ভালই ভিড় তখন নবীনা সিনেমা হলের সিঁড়িতে। ব্যালকনি থেকে অনির্বাণ ভট্টাচার্যের অনবদ্য অভিনয়ের রেশ নিয়ে নামতে নামতে কানে এল যুবক-যুবতীর কথোপকথন। ভাবনাটা মিলে গেল আলোচনার সঙ্গে।
যুবতী- কেমন লাগল তোর?
যুবক- ঠিক আছে। নট ব্যাড!
যুবতী– নট ব্যাড মানে কী? ভাল লেগেছে না লাগেনি?
যুবক– (প্রশ্নটা পাশ কাটিয়ে) দেখ, অনির্বাণ জাস্ট ফাটাফাটি আর স্টোরিলাইনটা দারুণ। যদিও খুব ডার্ক। বাংলায় এমন কাজ খুবই কম হয়। আচ্ছা, মিমিকে কি একটু স্টিফ লাগল তোর? আর কেমন যেন সবসময় একটা বিষণ্ণতার ঘোরের মধ্যে আছে!
যুবতী– আরে মঞ্জরীর (মিমি চক্রবর্তী) চরিত্রটাই তো ওটা ডিমান্ড করে। মঞ্জরী তো বিপ্লবী অমলের প্রেমিকা। যে মনেপ্রাণে ভালোবাসে অমলকে। এদিকে অমল নিজের স্বপ্ন-লড়াই এইসব নিয়ে প্যাশনেট। মঞ্জরীও স্বপ্ন দেখে অমলের সঙ্গে তালে তাল মিলিয়ে তার বিপ্লবের সঙ্গী হওয়ার। ওর চরিত্রটাই বিষাদের সুরে বাঁধা। এক নিঃসঙ্গ, বিষণ্ণ নারী।
আরও পড়ুন: পরিণত কোয়েলই ‘রক্ত রহস্য’-এর প্রাণভোমরা
যুবক– অভিনয়টাই এই সিনেমার সেরা জায়গা। ওই যে বাড়িওয়ালা (সুপ্রিয় দত্ত) আর তার বউ সবিতা (বিদিপ্তা চক্রবর্তী)। ওরাও দুর্দান্ত!
যুবতী– খুবই ন্যাচারাল অভিনয়। তার মানে গল্পটা যতটা ভাল লেগেছে সিনেমাটা ততটা লাগেনি বলতে চাইছিস? মানে, আরেকটু ক্রিস্প একটু ছিমছাম ঝরঝরে হলে ভাল হতো না?
ছবিতে বিদিপ্তা চক্রবর্তী ও অনির্বাণ ভট্টাচার্য।
যুবক– এগজ্যাক্টলি! ড্রাকুলা স্যারকে একজন শিক্ষক হিসেবে পেলামই না! ওটা নিয়ে কিন্তু দারুণ গল্প এগোতে পারত। কিন্তু ব্যাপারটা দাঁড়িয়ে গেল সাতের দশকের এক বিপ্লবীর গল্প!
যুবতী- তাতে কী এল-গেল? ওটাই তো সিনেমা। এমন ভাবে ঘটনাগুলোকে সাজানো যে, দেখতে দেখতে ওটাই সত্যি মনে হবে। বিপ্লবী টাইপ ওই লোকটাই যে পরের জন্মে একটা স্কুল টিচার হয়েছে এটা ভাবতে অসুবিধে হচ্ছে কি কোথাও?
যুবক– দেখ, বিষয়টা সাইকোলজিক্যাল? নাকি লোকটা জাতিস্মর? না ভালোবাসা আর প্রতিশোধের গল্পে সবটাই তার মনের মধ্যে পুষে রাখা চরিত্রদের সঙ্গে সঙ্ঘাত? এগুলো একটু জট পাকিয়ে গিয়েছে যা-ই বলিস।
আরও পড়ুন: সোহিনীর জন্য কষে মাটন রাঁধলেন আবির, মশলা নন্দিতা-শিবুর
এমন বক্তব্যে অবাক হবার কারণ নেই। এটা ঘটনা যে দেবালয় ভট্টাচার্য পরিচালিত ‘ড্রাকুলা স্যার’ সিনেমায় একজন মানুষের দু’টি অস্বাভাবিক বড় ক্যানাইন টিথ অর্থাৎ ছেদক দন্ত বা শ্বদন্ত থাকায় নানাভাবে অপদস্থ হওয়া, বিড়ম্বনা এবং সামাজিকভাবে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়া পরবর্তী সময়ে সিনেমায় একটু অন্যভাবে প্রভাব বিস্তার করে। সমান্তরাল ভাবে উঠে আসে সাতের দশকের অশান্ত রাজনৈতিক সময়ের প্রেক্ষাপটে অন্য একটি কাহিনি। বর্তমান সময়ের গল্পে যে রক্তিম রায় (অনির্বাণ) প্রাইমারি স্কুলের বাংলার শিক্ষক, সেই মানুষটিই ছিল সাতের দশকের আন্দোলনের নিবেদিতপ্রাণ অমল সোম। যার মৃত্যু হয় পুলিশের গুলিতে। ড্রাকুলা হতে গেলে রক্তিমের দরকার ছিল নিজের শিহরণ জাগানো অতীত। সেখান থেকেই গল্পে ১৯৭১-এর প্রেক্ষাপট নিয়ে আসা।
ছবিতে অনির্বাণ ভট্টাচার্যের অভিনয় অনবদ্য।
মূলত ১৯৭০-এর প্রেক্ষাপটে দিনবদলের স্বপ্ন দেখা। সেই তরুণের ভালবাসা, বিদ্রোহ, শত্রুর হাত থেকে নিজেকে লুকিয়ে ঘুরে দাঁড়ানোর লড়াই ‘ড্রাকুলা স্যার’ ছবির প্রাণকেন্দ্র। এই ছবিতেই প্রথম একসঙ্গে স্ক্রিন শেয়ার করতে দেখা গেল অনির্বাণ ও মিমিকে। চিত্রনাট্যের চলন দেখে মনে হয় শ্রী বেঙ্কটেশ ফিল্মস প্রযোজিত ছবিটি সাইকোলজিক্যাল হরর বা থ্রিলার জঁনারের। চিত্রনাট্য লিখেছেন দেবালয় এবং কল্লোল লাহিড়ি। গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রে রয়েছেন রুদ্রনীল ঘোষ ও কাঞ্চন মল্লিকের মতো দুই অভিজ্ঞ অভিনেতা। সঙ্গীত পরিচালনার কাজ সামলেছেন সাকি, অমিত চট্টোপাধ্যায়, ইশান মিত্র, দুর্জয়। সিনেমাটোগ্রাফি ইন্দ্রনাথ মারিকের। ড্রাকুলা বা ভ্যাম্পায়ার হলিউডের একটি প্রচলিত জঁনার হলেও বাংলায় এ নিয়ে তেমন কাজ হয়নি। সেই জায়গা থেকেই এই ছবির বিষয়বস্তু আকর্ষণীয়।
আরও পড়ুন: চ্যানেলকে লিখতে পারেন করোনায় আক্রান্ত বিচারক শ্রীকান্ত, মনোময়, মিকা, আকৃতিরা
করোনা অধ্যুষিত ‘নিউ-নর্মাল’ আবহেও হল-এ যথেষ্ট দর্শক এসেছিলেন। বাংলা ছবির জন্য সত্যিই সুসংবাদ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy