Advertisement
০৩ নভেম্বর ২০২৪

ভূত দেখবেন? আসুন…

ভূতদর্শন হোক বা না হোক, আজ আপনাদের ভূত দেখাব। তবে, এই ভূত ‘সামথিং স্পেশাল’। যার জন্য শট রেডি করে পরিচালকও অপেক্ষা করেন। লম্বা ঝুলের সাদা শার্ট পরে খোলা চুলের পাঁচ বছরের একরত্তি সেই ভূত কুমিরডাঙা খেলার ফাঁকে শট দিয়ে যায়। সেই এখন টেলি দুনিয়ার পয়লা সেলেব!

স্বরলিপি ভট্টাচার্য
শেষ আপডেট: ০৫ এপ্রিল ২০১৬ ১২:০৬
Share: Save:

ভূত দেখেছেন?

উত্তরটা হ্যাঁ হলে, প্রশ্ন করব কোথায় দেখলেন?

শ্যাওলা পড়া চিলোকোঠায়? নাকি অমাবস্যার রাতে মামারবাড়ির বাগানে?

আর যদি না বলেন, তা হলে তো আপনার জন্য গোল্ডেন অপরচুনিটি।

ভূতদর্শন হোক বা না হোক, আজ আপনাদের ভূত দেখাব। তবে, এই ভূত ‘সামথিং স্পেশাল’। যার জন্য শট রেডি করে পরিচালকও অপেক্ষা করেন। লম্বা ঝুলের সাদা শার্ট পরে খোলা চুলের পাঁচ বছরের একরত্তি সেই ভূত কুমিরডাঙা খেলার ফাঁকে শট দিয়ে যায়। সেই এখন টেলি দুনিয়ার পয়লা সেলেব!

ঠিক ধরেছেন। যে ছোট্ট ভূতের মিষ্টি গল্পের চুম্বক টানে বাঙালি ইদানীং রাত ন’টার ডেডলাইন মিস করতে নারাজ, সেই ‘ভুতু’ ওরফে আরশিয়া মুখোপাধ্যায় আজ আড্ডার সঙ্গী। মেকআপ রুমের সোফায় কখনও শুয়ে আবার কখনও বা ভূতের গল্প বলতে গিয়ে কোলের ওপর উঠে পড়ল সে।

ভুতু কি ভূতে ভয় পায়?

খুব! ভূত এলে আমার ভয় লাগে।

ভূত দেখেছো নাকি?

হুম! দেখেছি তো!

আমাদের গল্পটা বল না।

গল্প না, সত্যি ভূত।

আচ্ছা, আচ্ছা। সত্যি ভূত।

শোনো, বলছি। তখন রাত তিনটে বাজে। স্বপ্ন দেখছি। ‘মন নিয়ে কাছাকাছি’ থেকে আমাকে কলটাইম দিয়েছে। গভীর জঙ্গলে হেঁটে হেঁটে যাওয়ার সিন। একটা রোবট পুতুল নিয়ে যেতে হবে। ওটা ছেলে পুতুল ছিল। তো আমি যাচ্ছি…তার পর যেতে যেতে আমি কেঁদে ফেলেছি। তার পর সকালে ঘুম ভেঙে গিয়েছে। দেখি স্বপ্নে যে পুতুলটাকে দেখেছিলাম, তার ছায়া। এখনও পর্যন্ত স্বপ্নটা মনে আছে।

স্বপ্ন ছাড়া সত্যি ভূত দেখোনি কখনও?

ওটাই তো সত্যি সত্যি ভূত।

কোথায় দেখলে?

বাড়ির ছাদে। না না, ছাদে না। বাড়ির জানলায়। জানলার কোণে।

তুমি যে ঘরটায় শোও, সেখানে?

হ্যাঁ, সেখানে। তবে আমি একাই দেখেছি। আর কেউ দেখেনি। দিদিও ঘুমোচ্ছিল। আমি ভয় পেয়ে মাকে জড়িয়ে কেঁদে ফেলেছিলাম।

ভূতের রাজার সঙ্গে দেখা হলে কী কী চাইবে?

(অনেক ভেবে) কী যে চাই! বুঝতেই পারছি না।

তুমি কী খেতে ভালবাসো?

ম্যাগি, চিপস…(একটু ভেবে) ইয়েপ্পি।

আর চকোলেট?

না, না। কোল্ড ডিঙ্কস। খেলে গলা ব্যথাও হয়।

তখন মা বকে না?

না, মা কখনও বকে না, সব সময় ভালবাসে।

আমি তো শুনলাম, মা দিদিকেই বেশি ভালবাসে

(চোখ পাকিয়ে) একদম না। আমাকে বেশি ভালবাসে। আমাকে বেশি আদর করে।

শুটিংয়ের জন্য যে স্কুলে যাওয়া হচ্ছে না, তাতে বন্ধুদের জন্য মন খারাপ লাগছে না?

না। স্কুলে যাওয়াটা ভাল না। শুটিংটাই ভাল।

ঠিকই তো। পড়তে আর কারই বা ভাল লাগে?

না পড়তে আমি ভালই বাসি। মা তো এইখানেই পড়তে বসায়।

তাই নাকি? তা কী পড়তে ভাল লাগে তোমার?

বাংলা বাদ দিয়ে সব…।

(এর মধ্যেই দরজা ঠেলে ‘লজেন্স দাদা’ অর্থাত্ সমৃদ্ধর প্রবেশ। সে এই ধারাবাহিকেরই আরও এক শিশু চরিত্র। হাত ধরে টেনে লজেন্স দাদাকে পাশে বসাল আরশিয়া। ফের শুরু হল গল্প।)

খেলতে ভালবাস?

খুব।

কী খেলতে ভাল লাগে?

কুমিরডাঙা। আমি আর লজেন দাদা (ভুতু লজেন্সকে লজেন বলেই ডাকে) বামালু ভূতও খেলি।

বাড়িতে দিদির সঙ্গে খেলা হয়?

হ্যাঁ…। দিদির সঙ্গে বাড়িতে টিচার টিচার খেলি। দিদি টিচার, আমি স্টুডেন্ট। মাঝে মাঝে দিদি আর আমি দু’জনেই টিচার হই।

টিচার হয়ে কী করো?

অনেক কিছু করি। বাচ্চাদেরকে পড়াই।

বাচ্চা কারা হয়?

আরে দেওয়ালগুলো…। (ভাবটা এমন, এটাও জানো না!)

আর বাচ্চাদের ওপর রেগে গেলে কী কর?

বকি।

ওরা দুষ্টুমি করলে মারো বুঝি?

না, না। শুধু বকি। মারি না। আমাদের স্কুলে মারা বারণ।

বাড়িতে বসে কখনও ‘ভুতু’ দেখেছো?

রিপিট টেলিকাস্ট দেখি তো বাড়িতে বসে। খুব ভাল লাগে।

বন্ধুরা ‘ভুতু’ দেখে কিছু বলেছে কখনও?

(পা ছড়িয়ে ভাবতে বসল আরশিয়া। তখন মা পাশ থেকে ধরিয়ে দিলেন, পাড়ার আন্টিরা কী বলেছে বলো…) ও হ্যাঁ, বলেছে, আমরা ভুতু দেখছি। খুব ভাল লেগেছে।

(এর পর ভুতুর প্রশ্নের পালা…)

একটা নতুন রাইমস্ শিখেছি। ওটা বলব?

নিশ্চয়ই। বলো, বলো।

...বড়া মজা আয়া…বড়া মজা আয়া। (হাত নেড়ে পছন্দের রাইমস্ শেষ করল আরশিয়া।)

আচ্ছা, ভুতুর যে এই একটাই ড্রেস, এটা ভাল লাগছে?

এই ড্রেসটাও ভাল। তবে সেই যে গয়না পরে সাজলাম, ওটা বেশি ভাল।

শুটিং শেষ করে কখন বাড়ি যাও?

অনেক দেরিতে। একদিন তো রাত্তিরে পৌনে তিনটেয় বাড়ি গেছি। (পাশ থেকে মা হেসে উঠলেন। ধুর, কোনও দিনও অত রাতে বাড়ি যায়নি ও।)

বাড়ি গিয়ে কী কর?

যে দিন তাড়াতাড়ি ছুটি হয়, বাড়ি গিয়ে টিভি দেখি। পোগো দেখি, ডোরেমন দেখি। আমার সবচেয়ে ফেভারিট ডোরেমন।

(মা ইনপুট দিলেন ‘বোঝে না সে বোঝে না’ খুব ফেভারিট ছিল এক কালে, অরণ্য আর পাখিকে খুব ভাল লাগত ওর।)

তুমি তো পর্দায় কত রকম ম্যাজিক দেখাও, ম্যাজিক দেখেছো কখনও?

না তো।

সার্কাস?

হ্যাঁ আমার বার্থডে-র দিন।

তাই? কবে তোমার বার্থডে?

এই রে কবে যেন? (পাশ থেকে মা বলে উ‌ঠলেন, সেভেন্থ…) হ্যাঁ, মনে পড়েছে। সেভেন্থ জানুয়ারি।

তোমার ডাকনাম কী?

গনু।

মোটেই না ভুতু।

না, না গনু। (কনভিন্স করানোর ভঙ্গিতে) মা গনু বলে ডাকে বলছি না।

সবাই এখানে ভুতু বলে ডাকছে তো!

হুম। মা ছাড়া এখন সবাই ভুতু বলেই ডাকছে। ভুতু নামটাও আমার খুব পছন্দের।

ক্যামেরার সামনে দাঁড়াতে কখনও ভয় লেগেছে?

না। কোনও দিন না। ওটা তো খুব ইজি।

এত কথা যে ক্যামেরার সামনে বলতে হয় সব মনে থাকে?

আমি তো ডায়লগ মুখস্থ করি।

তা হলে একটা পছন্দের ডায়লগ বলো প্লিজ…

কোনটা বলি, কোনটা বলি…। আচ্ছা ওটা শোনো। গিলি গিলি গে, ফুস ফুস লেবেঞ্চুস।

এ বাড়িতে যে এত বড় বড় সিঁড়ি ভাঙতে হয়, পায়ে ব্যথা হয়ে যায় না?

হ্যাঁ। হয় তো।

(পাশ থেকে মা ইনপুট দিলেন, কীসে করে যাও বলে দাও।)

কোলা… অমলিন হেসে ভুতুর জবাব।

সেটা আবার কী?

ওই তো সবার কোলে কোলে যাই। (বলেই ছবি তুলতে এক ছুট্টে মেকআপ রুমের বাইরে বেরিয়ে গেল আরশিয়া।)

স্টুডিও চত্বরে পড়ন্ত বিকেলে শট দিতে যাওয়ার আগে এক লাফে অন্য এক অভিনেত্রীর কোলে উঠে পড়ল আরশিয়া। একটি অন্য বেসরকারি চ্যানেলের শুটিংয়ে ব্যস্ত তিনি। কিন্তু টিআরপির এই লড়াই জানে না একরত্তি ভুতু। তাই নিজের ছন্দে দুষ্টুমিতে, হাসি-মজায় ‘কোলা’য় চড়ে বাঙালির ড্রইংরুম দাপিয়ে বেড়াচ্ছে ‘ম্যাজিক ভুতু।’

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE