‘ব্ল্যাক ওয়ারেন্ট’ ওয়েব সিরিজ়ের একটি দৃশ্যে জ়াহান কপূর এবং রাহুল ভট্ট। ছবি: সংগৃহীত।
বেশ কিছু বছর আগে কবি ভাস্কর চক্রবর্তী তাঁর এক কবিতায় খানিক এমন পঙ্ক্তি লিখেছিলেন— যারা জেলখানায় থাকে, শুধু তারাই কেবল বন্দি নয়। বিক্রমাদিত্য মোটওয়ানী এবং সত্যাংশু সিংহ, অর্কেশ অজয়, রোহিন রবীন্দ্রন নায়ার ও অম্বিকা পণ্ডিত পরিচালিত ওয়েব সিরিজ় ‘ব্ল্যাক ওয়ারেন্ট’ দেখতে বসে কারও যদি উল্লিখিত কবিতার পঙ্ক্তিটি মাথায় এসে ধাক্কা মারে, তবে তা একান্ত স্বাভাবিক ব্যাপার।
তিহাড় জেল। ভারতের অন্যতম প্রখ্যাত কারাগারটিকে ঘিরে বহু কথা, অতিকথা এবং মিথের জন্ম হয়েছে, হয়ে চলেছে এবং ভবিষ্যতেও হবে। কারণ, রাজধানী দিল্লির বুকে অবস্থিত এই কারাগারটি সাক্ষী থেকেছে অসংখ্য স্মরণযোগ্য ঘটনার এবং অবশ্যই এই কারাগারের বহু খুঁটিনাটিই বিস্মৃতির অতলে তলিয়ে গিয়েছে অথবা তার উঁচু প্রাকার টপকে বাইরে এসে পৌঁছতে পারেনি। তিহাড় জেলের এক সময়ের জেলার সুনীল গুপ্ত ও সাংবাদিক সুনেত্রা চৌধুরীর যৌথ ভাবে লিখিত বই ‘ব্ল্যাক ওয়ারেন্ট: কনফেশনস অফ আ তিহাড় জেলার’-কে ভিত্তি করে নির্মিত এই সিরিজ় এমন এক দড়ির উপর দিয়ে হেঁটেছে, যেখান থেকে সামান্যতম পা ফস্কালে তা চড়া দাগের থ্রিলার বা আবেগে থরোথরো নাটকে পর্যবসিত হতেই পারত। কিন্তু সাত পর্বে বিন্যস্ত এই সিরিজ় তার প্রথম পর্বের শুরু থেকেই বোঝাতে চেয়েছে, সে যে পথে হাঁটবে, তা যে কোনও কারাকাহিনির মতো নয়। কারাগার স্বপ্নভঙ্গের দেশ অথবা নতুন স্বপ্ন দেখানোর ‘সংশোধনাগার’ও নয়। তা একান্ত ভাবেই এমন এক জগৎ, যার সঙ্গে তার পাঁচিলের বাইরে থাকা মানুষজনের তেমন কোনও সম্পর্কে নেই। শুধু ধারণা আছে, মিথ আছে, অতিরঞ্জন আছে। সুনীল গুপ্ত তাঁর লিখনে সেই মিথ, অর্ধসত্য আর অতিকথাগুলিকেই ভাঙতে চেয়েছিলেন। এখানে পরিচালক চতুষ্টয়ও সেই কাজটিকে করেছেন আখ্যানের লম্বালম্বি চলনের সূত্রটিকে প্রথম থেকেই লঙ্ঘন করে।
আখ্যানের মূল চরিত্র সুনীল কুমার গুপ্ত চেহারায় ছোটখাটো। জেলারের চাকরির উপযুক্ত সে নয়, এ কথা তাকে শুনতে হয়েছিল ইন্টারভিউ বোর্ডেই। কিন্তু সেই বেড়া টপকে নিয়োগপত্র হাতে নিয়ে তিহাড়ে পৌছনোর সঙ্গে সঙ্গে আধিকারিক তাকে ভাগিয়ে দেয়। হাতে নিয়োগপত্র নিয়ে কিংকর্তব্যবিমূঢ় সুনীলের সামনে আবির্ভূত হয় এক সুদর্শন যুবক। সুনীলকে সে সাহায্য করতে চায়। সুনীল তাকে চিনতে পারেনি। অথচ সেই অজ্ঞাতপরিচয় যুবকের দৌলতেই সে বহাল হয়। এই সুদর্শন যুবাপুরুষটি চার্লস শোভরাজ, তিহাড় জেলের সেই সময়কার সবচেয়ে ‘মান্য’ অতিথি। এই সিরিজ়ে শোভরাজ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকায় রয়েছে। বার বার তাকে ফিরিয়ে আনা হয়েছে। তা ছাড়াও তার উপস্থিতির অন্য ব্যঞ্জনা রয়েছে। সে প্রসঙ্গে পরে আসা যাবে।
তিহাড়ে সুনীলের সঙ্গে নিযুক্ত হয়েছিল শিবরাজ সিংহ মঙ্গত এবং বিপিন দাহিয়া নামে আরও দুই যুবক। এদের মধ্যে মঙ্গত শিখ ধর্মাবম্বী। সুনীলরা তিন জন কাজ শুরু করে ডিএসপি রাজেশ তোমরের অধীনে। তোমর গোড়ার দিকে সুনীলের প্রতি তেমন সদয় ছিল না। তিহাড়ের অভ্যন্তর, কয়েদিদের ‘গ্যাং’ ও তাদের নিরন্তর প্রতিদ্বন্দ্বিতার ব্যাপারে তোমর সাবধান করলেও সেই জগতের পিচ্ছিল পথে বিপাকে পড়ে সুনীলই। কয়েদিদের দু’টি গ্যাংয়ের বিবাদে সে নিজে থেকেই মীমাংসা করতে গিয়ে বিপাকে পড়ে। কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর আচমকা জেল পরিদর্শনের সময় কয়েদিদের গোলমালে সে সাসপেন্ড (নিলম্বিত)-ও হয়ে যায়। সুনীলের পরিবার তাকে চাকরি ছাড়তে বললেও সে তার জেদ বজায় রেখে সাসপেনশন মেনে নেয় এবং চাকরিতে ফিরে যাওয়ার অপেক্ষা করতে থাকে।
এই পরিস্থিতিতেই দিল্লিতে ঘটে যায় গীতা ও সঞ্জয় চোপড়ার অপহরণ ও হত্যার ঘটনা। সেই সময়ে তোলপাড় ফেলে দেওয়া এই ঘটনায় অভিযুক্ত রঙ্গা ও বিল্লার ফাঁসির আদেশ দেয় আদালত। ফাঁসি তিহাড়েই দেওয়া হবে বলে স্থির হয়। সুনীলকে নিলম্বিত অবস্থা থেকে মুক্তি দিয়ে ডেকে পাঠানো হয় এবং তার উপরেই ফাঁসি তত্ত্বাবধানের দায়িত্ব পড়ে। এই সময়েই সুনীল পরিচিত হয় ‘ব্ল্যাক ওয়ারেন্ট’ বা ফাঁসির আদেশনামার সঙ্গে। রঙ্গা-বিল্লার ফাঁসি ও তার অনুষঙ্গে ঘটে যাওয়া ঘটনাক্রম নরম স্বভাবের সুনীলের চরিত্রে বিপুল পরিবর্তন আনে। জেলের ভেতরের রাজনীতি, কয়েদিদের সঙ্গে কারাকর্মীদের বোঝাপড়া এবং তার সূত্র ধরে একাধিক জটিলতাকে সে বুঝতে শেখে। বলা যায়, এই ‘ব্ল্যাক ওয়ারেন্ট’-ই তাকে জেলের এএসপি পদের জন্য গড়েপিটে নিতে থাকে।
রঙ্গা-বিল্লার ঘটনার পর আরও কয়েকটি ফাঁসির ঘটনা ঘটে। ইতিমধ্যে বিচ্ছিন্নতাবাদী কাশ্মীরি নেতা মকবুল ভাটের ফাঁসির আদেশ হয়। মকবুলের ফাঁসিও তীব্র রকমের অভিঘাত ফেলে সুনীলের জীবনে। এর সমান্তরালে চলতে থাকে কারাপৃথিবীর অন্য গল্পও। সুনীল যখন কাজে যোগ দেয়, তখন জেলের এসপি মুখোপাধ্যায় পদবিধারী এক ভদ্রলোক। তাঁর স্ত্রীর সঙ্গে সুনীলের সতীর্থ দাহিয়ার সম্পর্ক গড়ে ওঠে। সুনীল নিজে একদিন ধরেও ফেলে এই সম্পর্কের বিষয়টি। তা নিয়েও বিস্তর জলঘোলা হয়। মুখোপাধ্যায় ভুল করে সুনীলকেই দায়ী করে বসে। সুনীল চাপে পড়ে আসল ঘটনা জানাতে বাধ্য হয়। মঙ্গত, দাহিয়া এবং সুনীলের মধ্যে যে বন্ধুত্ব গড়ে উঠেছিল, তাতে ছেদ পড়ে। অন্য দিকে তখন ধীরে ধীরে ঘনিয়ে উঠছে খলিস্তানি আন্দোলন। মঙ্গত জানতে পারে, তার ভাই এই আন্দোলনে জড়িয়ে পড়েছে। আবার কারাগারের ভিতরে তিন বিবদমান গোষ্ঠীর মধ্যেও সংঘাত তীব্র হয়ে পড়ে। কম্বল থেকে খাদ্যপণ্য— সব কিছু সরবরাহের পিছনে ক্রিয়াশীল দুর্নীতির জালের অস্তিত্ব এবং কর্মকাণ্ড বুঝেও সুনীলদের নীরব থাকতে হয়। ডিএসপি তোমর নিজেও এই চক্রের অংশীদার, জেলের ভিতরে ‘ডিভাইড অ্যান্ড রুল’-এর নীতি অনুসরণ করে একটি গ্যাং বা গোষ্ঠীকে অন্য গ্যাংয়ের বিরুদ্ধে ব্যবহার করে চলার এই নীতি তিহাড়কে কার্যত এক বারুদের স্তূপে পরিণত করে রেখেছিল। আবার এমন পরিস্থিতিতে মঙ্গত অবসাদগ্রস্ত হয়ে মদের নেশায় ডোবে। সমস্যা ঘনিয়ে ওঠে তাকে নিয়েও। সুনীল তত দিনে অনেকটাই অভ্যস্ত হয়ে পড়েছে তার চাকরিতে। বিবিধ সমস্যায় জর্জরিত চাকরির সমান্তরালে সে বুঝতে পারে, জেলের বাইরে তারা, কারাকর্মীরাও ‘মুক্ত’ নয়। সমাজের মূলস্রোত তাদের সহজ চোখে দেখে না। তার চাকরির কথা শুনে অগ্রজের বিয়ের সম্বন্ধ ভেঙে যায়। একই সঙ্গে তার নিজের বান্ধবীর সঙ্গেও তার দূরত্ব রচিত হতে শুরু করে বিভিন্ন কারণে, যার মধ্যে অন্যতম ছিল কারাদণ্ড প্রাপ্তদের আইনি অধিকার নিয়ে সুনীলের সক্রিয় হয়ে ওঠার ঘটনা।
এমন বিবিধ সমস্যা সিরিজ়ের বিন্যাসকে ক্রমশ জটিল করে তোলে। বন্দিদের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের মোকাবিলা করতে গিয়ে দাহিয়া এবং সুনীল জেলের ভিতরেই আক্রান্ত হয়। তোমরও আক্রমণের মুখে পড়ে। মুখোপাধ্যায় তত দিনে বদলি হয়ে গিয়েছে। তার জায়গায় এসেছে জেপি সিংহ (যে সুনীলের ইন্টারভিউ বোর্ডেও ছিল)। তিহাড়বাসীদের সকলেই যে অপরাধী নয় অথবা তাদের অনেকেই সাজার মেয়াদ পার করে ফেললেও তাদের মুক্তি ঘটেনি, এমন ঘটনা সুনীলকে আরও বেশি করে কারাগারে কয়েদিদের আইনি সহায়তা প্রাপ্তির বিষয়ে সক্রিয় করে তোলে।
ঘটনা গড়ায় ১৯৮৪-তে। তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর হত্যাকাণ্ড ও দিল্লিতে ঘটে যাওয়া শিখ-বিরোধী দাঙ্গার ঝাপট এসে লাগে তিহাড়ের অন্দরেও। পরিস্থিতি প্রায় নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়। ইতিমধ্যে কারা-সরবরাহ ঘটিত দুর্নীতির বিরুদ্ধে মুখ খুলতে গিয়ে বিশ্বস্ত অ্যাকাউন্ট্যান্ট সাইনি নিজেই অভিযোগের মুখে পড়ে। অপমানিত সাইনি আত্মহত্যা করে। এই জায়গায় অদ্ভুত মুনশিয়ানায় মেলানো হয়েছে দু’টি ঘটনা— মকবুল ভাটের ফাঁসির আর সাইনির গলায় দড়ি দিয়ে ঝুলে পড়ার মুহূর্ত। মকবুলের নীরবে ফাঁসির মঞ্চে ওঠা আর নিরপরাধ সাইনির শুধুমাত্র অপমান সহ্য করতে না পেরে নীরব আত্মহননকে কি প্রতীকী অর্থে মেলাতে চাইলেন নির্মাতারা? যদি তা-ই হয়ে থাকে তা হলে এ সিরিজ় অনেক স্তরের আগুনকে ধরে রেখেছে বুকের ভিতর। এক প্রভাবশালী চিকিৎসক তার স্ত্রীকে হত্যা করার জন্য কর্তার সিংহ এবং উজাগর সিংহ নামের দুই ভাড়াটে খুনিকে নিয়োগ করে মাত্র ৫০০ টাকার বিনিময়ে। চিকিৎসক তিহাড়ে বি-গ্রেডের বন্দি হিসাবে মানখাতির পেলেও কর্তার আর উজাগর তৃতীয় শ্রেণিতে পড়ে থাকে এবং এক সময় তাদের ফাঁসিও হয়ে যায়। বিচার ব্যবস্থা আর ‘ব্ল্যাক ওয়ারেন্ট’-এর ছায়াময় দিকটিকেও প্রশ্ন করতে ছাড়েনি চিত্রনাট্য।
কারাজীবন মূলধারার হিন্দি ছবিতে নতুন কিছু বিষয় নয়। ‘শোলে’ বা ‘কালিয়া’ যে জেলজগতের কথা বলে এসেছে, তার দিন যে ফুরিয়েছে, এ কথা যেন চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিল ‘ব্ল্যাক ওয়ারেন্ট’। জেল কোনও অতিকল্পনা নয়, তার নিষ্ঠুর দিকটির পাশাপাশি সহমর্মিতা ও সহযোগিতার বলয়কেও দেখিয়ে গিয়েছে এই সিরিজ়। সেই সঙ্গে পরতে পরতে উন্মোচিত হয়েছে এমন এক ভারত, যা জাতপাত, সম্প্রদায়ের সংঘাতে এবং একই সঙ্গে সহাবস্থানে বিরাজমান। জেল কি আদৌ ‘সংশোধনাগার’, এই প্রশ্নটিও যেন অন্তঃসলিলা থেকে যায় গোটা আখ্যানে। কে কাকে সংশধন করবে? অপরাধী সমাজের উপরে নজরদারিরত আধিকারিকেরাও কি বিভিন্ন দুর্নীতি আর ক্ষমতার অপব্যবহারে ডুবে নেই? বিশেষ করে অ্যাকাউন্ট্যান্ট সাইনির আত্মহত্যা ‘ব্ল্যাক ওয়ারেন্ট’ বিষয়টিকেই যেন প্রতীকী পর্যায়ে নিয়ে যায়। দোষী আর নির্দোষের সীমারেখা কেমন যেন অস্পষ্ট বলে মনে হতে থাকে।
সিরিজ় শেষ হয় শোভরাজের জেল থেকে পালানোর ঘটনায়। গোটা সিরিজ় জুড়েই শোভরাজ উপস্থিত। সুনীলের সঙ্গে তার এক রকমের সখ্যও গড়ে ওঠে। বিপদে পড়লে শোভরাজ সুনীলকে পরামর্শ দিয়েছে, সুনীল তার মৃদু স্বভাব, পরিশীলিত আচরণের মায়ায় পড়ে যায়। আর সেই দুর্বলতাকেই খানিক কাজে লাগিয়ে শোভরাজ জেল থেকে পালায়। এই আখ্যানে চার্লস শোভরাজের চরিত্রায়ণ মনে করিয়ে দেয় টমাস হ্যারিস রচিত ‘হ্যানিবল’ সিরিজ়ের দুর্মদ অপরাধী হ্যানিবল লেক্টরের কথা। কারাগৃহে কঠোর পাহারায় বন্দি হ্যানিবল নিজে সিরিয়াল কিলার হলেও পুলিশ তার সাহায্য চায় অন্য সিরিয়াল কিলারদের পাকড়াও করতে। সে পুলিশকে সাহায্য করে, আবার সুযোগ পেলে জেল থেকে পালিয়েও যায়। শোভরাজ অপরাধের মাস্টারমাইন্ড। সে সংঘটনের আগেই টের পায় সম্ভাব্য অপরাধের কথা। দুর্নীতির অন্ত্রে থমকে থাকা জগদ্দলগুলিকে সে চেনে। সুনীলকে সে সব চিনতেও সে সাহায্য করে। আর তার পরে সুনীলের বিশ্বাস অর্জন করে এক দুর্দান্ত রসিকতার মধ্যে দিয়ে সে উধাও হয় তিহাড় থেকে। এখানেই দাঁড়ি পড়ে এই সিজ়নের।
বিক্রমাদিত্য ও তাঁর সহকর্মীরা এই সিরিজ় যে দক্ষতার সঙ্গে তুলেছেন, সে বিষয়ে সন্দেহের অবকাশ নেই। সেই সঙ্গে আখ্যানের সমসময় এবং অনুষঙ্গ বিষয়ে তাঁদের গবেষণাও প্রায় খুঁতহীন। অভিনেতারা প্রত্যেকেই অবিশ্বাস্য রকমের বিশ্বস্ত ও সংযত। সুনীল গুপ্তের ভূমিকায় জ়াহান কপূর চমকপ্রদ। মঙ্গত এবং দাহিয়ার চরিত্রে পরমবীর সিংহ চীমা ও অনুরাগ ঠাকুরও একই রকম দক্ষতা দেখিয়েছেন, রাজেশ তোমরের ভূমিকায় রাহুল ভট্টও দক্ষতার ছাপ রেখেছেন। কর্তব্য ও দুর্নীতির দোলাচলে থাকা এক ব্যক্তিত্বকে ফুটিয়ে তোলা মোটেই সহজ কাজ ছিল না। সিরিজ়ে রয়েছেন দুই বঙ্গসন্তান— এসপি মুখোপাধ্যায়ের ভূমিকায় টোটা রায়চৌধুরী এবং জেপি সিংহের ভূমিকায় জয় সেনগুপ্ত। এই দু’জন অবশ্যই উল্লেখের দাবি রাখেন। বিশেষ করে টোটা এখানে একেবারেই অন্য অবতারে অবতীর্ণ। তাঁর ফেলুদা বা সাম্প্রতিক কালে কর্ণ জোহরের ক্যামেরায় ‘রকি আউর রানি কি প্রেম কহানি’তে কত্থক নৃত্যশিক্ষকের ভূমিকাকে অনেকখানি যেন পিছনে ফেলে এসেছেন এই সিরিজ়ে। একাধারে প্রতাপশালী কারাধ্যক্ষ এবং একই সঙ্গে দাম্পত্য জীবনে ব্যর্থ এক অসহায় মানুষের বৈপরীত্যকে নিয়ে যে ভাবে খেলেছেন টোটা, তা তাঁর অভিনয় জীবনের একটি মাইলফলক হয়ে থাকবে বলেই মনে হয়। তবে এই সিরিজ়ে আশ্চর্যের উপর আশ্চর্য বলতে যদি কিছু থাকে, তা শোভরাজের ভূমিকায় সিদ্ধান্ত গুপ্তের অভিনয়। এমনিতেই চিত্রনাট্যে শোভরাজের জন্য অনেকখানি জমি বরাদ্দ ছিল। সিদ্ধান্ত তার পূর্ণ সদ্ব্যবহার করেছেন, বা তার চাইতেও বেশি কিছু করেছেন। দমবন্ধ করা লৌহকপাটের অন্তরালে শোভরাজ যেন এক ঝলক ওলটপালট করে দেওয়া হাওয়া। এ সিরিজ় যতখানি জাহান কপূরের, ঠিক তত খানি সিদ্ধান্তেরও।
মাপা সংলাপ, আবেগের বাহুল্য বর্জন, অনুভবী সম্পাদনা এ সিরিজ়ের সম্পদ। সিরিজ়ের শুরুতেই এক কহাবতের অবতারণা করা হয়েছিল— বিবর্ণ তিহাড়ে তেমন কাজ করতে পারলে ময়ূর নেমে আসতে পারে। সেই ময়ূরের আগমনকে সম্ভব করে তুলেছে অর্কেশ অজয় এবং সত্যাংশু সিংহের চিত্রনাট্য, যথাযোগ্য সঙ্গ দিয়েছে অজয় জয়ন্তীর সঙ্গীত। সুনীল গুপ্তের স্মৃতিকথায় আরও কিছু অধ্যায় রয়েছে, যার সঙ্কুলান এ সিরিজ়ে হয়নি। আশা করা যায়, এ সিরিজ়ের পরবর্তী সিজ়ন তৈরি হবে। তিহাড়ের ময়ূর আবার পেখম মেলবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy