‘ব্যাড বয়’ ছবির সেটে শুটিংয়ের ফাঁকে মিঠুনের সঙ্গে নমশি। ছবি: সংগৃহীত।
প্রশ্ন: বাংলায় শুরু করি?
নমশি: এই রে! আমি বাংলায় ততটা সড়গড় নই। হিন্দি বা ইংরেজি চলতে পারে।
প্রশ্ন: সে কী!
নমশি: (বাংলায়) বুঝতে পারি। বলার সময় উচ্চারণে একটু সমস্যা আছে। ছোট থেকেই মুম্বইতে বড় হয়েছি। তাই বুঝতেই পারছেন।
প্রশ্ন: কলকাতায় কি এই প্রথম এলেন?
নমশি: না না! ছোট থেকেই বছরে এক বার অন্তত কলকাতায় চলে আসতাম। আমরা সাধারণত পার্ক স্ট্রিটের একটা হোটেলে উঠতাম। বাবার তখন এখানে শুটিংয়ের ব্যস্ততা থাকত। কলকাতায় শুটিং দেখতেও হাজির হতাম। সেই সময় কলকাতার একাধিক রাজনৈতিক নেতার সঙ্গে বাবার সখ্য ছিল। আমরা প্রয়াত সুভাষ চক্রবর্তীর বাড়িতে খুব ঘন ঘন যেতাম।
প্রশ্ন: আপনার বাবার জীবনে সুভাষ চক্রবর্তীর অবদান অনেক।
নমশি: আমি জানি। উনি ছিলেন কিংবদন্তি রাজনীতিবিদ। ওঁর মৃত্যুর পর বাবা প্রচণ্ড ভেঙে পড়েছিলেন। বাবাকে ওই রকম অবস্থায় আমি কোনও দিন দেখিনি।
প্রশ্ন: শুনলাম, কলকাতায় পা রেখেই উত্তর কলকাতায় আপনাদের পৈতৃক বাড়ি দেখতে গিয়েছিলেন।
নমশি: দীর্ঘ দিনের ইচ্ছে ছিল। সত্যি বলতে, বাড়িটা দেখে চোখে জল চলে এসেছিল। আমার দাদু এই বাড়িতেই থাকতেন। বাবা ওই বাড়িতেই জন্মেছিলেন। বাবা যে কোথা থেকে শুরু করে এখন কোথায় এসে পৌঁছেছেন, সেই লড়াইটা উপলব্ধি করলাম। বাবাকে আমি সুপারস্টার হিসাবেই চিনেছি। অর্থ, যশ, খ্যাতি— কী নেই। কিন্তু লড়াইটা শুরু হয়েছিল ওই বাড়ি থেকে। আমি কিন্তু বাবার জায়গায় থাকলে কোনও দিন ওই বাড়িতে থাকতে পারতাম না!
প্রশ্ন: এটা আপনার কেরিয়ারের প্রথম ছবি। শুনেছি, এক সময় আপনি নাকি বাবার পরিচয় গোপন করে অডিশন দিতেন।
নমশি: হ্যাঁ। আমাকেও প্রচণ্ড লড়াই করতে হয়েছে। সব জায়গা থেকে শুধু ‘না’ শুনেছি। কিন্তু ঠিক করেছিলাম, বাবার পরিচয় ব্যবহার করব না। এক বার তো অডিশনে ওরা আমার পরিচয় জেনে গিয়েছিল। তবে মজার বিষয়, না শোনার পরেও আমি বাইরে এসে মার্সেডিজ়ে বসতাম। বাবার ক্ষেত্রে কিন্তু সেটা অকল্পনীয় ছিল।
প্রশ্ন: কিন্তু আপনি তো তারকা পরিবারের সদস্য। বাবা আপনাকে লঞ্চ করতে চাননি?
নমশি: বাইরে থেকে সবাই ওটা ভাবে। আমরা কিন্তু খুব সাধারণ জীবনযাপন করি। বাবা এবং মা কোনও দিন আমাদের ভাইদের নিজে থেকে লঞ্চ করতে চাননি। সব সময় বলেছেন, যা করতে হবে নিজেকে করতে হবে। বলতে বাধা নেই, মিমোকেও (মিঠুনের ছেলে মহাক্ষয়) যে ভাবে লঞ্চ করা উচিত ছিল, সেটা কিন্তু হয়নি।
প্রশ্ন: আপনার লড়াইয়ের দিনগুলোয় ফিরে তাকালে কী মনে হয়?
নমশি: আরে, ২০১৬ থেকে ২০১৯— শুধু লোকের কাছে ‘না’ শুনেছি! সবাই বলত, আমি নায়ক হওয়ার যোগ্য নই। তার পরেও বিজ্ঞাপনে তৃতীয় লিডেও রাজি হয়েছি। ৯ বছর চাকরি করেছি। তখন চিত্রনাট্য লেখা, সিনেমার রিভিউ করার পাশাপাশি অডিশন দিয়ে গিয়েছি। শেষের দিকে ‘না’ শুনলে একটু খারাপ লাগত। ভাবতাম, তা হলে কী করব। এই ছবিতে আমাকে প্রযোজক এবং পরিচালক রাজকুমার সন্তোষী নিয়েছেন। এর পিছনে বাবার কোনও হাত নেই।
প্রশ্ন: আপনার এই লড়াই দেখে বাবা কী বলতেন?
নমশি: বাবা একটাই কথা বলতেন যে, আমি যা সহ্য করেছি তার থেকে অনেক বেশি অপমান ওঁকে সহ্য করতে হয়েছে। বাবা বলতেন, ‘‘আমাকে লোকে কালিয়া, বোকা আরও কত কিছু বলেছে!’’ বাবার মুখে এটাও শুনেছি যে সেই সময়ের প্রথম সারির কিছু পরিচালক নাকি বাবাকে বলেছিলেন, মিঠুন নায়ক হলে ওঁরা পেশায় ইতি টানবেন! তাই বাবা বলেন, ‘‘সব সময় মনে রাখবে, তোমাকে আমার থেকে অন্তত ভাল অপমান সহ্য করতে হচ্ছে!’’
প্রশ্ন: বাবার সঙ্গে আপনার তুলনার জন্য নিজেকে প্রস্তুত করেছেন?
নমশি: আমার মতে ওঁর সঙ্গে আমার কোনও তুলনা চলে না। শূন্য থেকে শুরু করে যে মানুষটা কিংবদন্তি হয়ে উঠেছেন আমি তাঁর নখের যোগ্য নই।
প্রশ্ন: বাবার কোনও প্রিয় ছবি?
নমশি: ওঁর প্রায় সব ছবিই আমি দেখেছি। ‘প্রজাপতি’ও দেখলাম। বাবা অসাধারণ অভিনয় করেছেন।
প্রশ্ন: ছবির টিজ়ার দেখে মিমো কী বললেন?
নমশি: বাবা খুবই খুশি। অনেকেই ভাবেন, বাবা আমার কাছে রোল মডেল। আমি বলব মা-বাবা নন, সেটা আমার ভাই মিমো। পরিবারে ও আমার সবচেয়ে কাছের মানুষ। আমার দৃঢ় বিশ্বাস, সঠিক সময়ে ও নিজেকে সকলের সামনে প্রমাণ করবে।
প্রশ্ন: আপনার বোন দিশানি বলিউডে পা রাখতে উৎসাহী?
নমশি: না না, ও তো এখন লস অ্যাঞ্জেলেসে অভিনয় এবং নাটক নিয়ে ব্যস্ত। আল পাচিনো বোনের অভিনীত একটা নাটক দেখতে এসেছিলেন! বুঝতেই পারছেন, আপাতত দিশানি বলিউড নিয়ে কিছু ভাবছে না।
প্রশ্ন: মাঝে আপনার বাবার সঙ্গে পশ্চিমবঙ্গের দূরত্ব বেড়েছিল। রাজনীতি তার মধ্যে অন্যতম কারণ ছিল। ঘনিষ্ঠরা বলতেন, কোনও ক্ষোভ থেকেই নাকি এই দূরত্ব তৈরি হয়েছিল।
নমশি: দেখুন, আমার বাবা অত্যন্ত সাদা মনের মানুষ। কোনও রাজনৈতিক দল ওঁর চিন্তাভাবনাকে তো বদলাতে পারবে না। আমার এখনও মনে আছে, মোহন ভাগবত যখন মুম্বইতে আমাদের বাড়িতে এসেছিলেন। বাবা ওদের লুচি-তরকারি খাইয়েছিলেন। মোহনজি বলেছিলেন, ‘‘আরে উনি আমাদের পুরি-ভাজি খাওয়াচ্ছেন আর আধ্যাত্মিক কথা বার্তা বলছেন! উনি তো কোনও অনুরোধ করছেন না বা কিছু চাইছেন না! কী অদ্ভুত মানুষ।’’ আমার বাবা এ রকমই। যে রাজনৈতিক দলেই যোগ দিন না কেন, পশ্চিমবঙ্গের প্রতি বাবার ভালবাসা এতটুকু বদলাবে না।
প্রশ্ন: এর পর কী পরিকল্পনা?
নমশি: (হেসে) বুধবার বাবার রিয়্যালিটি শোয়ে ছবির প্রচার সারব। আসলে একটা স্বল্পদৈর্ঘ্যের ছবি প্রযোজনা করেছি। ‘ব্যাড বয়’ মুক্তির পর সেটায় ব্যস্ত হয়ে যাব। এ ছাড়াও আরও দুটো ছবির চুক্তি সই করেছি।
প্রশ্ন: বাংলা ছবিতে অভিনয়ের ইচ্ছে নেই?
নমশি: কেন থাকবে না? সত্যজিৎ রায়, ঋত্বিক ঘটক থেকে শুরু করে ঋতুপর্ণ ঘোষ— আমি বাংলা ছবির অনুরাগী। ভারতীয় সিনেমায় বাংলার অবদান অনস্বীকার্য। কিশোরকুমার, উৎপল দত্ত, সুচিত্রা সেন— নাম বলতে শুরু করলে শেষ হবে না। আর শুধুমাত্র সফল অভিনেতা নয়, এঁরা প্রত্যেকেই কিংবদন্তি। সুযোগ এলে নিশ্চয়ই বাংলা ছবিতে অভিনয় করব।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy