পরিচালনা: অরিন্দম ভট্টাচার্য
অভিনয়: আবির চট্টোপাধ্যায়, তনুশ্রী চক্রবর্তী, সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়, মমতাশঙ্কর, পূজারিনি ঘোষ, খরাজ মুখোপাধ্যায়, রুদ্রনীল ঘোষ
বাঙালি ভয় পেতে তুমুল ভালবাসে। কিন্তু দু’-একটা ব্যতিক্রম ছাড়া ভয়ের সঙ্গে বাংলা ছবির চিরকাল সমদূরত্ব। অগত্যা একলা অন্ধকার ঘরে বিদেশি ভাষার শরণাপন্ন হওয়া ভিন্ন গতি কী? পরিচালক অরিন্দম ভট্টাচার্য তাঁর নতুন ছবিতে অল্পবিস্তর ভয়-ভাবনা মিশিয়ে দিতেই গোটা নন্দন প্রেক্ষাগৃহ জুড়ে যে পরিমাণ বুক ধড়াস ধড়াস অবস্থা, তা দেখে মনে হয় কেন যে বাংলা ছবিকে ভূতে পায় না কে জানে!
অর্ক আর সায়ন্তনী। সদ্য বিয়ে হয়েছে তাদের। তারা নতুন বাড়ি খোঁজে। শহরের ট্রাফিক, পলিউশন, অবক্ষয় থেকে দূরে দু’দণ্ড শান্তির খোঁজে। উপকণ্ঠে পেয়েও যায় একখানা। ফ্ল্যাট নম্বর ৬০৯। ভাড়া বাড়ি। সাউথ ফেসিং বারান্দা। সমনে বিস্তৃত সবুজ। এই বাড়িকে ঘিরেই কাহিনির বুনন। ৬০৯ নম্বর ফ্ল্যাটটিও আসলে ছবির একটি চরিত্র।
শুরুর দৃশ্য। হঠাৎ মাঝপথে থেমে যায় লিফট। জ্বলে ওঠে লাল আলো। তার পরই সব কেমন অন্ধকার! শুধু একটা নয়, এমন অস্বাভাবিকতা আরও আছে। অকারণে দেওয়াল থেকে ফটোফ্রেম খসে ছত্রখান হওয়া, সিঁড়ি দিয়ে গড়িয়ে পরা বল, চেয়ারের খসমস শব্দ কিংবা ওই দোতলার বন্ধ ঘরটা— ওখানেই যেন লুকিয়ে আছে সব রহস্যের সমাধান। আদৌ কি তাই? নাকি সবটাই মনের দোলাচল? সামাজিক অবক্ষয়ের কঙ্কাল রূপ? তল পায় না সায়ন্তনী (তনুশ্রী চক্রবর্তী)। একা একা খুঁজে বেড়ায় অসুস্থ অশরীরীর মতো। না, গল্প আর নয়। এই ধারার ছবির ক্ষেত্রে গল্প বুনে দিলে মজাই নষ্ট। বরং হলে যান। ভয় পান।
আরও পড়ুন, মুভি রিভিউ: গ্রামে ঘোরে মহিলা ভূত, পৌঁছে দেয় গভীর বার্তা
থ্রিলার-হরর ছবিতে ক্যামেরা, সাউন্ড ডিজাইন খুব গুরুত্বপূর্ণ। ফ্ল্যাট নম্বর ৬০৯ এর বেশ কিছু ক্লোজ আপ, প্যানিং চমকপ্রদ। বাংলা বাজারে স্বল্প বাজেটে এর থেকে ভাল গ্রাফিক্স আর কী হতে পারে? ছবিতে ভয়ের শব্দে বেশ দম আছে। তবে এ-ও জানিয়ে রাখি, ‘ফ্ল্যাট নম্বর ৬০৯’ কিন্তু নিপাট হরর মুভি নয়। ছবিটি প্রকৃত অর্থে অবক্ষয়িত সমাজের চিত্ররূপ।
ছবির একটি দৃশ্যে তনুশ্রী।
তনুশ্রীর ফুলে ওঠা শিরা, কপাল চুঁইয়ে পরা ঘাম, বিস্ফারিত চোখ, আপনাকেও ভয় পাইয়ে দিতে বাধ্য। তনুশ্রী, আপনি জমিয়ে দিয়েছেন। আর সেই নিষ্পাপ অশরীরী শিশু? না, তার সম্পর্কে টু শব্দটি নয়। তাকে একেবারে পর্দাতেই দেখবেন। একের পর এক সত্যান্বেষণে ক্লান্ত আবিরের এমন একখানা ভিন্ন স্বাদের চরিত্রের বড় প্রয়োজন ছিল। তিনি এর সদ্ব্যবহারে আরও যত্ন নিলে ভাল করতেন। মমতাশঙ্কর ও সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের স্ক্রিন প্রেজেন্স অল্প সময়ের জন্য। তাঁরা যথাসাধ্য চেষ্টা করেছেন। রুদ্রনীল ও খরাজের অবস্থান আরও সীমিত। দু’জনেই সুযোগ বুঝে চালিয়ে খেলতে কোনও দ্বিধা করেননি। যদিও পূজারিনি ছোট চরিত্রে তেমন ছাপ রাখতে পারলেন না।
আরও পড়ুন, মুভি রিভিউ: ‘পিয়া রে’তে মন ভাল করা বিনোদন পাবেন
ভূতের উপদ্রবে ঘরময় ছড়িয়ে থাকা জিনিসপত্র কিংবা দোতালার রহস্য ঘরের সেট ডিজাইন প্রশংসার যোগ্য। আচ্ছা, ভয়ের শেষ কি প্রেমে? ছবি দেখে বেরোচ্ছিলাম। এক কাপলের সঙ্গে দেখা, “আর বোলো না, কত দিন ভেবেছি হাগ করব। কিছুতেই হচ্ছিল না! আজ এমন ভয় পেয়েছি গোটা ছবিতে ওকে জড়িয়ে ধরেছিলাম!”
ভয়ের এমন মহিমা কে জানত?
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy