Advertisement
০৮ নভেম্বর ২০২৪

ছকের বাইরে গেলেন না অনুরাগও! অস্বস্তিই হবে হার্ডকোর ভক্তদের

ট্রেলারে ব্যাপারটা কী বোঝা গেলেও, ‘মনমর্জ়িয়া’ যে অনুরাগ কাশ্যপের ছবি, সেটা মানতে অনুরাগের হার্ডকোর ভক্তদের একটু অস্বস্তিই হবে। তবে তিনি যে রোম্যান্সের দিকে ঝুঁকেছেন, তার আঁচ পাওয়া গিয়েছিল ‘মুক্কাবাজ়’ থেকেই

অন্তরা মজুমদার
শেষ আপডেট: ১৫ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ০০:০০
Share: Save:

বলিউড প্রেমের গল্পকে একটা ছাঁচে না ফেলে বলতে পারে না। দিনকাল পাল্টে গিয়ে ছেলেমেয়েরা এখন আর সিনেমার ঢঙে প্রেম করে না। বিয়েটাই জীবনের সর্বস্ব মনে করে না। কমিটমেন্ট নিয়ে ফোবিয়ায় থাকে। বলিউড সেটা বুঝতে পারলেও ধরতে পারে না। অনুরাগ কাশ্যপ কিছুটা পারলেন। কিন্তু ছাঁচের মধ্যে থেকেই।

ট্রেলারে ব্যাপারটা কী বোঝা গেলেও, ‘মনমর্জ়িয়া’ যে অনুরাগ কাশ্যপের ছবি, সেটা মানতে অনুরাগের হার্ডকোর ভক্তদের একটু অস্বস্তিই হবে। তবে তিনি যে রোম্যান্সের দিকে ঝুঁকেছেন, তার আঁচ পাওয়া গিয়েছিল ‘মুক্কাবাজ়’ থেকেই। সেখানে অনুরাগের সিগনেচার স্পষ্ট ছিল, কিন্তু ছবির কেন্দ্রে একটা নরম গ্রন্থি ছিল প্রেমের। ‘মনমর্জ়িয়া’য় তারই প্রসার ঘটিয়েছেন পরিচালক। কিন্তু চিত্রনাট্য তিনি লেখেননি, লিখেছেন কণিকা ধিলোঁ। ফলে গল্পে মৌলিকত্বের অভাব। সেটা প্লট জানতে পারলে যে কোনও বলিউড ভক্তই বুঝে যাবেন।

অমৃতসরের টমবয় রুমি (তাপসী পান্নু)। হকি খেলত। এখন হকির সরঞ্জামের দোকান চালায়। যা মুখে আসে বলে, যা মনে আসে করে ফেলে। তার প্রেমিক ভিকি (ভিকি কৌশল)। পেশায় ডিজে। কিন্তু আসলে কী করতে চায়, জানে না। এরা খোলাখুলি প্রেম করে। ‘পেয়ার’কে বলে ‘ফ্যায়ার’ (কারণ তাতে মিশে আছে শরীর)! আর সেই ‘পেয়ার-ফ্যায়ারে’ বাধা এলেই বলিউডি ছক অনুযায়ী বাড়ি ছেড়ে পালানোর কথা ভাবে। কিন্তু সেই রুমিই যখন বাড়ির চাপে পড়ে ভিকিকে বলে বিয়ে করতে, ভিকি পিছিয়ে যায়। এর মাঝে দায়িত্ববান ছেলে রবি (অভিষেক বচ্চন) ঘটকের ফোনে রুমির ছবি দেখেই আবেশে চলে যায়! বেশ কয়েক বার ভিকির ভীরুতা দেখে রুমি বিয়ে করে নেয় রবিকে। তার পর যথারীতি টানাপড়েন— বর না প্রেমিক, প্রেমিক না বর। এবং শেষটা দেখলে কড়া সমালোচকরা বলতেই পারেন, ‘হম দিল দে চুকে সনম’-এর আধুনিক ভার্সন!

মনমর্জ়িয়া

পরিচালনা: অনুরাগ কাশ্যপ

অভিনয়: তাপসী, অভিষেক, ভিকি
৫.৫/১০

তবে মোটের উপর ছবিটা দেখতে খারাপ লাগে না। কারণ বলিউডের স্টিরিওটাইপগুলো থাকলেও অনুরাগের স্বভাবসুলভ রসিকতাগুলো রয়েছে ছবি জুড়ে। তার সঙ্গে ছবির আর্ট ডিরেকশন, সিনেম্যাটোগ্রাফি, কস্টিউম একটা বাস্তবের ঘেরাটোপ জুগিয়েছে ছবির ফ্রেমগুলোকে। অমৃতসরের ধুলোভরা রাস্তা, গ্রাফিত্তিময় দেওয়াল, রঙিন ঘরবাড়ি, দোকানপাটের মাঝে গল্পটাকে এমন করে বুনে দেওয়া হয়েছে যে, মন বসাতে দেরি হয় না। নায়ক-নায়িকাদের ঘরবাড়ি মানেই বলিউডি রোম্যান্সে দু’হাজার লোক থাকতে পারে এমন প্রাসাদ, হেলিকপ্টার নামতে পারে এমন বাগান দেখে এসেছেন দর্শক। ‘মনমর্জ়িয়া’ সে দিক থেকে বেশ নিপাট গৃহস্থালী দেখিয়েছে। সিলভেস্টার ফনসেকার ক্যামেরাকে প্রশংসা করতেই হয়। তবে অমৃতসর বলেই বোধহয় মাঝে মাঝেই শট নিয়েছেন লস্যি বানানোর, জিলিপি ভাজার, নান-পরোটা বানানোর। বড্ড একঘেয়ে হয়েছে।

চিত্রনাট্যের মতো ছবির সঙ্গীতকেও বিভ্রান্তিকর মনে হবে। অমিত ত্রিবেদীর সঙ্গীত খারাপ হয় না। আগামী কয়েক মাসের পার্টি সংয়ের তালিকায় গানগুলো ঠিকই যোগ হয়ে যাবে। কিন্তু ছবিতে কিছু যোগ করতে পারেনি তারা। দু’একটা ব্যতিক্রম ছাড়া।

ছবিতে প্রাপ্তি একটাই— তাপসী। ভিকি এবং অভিষেককে যথেষ্ট স্ক্রিনটাইম দেওয়া হয়েছে। কিন্তু প্লট রুমি, থুড়ি তাপসীকে ঘিরেই ঘুরেছে। আর তিনিও তাতে সুবিচার করেছেন প্রাণ ঢেলে। রুমির ক্রাইসিসের সঙ্গে নিজেদের মেলাতে পারবেন এখনকার অ্যাপ-নির্ভর তরুণীরা। ভিকি কৌশলও তাঁর চরিত্রে যথাযথ। এক জন কনফিউজ়ড-ম্যানিক প্রেমিকের ঠিক যেমন হওয়া উচিত। অনেক দিন পর অভিষেককে পর্দায় দেখে ভাল লাগল। তিনি খুব সূক্ষ্ম তারে নিজের অভিনয়কে বেঁধেছিলেন। ব্যাপারটা তাঁর চরিত্রের সঙ্গে মানিয়ে গিয়েছে। তবে প্রেমের ছবিতে প্রেমটায় যদি আর একটু দম থাকত, বাকিটাও মানিয়ে যেত সুন্দর!

অন্য বিষয়গুলি:

Review Movie Manmarziyaan
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE