Advertisement
১৮ ডিসেম্বর ২০২৪
review of Prosenjit weds Rituparna

কেমন হল ‘প্রসেনজিৎ ওয়েড্‌স ঋতুপর্ণা’, জানাচ্ছে আনন্দবাজার অনলাইন

হইহই কাণ্ড! প্রসেনজিৎ আর ঋতুপর্ণার বিয়ে যে! বাংলা সিনেমার আইকনিক জুটি নিয়ে তৈরি ছবি, সেই সময়ের কথা মনে করিয়ে দেয়, যখন ‘স্টার’দের ধরা যেত না।

কতটা জমজমাট হল প্রসেনজিৎ-ঋতুপর্ণার বিয়ে?

কতটা জমজমাট হল প্রসেনজিৎ-ঋতুপর্ণার বিয়ে? ছবি: সংগৃহীত।

পৃথা বিশ্বাস
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৫ নভেম্বর ২০২২ ২১:৫৪
Share: Save:

তারকারা আমাদের জীবনে অনেকটা জুড়ে থাকে। এতটাই যে, আমরা মাঝেমাঝে টেরও পাই না। কখনও সেটা হয়ে ওঠে ভালবাসার সম্পর্ক, কখনও আবার একটা বিড়ম্বনা। কিন্তু দু’ক্ষেত্রেই বিষয়টা খানিকটা অবসেশনের জায়গায় পৌঁছে যেতে পারে। তখনই গুলিয়ে যায় বাস্তব এবং কল্পনা। সেই ভাবনা থেকেই এই ছবির শুরু। কিন্তু কখন যে সেটা অজান্তেই একটা মিষ্টি প্রেমের গল্পে পরিণত হয়, তা বোঝাও যায় না। আর সেখানেই জমে যায় ‘প্রসেনজিৎ ওয়েড্‌স ঋতুপর্ণা’।

ছবির গল্প সহজ নয়। অনেকগুলো দিক রয়েছে। ‘ফ্যান অবসেশন’, সিনেমাকে ভালবাসা, নব্বইয়ের বাংলা সিনেমার স্মৃতিচারণ, রিয়্যালিটি শো, রোম্যান্স— গল্পে রয়েছে সবই। কিন্তু গল্প সহজ না হলেও সহজ ভাবে বলতে পেরেছেন নতুন পরিচালক সম্রাট শর্মা। ছবির ফ্রন্ট ক্রেডিট থেকে এন্ড ক্রেডিট— বোঝা যায় তিনি নিজেও নব্বই দশকের বাংলা সিনেমার ভক্ত। তাই সেই সময়কেই শ্রদ্ধার্ঘ্য জানাতে চেয়েছেন এই ছবির মাধ্যমে। ২০২২ সালের বাণিজ্যিক প্রেমের ছবির চিত্রনাট্যে এই বিষয়গুলো সন্তর্পণে ঢুকিয়ে দেওয়া মোটেই সহজ কাজ নয়। সে দিক থেকে বিচার করলে এই ছবির চিত্রনাট্যকে বেশ বুদ্ধিদীপ্ত বলতেই হয়। কারণ, বেশ কিছু দৃশ্য যেখানে ইচ্ছাকৃত ভাবেই চড়া দাগের, ঠিক তার পরবর্তী দৃশ্যগুলিতেই ছবির চরিত্রেরা উল্টো পথে হেঁটে মনে করিয়ে দেবে, সিনেমা আর বাস্তবের ফারাকটা। এই পার্থক্যটা আরও চোখে পড়বে, কারণ ছবির মুখ্য চরিত্রই গল্পে বাস্তব আর সিনেমার ফারাক করতে পারছে না!

ছবির একটি দৃশ্যে ঋষভ বসু এবং ইপ্সিতা মুখোপাধ্যায়।

ছবির একটি দৃশ্যে ঋষভ বসু এবং ইপ্সিতা মুখোপাধ্যায়। ছবি: সংগৃহীত।

ছবিতে মূল চরিত্র প্রসেনজিৎ (ঋষভ বসু) এবং ঋতুপর্ণা (ইপ্সিতা মুখোপাধ্যায়)। নামগুলোর ভার তাদের জীবনে আলাদা আলাদা ভাবে প্রভাব ফেলে। ঋতুপর্ণার মনে হয়, সে প্রসেনজিৎ নামের ছেলে ছাড়া আর কাউকে বিয়েই করবে না। আর প্রসেনজিতের মনে হয়, এই নামই তার জীবনের সবচেয়ে বড় বোঝা। দু’জনের বিয়ে হয়। স্বামী চেষ্টা করে স্ত্রীকে তার স্বপ্নের মানুষের সঙ্গে দেখা করিয়ে দেওয়ার, মানে আসল প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়। কিন্তু শেষমেশ গল্প কোন দিকে মোড় নেয়, সেটা নিয়েই ছবির গল্প। শেষটা অচেনা নয়। কিছুটা ‘হম দিল দে চুকে সনম’। কিছুটা আবার ‘রব নে বনা দি জোড়ি’। এই ছবিগুলির কথা মনে পড়ে যায়। তবে চেনা গল্পই নতুন মোড়কে ভরে আরও কিছুটা বাঙালিয়ানা এবং অনেকটা প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়কে জুড়ে কী ভাবে বলা হচ্ছে, সেটাই আসল।

ছবির মুখ্য চরিত্রে দু’জনেই নতুন। ছাপোষা বাঙালি ছেলের চরিত্রে ঋষভ, যে হঠাৎ প্রেমে পড়ে গিয়েছে, ভাল অভিনয় করেছেন। তারকা নিয়ে তাঁর চরিত্রের উন্মাদনা অন্য রকম। আবার প্রেমে পড়ার পর অন্য রকম। দু’ক্ষেত্রেই ঋষভ ভাল অভিনয় করেছেন। তবে চোখ সরানো যায় না ইপ্সিতার উপর থেকে। তাকে মূলত দুই কারণে পর্দায় দেখলে মন ভরে যায়। বাংলা সিনেমার যে সময়কে ভালবেসে পরিচালক এই গল্প বুনেছেন, সেই সময় বাণিজ্যিক প্রেমের ছবির নায়িকা গোলগাল-ভারী চেহারার হবে, ভাবাই যেত না। কিন্তু এই ছবিতে তেমনই একটি চরিত্র সেই ‘নায়িকা’-ধারণা ভেঙেছে। এবং সেই নায়িকাকে আরও অনায়াস করে তুলেছে ইপ্সিতা। ছটফটে, রাগী, স্বপ্ন দেখতে ভালবাসা মেয়ের চরিত্রে ইপ্সিতা অসম্ভব স্বতঃস্ফূর্ত। নাচ-গানের দৃশ্যেও তার মধ্যে একটুও জড়তা নেই। অন্যান্য চরিত্রে উল্লেখ্য মানসী সিংহ এবং অভিজিৎ গুহ।

তবে যাঁর কথা না বললেই নয়, তিনি প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়। এই ছবি জুড়ে তিনি আছেন, আবার নেই-ও। না আছে তাঁর নায়কসুলভ আবির্ভাব, না আছে অনেকটা স্ক্রিন টাইম। তিনি এ ছবির নায়ক হয়েও নায়ক নন। এমন একটা ছবি যে কেরিয়ারের এই পর্যায় এসে তিনি প্রযোজনা করবেন, সেটা অস্বাভাবিক নয়। কিন্তু অভিনয়ও করবেন এবং এতটাই অবলীলায় করবেন, তা ভাবাই যায় না। ছবিতে তাঁর উপস্থিতি বহু দিন মনে থাকবে।

নব্বই দশকের বাংলা সিনেমার আইকনিক জুটি প্রসেনজিৎ-ঋতুপর্ণাকে উৎসর্গ করে তৈরি এই ছবি। পরিচালক ‘মেলোড্রামা’ এবং ‘রিয়্যালিজ়ম’এর ভারসাম্য বজায় রাখার চেষ্টা করেছেন। ‘মেয়েদের বিয়ের পর এমন ধিঙ্গিপনা করা চলবে না’— এ জাতীয় সংলাপ যেমন রয়েছে, তেমনই রয়েছে ‘রান্না না পারাটা কোনও দোষ নয়, ছেলেরা তো কত কাজই পারে না’র মতো সংলাপ। ছবিতে ‘ফ্যান মন্তাজ’ অনেক রয়েছে। বিশেষ করে বেশ কিছু আইকনিক সংলাপের মধ্যে দিয়ে ‘প্রসেনজিৎ-ঋতুপর্ণা’কে ধরার চেষ্টা করা হয়েছে। সব দৃশ্যেই যে সেই চেষ্টা সফল হয়েছে, তা নয়। তবে মোটের উপর মন্দ লাগে না। ছবির দৈর্ঘ্য খুব বেশি না হলেও ক্লাইম্যাক্স একটু দীর্ঘ লাগতেই পারে। তবে রিয়্যালিটি শোয়ে ‘ড্রামা’ যে ভাবে তৈরি করা হয়, সে ভাবেই দৃশ্যায়ন করা হয়েছে। যাঁরা রিয়্যালিটি শো দেখে অভ্যস্ত, তাঁদের নেহাত মন্দ লাগবে না।

তবে সব দিক সামলেও এই ছবি আসলে সেই সময়কার ‘স্টার’দের নিয়ে, যাঁদের সহজে ছুঁয়ে দেখা যেত না। সময় অনেক বদলেছে। এখন সমাজমাধ্যমে চোখ রাখলেই তারকাদের আরও অনেক কাছের মনে হয়। তাই সেই ফেলে আসা সময়কে ধরে রাখার জন্য আদর্শ দুই নাম— প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায় এবং ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত। তাঁদের ঘিরে তৈরি এই ছবি সিনেমাপ্রেমীদের খুব একটা আজগুবি মনে হবে না।

অন্য বিষয়গুলি:

Movie Review Bengali Cinema Prosenjit Chatterjee Rituparna Sengupta
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy