতো। ব্রিটিশ অত্যাচারের সীমা বাঁধ ভেঙেছে। তাই তাদের বুকে সন্ত্রাস তৈরি করা বাংলার বিপ্লবীদের কাছে আশু কর্তব্য।

মধুমন্তী পৈত চৌধুরী
কলকাতা শেষ আপডেট: ৩১ জানুয়ারি ২০২২ ০৬:০২
Share: Save:

উধম সিংহ এবং বিনয়-বাদল-দীনেশ! প্রথম জনের নাম ছাড়া বিশেষ তথ্য জনমানসে নেই। অন্য ত্রয়ীর নাম একইসঙ্গে উচ্চারিত হয়, তাঁদের সম্পর্কে মানুষ কম-বেশি জানেন। উধমের সম্পর্কে বেশি তথ্য নেই বলেই তাঁর ব্যক্তিসত্তার একটি আভাস দিতে চেয়েছিলেন পরিচালক সুজিত সরকার, তাঁর ছবি ‘সর্দার উধম’-এ। অরুণ রায়ের দেড় ঘণ্টার ছবি ‘৮/১২ বিনয় বাদল দীনেশ’ ব্রিটিশ অত্যাচারে‌র বিরুদ্ধে বাংলার তিন তরুণ বিপ্লবীর প্রতিবাদ, বলিদানগাথা। এই ছবিতে চরিত্রের চেয়ে ঘটনা বড়। তাই আগাগোড়া নজরে থাকে ইনস্পেক্টর জেনারেল লোম্যান হত্যা, রাইটার্স অভিযান।

ছবিটি একটি খণ্ডচিত্রের মতো। ব্রিটিশ অত্যাচারের সীমা বাঁধ ভেঙেছে। তাই তাদের বুকে সন্ত্রাস তৈরি করা বাংলার বিপ্লবীদের কাছে আশু কর্তব্য। হেমচন্দ্র ঘোষ (শাশ্বত চট্টোপাধ্যায়), রসময়, নিকুঞ্জের মতো অভিজ্ঞ বিপ্লবীদের দেখানো পথেই কারাবিভাগের অধিকর্তা সিম্পসন হত্যার গুরুদায়িত্ব কাঁধে নেয় বিনয়কৃষ্ণ বসু (কিঞ্জল নন্দ), বাদল গুপ্ত (অর্ণ মুখোপাধ্যায়) এবং দীনেশচন্দ্র গুপ্ত (সুমন বসু)। রাইটার্স অভিযানের আগে ইনস্পেক্টর জেনারেল লোম্যানকে হত্যা করেছে বিনয়। তাই চিত্রনাট্যের খাতিরে অন্য দু’জনের চেয়ে খানিক বেশি গুরুত্ব পেয়েছে বিনয়ের চরিত্রটি।

৮/১২ বিনয় বাদল দীনেশ
পরিচালক: অরুণ রায়
অভিনয়: কিঞ্জল, অর্ণ, সুমন, শাশ্বত, অনুষ্কা, গুলশনারা
৬/১০

ছবিটি সাদা-কালো কালার ফ্রেমে। পিরিয়ড পিস হিসেবে তা ছবির পক্ষে কাজ করেছে। তবে সৌম্য রিতের উচ্চকিত আবহসঙ্গীত ছবির দুর্বলতম স্তম্ভ বলে মনে হয়েছে। ওটিটি সিরিজ়ের মতো আবহসঙ্গীতের ঝঙ্কার এই ছবিতে অন্তত একেবারেই মানায়নি। স্লো মোশনে অ্যাকশন দৃশ্যে স্টাইলাইজ়েশন করা হয়েছে। এই ধরনের ছবির স্বাভাবিক চলনের নিরিখে বাংলা ছবি হিসেবে এটি নতুন পদক্ষেপ। তা দেখতে মন্দ লাগেনি। ছবির শেষ কুড়ি মিনিট ধরে যত্ন করে গড়ে তোলা হয়েছে অলিন্দ যুদ্ধ। তবে ছবির চিত্রনাট্য আরও ঘটনাবহুল করে তোলা যেত না কি? এতে নাটকীয়তাও বাড়ত, চরিত্রায়ণ আরও মজবুত হত। হেমচন্দ্র ঘোষের নাম মাত্র একবারই ছবিতে বলা হয়। রসময়, নিকুঞ্জের পরিচয় সম্পর্কে তেমন কিছু বলা হয় না। দর্শক যে সবটা জেনেশুনে ছবি দেখবেন, তা তো না-ও হতে পারে।

যে তরুণ তিন তুর্কির উপরে এ ছবি ভরসা করেছে, তাঁরা সে মান রেখেছেন। কিঞ্জল, অর্ণ এবং সুমন তিন জনকেই বিপ্লবীর চরিত্রে সপ্রতিভ লেগেছে। ছবিতে ব্রিটিশদের নারকীয় অত্যাচারের বীভৎসতা তুলে ধরা হয়েছে গুলশনারা খাতুনের চরিত্র দিয়ে। নিজের অভিনয়ে সেই আঘাত জীবন্ত করে তুলেছেন অভিনেত্রী। হেমচন্দ্রের চরিত্রে শাশ্বত সুন্দর। ভাল লেগেছে দেবরাজ মুখোপাধ্যায়, শঙ্কর দেবনাথ, অনুষ্কা চক্রবর্তীকেও। তবে খরাজ মুখোপাধ্যায়ের চরিত্রটি যেন ঠিকমতো প্রতিষ্ঠা করা হয়নি। সব্যসাচী চক্রবর্তীর কণ্ঠে ধারাভাষ্য ছবির আবহ তৈরি করে দেয়।

বাংলায় বায়োপিক-নির্ভর ছবির সংখ্যা বেশ কমই। বাজেটের সীমাবদ্ধতাকে ছাপিয়ে সংক্ষিপ্ত এবং একঘটনাকেন্দ্রিক ছবিটিকে যে ভাবে ভাবা হয়েছে, তা পরিচালকের দূরদর্শিতার পরিচয় দেয়। অভিনেতাদের প্রচেষ্টাও নজর কাড়ে। তবে সেরার শিরোপা পেতে হয়তো আরও কিছুটা পথ হাঁটতে হত এই ছবিকে।

অন্য বিষয়গুলি:

movie review
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE