আত্মপ্রকাশের পরে ‘ডিলিট’ ব্যান্ডের অনুষ্ঠান।
এক নতুন বাংলা ব্যান্ড আত্মপ্রকাশ করল শহর মেদিনীপুরে। গান ছাড়াও স্বরচিত কবিতা, সংলাপ, আবহ সবই থাকবে এই ব্যান্ডের অনুষ্ঠানে। বাচিক শিল্পে প্রচলিত ছক ভেঙে আরও অনেক আর্ট ফর্ম যুক্ত করার প্রয়াস নিয়েই তৈরি হয়েছে ‘ডিলিট’।
শনিবার সন্ধ্যায় প্রদ্যোত্ স্মৃতি সদনে ব্যান্ডের প্রথম অ্যালবাম প্রকাশ হয়। ‘ডিলিট’ ব্যান্ডেরও আনুষ্ঠানিক আত্মপ্রকাশ হয় এ দিনই। শহরের নতুন এই ব্যান্ডের অন্যতম সদস্য অনির্বাণ মিশ্র বলছিলেন, ‘‘নতুন কিছু করার ইচ্ছে ছিল। সেই ইচ্ছে থেকেই এই প্রয়াস। আমাদের ব্যান্ডে আর পাঁচটা ব্যান্ডের মতো শুধু গান থাকছে না। এই ধরনের ফিউশন মেদিনীপুরে এর আগে হয়নি।”
ব্যান্ডের নাম ‘ডিলিট’ কেন? ব্যান্ডের অন্যতম সদস্য মৌসেলি দাস পাল, শুভাশিস চট্টোপাধ্যায়, বৃতি গঙ্গোপাধ্যায়দের জবাব, “গানের জলসায় শুধুমাত্র সময় কাটানোর ফাঁকে কবিতা পাঠ বা আবৃত্তি শোনাটা মেনে নিতে পারছিলাম না। আমাদের ভাল লাগত না। আমরা চাইছিলাম, শুধুমাত্র আবৃত্তির জন্য ভিড়টা জমুক। কবিতার শরীরে আরও রং লাগুক। আবৃত্তি পরনির্ভরশীলতা হারাক।”
ব্যান্ডের সঙ্গে যাঁরা যুক্ত, তাঁদের কেউ স্কুল শিক্ষক, কেউ সরকারি কর্মচারী, কেউ বা ছাত্র। গান গাওয়া, কবিতা- আবৃত্তি নিয়ে মেতে থাকাটা এঁদের নেশা। সেই নেশার টানেই ব্যান্ড তৈরি করা। পরিকল্পনা খুব বেশি দিনের নয়, গত বছরের মাঝামাঝি সময়ের। শুভাশিস বলছিলেন, ‘‘আমরা চেয়েছিলাম, মেদিনীপুরের মানুষের কাছে নতুন কিছু হাজির করতে। সব কিছু একটু নতুন ভাবে ভাবতে।’’ স্কুল-শিক্ষিকা বৃতির কথায়, ‘‘ব্যান্ড মানে শুধু গান, এই ধারণা থেকে একটু বেরিয়ে আসার চেষ্টা করেছি আমরা। জানি না কতটা পেরেছি। তবে আমাদের চেষ্টার খামতি ছিল না। আগামী দিনে আরও ভাল কাজ করার চেষ্টা করব।’’ স্কুল-শিক্ষিকা মৌসেলি জানালেন, যদি জিজ্ঞেস করা হয় ডিলিট কী? জবাবটা হল, ব্যান্ড আবহ আবৃত্তি। বাচিক শিল্পের সঙ্গে আরও অনেক আর্ট ফর্ম-এর সহবাস। আবহ, স্বরচিত কবিতা, গান, সংলাপ, আবৃত্তি, মঞ্চ সজ্জা ও পরিবেশ রচনা সহযোগে লাইভ পারফরম্যান্স।
এ দিন সন্ধ্যায় নিজেদের প্রথম লাইভ পারফরম্যান্স নিয়ে হাজির হয়েছিল ‘ডিলিট’। শুনিয়েছে তাদের নিজেদের কথা, নিজেদের সুর। সংলাপে ধরা পড়েছে শহরে প্রেম, প্রেমে কবিতা। কবিতার অলিতে গলিতে, খাতাতে তুলিতে, গানে গিটারে ‘আমার একটা তুই চাই’।
শহর মেদিনীপুরে ব্যান্ড-সংস্কৃতি আগে তেমন ছিল না। এখন অবশ্য কয়েকটি বাংলা গানের ব্যান্ড রয়েছে। বছর দুয়েক আগে একবার শহরে ‘রক কার্নিভ্যাল’ও হয়। অবশ্য এর ধারাবাহিকতা বজায় রাখা সম্ভব হয়নি। ফলে, মেদিনীপুরের মতো মফস্সলে ছক ভাঙা কবিতার ব্যান্ড তৈরি টিকিয়ে রাখাটা বেশ কঠিন। এই ব্যান্ডের অন্যতম সদস্য অরূপ পাল, স্বর্ণেন্দু সেনগুপ্ত, সুদেব মুদিরা অবশ্য আশাবাদী। বলছেন, ‘‘সবে পথচলা শুরু হল। আশা করি, সকলের সহযোগিতায় আগামী দিনের পথগুলো ঠিক পেরোতে পারব।” পথ যে কঠিন সে কথা তাঁরা জানেন। মৌসেলি, বৃতিরা তাই বলছেন, “চাকরি করে ব্যান্ড ধরে রাখাটা বেশ কঠিন জানি। আমরা এই কঠিন কাজটাই সহজ ভাবে করতে চাই।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy