‘পেন্ডুলাম’য়ে শ্রীলেখা
একটা বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্ক। একটা জেন ওয়াই প্রেম। এক খিটখিটে বুড়ি। আর তার কুচক্রী ছেলে।
আপাত অসংলগ্ন কয়েকটা ঘটনা। কিন্তু কোনও না কোনও সূত্রে যুক্ত একে অপরের সঙ্গে। হাতিবাগান থেকে বেহালা কলকাতা জুড়ে ছড়িয়ে থাকা এই ঘটনাগুলো নিয়েই ছবি ‘পেন্ডুলাম’।
পরিচালক সৌকর্য ঘোষাল। আদতে অলংকরণশিল্পী সৌকর্যের এটাই প্রথম ফিচার ছবি। গল্প এবং চিত্রনাট্যও তাঁর লেখা। ছবিতে অভিনয় করেছেন শ্রীলেখা মিত্র, রজতাভ দত্ত, রাধিকা আপ্তে ও সমদর্শী দত্ত।
শ্রীলেখা মিত্র ছবিতে এক ইংরেজির অধ্যাপিকা। তরুণ পরিচালকের প্রথম ছবিতে কাজ করার অভিজ্ঞতা কেমন? “আমি কিন্তু কখনওই ও ভাবে দেখি না। কে প্রথম পরিচালনা করছে বা কে প্রথম প্রোডিউস করছে এটা ভাবার কোনও মানে নেই। আমি দেখি স্ক্রিপ্ট। সেটা যদি মনের মতো হয়, চরিত্রটা যদি ভাল লেগে যায়, তবেই আমি অভিনয় করি,” বলছিলেন শ্রীলেখা।
এর আগে শ্রীলেখা ‘ভূতের ভবিষ্যৎ’য়ে অভিনয় করেছেন। সেটা ছিল অনীক দত্তের প্রথম ফিচার ছবি। ‘পেন্ডুলাম’ও প্রথম বারের পরিচালকের। কিন্তু দু’টো ছবিতে অভিনয় করার তফাতটা কোথায়? “‘ভূতের ভবিষ্যৎ’য়ের আগেই অনীক (দত্ত)দার একটা পরিচিতি ছিল বিজ্ঞাপন জগতে কাজের সুবাদে। সেখানে সৌকর্য হয়তো ততটা পরিচিত নয়। তবে নতুন পরিচালকের কাজ করার মধ্যে একটা ফ্রেশনেস আছে।”
এই মুহূর্তে বাংলা সিনেমায় ফ্রন্টাল ন্যুডিটি নিয়ে অনেক কথা হচ্ছে। আপনার কাছে কি মনে হয় এটা বাংলা সিনেমার একটা সাহসী পদক্ষেপ? “দেখুন, আমার কাছে কোনও ছবি সাহসী হয় কনসেপ্টে। ছবির কনসেপ্ট-কনটেন্ট যদি সাহসী হয়, তবেই আমি কোনও ছবিকে সাহসী বলব। শুধু শরীর দেখানোর জন্য বলব না। ইরানে তো সেক্স আর ভায়োলেন্স নিষিদ্ধ। কিন্তু তার মানে কি সেখানে সাহসী ছবি হচ্ছে না। জাফর পনাহির ‘অফসাইড’ বলে একটা ছবি আছে। ইরানে মেয়েদের ফুটবল দেখতে যাওয়া নিষিদ্ধ, কিন্তু কিছু মেয়ে চলে যায় স্টেডিয়ামে। এইটাকে আমি সাহসী বলব। কনসেপ্টের দিক থেকে। প্রথা ভাঙার জন্য। ‘কাঁটাতার’য়ে তো আমিও শরীর দেখিয়েছিলাম। কিন্তু সেখানে স্ক্রিপ্টে যেমন চাওয়া হয়েছে তেমনটা করেছি। কেউ যদি স্ক্রিপ্টে কনভিন্সড হয়ে শরীর দেখান, আমার কোনও আপত্তি নেই,” বললেন শ্রীলেখা।
‘পেন্ডুলাম’য়ে শ্রীলেখা ছাড়াও আছেন রজতাভ দত্ত। কিন্তু তিনি তো এখন বাণিজ্যসফল ছবির হিট খলনায়ক! কেন অভিনয় করলেন এ ছবিতে? “ঋতুপর্ণ ঘোষ একবার আমাকে বলেছিলেন, ‘সে-ই ভাল পরিচালক, যে ছবিকে আগে নিজের মাথায় দেখে নিতে পারে।’ সৌকর্যর কাছে যখন স্ক্রিপ্টটা শুনি আমারও তাই মনে হয়েছিল। ও ছবিটা দেখে নিয়েছে। তাই রাজি হয়ে গেলাম ‘পেন্ডুলাম’ করতে। শু্যটিংয়ে অনেকবার পরিচালকের সঙ্গে আমার মতবিরোধ হয়েছে। আমি যা ভাবছি, পরিচালক পুরো উল্টো ভাবছে। আমি কখনও সেটা বলেছি। কখনও স্ক্রিপ্টের প্রতি লয়্যাল থেকেছি,” শু্যটিংয়ের অভিজ্ঞতা শোনাতে শোনাতে বলছিলেন রজতাভ।
কিন্তু যে দর্শকরা এত দিন তাঁর অভিনয় দেখে হাততালি দিয়েছে। তাদের জন্য কী আছে এ ছবিতে? রজতাভ উত্তর দিলেন, “আমাদের এখানে একটা ধারণা আছে, সিরিয়াস ছবি মানেই বোরিং। সেটা ‘পেন্ডুলাম’য়ে হবে না। বাস্তব-পরাবাস্তবের ক্ষীণ সীমারেখা মুছে দিয়ে, এই যে অনেক স্তরে গল্প বলা, এটাও দর্শকদের ভাল লাগবে।”
ছবিতে সমদর্শী দত্ত অভিনীত চরিত্রটা একেবারে এই প্রজন্মের। যে পাড়ার সুন্দরী মেয়েকে পটাতে ‘ছিপ ফেলে’। সফল হয়। আবার নিজেদের অন্তরঙ্গ মুহূর্তের ছবি পাওয়ার জন্যও উত্তেজনায় ফোটে। সমদর্শী বলছিলেন, “আমার স্ক্রিপ্টটা পড়ে যেটা সব থেকে ভাল লেগেছিল, তা হল একই সঙ্গে একাধিক গল্পকে জোড়ার স্টাইলটা। আর এই রকম প্রেম প্রেম পাওয়া চরিত্র তো এর আগে করিনি। তাই অভিনয়ে রাজি হয়েছিলাম।” কিন্তু সমদর্শী আর রাধিকা আপ্তের সম্পর্কেও আসে সমস্যা।
ছবিতে সময় যত গড়িয়েছে, একের পর এক সমস্যার উদয় হয়েছে। বিভিন্ন আর্থ-সামাজিক অবস্থার মানুষের কখনও মানসিক আবার কখনও শারীরিক দুঃখ-কষ্ট-যন্ত্রণা-রক্তক্ষরণ ফুটে উটেছে ‘পেণ্ডুলাম’য়ে। আবার সেই সমস্যাগুলোর সমাধান হয়েছে।
কিন্তু, কী ভাবে?
খবরের কাগজের এক খবরের মধ্য দিয়ে। সেটা না হয়, ছবিটা দেখার জন্যই তোলা থাক।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy