বব বিশ্বাস ছবির দৃশ্য।
বব বিশ্বাস
পরিচালক: দিয়া অন্নপূর্ণা ঘোষ
অভিনয়: অভিষেক, চিত্রাঙ্গদা, সমারা, পরান, রজতাভ, কৌশিক
৫.৫/১০
আট মিনিটের একটি চরিত্র! যার সুবাদে ন’বছর আগে তৈরি একটি হিন্দি থ্রিলারের মান বেড়ে গিয়েছিল। তখন ওটিটি ছিল না। রুদ্ধশ্বাস থ্রিলার দেখাও দর্শকের রোজনামচা হয়ে দাঁড়ায়নি। সুজয় ঘোষের ‘কহানি’র প্রায় এক দশক পরে, ওটিটির পর্দায় ‘বব বিশ্বাস’ দেখতে গিয়ে অনেক প্রশ্ন মনে ভিড় করতে পারে। প্রথমত, বব বিশ্বাসের চরিত্রে শাশ্বত চট্টোপাধ্যায় নন, রয়েছেন অভিষেক বচ্চন। দ্বিতীয়ত, এই ছবি কি আদৌ ‘কহানি’র স্পিন-অফ? তৃতীয়ত, অভিষেক কি বব হিসেবে বিশ্বাসযোগ্য হয়ে উঠলেন? এক মিনিট! এই সব প্রশ্নের উত্তর কি রয়েছে ববের কাছে?
সুজয়-কন্যা দিয়া অন্নপূর্ণা ঘোষের প্রথম ছবি ‘বব বিশ্বাস’ এজ-অব-দ্য-সিট থ্রিলার বলতে যা বোঝায়, তা একেবারেই নয়। ‘কহানি’ ছবিতে ববের স্বল্প পরিসরে উপস্থিতি ছিল হাড় হিম করা। এখানে ববের প্রথম দৃশ্যে ডাক্তার তাকে বলে দিচ্ছে, তার নাম ‘বব’। কারণ সে স্মৃতি হারিয়েছে। ববের স্মৃতি লোপ পাওয়ার ট্রোপ কি সুপরিকল্পিত? এই ছবির গল্পকার এবং চিত্রনাট্যকার সুজয় পরোক্ষে দর্শককে কি স্মৃতি হাতড়াতে বারণ করছেন? কারণ ‘বব বিশ্বাস’-এর শেষ দৃশ্যটি ছাড়া ‘কহানি’র সঙ্গে তার বিশেষ যোগ নেই।
ছবির প্রথমার্ধে বব (অভিষেক বচ্চন) তার পুরনো জীবনে নিজেকে খাপ খাওয়ানোর চেষ্টা করে। স্ত্রী মেরি (চিত্রাঙ্গদা সিংহ), সৎ-মেয়ে মিনি (সমারা তিজোরি) এবং ছেলে বেনিকে (রণিত অরোরা) নিয়ে তার সংসার। জীবনবিমা কোম্পানিতে সে চাকরি করে। এর সমান্তরালে চলেছে কলকাতায় ট্যাবলেটের আকারে পড়ুয়াদের কাছে মাদক বিক্রির চোরা-কারবার। এর সঙ্গেও কি রয়েছে ববের যোগসাজশ?
বব বিশ্বাসের জন্মলগ্নে তাকে এমন এক পেশাদার খুনি হিসেবে দেখানো হয়েছিল, যে অবলীলায় হাসিমুখে গুলি চালিয়ে দিতে পারে। ‘বব বিশ্বাস’ ছবিটির কেন্দ্রে রয়েছে ববের জীবনবোধের সঙ্কট (এগজ়িস্টেনশিয়াল ক্রাইসিস)। দার্শনিক আলোচনায় না গেলেও, গির্জায় পাদ্রির কাছে ববের অপরাধ স্বীকার করা (কনফেশন), বা কৃষ্ণ-কালীয় নাগের অনুষঙ্গ কর্মফল, অদৃষ্টের মতো ধারণাগুলিকে প্রতিষ্ঠা করে। তাই এই ছবিকে কতটা থ্রিলার হিসেবে দেখা হবে, তা নিয়ে আলোচনা চলতে পারে।
ছবি ঘোষণার মুহূর্ত থেকে প্রচারপর্বে অভিষেক এবং শাশ্বতকে নিয়ে চর্চা চলেছে। কিন্তু দুই অভিনেতার চরিত্রায়নে অনেক ফারাক রয়েছে, যা ছবি স্পষ্ট করে দিয়েছে। ‘ব্রিদ টু’, ‘লুডো’, ‘দ্য বিগ বুল’— গত দেড় বছরে নজরে রয়েছেন অভিষেক। সাম্প্রতিক কালে তাঁর অভিনীত চরিত্রের মধ্যে বব বিশ্বাস অন্যতম সেরা কাজ হয়ে থাকবে। চরিত্র হিসেবে বব যে এই ছবিতে সর্বোৎকৃষ্ট, সেটা নয়। কিন্তু সুজয়ের লেখা চরিত্রটিকে অভিনয়ের মধ্য দিয়ে নতুন মাত্রা দিয়েছেন অভিষেক। সাহায্য পেয়েছেন মেকআপেরও।
তাঁর সঙ্গে কালীদার (পরান বন্দ্যোপাধ্যায়) দৃশ্যগুলি ছবির ইউএসপি। চরিত্র হিসেবে কালীদা বহুমুখী। আধো হিন্দি-বাংলা মেশানো লব্জ যে কত সুন্দর করে বলা যায়, তা পরানের মুখে না শুনলে উপভোগ করা যায় না! ববের মেয়ের চরিত্রে সমারা বেশ সম্ভাবনাময়ী। চিত্রাঙ্গদা ভাল। রজতাভ দত্ত এবং কৌশিক রাজ চক্রবর্তী তাঁদের চরিত্রে সুন্দর মানিয়েছেন। বিশেষ চরিত্রে পুরব কোহালিও নজর কেড়েছেন।
ছবির দুর্বল জায়গা, তার লেখনী। প্লট হিসেবে ‘বব বিশ্বাস’ জমাটি নয়। বিশেষত, অতীত-ভবিষ্যৎ বহির্ভূত ববকে ঠিক কোন জায়গায় রাখতে চেয়েছেন পরিচালক, তা ছবিশেষেও প্রহেলিকার মতো। গৈরিক সরকারের ক্যামেরা শহরের অন্ধকার গলিতে ঘুরেছে। তবে অতিমারির বাধ্যবাধকতার জন্য হয়তো চেনা তিলোত্তমাকে সে ভাবে ধরা হয়নি। আবহসঙ্গীতও জোরালো নয়।
বাঁধা গতের থ্রিলার দেখা চোখে এই ছবি বেশ মন্থর। দিনে-রাতে বব কী ভাবে নিরালায় পরপর খুন করে ফেলে, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে পারে। ছবি হিসেবে না হলেও, চরিত্র হিসেবে মনে থাকবেন অভিষেক ‘বব’ বচ্চন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy