Advertisement
২৮ অক্টোবর ২০২৪
Movie Review

কাহিনিতে নেই রোমাঞ্চের তীব্রতা! ‘দো পাত্তি’ ভারতীয় দর্শকের কাছে বেদনাদায়ক প্রযোজনা

পুরো ছবিটি দেখে অবশ্য ঠিক কোথায় ‘রোম্যান্স’ আর কোথায় ‘থ্রিল’, খুঁজে পেতে কালঘাম ছুটতে পারে দর্শকের।

Image of Kriti Sanon and Kajol

‘দো পাত্তি’ ছবিতে অভিনয় করেছেন কাজল এবং কৃতি শ্যানন। ছবি: সংগৃহীত।

সুদীপ ঘোষ
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৮ অক্টোবর ২০২৪ ১৭:২৭
Share: Save:

মিলেনিয়াম পেরিয়েও যদি ওটিটিতে সিনেমা দেখতে বসে সত্তরের দশকের ভাবধারায় তৈরি কোনও হিন্দি ছবি দেখতে বাধ্য হতে হয়, তার থেকে দুঃখজনক অভিজ্ঞতা বোধহয় আর কিছুর সঙ্গে তুলনীয় হতে পারে না। কাজল, কৃতী শ্যানন, তনভি অজ়মি অভিনীত ‘দো পাত্তি’ ওটিটি ছবিটিকে বলা হচ্ছে ‘রোম্যান্টিক-থ্রিলার’। পুরো ছবিটি দেখে অবশ্য ঠিক কোথায় ‘রোম্যান্স’ আর কোথায় ‘থ্রিল’, খুঁজে পেতে কালঘাম ছুটতে পারে দর্শকের। মানে যদি কেউ নারী-পুরুষের খানিক অন্তরঙ্গ মুহূর্ত দেখানোটাই রোম্যান্স ভাবেন, তা হলে অন্য কথা। কিন্তু ‘থ্রিল’ ঠিক কোথায়, তা বোঝা কঠিন। মোদ্দা কথা, অত্যন্ত নড়বড়ে একটি চিত্রনাট্যের উপর খাড়া করা হয়েছে পুরো ছবিটিকে।

এই ছবির কাহিনিকার কণিকা ধিলোঁ। তিনি মুম্বইয়ে কাহিনিকার হিসাবে বেশ স্বনামধন্য। ২০১৮ সালে অনুরাগ কাশ্যপ পরিচালিত ‘মনমর্জিয়াঁ’ ছবিটির কাহিনি তাঁর। পরবর্তীকালে ‘জাজমেন্টাল হ্যায় কেয়া?’(২০১৯), ‘হাসিন দিলরুবা’ (২০২১) বা ‘রেশমী রকেট’ (২০২১)–এর মতো গল্পও তাঁর হাত থেকেই বেরিয়েছে। এ হেন এক লেখকের হাত থেকে ‘দো পাত্তি’র মতো বস্তাপচা গল্প কী ভাবে বের হয়, তা দুর্ভাবনার বিষয়। তিনি আবার কৃতীর সঙ্গে এই ছবির সহ-প্রযোজকও। নিজের প্রযোজনায় এমন কাহিনি তিনি কেন লিখলেন, তা সত্যিই এক গভীর রহস্য। ‘দো পাত্তি’ দিয়ে কৃতীও ওটিটি প্রযোজনা শুরু করলেন। তাঁর মতো সফল পেশাদার কী ভাবে বলিউডের মতো তীব্র প্রতিযোগিতামূলক একটি ক্ষেত্রে এমন নড়বড়ে কাহিনি ভিত্তি করে কাজ শুরু করলেন, সেটিও বিস্ময়কর!

Image of Kajol

ছবিতে পুলিশ আধিকারিকের ভূমিকায় কাজল। ছবি: সংগৃহীত।

‘দো পাত্তি’তে কৃতী দ্বৈত চরিত্রে রয়েছেন। দুই চরিত্রে, তাদের স্বভাব বোঝাতে তিনি একইসঙ্গে স্বল্পবসনা এবং ‘স্টিরিওটাইপ’ ভারতীয় নারী। অর্থাৎ অভিনেতা হিসাবে, নায়িকা হিসাবে, তিনি এখানে সবচেয়ে বেশি লাভবান। ঠিক যে-যে ভাবে একজন সমসাময়িক নায়িকা একটি ছবিতেই নিজেকে মেলে ধরতে চাইতে পারেন, তার সবকটি ক্ষেত্রেই ‘দো পাত্তি’ তাঁর জন্য লাভজনক। একদিকে ‘গ্ল্যামরাস’, ‘শক্তিশালী’ আধুনিকা, অন্যদিকে পতিব্রতা এবং নম্র। ছবির নায়িকা হিসাবে তিনি বিরাট জায়গা পাচ্ছেন, ‘স্ক্রিন টাইম’ বা পর্দা-সময়ের ভিত্তিতেও। কিন্তু নিজের লগ্নির বিষয়টি তিনি দেখলেন না? নাকি প্রযোজক হিসাবে যে পরিপক্ক অভিজ্ঞতার প্রয়োজন তা এখনও তাঁর আয়ত্তে আসেনি?

Image of Kriti Sanon

দ্বৈত চরিত্রে অভিনয় করেছেন কৃতি শ্যানন। ছবি: সংগৃহীত।

এই লেখার দাবিতেই ওটিটি প্ল্যাটফর্মের নাম উল্লেখ করতে বাধ্য হচ্ছি। ছবিটি ‘নেটফ্লিক্স’-এ ২৫ অক্টোবর থেকে দেখা যাচ্ছে। আন্তর্জাতিক ‘নেটফ্লিক্স’-এ কী অসাধারণ কিছু ‘ওয়েব অরিজিনাল’ এবং সিরিজ় দেখতে পাওয়া যায়! একটি উদাহরণই যথেষ্ট। ভাবুন ‘মানি হেইস্ট’-এর মতো একটি ‘অরিজিনাল সিরিজ়’। কী দুর্দান্ত কাহিনি এবং বিন্যাস। সেখানে ভারতীয় ‘নেটফ্লিক্স’! ‘দো পাত্তি’-এর মতো ‘থ্রিলার’। দাঁড়াতেই পারবে না। কোনও তীব্রতাই নেই কাহিনির রোমাঞ্চে। ভারতীয় দর্শক হিসাবে অত্যন্ত বেদনাদায়ক। এ দেশের কর্পোরেট কর্তৃপক্ষ কি মানের নিরিখে এতটাই নিম্ন এবং সহনশীল?

ছবির পিছনে খরচ তো দেখা যাচ্ছে যথেষ্ট। মুসৌরির আউটডোর, কাজল, কৃতীর মতো অভিনেত্রী যে খুব কম মূল্যে এই কাজ করেছেন, তা তো মনে হয় না। ড্রোন ক্যামেরা, অন্য প্রযুক্তির ব্যবহারও রয়েছে পুরোদমে। তা হলে? ছবির শিরদাঁড়া যে সব সময়েই কাহিনির শক্তি, সেই অমোঘ সত্যটি কি এঁরা বোঝেন না, না বুঝতে অপারগ? তার প্রতি এত অবমাননা! বিচার চলাকালীন আসামি তার মানসিক উৎপীড়নের কথা বিনা বাধায় বলার সুযোগ পাচ্ছে, অথচ সেই বক্তব্যের ভিত্তি বোঝার জন্য কোনও বিশেষজ্ঞের মতামত নেওয়া হচ্ছে না, ভারতীয় বিচারব্যবস্থায় মেনে নেওয়া যায়? গবেষণার প্রতি এতটা অবজ্ঞা ওটিটির দর্শক মেনে নেবেন?

এতগুলি ভ্রান্তিযুক্ত একটি ছবিকে ১০-এ ৩-এর বেশি দেওয়া যায়? আপনারাই বলুন।

অন্য বিষয়গুলি:

Do Patti Kajol Kriti Sanon
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE