জন্মদিনের প্রাক্কালে মন খুলে কথা বললেন কবীর সুমন। গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ
প্রশ্ন: জন্মদিনের এক দিন আগে সাক্ষাৎকার দিতে বসলেন। জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানিয়েই শুরু করি...।
কবীর সুমন: অনেক অনেক ধন্যবাদ।
প্রশ্ন: তিন ঘণ্টা রেকর্ডিংয়ে ছিলেন। পঁচাত্তরে পা রাখতে চলেছেন। জন্মদিনের কোনও বিশেষ পরিকল্পনা?
সুমন: আমি জন্মদিনে বিশ্বাস করি না! মাঝখানে একটু নাম-টাম করে গিয়েছিলাম। তাই আমাকে যাঁরা ভালবাসেন, তাঁরা কেউ কেউ আমার জন্মদিন উদ্যাপন করতেন। শুভেচ্ছা জানাতেন। তাঁরা খুবই সুন্দর মানুষ। কিন্তু জানেন, আমার খুবই অস্বস্তি হয়।
প্রশ্ন: কিন্তু আপনার অগণিত অনুরাগী নিশ্চয়ই বৃহস্পতিবার ফোনে শুভেচ্ছাবার্তা জানাবেন।
সুমন: করেন তো অনেকেই। কিন্তু আমি বারণ করি। আমার আর পোষাচ্ছে না। আর ভ্যাজর ভ্যাজর করতে ভাল লাগে না।
প্রশ্ন: আপনি তো কাজও কমিয়ে দিয়েছেন। বিশেষ কোনও কারণ?
সুমন: আমি কমিয়ে দিইনি। প্রথমত, লোকে আমাকে চায় না। সহজ কথা, কোনও দিনই মানুষ আমাকে খুব একটা চায়নি। হেমন্তবাবু (মুখোপাধ্যায়) একবার আমাকে বলেছিলেন, ‘‘তনুবাবু (তরুণ মজুমদার) আমাকে ছাড়েন না! ক্রমাগত আমাকে দিয়ে কাজ করিয়েই ছাড়বেন। আমার আর ভাল লাগে না।’’ আমারও আর ভাল লাগে না।
প্রশ্ন: কোনও ক্ষোভ বা অভিযোগ থেকে বলছেন?
সুমন: আমার কারও প্রতি কোনও ক্ষোভ নেই। আসলে বিনোদন শিল্পীদের একটা বয়সের পর আর কেউ চায় না। ব্যতিক্রম হলেন ডাক্তার এবং আইনজীবীরা। বহু বছর ধরে গান লিখছি, গাইছি। বুধবার আমার ৭৪ বছর পূর্ণ হল। সময়টা ১৯৬৭ সাল। সেই ১৮ বছর বয়স থেকে আকাশবাণী কলকাতায় রবীন্দ্রসঙ্গীত গাইছি। তখন শ্যামল মিত্র, নির্মলা মিশ্ররাও ছিলেন। তাই আমি কালকের খোকা নই। কত ধানে কত চাল হয়, সেটা আমি খুব ভাল জানি। আমাকে কেউ পাত্তা দেয় না। আমিও পাত্তা দিই না। আমাকে ধরা মুশকিল!
প্রশ্ন: কিন্তু আপনি তো সিনেমার সঙ্গীত পরিচালনা করেছেন। গানও গেয়েছেন।
সুমন: করেছি। আরে, সকলে তো আমাকে আবার ডাকবেন না। ছবির নাম ‘মহাতীর্থ কালীঘাট’ হলে তো তাঁরা আমাকে ডাকবেন না!
প্রশ্ন: কিন্তু নতুনদের উৎসাহ দিতে বা শেখাতে তো আপনার ক্লান্তি নেই?
সুমন: ওরাই তো ভবিষ্যৎ। ওদের সঙ্গে কাজও করেছি। ওদের থেকে শিখেও চলেছি। কিন্তু প্রথমত, আমাকে পারিশ্রমিক দিতে হবে। বিনা পারিশ্রমিকে কাজ করে করে আমি ক্লান্ত। যাঁরা কাছের মানুষ, তাঁদের থেকে অবশ্য পারিশ্রমিক নিই না। আবার কারও কাছ থেকে চার গুণ পারিশ্রমিকও চেয়ে বসি।
প্রশ্ন: গত বছর একক অনুষ্ঠান করলেন। আর করবেন না বলে শুনেছি। কেন?
সুমন: না, চট করে হয়তো আর করব না। গত বছর ৩০ সেপ্টেম্বর করেছিলাম। খুবই মর্মান্তিক অভিজ্ঞতা। বড্ড ফোন আসে। রাজনৈতিক মতাদর্শের দিক থেকে আমি সকলের মনের মতো নই। যেমন আমি চাই, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এখন ক্ষমতায় থাকুন। সেটা আবার অনেকের পছন্দ হবে না। অনেক জায়গাতেই অনুষ্ঠানে আর আমায় ডাকা হবে না। আমি তো বলছি আমি তৃণমূলের সমর্থক! যদি অসুবিধা হয়, তা হলে আসবেন না। আরও একটা বিষয়— কলকাতা শহরে প্রেক্ষাগৃহের ভাড়া দিন দিন বাড়ছে। ফলে না চাইলেও টিকিটের দাম বেড়ে যায়। বরং আমার একটা অন্য ইচ্ছে রয়েছে।
প্রশ্ন: সেটা কী ?
সুমন: একটা গাড়িতে হারমোনিয়াম, তানপুরা, তবলা আর সাউন্ড সিস্টেম চাপিয়ে বেরিয়ে পড়ব। গাড়ির গায়ে লেখা থাকবে ‘বাংলা ভাষায় খেয়াল’। সেটা কোথাও কোথাও দাঁড়াবে। কাউকে বিরক্ত না করে, আইনভঙ্গ না করে আমি রাস্তায় গান গাইব।
প্রশ্ন: বাংলা আধুনিক গানের পরিস্থিতি এখন কী রকম?
সুমন: একটা সময় তো রেডিয়োই এই গানগুলোর প্রচার করত। এখন আধুনিক গান শেষ হয়ে গিয়েছে। আমাদের সময়ে সব কিছুর একটা মাপকাঠি ছিল। যেমন কেউ চাইলেই হঠাৎ করে ফার্স্ট ডিভিশন ক্রিকেট খেলতে পারবেন না। সব কিছুরই একটা প্রক্রিয়া রয়েছে। আকাশবাণীতে অডিশনে পাশ করা মানে তখন সে গ্রাহ্য হল। একটা সময় রেডিয়োর সেই মাপকাঠি শেষ হয়ে গেল। এখন যার যা ইচ্ছে তাই করছে।
প্রশ্ন: আপনি তো বাংলা খেয়াল নিয়ে দীর্ঘ দিন চর্চা করছেন।
সুমন: আমি মনে করি, এটা আমার জীবনের শ্রেষ্ঠ কাজ। মানুষ হয়তো জানেন না, তবুও বলি, আমি কিন্তু খেয়াল শিখেছি। বন্দিশ রচনা করা, গাওয়া এবং নতুন প্রজন্মকে তা শেখানো নিয়ে আমি অত্যন্ত গর্বিত। আমার কাছে এটা মাতৃভাষার সেবা।
প্রশ্ন: টানা তিন ঘণ্টা রেকর্ডিং সেরে সাক্ষাৎকার দিতে বসলেন। এই বয়সে এখনও এই অফুরান এনার্জির রহস্যটা কী?
সুমন: কাম! মুক্ত কাম! যেখানে অশ্লীলতাই সব। বয়স হয়েছে। রাতে ভাল ঘুম হয় না। কিন্তু আমি বিছানায় চূড়ান্ত ভাবে সক্ষম। নারীরা আমাকে সমৃদ্ধ করেছেন। নতুন ধারণা আবিষ্কার করে প্রেম করাতেই আমার এনার্জি। আঁতলামি নয়, প্রেম করতে হবে শরীর দিয়ে, ভালবাসা দিয়ে এবং সম্মান দিয়ে। এ ছাড়া আমাদের শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের বিভিন্ন রাগ এবং খেয়াল আমাকে বাঁচিয়ে রাখে।
প্রশ্ন: এখনও কোনও স্বপ্ন ধাওয়া করেন?
সুমন: অবশ্যই। যেমন, আমার স্বপ্ন ছিল সিনেমা তৈরি করব। একটা সময়ে আমি সিরিয়াস ভাবে সিনেমার চর্চা করেছি। বাংলাদেশে একটা টেলিফিল্ম করেওছিলাম। হয়তো আবার কোনও দিন ছবি করব। আরও একটা স্বপ্ন আছে, আমি নৃত্যনাট্য নিয়ে কাজ করতে চাই। খুব দ্রুত কাজ শুরু করব। রবীন্দ্রনাথের নৃত্যনাট্য নিয়ে খুব বেশি কাজ হয়নি। আর হবে বলেও মনে হয় না।
প্রশ্ন: নৃত্যনাট্য নিয়ে কী ভাবে কাজ করতে চান?
সুমন: কবি এজরা পাউন্ড লিখেছিলেন, ‘‘কবিতা কুঁকড়ে যায় যদি সে সঙ্গীত থেকে বেশি দূরে সরে আসে। সঙ্গীত মরে যায়, যদি সে নাচ থেকে সরে আসে।’’ রবিশঙ্করের হাত ধরে কিরওয়ানি রাগের সঙ্গে আমার পরিচয়। ওঁর প্রয়াণের পর আমার এক বন্ধুর মেয়ের সঙ্গে অনুষ্ঠান করেছিলাম। আমার মতে, বাংলা খেয়ালের সঙ্গে নাচের মিশ্রণ ঘটাতে পারলে কলেজ ফেস্টিভ্যালে তার স্থান হবে। আমি কিন্তু ইতিমধ্যেই তার সাড়া পাচ্ছি।
প্রশ্ন: আপনি বার বার সঙ্গীতের পরিবর্তনের কথা বলছেন।
সুমন: এখন আর কেউ ধ্রুপদী সঙ্গীত শোনে না। রবীন্দ্রনাথকে ধার করেই বলছি, আমরা সাবেকিয়ানার মোহ কাটাতে পারলাম না। কৈশোরে আমির খানের সংস্পর্শে এসেছিলাম। উনি তো প্যান্ট-শার্ট পরে গান গেয়েছেন। নিখিল বন্দ্যোপাধ্যায়কেও আমি প্যান্ট-শার্টে বাজাতে দেখেছি।
প্রশ্ন: এই সময়টাকে কী ভাবে দেখেন?
সুমন: এটা আমার দেশ নয়। যে পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে, আমি আর তার সঙ্গে রিলেট করতে পারি না। যদিও পশ্চিমবঙ্গ সম্পর্কে আমার গর্ব আছে। প্রতিটি রাস্তাঘাট এত পরিষ্কার। সারিবদ্ধ গাড়ি যাচ্ছে। আমি বুড়ো মানুষ, তাই দেখার সুযোগ পাই। বর্তমান সরকার আসার আগে মহিলাদের জন্য রাস্তায় যে শৌচাগারের প্রয়োজন, সেটা কেউ ভাবেইনি। আশ্চর্য! একটি নির্দিষ্ট বয়ঃসীমার মধ্যে মেয়েদের প্রতি মাসে কিছু দিন কেমন কাটাতে হয়, সেটা আমরা পুরুষরা কল্পনাই করতে পারব না। প্রয়োজনে তাঁকে শৌচাগার ব্যবহার করতে হয়। এখন সেগুলো এ রাজ্যে হয়েছে। আমার সত্যিই গর্ব হয়। ভাল লাগে। খুব ভাল একটা সময়ের মধ্যে রয়েছি। অরুণ মিত্র মারা যাওয়ার আগে আমাকে বলেছিলেন, ‘‘সুমন, ওদের বলে দিয়ো, আমি ছিলাম এক স্ফূর্তিবাজ শিস-দেওয়া যাত্রী।’’ আমিও এখন সেই অবস্থায় আছি।
প্রশ্ন: কিন্তু অনেকেই ভাবেন, এই রাজ্য নিয়ে আপনার প্রচুর অনুযোগ রয়েছে।
সুমন: আমি খুব সুন্দর একটা সময়ের মধ্যে রয়েছি। কত তরুণ ছেলেমেয়েরা কাজ করতে আসছেন। তাঁরা কত স্বাধীন, কত আধুনিক। সপ্রতিভ। এগুলো তো ইতিবাচক দিক।
প্রশ্ন: আর রাজনীতি?
সুমন: আমি রাজনীতিতে নেই। ঘেন্না ধরে গিয়েছে!
প্রশ্ন: আপনি কি তা হলে এখন তৃণমূল সমর্থক?
সুমন: কেউ বলতেই পারেন যে আমি কোটেশ্বর রাওয়ের (কিষেনজি) পরিচিত ছিলাম। তা সত্ত্বেও আমি তৃণমূলের সমর্থক। রবীন্দ্রনাথ ৭০ বছর বয়সে লিখছেন, ‘‘আবার মত পরিবর্তন করিয়াছি। সারা জীবন এক মতের অনুবর্তী থাকাটা প্রাণের স্বধর্ম নয়।’’ কোনও দিন আমি হয়তো চিনপন্থী হয়ে যাব। কোনও দিন ওবামার...। ভবিষ্যৎ কেউ জানে না (হাসি)। বাংলা ভাষায় ছেলেমেয়েরা যাতে খেয়াল শিখতে পারে, তার জন্য আমি মমতাকে চিঠি লিখে অনুরোধ করেছিলাম। ওঁর সরকার আমাকে চারটি কর্মশালার সুযোগ দিয়েছিলেন। যার মধ্যে দুটো করিয়েছিলাম। বাকি দুটো করোনার জন্য বাতিল হয়ে গিয়েছিল। তার পর আবার চিঠি দিয়েছিলাম। উনি দীর্ঘমেয়াদি শিক্ষাক্রমের অনুমতি দিয়েছেন আমাকে। বাংলা ভাষায় খেয়াল উনি সরকারি ভাবে চালু করেছেন। বাংলা ভাষা এবং বাংলা খেয়ালের একজন সেবক হিসেবে আমি কোনও দিন এটা ভুলব না। উনি সব সময় আমার কাছে অনেকটাই উপরে থাকবেন। ওঁর সমস্ত কনট্রাডিকশন নিয়েই থাকবেন।
প্রশ্ন: ইদানীং যে ধরনের দুর্নীতি ফাঁস হচ্ছে...।
সুমন: (থামিয়ে দিয়ে) দেখুন, একটা সময়ে কোনও একটি বিশেষ রাজনৈতিক দলের যুবশাখার সদস্য না হলে স্কুলে চাকরি পাওয়া যেত না। আমার এক বন্ধুর স্ত্রী দু’বার লিস্টে নাম বেরোনো সত্ত্বেও কাজটা পাননি। কারণ, তিনি সেই যুবশাখার সদস্য ছিলেন না। দেখুন, ক্যাপিটালিজ়মে এটা হবেই। আর গণতন্ত্র মানেই কিঞ্চিৎ চুরিতন্ত্র!
প্রশ্ন: কিন্তু আপনিও তো এক সময় সক্রিয় রাজনীতিতে এসেছিলেন।
সুমন: আমাকে হাতে-পায়ে ধরে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ভোটে দাঁড় করিয়েছিলেন। বলেছিলেন, ‘‘প্লিজ, তুমি যাদবপুরটা (যাদবপুর লোকসভা কেন্দ্র) আমাকে দাও!’’ আমিও দাঁড়িয়ে পড়লাম। ওই প্রথম বারের ভোটের খরচ দিয়েছিলেন মমতা’দি। আর সাংবাদিক তাপস গঙ্গোপাধ্যায় এবং শিল্পী শুভাপ্রসন্ন আমাকে এক লক্ষ টাকা করে দিয়েছিলেন। এই নিয়ে লড়েছিলাম। জিতলাম, তবে আমি নই। জিতেছিলেন তাপসী মালিক, রাধারানি, শেখ সেলিমরা। সিপিআইএম-কে হারিয়ে দিয়েছিল বাংলার মানুষ। কিন্তু দ্বিতীয় বার ভোটে দাঁড়ালে তো খরচ আর মমতা দিতেন না। আমাকে দিতে হত। কী ভাবে দিতাম? আমি একমাত্র সাংসদ, যার কোনও গাড়ি ছিল না। অন্যের গাড়ি ব্যবহার করতাম। এখনও আমার গাড়ি নেই। পাড়ার সিপিএমের ছেলেরা খুব রসিক। ওরা বলত, ‘‘গুরু, তুমি নিজের জন্য একটা সাইকেল পর্যন্ত কেনোনি। তুমি আবার আমাদের জন্য কী করবে!’’ আরও একটা বিষয় বলি। জ্যোতি বসুকে নিয়ে গৌতম ঘোষের তৈরি তথ্যচিত্রে জ্যোতিবাবু বলছেন, পার্টির এক কমরেডের সঙ্গে মনুমেন্টের তলার মাঠে গিয়েছেন সুভাষচন্দ্র বসুর বক্তৃতা শুনতে। এ দিকে পুলিশ লাঠিচার্জ করতে শুরু করেছে। জ্যোতিবাবু তথ্যচিত্রে বলছেন, ‘‘আমার বন্ধু বলল, কমরেড, আমরা কিন্তু খদ্দর পরে আছি। পালাতে পারব না!’’ এই হচ্ছে মূল্যবোধ। এখন এই ভাবে কেউ কি ভাবেন? এই মনটাই তো হারিয়ে গিয়েছে। অথচ আমরা নিন্দে করছি পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের! আমি কিন্তু সুযোগ পেলেই দেখিয়ে দিতাম কত ধানে কত চাল!
প্রশ্ন: আপনি শুভাপ্রসন্নের সাহায্যের কথা বললেন। সম্প্রতি উনি ভাষাদিবসের বক্তৃতায় কিছু মন্তব্য করে অনেকের বিরাগভাজন হয়েছেন।
সুমন: মূর্খের মতো কথা বলেছেন। ভাষা যত মিশবে, তত তার ব্যাপ্তি বাড়বে। সংস্কৃত ভাষা তো হারিয়েই গেল। শুভাবাবু তাঁর বক্তব্যে খুব একটা যুক্তি এবং সুবুদ্ধির পরিচয় দেননি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy