Advertisement
০৩ নভেম্বর ২০২৪

মুভি রিভিউ ‘কলকাতায় কোহিনুর’: দুই ফেলুদার টক্করটা বেশ ভাল লাগে

এই ছবিটি বানানোর জন্য প্রায় ৬ বছর ধরে গবেষণা করেছেন শান্তনু। ইতিহাস ঘেঁটেছেন বিস্তর। সে ইতিহাসের রাস্তাতেই মিলে গিয়েছে কোহিনুরকে কেন্দ্র করে ইংরেজ আমল থেকে চলে আসা বিদ্বেষ। মিলেছে নবাব-বাদশাদের পারিবারিক রাজনীতিও।

দেবর্ষি বন্দ্যোপাধ্যায়
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৫ মার্চ ২০১৯ ১১:১২
Share: Save:

ফেলুদা, রহস্য আর হিরে; এই তিন বিষয়েই আজন্ম কৌতুহল ছিল। বলছিলেন পরিচালক শান্তনু ঘোষ। সদ্য মুক্তি পাওয়া কলকাতার কোহিনুর ছবির পরিচালক। বিরতি চলছে তখন প্রিয়া সিনেমা হলে। নতুন ভাবে ফের চালু হয়েছে প্রিয়া প্রেক্ষাগৃহ। মাঝে বন্ধ হওয়ার কথা উঠেছিল। তাই ছবির অভিনেতারা বিশেষ খুশি। সে কথাই বলছিলেন, এ প্রজন্মের বাঙালির ফেলুদা সব্যসাচী চক্রবর্তী। আরেক ফেলুদা সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় তখন পর্দায় রহস্য ভেদ করছেন প্রেক্ষাগৃহে।

এই ছবিটি বানানোর জন্য প্রায় ৬ বছর ধরে গবেষণা করেছেন শান্তনু। ইতিহাস ঘেঁটেছেন বিস্তর। সে ইতিহাসের রাস্তাতেই মিলে গিয়েছে কোহিনুরকে কেন্দ্র করে ইংরেজ আমল থেকে চলে আসা বিদ্বেষ। মিলেছে নবাব-বাদশাদের পারিবারিক রাজনীতিও।

কিন্তু ইতিহাসের আখ্যানকে ইতিহাস দিয়ে না দেখে ব্যক্তি আখ্যান দিয়েই দেখতে চেয়েছেন শান্তনু। তাই এ ছবিতে হিরে উদ্ধারের রহস্যকে যত্নে বেঁধেছেন তিনি। রহস্য যে বাঙালির চিরপ্রিয়, জানেন শান্তনু। তাই ফেলুদার অনুষঙ্গ বারবার এসে পড়ে ছবিতে। কখনও ফেলুদার বই হাতে স্বয়ং সৌমিত্র বলে ফেলেন, "ভাল লাগছে না রে..ভাল লাগছে না..।" চকিতে মনে পড়ে যায় সোনার কেল্লা। কখনও একই ফ্রেমে এসে ধরা দেন, সৌমিত্র ও সব্যসাচী। প্রবীণ ও নবীন ফেলুদা।

আসলে হিরের ইতিহাসেও তো অনেক রহস্য, বলছিলেন পরিচালক। তা ছাড়া, বাংলা ছবিতেও পরিবার বা সামাজিক আখ্যানে বারবার এসে ধরা দেয় রহস্য। তা ‘শুভ মহরত’ হোক বা ‘জয় বাবা ফেলুনাথ’। ফেলুদার গল্পেই তো কতবার ইতিহাস আর রহস্য হাত ধরে হেঁটেছে। সত্যজিৎ রায়কে উৎসর্গ করা এ ছবিতেও তাই আখ্যান চলে যায় নবাব আর ইংরেজ আমলে। নানা মঠ ও পুরাণ পেরিয়ে ফিরেও আসে সমকালে। কেন্দ্রে ঘুরে বেড়ায় হিরে, যা কলকাতার ইতিহাস সিদ্ধ কোহিনুর।

আরও পড়ুন: আমন্ত্রণ পেয়ে আমেরিকা চলল ‘ভবিষ্যতের ভূত’

সমকালে এসেই জানা যায় একটা পরিবারের গল্প। সেই গল্পে কেরিয়ারের জন্য পরিবারের তোয়াক্কা না করে মুম্বই চলে যান উঠতি অভিনেত্রী। তাই নাতনিকে পরিবারের গুপ্তধন দিয়ে যান দাদু। বরুণ চন্দকে দাদুর ভূমিকায় বেশ লাগে। সেই গুপ্তধন কী, তা জানতেই ছবি এগোতে থাকে। অন্য দিকে এক সাংবাদিক ও প্রবীণ ফেলুদা সৌমিত্র এসে জুড়ে যান রহস্য সমাধানে। চলে শুভ ও অশুভ বোধের লড়াই। নবীন ফেলুদা সব্যসাচী ও তার গুরু সৌমিত্রর টক্করটাও বেশ লাগে। শেষে জয় শুভ বোধেরই হয়, বলা বাহুল্য। কী ভাবে তা জানার জন্য এ ছবি দেখতে হবে।

ছবির একটি দৃশ্য।

আঙ্গিক বা আখ্যানগত দিক থেকে আরও ভাল হতে পারত এ ছবি। ক্যামেরা প্রায় কিছুই বলল না। শুধু সংলাপ আর আখ্যানকে অনুসরণ করে গেল। আবহ সঙ্গীতও আরও পরিমিত হতে পারত। সম্পাদনা বা শৈলীর জায়গা থেকেও আরও উন্নত হতে পারত এ ছবি। আজকের নেটফ্লিক্সর রহস্য দেখা চোখে তা হলে আরও নতুন লাগতে পারত সবটা। প্রথম ছবিতে সে খামতিটা থাকল। সাম্প্রতিক বাংলা ছবির বেশির ভাগই এই খামতির ছাপে ক্লান্ত। অথচ আমাদের কত উন্নত প্রযুক্তি আজ। যে ছবিগুলির নাম করা হল আগে, সেগুলির সময় তো তা ছিল না। তবু তো ছবিগুলি চলে গিয়েছে অন্য মাত্রায়।

আরও পড়ুন: ‘দোহার’-এর কর্মশালার তৃতীয় সিরিজ শুরু হচ্ছে, জানেন?

তবু এ ছবি দেখা যায় ইতিহাসের কারণে, রহস্যের কারণে। আজ যখন রহস্য মানেই শুধু নস্টালজিয়া। যখন নতুন কোনও ইতিহাস নির্ভর রহস্যের খোঁজ বাংলা ছবিতে প্রায় নেই, তখন এ ছবি অন্তত চেষ্টা করে ইতিহাস আঁকড়ে ধরতে। এই প্রবণতা আমার ভালও লাগে। ভাল লাগে, এ ছবির শেকড় কলকাতাকে গুরুত্ব দেয় বলেও। আজ যখন, বাংলা ভাষা ও জাতিসত্ত্বাই বিদেশি পুঁজির চাপে নাকাল, তখন এমন ভাবনা দেখে অন্তত খনিকের স্বস্তি আসে। মনে হয়, ইতিহাস অনুসন্ধান আমাদের প্রজন্মকে মুক্তি দিতে পারে। যে প্রজন্ম স্বভাবতই উদ্বাস্তু, ভিটেহীন।

বিশ্বাসও আসে তাই। আজ না হলেও আগামীতে পারা যাবে। যাবেই। হল থেকে বেরিয়ে আসে প্রিমিয়ার শো দেখা দর্শক। অনেকের এ ছবির বিষয় ভাল লাগে। অন্য দিকে দেখি বসন্তের হাওয়ায় উড়ে যাচ্ছে রহস্য, হলুদ আলোর কলকাতায়..

(মুভি ট্রেলার থেকে টাটকা মুভি রিভিউ - রুপোলি পর্দার সব খবর জানতে পড়ুন আমাদের)

অন্য বিষয়গুলি:

Kolkatay Kohinoor Movie review Tollywood
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE