Advertisement
০৮ নভেম্বর ২০২৪
Kolkata-Howrah Tunnel

গঙ্গার তলা দিয়ে কলকাতা থেকে হাওড়া সুড়ঙ্গপথ, হাওড়া ব্রিজ ও দ্বিতীয় হুগলি সেতুর ‘চাপ’ কমাবে কেন্দ্র

হাওড়া ব্রিজের চাপ কমাতে তৈরি হয়েছিল দ্বিতীয় হুগলি সেতু। সেই কাজ সফল হলেও কলকাতা বন্দর থেকে বার হওয়া ট্রাক যাতায়াতের ফলে যানজটের সমস্যা দূর হয়নি। এ বার সেটাই লক্ষ্য কেন্দ্রীয় সরকারের।

Kolkata port completed feasibility study for an under-river road tunnel to Howrah

ভাল থাকুক রবীন্দ্র সেতু। লক্ষ্য কেন্দ্রের। —ফাইল ছবি।

পিনাকপাণি ঘোষ
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৮ নভেম্বর ২০২৪ ০৯:০০
Share: Save:

কলকাতা থেকে গঙ্গা পেরিয়ে রাজ্যের সচিবালয় চলে গিয়েছে হাওড়ায়। মহাকরণ থেকে নবান্নের সেই যাত্রায় কলকাতার যমজ শহর হাওড়ার গুরুত্বও বেড়েছে। কলকাতা থেকে গঙ্গার নীচ দিয়ে হাওড়া পর্যন্ত মেট্রো যাত্রাও শুরু হয়ে গিয়েছে। এ বার কেন্দ্রীয় সরকারের লক্ষ্য গঙ্গার নীচ দিয়ে পণ্যবাহী ট্রাক চলাচলের সুড়ঙ্গ তৈরি। আগামী বছর থেকেই সেই কাজ শুরু হয়ে যেতে পারে। এ নিয়ে রাজ্যের সঙ্গেও কেন্দ্রের প্রাথমিক কথাবার্তা হয়ে গিয়েছে। তবে শেষ হতে কত দিন লাগতে পারে, তা এখনও কেউ বলতে পারছেন না।

‘প্রধানমন্ত্রী গতিশক্তি’ প্রকল্পের অধীনেই হবে ওই সুড়ঙ্গ তৈরির কাজ। কলকাতার দক্ষিণ প্রান্তে মেটিয়াবুরুজ থেকে হাওড়া যাওয়ার প্রস্তাবিত সুড়ঙ্গ মূলত ট্রাক যাতায়াতের জন্যই তৈরি হবে। এর ফলে বন্দর এলাকার ট্রাক হাওড়া হয়ে বিভিন্ন জাতীয় সড়ক ধরে রাজ্যের অন্যত্র যেতে পারবে। ২০২২ সালেই এমন পরিকল্পনা করেছিলেন শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় বন্দর কর্তৃপক্ষ। এর পরে গঙ্গার তলা দিয়ে বন্দর এলাকায় ট্রাক যাতায়াতের জন্য সুড়ঙ্গ বানানো সম্ভব কি না, তার পরীক্ষানিরীক্ষা শুরু হয়। ইতিমধ্যেই সেই কাজ শেষ হয়ে বন্দর, জাহাজ ও জলপথ মন্ত্রকে রিপোর্ট জমা পড়েছে। মন্ত্রকের প্রতিমন্ত্রী শান্তনু ঠাকুর জানিয়েছেন, খুব তাড়াতাড়ি কাজ শুরু হয়ে যেতে পারে। তিনি বলেন, ‘‘আপাতত যা ঠিক হয়েছে, তাতে ১১ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ হয়েছে ওই প্রকল্পের জন্য। মোট ১৫ কিলোমিটার রাস্তা হবে। তার মধ্যে ৮ কিলোমিটার থাকবে সুড়ঙ্গপথ।’’

প্রসঙ্গত, এখন বন্দর থেকে কোনও ট্রাককে জাতীয় সড়কে যেতে হলে প্রধান পথ দ্বিতীয় হুগলি সেতু। সেই সেতু দিয়েই যাতায়াতের জন্য কলকাতা শহরে ঢুকতে হয় ট্রাককে। শহরের যান চলাচলে যাতে ব্যাঘাত না ঘটে, তার জন্যই সুড়ঙ্গপথের প্রস্তাব কেন্দ্রীয় সড়কমন্ত্রী নিতিন গডকড়ীকে দিয়েছিলেন শান্তনু। বনগাঁর বিজেপি সাংসদ কেন্দ্রীয় মন্ত্রী হওয়ার পরেই ওই প্রস্তাব দেন। পরে ‘সম্ভাবনা’ পরীক্ষার অনুমোদন পাওয়া যায়। বন্দর কর্তৃপক্ষ সেই পরীক্ষা চালান একটি বেসরকারি সংস্থাকে দিয়ে। সেই রিপোর্ট যে মন্ত্রকে জমা পড়েছে, সম্প্রতি তা লোকসভাতেই জানিয়েছেন কেন্দ্রীয় বন্দর, জাহাজ ও জলপথ মন্ত্রী সর্বানন্দ সোনোয়াল।

সংসদের গত অধিবেশনেই হাওড়া ব্রিজ অর্থাৎ রবীন্দ্র সেতুর বর্তমান স্বাস্থ্য নিয়ে প্রশ্ন করেছিলেন রানাঘাটের সাংসদ জগন্নাথ সরকার। তার জবাব দিতে গিয়ে সোনোয়াল জানান, এখনও পর্যন্ত হাওড়া ব্রিজ সম্পূর্ণ কার্যকর রয়েছে। প্রসঙ্গত, হাওড়া ব্রিজ রাজ্য সরকারের সম্পত্তি হলেও এটির রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব কলকাতা বন্দর কর্তৃপক্ষের। সেতু চালু হওয়ার সময় থেকেই ওই ব্যবস্থা চলে আসছে। এখন সেতুর রক্ষণাবেক্ষণের কাজ যৌথ ভাবে করেন শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় বন্দর কর্তৃপক্ষ এবং আইআইটি মাদ্রাজ কর্তৃপক্ষ। একটা সময়ে হাওড়া ব্রিজের উপর দিয়ে দিনে ১৫ হাজারের বেশি ট্রাক যাতায়াত করত। বিদ্যাসাগর সেতু চালু হওয়ার পরে এখন রবীন্দ্র সেতুর উপরে ট্রাকের চাপ অনেকটাই কমেছে। এখন সেতুর স্বাস্থ্য একেবারেই ঠিক রয়েছে জানানোর সময়েই সোনোয়াল লোকসভায় জানিয়েছিলেন, শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় বন্দর কর্তৃপক্ষ কলকাতা থেকে হাওড়া টানেল পথে ‘সম্ভাব্যতা’ যাচাইয়ের কাজ শেষ করেছেন।

দেশের মধ্যে প্রথম নদীর তলা দিয়ে মেট্রো চলাচল শুরু হয়েছে কলকাতাতেই। মুম্বইয়ে চালু হয়েছে সমুদ্রের নীচ দিয়ে যাওয়ার পথ। এ বার এই সুড়ঙ্গপথ তৈরি হলে কলকাতার চেহারা অনেকটাই বদলে যাবে বলে দাবি কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী শান্তনুর। তিনি বলেন, ‘‘শহরে কোনও ট্রাক না ঢুকলে যানজট অনেকটাই কমবে। আর শুধু কলকাতা নয়, গোটা রাজ্যের জন্যই গুরুত্বপূর্ণ হবে ওই সুড়ঙ্গ। যা পরিকল্পনা, তাতে ভিন্‌রাজ্য তো বটেই, রাজ্যেরও সর্বত্র সহজে পৌঁছে যাওয়ার জন্য সংযোগকারী রাস্তা তৈরির এই পরিকল্পনার মধ্যে রয়েছে।’’ শান্তনু জানাচ্ছেন, আগামী বছর থেকেই প্রকল্পের কাজ শুরু হয়ে যেতে পারে। এ নিয়ে রাজ্যের সঙ্গেও কেন্দ্রের প্রাথমিক কথাবার্তা হয়ে গিয়েছে। তবে শেষ হতে কত দিন লাগতে পারে, তা কেন্দ্রীয় মন্ত্রী বলতে পারেননি।

প্রসঙ্গত, এখন কলকাতায় যানজট কমাতে দিনে ৮ ঘণ্টা ভারী গাড়ি চলাচল বন্ধ থাকে। এর পরেও রাস্তায় বাকি গাড়ির জটের মধ্য দিয়ে গতি বাড়াতে পারে না ট্রাক। ফলে রাত পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয় অনেক ট্রাককে। আবার বন্দর থেকে দ্বিতীয় হুগলি সেতু যাওয়ার জন্য গার্ডেনরিচ সার্কুলার রোড, খিদিরপুর রোড, হেস্টিংস পর্যন্ত যানজট তৈরি হয়। গঙ্গার তলা দিয়ে হাওড়ায় যাওয়ার সুবিধা হয়ে গেলে এ সব থেকে কলকাতা মুক্তি পাবে বলে দাবি শান্তনুর। তিনি বলেন, ‘‘প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীজির নেতৃত্বে গোটা দেশেই সড়কপথের চরিত্র বদলে গিয়েছে। দেশের গতি বেড়েছে। অনেক টানেল পথ দিয়ে গাড়ি, ট্রেন ছুটছে। এ বার সেই গতি পাবে কলকাতা তথা বাংলাও।’’

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE