Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
Manabi Bandyopadhyay

মুভি রিভিউ ‘ব্রহ্মা জানেন গোপন কম্মটি’: অশিক্ষা, কুসংস্কার শুষে নিতে কত ন্যাপকিন লাগবে?

মহিলা ঢাকি, মহিলা টোটো চালক, মহিলা বাস কন্ডাক্টর— সব পাওয়ার পরেও মহিলা পুরোহিত চিন্তাতেও ভীষণ শক্ত! ‘মহিলাদের তো বারো হাত কাপড়ের কাছা হয় না’— পুরনো প্রবাদ।

‘শবরী’র চরিত্রে ঋতাভরী।

‘শবরী’র চরিত্রে ঋতাভরী।

মানবী বন্দ্যোপাধ্যায়
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৬ মার্চ ২০২০ ১৬:১১
Share: Save:

ছবি: ‘ব্রহ্মা জানেন গোপন কম্মটি’

অভিনয়ে: ঋতাভরী চক্রবর্তী, সোমা চক্রবর্তী,সোহম মজুমদার, মানসী সিংহ, শুভাশিস মুখোপাধ্যায় এবং অম্বরীশ ভট্টাচার্য

পরিচালনা: অরিত্র মুখোপাধ্যায়

‘ব্রহ্মা জানেন গোপন কম্মটি’— কর্ম এখানে কম্ম— কর্ম কম্ম হলেই চন্দ্রবিন্দু হয়ে যান। এ ছবির নামই প্রথমে প্রমাণ করে দেয় ‘ছক’ ভাঙতেই সে এসেছে।

ছবির বিষয় ‘মহিলা পুরোহিত’। ‘পুরোহিত’শব্দের আগে ‘মহিলা’শব্দটি শুধু বেমানান নয়, বরং কোনও রকম চিত্রকল্পও ফুটিয়ে তোলা যায় না। কেমন হতে পারে মহিলা পুরোহিত? পুরুষ পুরোহিতের একটি চিত্র তো আমাদের মনের ‘অ্যালবামে’ চির প্রতিষ্ঠিত। জিন্স-গেঞ্জি খুলে ফেলে পট্টবস্ত্র নামাবলি কপালে তিলক চন্দন— শ্বেত উপবীত, শিখায় ফুল, শিখা না থাকলে কর্ণপটহের খাঁজে!

পুরোহিত, যিনি পুরোটাই হিত করবেন সংসারে, সমাজে, তিনি পুরুষ না হলে চলে?

মহিলা ঢাকি, মহিলা টোটো চালক, মহিলা বাস কন্ডাক্টর— সব পাওয়ার পরেও মহিলা পুরোহিত চিন্তাতেও ভীষণ শক্ত! ‘মহিলাদের তো বারো হাত কাপড়ের কাছা হয় না’— পুরনো প্রবাদ।

মহিলাদের ‘কাছা’র দরকারও হয় না। মহিলারা তো উর্ধ্বলিঙ্গম বীরুপাক্ষম নন। লিঙ্গোত্থানের মুখে বৃথা লাগাম হল কাছা। মহিলা যে হেতু লিঙ্গখাদিকা ‘যোনি’ তাই তার ‘কাছা’-র বৃথা বন্ধনের প্রয়োজন নেই। সিগমুন্ড ফ্রয়েডের ‘কাস্ট্রেশন ফিয়ার’— পুরুষের এই ভীতির কারণে শাস্ত্র ‘শস্ত্র’ হয়ে উঠেছে বহুদিন আগে থেকে।

অরিত্র তাঁর প্রথম ছবি ‘ব্রহ্মা জানেন গোপন কম্মটি’-তে সেই অবচেন ভীতির থেকে আলোয় আনলেন আমাদের। শান্তিনিকেতনে বয়ঃসন্ধি কাটানো অরিত্র-র ছবিতে রবীন্দ্রসঙ্গীত গানে, বাঁশরীর সুরে যে আবহ রচনা করেছে, ব্রিটিশ রাজশক্তির কৌলিন্য রায় বাহাদুর বাড়িগুলো যে এখনও বাতাসীপুরের মতো গ্রামেগঞ্জে প্রাচীন স্থাপত্য বহন করে চলেছে গোলা-পায়রার নিঝুম বকমবকমে— সে সব মনে করিয়ে দেয়, সাদাকালো যুগের ছবির গায়ে আজকের ছবিটা যেন লাল সিঁদুরের টিপের মতো নতুনের আগমন।

ঋতাভরীর স্বামীর চরিত্রে সোহম

আজকের শবরী যখন সংস্কৃত পড়ে, সংস্কৃতের অধ্যাপিকা হয়ে সংস্কৃতির সঙ্গে সংহতিকে জুড়তে চায়, তখনই আসে কানা পুরোহিতের অভিশাপ। বউ বাপের বাড়ি গেলে যিনি ঘরে ‘মেয়েছেলে’ ঢুকিয়ে পাষাণ প্রতিমার সোনার চেন হাপিস করেন, ‘মাগী’র গলায় পরান। তিনিই আবার হ্যারিকেনের কাচ ঢাকা আগুনের অগ্নিসীমাতে স্যাঙাতদের সঙ্গে বাংলাই খান (মনে হয়), চায়ের দোকানের বেঁটে কাচের গেলাসে। যদিও এ ছবিতে ‘মাগী’ শব্দটি একবারও ব্যবহৃত হয়নি। এরা এখনও কুটুরে প্যাঁচার মতো ইতিউতি বেঁচে আছেন। বাতাসীপুরে নয় শুধু, এই শহর কলকাতাতেও।

এ ছবির কেন্দ্র চরিত্র ‘শবরী’ নামের এক কন্যা। শর্বরী দত্ত, পুরুষদের পোশাক বানিয়ে যিনি তাক লাগিয়েছিলেন, তিনি তো ‘শর্বরী’। এ কন্যার নাম ‘শবরী’ হ্যাঁ, 'শবরীর প্রতীক্ষা'। এই শবরীকেও বুক পাষাণ করে অপেক্ষা করতে হয় তার অন্তরের সত্যকে প্রতিষ্ঠা করার জন্য। সামাজিক সত্য আর আন্তরিক সত্যের মধ্যে যে কোনও রকমই মিল থাকতে পারে না, তা জেনেও, আমরা মুখ বুজে আন্তরিক সত্যকে চেপে রেখে, মিথ্যা সামাজিক সত্যকে প্রতিষ্ঠা করতে করতে তিল তিল করে ক্ষয়ে যাই। তার পর একদিন সমস্ত সত্য বৈদ্যুতিক চুল্লির ভোল্টেজে ভষ্মীভূত।

কেউ কেউ থাকেন, যাঁরা কাঁদে না-আর্তনাদ করে না— সেই বহু বিরল শ্রেণির একজন প্রাণী, তিনি আবার পুরুষ নন, নারী, তিনি শবরী। শবরী গঙ্গোপাধ্যায়। ‘গঙ্গোপাধ্যায়’ সারনেম মনে করাতে পারে কাদম্বিনী গঙ্গোপাধ্যায়কে। কেননা, লীনা গঙ্গোপাধ্যায়কে এখনই হয়তো সে জায়গা দেওয়া যাবে না। ভবিষ্যত্ নিশ্চয়ই অন্য ইতিহাস গড়বে।

গাঙ্গুলি আমাদের ওভার বাউন্ডারি, আর গঙ্গোপাধ্যায় আমাদের দেখাল বাউন্ডারির মধ্যেই বাউন্সার। এক পুরুষের হাত দিয়েই বেরুলোনারী সুরক্ষার এই ছবি, অরিত্রকে কি আমরা ‘প্যাড ম্যান’ বলব? না, তা বলব না, কারণ ছবির শেষ দৃশ্যটি অতীব চমত্কার, স্যানিটারি ন্যাপকিনের উপরে থাকা স্টিকারটি (যেটা খুলে, ‘সিল’ ভাঙতে হয় ‘ন্যাপকিন’-এর), সেই স্টিকার মেঝে থেকে উড়ে যায় দিগন্তে— অনেক উঁচুতে। এই আকাশে আমার মুক্তি আলোয় আলোয়...

মাসের পাঁচটি দিনকে লাল গোলে চিহ্নিত না করে হার্ট সাইন বা লাভ সাইনে চিহ্নিত করা যায়, সেটা শেখালেন অরিত্র, থুড়ি শবরী। ‘মাসিক’ বা ‘পিরিয়ড’-এর দিনগুলো যদি ‘লাভ’ চিহ্নিত হতে পারে, তা হলে মনে মনে ওই পাঁচদিন হটব্যাগকে দূরে রাখতে পারবে অনেক মেয়েই। ছবিটি দেখতে দেখতে যাঁদের কথা মনে পড়েছিল, তাঁদের মধ্যে তসলিমা নাসরিন যেমন ছিলেন, তেমনই ছিলেন রবীন্দ্রনাথ! রবীন্দ্রনাথ বলব না ঋতুপর্ণ? ঋতুপর্ণর ‘চোখের বালি’ সিনেমায়, বিনোদিনী ঐশ্বর্যর যখন থোলো রক্ত ছলকে পড়ে রান্নাঘরের মেঝেয়। রবীন্দ্রনাথ লেখেননি, ঋতুপর্ণ দেখিয়েছেন রক্তাক্ত সত্যকে। বিধবার পিরিয়ড হওয়াটাও সে সময়ে অন্যায় ছিল, সাদা থানে লাল রক্ত— বিরক্ত।

এ ছবিতে পুরোহিত হতে চাওয়া শবরীর বিড়ম্বনাকে অবলম্বন করেই এগিয়েছে ছবির গল্প।

মেয়েকে কি কখনও সম্প্রদান করে দেওয়া যায়?

রাজা রামমোহনের তেত্রিশ বছর আগে জন্ম নেওয়া হটি বা হটু বিদ্যালঙ্কার যিনি সমাজের রক্তচক্ষু অনুশাসনকে ভেঙে উপবীত ধারণ করে, মাথা মুড়িয়ে, টিকি রেখে টোলের পণ্ডিত হয়ে বাদ সেধেছিলেন পুরুষের একচ্ছত্র ‘পন্ডিত’হওয়ার আধিপত্য—সেই ইতিহাসে পুরুষ শৌর্য-বীর্যের নীচে চাপা পড়া হটুকে বিস্মৃতির ধূলি মলিনতা থেকে সরিয়ে নারায়ণ সান্যাল ‘বায়োপিক’-এর মতো ‘বায়োলিট’ লেখেন—‘রূপমঞ্জরী’(প্রথম ও দ্বিতীয় খণ্ড,১৯৮৮)। শবরী ঠিক হটি বা হটুর জায়গায় নেই। আমাদের শবরী(ঋতাভরী চক্রবর্তী) যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়া মেয়ে নয়। গ্রামের বাড়িতে, পুরোহিত বাবার মেয়ে, গ্রামের সত্ ব্রাহ্মণ মানেই গরিব ব্রাহ্মণ। ছোটবেলায় মেয়ে-বাবার রামপ্রসাদী সংসারে, ছোট্ট শর্বরী প্রশ্ন করে, কেন মেয়েকে ‘সম্প্রদান’করা হয়, ‘পরগোত্র’করে?

মেয়েকে কি কখনও সম্প্রদান করে দেওয়া যায়? সেদিন থেকে কন্যা সম্প্রদানের মন্ত্র থেকে সরে আসেন পিতা-কন্যা। কন্যা আর গো, বা, গো এবং দুহিতা— দু’পক্ষই সম্প্রদানযোগ্য। কন্যাদান, গোদান— গ্রহীতা একমাত্র পুরুষ। দানযোগ্য আর গ্রহীতার খাদ্য-খাদক সম্পর্ক থেকে নারীকে বের করে আনার বারংবার চেষ্টা হয়েছে আবহমান কাল থেকে—‘ঋতু’ তাই নারীর অবমাননা নয়, আত্মরক্ষাও বটে। যা দ্রৌপদী শিখিয়েছিলেন—‘আমি রজস্বলা’—রজস্বলাকে ছোঁয়া যায় না, ভোগ করা যায় না। শবরী যখন আক্ষেপ করে, এত বছরের অশিক্ষা-বিশ্বাস-কুসংস্কার শুষে নিতে কত ন্যাপকিন লাগবে? দর্শকের চোখের কোণে অশ্রু নামবেই নামবে। অনেক বার হাসতে হবে, কাঁদতে হবে এ ছবি দেখতে দেখতে। সালঙ্কারা কন্যাকে যেভাবে সম্প্রদান করায় রীতি শাস্ত্র মন্ত্রে ধরা আছে, তাকে যদি গাওয়া যেতে পারে জীবনমুখী সুরে— যদিদং হৃদয়ং তব, তদস্তু হৃদয়ং মম— তুমি আমায় হৃদয় দিলে, আমিও তোমায় হৃদয় দিলাম— কন্যা তাঁর স্বামীর দেওয়া মাকু-সিঁদুর থেকে তিলক পড়ায় স্বামীর প্রশস্ত ললাটে। আজ থেকে তুমিও দাগলে, আমিও দাগী হলাম—‘সাম্যবাদ’। আমি সকল দাগে হব দাগী কলঙ্কভাগী। তুমিও কলঙ্ক মাখো ‘স্বামী’।

শাস্ত্র দিয়ে ছেলেখেলা নয়, মেয়েখেলাও নয়— শবরী পুরোহিত হিসেবে পূর্ণতা পেয়েছে, যখন সে বলছে,‘‘আমি মানুষের সঙ্গে মানুষের বিয়ে দিই’’— আকাশের চাঁদ তাকে নীরবে আশীর্বাদ করেছে। রাজা বিক্রমাদিত্যের কাঁধের ‘শব’ হওয়ার জন্য যে শবরীদের জন্ম নয়, শবরীর ব্যক্তিত্ব, নারীর ব্যক্তিত্ব যে পুরুষের পৌরুষকে কত লাবণ্যময় করে তুলতে পারে, এ সিনেমা সেটা আমাদের শিখিয়েছে।

নারী-পুরুষ নয়, দ্বন্দ্ব আসলে সত্যর সঙ্গে অসত্যর, অন্ধবিশ্বাসের সঙ্গে উপলব্ধ সত্যর, অপ্রয়োজনের সঙ্গে প্রয়োজনের।

মা’ কেমন হওয়া উচিত তা শবরী বুঝিয়েছেন

পুরোহিতের টিম ওয়ার্ক যে কত সুন্দর হতে পারে সেটা শেখালো এই ‘ব্রহ্মা জানেন’ টিম—‘তোমার অসীমে প্রাণমন লয়ে যতদূরে আমি যাই’— সত্যিই কোথাও দুঃখ কোথাও বিচ্ছেদ নাই।

শবরীর জ্যোতিষী পিসশাশুড়ি(মানসী সিংহ) শুধু জ্যোতিষ নয়, তন্ত্র, জ্যোতিষ বিশেষজ্ঞা। পঞ্চায়েত প্রধান শাশুড়ি মা অমরাবতী চক্রবর্তী। সমাজে প্রতিষ্ঠিত শাশুড়িমাতা রাজনীতির ভাষণ দিয়ে ভোটে জিতেও নারীর সত্যকার স্বাধীনতাকে উন্মোচন করতে পারেননি। বরং তাঁরা সিরিয়ালের শাশুড়ি-ননদের মতো শবরীর সাবলীল জীবনে যন্ত্রণার নারকোল কুটেছেন নারকেল কুরনিতে। শবরীকে ঘরে বউ এবং বাইরে প্রতিবাদী হতে হয়েছে। বড় জা প্রয়াত বকুল যখনই নামে উচ্চারিত হয়েছে, আশাপূর্ণা এসে উঁকি দিয়েছেন মনের দোরগোড়ায়। সত্যবতীর মতো শবরী কৃচ্ছ্রসাধনায় নিজের ধনুকভাঙা পণে সময়ের কারণেই নিঃশেষ করে ফেলেনি। সত্যবতী ছিল বিংশ শতাব্দীর প্রথম দিকে, আর আমাদের শবরী যে বিশে বিষ-(দু’হাজার কুড়ি) একবিংশ-র নারী! সত্যবতীর তিন প্রজন্ম পর। আন্তর্জাতিক নারী দিবসের এই সময়টায় অরিত্র-র ছবিটি মুক্তি পাচ্ছে— সেটাও একটা ‘রাজযোটক’।

‘রাজযোটক’ শব্দটিও এ ছবিতে বার বার এসেছে। ‘রানিযোটক’ কেন বলা হয় না? আসলে নীতিটাই তো রাজার। ‘রাজনীতি’ ভাষার এই নারীপুরুষ বিভেদের সূত্রটিও বাংলা ভাষায় আস্তে আস্তে মুছে দেবেন বাংলা ভাষায় পৌরোহিত্য করা মানুষেরা। এ বার থেকে কি রানিকাহিনি শুরু হবে?

ছবিটিতে আমার বার বার মনে হয়েছে ‘বরমহা’নয় বরহ‘মা’—‘মা’ কেমন হওয়া উচিত তা শবরী বুঝিয়েছেন— কন্যা হয়ে যখন তিনি পিতার কোলে জড়িয়ে ধরা কন্যাকুমারী মাতা, স্বামীর জামার বোতাম সেলাই করে দাঁতে কাটা সুতোয়, কিংবা স্বামীর ফুল স্লিভ হাতার রিস্ট বোতামে আটকে যাওয়া শাঁখা-নোয়ায়, তিনি তখন নারী জয়মান বা জায়স্মতীকে দেখে বক্ষবন্ধনীর ভেতরেও একটা প্রশস্ত বাঁধ না মানা ঢেউকে প্রশয় দিতে মন উচাটন। শেষ পর্যন্ত এ ছবিতে মেয়ে পুরুতের জয়—মেয়েরাই যে আগমনী, মেয়েরাই যে বিজয়া, ছেলেদের শুধু অবোধ কোলাকুলি, দিনের মধ্যে পাঁচদিন আর রক্তকালির দাগে আবদ্ধ থাকে না।যখন শবরী নিজের ননদিনীকে মন্ত্রোচ্চারণে লগ্নভ্রষ্টা থেকে লগ্নাহিতায় পরিণত করেন, জানান মাসের নির্দিষ্ট পাঁচটা দিন আর পাঁচটা দিনের মতোই স্বাভাবিক তখন বোঝা যায়, মুক্তি পেলেন শবরীমালাও।

লেখক পরিচিতি: অধ্যাপক, প্রাবন্ধিক এবং ভারতের প্রথম রূপান্তরকামী অধ্যক্ষ

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy