Actors who played in Jatayu's role in Feluda movies dgtl
Jatayu in Feluda Movies
জটায়ুর চরিত্রে অভিনয় করলেই কি... তিনি থাকলে হয়তো বলতেন, ‘তং মত করো, তং মত করো’!
স্টেশন কানপুর। ‘জাপানি ইম্পোর্টেড’ সুটকেস নিয়ে জোধপুরগামী ট্রেনে উঠে পড়লেন এক যাত্রী। ফেলুদার সঙ্গে জটায়ুর পরিচয় এই ট্রেনের কামরাতেই।
নিজস্ব প্রতিবেদন
কলকাতাশেষ আপডেট: ০১ ডিসেম্বর ২০২২ ১৪:৫৩
Share:Save:
এই খবরটি সেভ করে রাখার জন্য পাশের আইকনটি ক্লিক করুন।
০১১৬
স্টেশন কানপুর। ‘জাপানি ইম্পোর্টেড’ সুটকেস নিয়ে জোধপুরগামী ট্রেনে উঠে পড়লেন এক যাত্রী। কামরায় ওঠার পর থেকেই নাটক। কুলি তাঁর কাছে বেশি পয়সা দাবি করা মাত্রই অননুকরণীয় ভঙ্গিতে তিনি বলে দিলেন সেই সংলাপ—তং মত করো, তং মত করো…। মুখে গোঁফ, মাথায় টাক। বার্থে বসে মাথায় জড়ানো নীল মাফলার গলার দু’পাশে ঝুলিয়ে রাখলেন তিনি। ‘লালমোহন গাঙ্গুলি’ ওরফে ‘জটায়ু’।
০২১৬
‘আপ লোগ কিতনা দূর তক যা রহি হে?’ ভাঙা ভাঙা হিন্দিতে প্রশ্ন করলেন তিনি। তাঁর সঙ্গী প্রদোষ মিত্র যে নামকরা গোয়েন্দা, তা নিয়ে বিন্দুমাত্র ধারণা ছিল না জটায়ুর। যেমন প্রথমটায় ফেলুদার স্পষ্ট উচ্চারণেও ধরতে পারেননি যে তিনি বাঙালি এবং কলকাতার মানুষ। কখনও ‘সাঁতারু’, কখনও বা ‘শুয়োর’ বলে ঠাট্টাতামাশা চালিয়ে যাচ্ছিলেন তিনি।
০৩১৬
জোধপুরের পটভূমিকার উপর একটি রহস্য রোমাঞ্চ ধারার উপন্যাস লিখতেই জোধপুর যাওয়া, জানালেন ‘দুর্ধর্ষ দুশমন’ বইয়ের লেখক জটায়ু। ছাতি চওড়া করে সহযাত্রী প্রদোষ মিত্রের হাতে ধরিয়ে দিলেন বইটিও। সত্যজিৎ রায়ের গোয়েন্দা গল্পের নায়ক ফেলুদার সঙ্গে এ ভাবেই প্রথম আলাপ হয়েছিল জটায়ুর।
০৪১৬
‘সোনার কেল্লা’য় গিয়ে বন্ধুত্ব গড়ে উঠলেও ফেলুদা-তোপসে জুটির সঙ্গে নিজেকে এক সুতোয় বেঁধে ফেলেছিলেন জটায়ু। গোয়েন্দা গল্পের গুরুগম্ভীর বুনটের মধ্যে জটায়ুর উপস্থিতি হাস্যরসের ভাবকে একই ধারায় বয়ে নিয়ে চলতে সফল হয়েছে। দার্জিলিং থেকে শুরু করে গ্যাংটক, ভুটান, হংকং, লন্ডন— সব জায়গায় গিয়েছেন ফেলুদার ঘনিষ্ঠ এই বন্ধু। গল্পের পাতায় সত্যজিতের স্কেচ না বদলালেও বড় পর্দায় বার বার মুখ বদলেছে জটায়ুর।
০৫১৬
১৯৭৪ সালে সত্যজিৎ রায় পরিচালিত ফেলুদার প্রথম ছবি ‘সোনার কেল্লা’তে ‘জটায়ু’র ভূমিকায় অভিনয় করেছিলেন সন্তোষ দত্ত। তবে সুযোগ এলেও আর একটু হলেই ‘সোনার কেল্লা’ থেকে ছিটকে যাচ্ছিলেন জটায়ু সন্তোষ দত্ত! ছিলেন পেশাদার আইনজীবী। তাঁর এক জুনিয়রের লেখা থেকে জানা যায়, একটা হত্যাকাণ্ডের মামলা নিয়ে উনি তখন খুব ব্যস্ত। এক দিন ফোন এল বিশপ লেফ্রয় রোডের বাড়ি থেকে। ফোন রেখে গম্ভীর মুখে সন্তোষ দত্ত তাঁর জুনিয়রকে বলেন, “এ তো মহা মুশকিলে পড়লাম দেখছি। মানিকদা ফোন করেছিলেন। আমাকে জটায়ু করার জন্য বললেন। রাজস্থানে এক মাসের শুটিং। যে দিন যাবার কথা সে দিনই মামলার শুনানি। কী করি বলো তো?” শেষ পর্যন্ত শুটিং করেছিলেন। এবং প্রথম থেকেই সুপারহিট!
০৬১৬
প্রথম ছবি মুক্তি পাওয়ার ৫ বছর পর প্রেক্ষাগৃহে আসে ‘জয় বাবা ফেলুনাথ’। আবার সন্তোষ দত্তকেই ‘জটায়ু’ চরিত্রের জন্য বেছে নিয়েছিলেন সত্যজিৎ।
০৭১৬
জয় বাবা ফেলুনাথ’-এ রিকশায় বসে প্রণাম করা থেকে বিশ্বশ্রী গুণময় বাগচীর সঙ্গে সাক্ষাৎ, তার পর মগনলাল মেঘরাজের ‘সার্কাসে খেলা’ দেখা, এ সবই অমর হয়ে রয়েছে। সত্যজিতের লেখায় পাওয়া যায়, ছবির শেষের দিকে একটি দৃশ্যে দেখা যায়, ফেলুদার অপেক্ষায় তোপসে আর জটায়ু বসে আছে ঘাটের চাতালে। জটায়ুর মেক আপ এতই ভাল হয়েছিল যে, ঘাটে হাজির হওয়ামাত্র এক পাণ্ডা তাকে প্রণাম করে বসে। জটায়ুও দিব্যি আধবোজা চোখ নিয়ে তাঁকে আশীর্বাদ করেন।
০৮১৬
জটায়ু চরিত্রটি যেন সন্তোষ দত্তের জন্যই নির্মাণ করা। সন্তোষ এই চরিত্রে যে ধাঁচে অভিনয় করতেন, সেটাই মাইলফলক হয়ে রইল। মাঝে এক দীর্ঘ বিরতি। সন্তোষ দত্তর মৃত্যুর পরে ফেলুদা সিরিজের আর কোনও ছবি করেননি সত্যজিৎ। এর পর প্রয়াত হন সত্যজিত। দীর্ঘ সময় পর ফেলুদা পর্দায় ফিরে এল বটে, সঙ্গে এল জটায়ুও। কিন্তু মুখবদল হল সকলের।
০৯১৬
সন্দীপ রায়ের পরিচালনায় ১৯৯৬ সালে মুক্তি পেয়েছিল ‘বাক্স রহস্য’ টেলিফিল্ম। পরিচালক বদলে বদলাল ফেলুদা। সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের পরিবর্তে দেখা গেল সব্যসাচী চক্রবর্তীকে। বদলাল জটায়ু-তোপসেও। রবি ঘোষ ‘জটায়ু’ চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন এই টেলিফিল্মে। কিন্তু এর পরেই তাঁর মৃত্যু হয়।
১০১৬
ফলে আবার অবধারিত মুখবদল। ‘বোসপুকুরে খুনখারাপি’ টেলিফিল্মে ‘জটায়ু’ চরিত্রে অভিনয় করতে দেখা গিয়েছিল অনুপ কুমারকে।
১১১৬
ছোট পর্দার পর আবার বড় পর্দায় মুক্তি পেতে থাকে ফেলুদার ছবি। ফেলুদার চরিত্রে সব্যসাচী অভিনয় করলেও অনুপের মৃত্যুর পর বদলাল জটায়ু। ২০০৩ সালে সন্দীপ রায়ের পরিচালনায় মুক্তি পায় ‘বোম্বাইয়ের বোম্বেটে’। ‘জটায়ু’ চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন বিভু ভট্টাচার্য।
১২১৬
‘বোম্বাইয়ের বোম্বেটে’র পর ‘কৈলাসে কেলেঙ্কারি’, ‘টিনটোরেটোর যীশু’, ‘গোরস্থানে সাবধান’, ‘রয়েল বেঙ্গল রহস্য’, জাহাঙ্গীরের স্বর্ণমুদ্রা’ ইত্যাদি ছবিতে ধারাবাহিকতার সঙ্গে অভিনয় করে যাচ্ছিলেন বিভু। পর্দায় সব্যসাচী-বিভুর এই যুগলবন্দি দর্শকের মনেও ছাপ ফেলেছিল। কিন্তু হঠাৎ মৃত্যু হয় তাঁরও।
১৩১৬
বাংলা ছবি, টেলিফিল্মের পাশাপাশি বলিউডেও পা রেখেছিল ‘ফেলুদা’। ‘যত কাণ্ড কাঠমাণ্ডুতে’ গল্পের উপর অবলম্বন করে বানানো হয়েছিল ‘কিস্সা কাঠমাণ্ডু মে’ সিরিজ়টি। শশী কপূর ছিলেন ‘ফেলুদা’র ভূমিকায়। ‘জটায়ু’ চরিত্রে অভিনয় করতে দেখা গিয়েছিল মোহন আগাশেকে।
১৪১৬
২০২০ সালে সৃজিত মুখোপাধ্যায় ‘ফেলুদা ফেরত’ নামে একটি ওয়েব সিরিজ় পরিচালনা করেন। ‘জটায়ু’ চরিত্রে অভিনয় করতে দেখা গেল অনির্বাণ চক্রবর্তীকে।
১৫১৬
বহু বছর পর বড় পর্দায় আবার আসতে চলেছে ‘ফেলুদা’। চলতি বছরে বড়দিন উপলক্ষে মুক্তি পাবে সন্দীপ রায় পরিচালিত ‘হত্যাপুরী’। এই ছবিতে ‘জটায়ু’ চরিত্রে আবার নতুন মুখ। অভিজিৎ গুহ অভিনয় করেছেন এই চরিত্রে।
১৬১৬
ভাল-মন্দের ধারণা আপেক্ষিক। কিন্তু এত দিন পরও দর্শকদের হৃদয়ে সম্ভবত সব চেয়ে বেশি দাগ কেটেছে সন্তোষ দত্তের অভিনয়।