Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
Qala Movie Review

কেমন হল ইরফান-পুত্রের প্রথম ছবি ‘কলা’? জানাচ্ছে আনন্দবাজার অনলাইন

বৃহস্পতিবার নেটফ্লিক্সে মুক্তি পেয়েছে অন্বিতা দত্ত পরিচালিত ‘কলা’। অভিনয়ে ইরফান-পুত্র গোল দিতে পারলেন কি? স্বস্তিকা-তৃপ্তিই বা কতটা জমাতে পারলেন, জানাচ্ছে আনন্দবাজার অনলাইন।

অন্বিতা দত্ত পরিচালিত ‘কলা’ ছবিতে মুখ্য চরিত্রে অভিনয় করেছেন তৃপ্তি দিমরি, স্বস্তিকা মুখোপাধ্যায় এবং বাবিল খান।

অন্বিতা দত্ত পরিচালিত ‘কলা’ ছবিতে মুখ্য চরিত্রে অভিনয় করেছেন তৃপ্তি দিমরি, স্বস্তিকা মুখোপাধ্যায় এবং বাবিল খান। ছবি: সংগৃহীত

শ্রুতি মিশ্র
শেষ আপডেট: ০৩ ডিসেম্বর ২০২২ ১৫:৫৭
Share: Save:

‘‘নাম কে আগে পণ্ডিত লগনা চাহিয়ে, উস কে পিছে বাঈ নহি।’’ এই ছিল মায়ের নির্দেশ। ছোটবেলা থেকে মায়ের কাছেই ঠুংরির তালিম নেওয়া ‘কলা’র। ‘কলা’ নামটিও মায়েরই দেওয়া, যার আর এক অর্থ শিল্প। জন্মের পরে নামকরণের মাধ্যমেই নিয়তি লিখন হয়ে গিয়েছিল যেন। কড়া অনুশাসনের মধ্যে দিনে আট ঘণ্টা রেওয়াজ করত হিমাচল প্রদেশের ছোট্ট মেয়েটি। অচেনা লোকজনের কাছে প্রশংসা কুড়োলেও ‘কলা’র চোখ অনবরত খুঁজে চলত এক জনকে— তার মাকে। কিন্তু সে যেন তার মায়ের কাছে অদৃশ্য। লোকে তাকে কোকিলকণ্ঠী বললেও মায়ের চোখে সে কিছুই নয়। কেন? জন্মের সময় তার কারণেই যে নিজের পুত্রকে হারিয়েছে সে। ছেলে বেঁচে থাকলে তাকেই তালিম দিয়ে শ্রেষ্ঠ সঙ্গীতশিল্পী হিসেবে গড়ে তুলত। কিন্তু এক জন মেয়ে হয়ে ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রির সঙ্গীতশিল্পী হওয়ার স্বপ্ন দেখা যে ঠিক নয়, তা ভাল করে জানে কলার মা। এ দিকে কলার বিশ্বাস, মায়ের ভালবাসা, স্নেহ পাওয়ার একটিই রাস্তা— মায়ের স্বপ্ন পূরণ করা। মা-মেয়ের সম্পর্কের এই শীতলতাকেই ‘কলা’ ছবিতে ফুটিয়ে তুলেছেন পরিচালক অন্বিতা দত্ত।

ডিসেম্বরের শুরুতেই নেটফ্লিক্সে এই ছবিটি মুক্তি পেয়েছে। এই ছবিতে মুখ্য চরিত্রে অভিনয় করেছেন তৃপ্তি দিমরি, স্বস্তিকা মুখোপাধ্যায় এবং প্রয়াত অভিনেতা ইরফান খানের পুত্র বাবিল খান। বড় পর্দায় বাবিলের এই প্রথম কাজ। তৃপ্তির সঙ্গে আগে কাজ করলেও স্বস্তিকার সঙ্গে এই প্রথম জুটি বাঁধলেন পরিচালক। স্বস্তিকার মতো বাঙালি অভিনেত্রীকে আদৌ কি পর্দায় ঠিক মতো ব্যবহার করতে পারলেন অন্বিতা? বাবিলের প্রথম অভিনয়ই বা কতটা নজর কাড়ল? ‘বুলবুল’ ছবিতে তৃপ্তি যেমন অভিনয় করেছেন, তার স্বাদ এই ছবি দেখে মিটবে কি?

তৃপ্তি দিমরি অভিনয়ে কতটা পারদর্শী, তা ‘বুলবুল’ ছবিতে অভিনয় করার পর আবার ‘কলা’ ছবির মাধ্যমে বুঝিয়ে দিয়েছেন।

তৃপ্তি দিমরি অভিনয়ে কতটা পারদর্শী, তা ‘বুলবুল’ ছবিতে অভিনয় করার পর আবার ‘কলা’ ছবির মাধ্যমে বুঝিয়ে দিয়েছেন। ছবি: সংগৃহীত

‘স্লো-বার্ন’ সাইকোলজিক্যাল ড্রামা ঘরানার এই ছবির প্রেক্ষাপট হিসাবে ১৯৩০-৪০ সালের মিউজ়িক ইন্ডাস্ট্রিকে বেছে নিয়েছেন পরিচালক। হিন্দি মিউজ়িক ইন্ডাস্ট্রি হলেও তার অবস্থান কলকাতা শহরে। কিন্তু হাওড়া ব্রিজ ছাড়া ছবিতে আর কোথাও কলকাতা শহরকে দেখানো হয়নি। যদিও এই কারণে গল্পের মূলস্রোতে কোনও ব্যাঘাত ঘটেনি। গল্প নিজের ধারাতেই বয়ে গিয়েছে। গল্প এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার পিছনে মূল অবদান রয়েছে স্বস্তিকা এবং তৃপ্তির মা-মেয়ের চরিত্রে যুগলবন্দি। ‘বুলবুল’ ছবিতে অন্বিতা যেমন তৃপ্তির মুখের সারল্যকে কাজে লাগিয়েছিলেন, এই ছবিতেও তার অন্যথা হয়নি। তৃপ্তির এই সারল্যই ছবির কয়েকটি দৃশ্যকে অন্য মাত্রায় নিয়ে গিয়েছে। বাদ পড়েননি স্বস্তিকাও। সংলাপ ছাড়া শুধু মাত্র অভিব্যক্তি দিয়ে কী করে অভিনয় করা যায়, তা তিনি ভালই বুঝিয়ে দিয়েছেন। পর্দায় বাবিলের উপস্থিতি দুই অভিনেত্রীর চেয়ে কম হলেও ওইটুকু সময়েই নিজের অভিনয় দক্ষতার পরিচয় দিয়েছেন ইরফান-পুত্র। যথেষ্ট সাবলীল অভিনয় করেছেন তিনি।

প্রয়াত অভিনেতা ইরফান খানের পুত্র বাবিল খানকে বড় পর্দায় এই প্রথম কাজ করতে দেখা গিয়েছে।

প্রয়াত অভিনেতা ইরফান খানের পুত্র বাবিল খানকে বড় পর্দায় এই প্রথম কাজ করতে দেখা গিয়েছে। ছবি: সংগৃহীত

এ ছাড়া পার্শ্বচরিত্রে বরুণ গ্রোভার, অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়, গিরিজা ওক, বীরা কপূরের অভিনয়ও প্রশংসনীয়। চরিত্রগঠনের দিকে বিশেষ নজর দেওয়া হয়েছে। প্রতিটি চরিত্রেরই বহু দিক রয়েছে। ছবির সংলাপ নিয়ে আলাদা করে বলতেই হয়। ছবির চিত্রনাট্য ভাল হলেও একমাত্র সংলাপই এই ছবিকে ডুবিয়ে দিতে পারত। কিন্তু এই ছবিতে প্রতিটি চরিত্রের মুখে যে সংলাপ দেওয়া হয়েছে, তার প্রশংসা না করে পারা যায় না।

ছবির গানগুলি খুব যত্ন নিয়ে বানিয়েছেন অমিত ত্রিবেদী। ছবির গল্প বুনতেও গানগুলির অবদান কম নয়। এর আগে অন্বিতা ‘বুলবুল’ ছবিতে পুরুষতান্ত্রিক সমাজে নারীদের অবস্থান তুলে ধরে একটি ফ্যান্টাসি হরর ঘরানার ছবি তৈরি করেছিলেন। ‘কলা’ ছবিতেও তৎকালীন সময়ের নারীদের অবস্থান ফুটিয়ে তোলার চেষ্টা করেছেন তিনি। তবে লক্ষ করার মতো বিষয়, এই ছবির গল্প যদি এ যুগেও এনে ফেলা হত, তা হলেও অনেক কিছু মিলে যেত। যুগ যুগ ধরে সমাজে নারীদের অবস্থান যে অনেক ক্ষেত্রেই এক রয়ে গিয়েছে তা চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছেন পরিচালক।

তৃপ্তি অভিনয়ে কতটা পারদর্শী, তা তিনি আবার বুঝিয়ে দিয়েছেন। ‘বুলবুল’ ছবিতে তাঁর কাজ অনেকেরই নজর কেড়েছিল। কিন্তু এই ছবিতে তিনি যেন আরও পরিণত অভিনয় করেছেন। ছবিতে রয়েছে এক চমকপ্রদ ক্যামিয়ো। অল্প সময়ের জন্য হলেও সেই চরিত্রটিও দর্শকের মনে থেকে যাবে। ছবি জুড়ে কিছু কিছু দৃশ্য এমন ভাবে দেখানো হয়েছে, যা মনে দাগ কেটে যায়। পুরো ছবিতেই যেন একটি চাপা কষ্ট রয়েছে, যা তারকাদের অভিনয় থেকে শুরু করে ছবির গান— সব কিছুর মধ্যেই ধরা পড়ে। সিনেমা শেষ হয়ে গেলেও দর্শকের মনে মনখারাপের রেশ অনেক ক্ষণ রয়ে যাবে।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy