(বাঁ দিকে) ছবির দৃশ্যে তমান্না। গায়িকা মধুবন্তী (ডান দিকে)। ছবি: সংগৃহীত।
এই মুহূর্তে সমাজমাধ্যমে রাজত্ব করছে যে গানটি, সেটি বলিউডের। ভাষা হিন্দি। কিন্তু কণ্ঠ বাঙালির। ‘আজ কি রাত’— সবুজ পোশাকে ঈষৎ পৃথুল শরীরে হিল্লোল তুলে নাচছেন তমান্না ভাটিয়া। গত দু’বছর ধরেই তমান্নার নাচে মজে রয়েছে নেটদুনিয়া। নতুন নাচেরও প্রশংসা করছেন নেটাগরিক। এই মুহূর্তে ভারতের ইউটিউবে প্রথম স্থানে রয়েছে ‘স্ত্রী ২’ ছবির এই গান। দর্শক-শ্রোতা সবচেয়ে বেশি বাজাচ্ছেন এই গান। ক্যামেরার সামনে তমান্নাকে দেখা যাচ্ছে। কিন্তু এরই মধ্যে খোঁজ পড়েছে নেপথ্য কণ্ঠের! তিনি কলকাতার মেয়ে মধুবন্তী বাগচি।
দীর্ঘ দিন ধরেই বাংলা সঙ্গীত জগৎ তাঁকে চেনে। বেশ কিছু বাংলা ছবিতে প্লেব্যাক করেছেন। ‘মিতিন মাসি’ থেকে ‘শুধু তোমারই জন্যে’র মতো ছবি রয়েছে এর মধ্যে। এখন মাতোয়ারা বলিউড। তবে ‘স্ত্রী ২’-ই প্রথম নয়। সম্প্রতি তাঁর গাওয়া আরও একটি গান সাড়া ফেলে দিয়েছে। সেটি ‘হীরামন্ডি’ সিরিজ়ের ‘নজরিয়া কি মারি’। কিন্তু ‘আজ কি রাত’ই মধুবন্তীর এত বছরের সঙ্গীতজীবনে সবচেয়ে বড় ‘হিট’, সেটা মানছেন গায়িকা নিজেও। এমন সাফল্যের পর মুম্বই থেকে আনন্দবাজার অনলাইনের সঙ্গে নিজের অনুভূতি ভাগ করে নিলেন মধুবন্তী।
ফোন ধরে মধুবন্তী প্রথমেই জানান, সবটা যেন এখনও ঠিকঠাক বুঝে উঠতে পারছেন না। কী ভাবে এই অনুভূতির ব্যাখ্যা করবেন তা-ও জানেন না। যদিও মধুবন্তী বলেন, “আমার সঙ্গীতজীবনে এটি প্রথম বার এমন ঘটল। গানটা যে শুধু সব জায়গা ‘ট্রেন্ড’ করছে তেমনটা নয়, বরং সারা দেশ থেকে বহু মানুষ মেসেজ করছেন, মন্তব্য করছেন আমাকে ট্যাগ করে। এ এক দারুণ অনুভূতি।”
এত দিন মূলত একটি নির্দিষ্ট শ্রেণির দর্শকের জন্য বেশির ভাগ গান গেয়েছেন তিনি। এই প্রথম বার এত বেশি দর্শকের কাছে পৌঁছে যাচ্ছেন তিনি। সেই প্রসঙ্গেই মধুবন্তী বলেন, “এই ধরনের ছবি অনেক বেশি দর্শক-শ্রোতার কাছে পৌঁছয়। এর আগে আমি এমন জায়গা কখনও পাইনি। যদিও ‘হীরামন্ডি’ও বাণিজ্যিক ভাবে সফল। তবু সেটাও একটা নির্দিষ্ট শ্রেণির দর্শকের কাছে প্রশংসা কুড়িয়েছে। কিন্তু ‘স্ত্রী ২’ একেবারেই বলিউডের মূলধারার বাণিজ্যিক ছবি। সেই জায়গা থেকেই এমন একটা কাজের সঙ্গে যুক্ত হওয়া আমার কেরিয়ারে প্রথম। অনেক গানই ‘হিট’। কেউ নাচ পছন্দ করে, কেউ আবার ভিডিয়ো। কিন্তু এ ক্ষেত্রে গানটা প্রাধান্য পেয়েছে। যাঁরা আসছেন ভিডিয়োটা দেখতে, তাঁরা কিন্তু পরে গানটা শুনতে বার বার ফিরে আসছেন। এটা যে হবে, আমরা আগে থেকে বুঝতে পারিনি। যদিও আশা করেছিলাম ভাল হবে, তবে এতটা ভালবাসা পাব ভাবিনি।”
পর্দায় খ্যাতনামী নায়িকা থাকলে অনেক সময়ই তাঁর নেপথ্যের কণ্ঠ চাপা পড়ে যায়। কিন্তু এই গানের ক্ষেত্রে, বলা ভাল, মধুবন্তীর ক্ষেত্রে যে তেমনটা হয়নি সেটা মানছেন গায়িকা। তাঁর কথায়, “অনেক সময় ভিডিয়ো থাকলে সত্যি গায়ক অথবা গায়িকার কণ্ঠটা চাপা পড়ে যায়। এ ক্ষেত্রে তা হয়নি। তমান্না ম্যামের প্রশংসা তো করেছেন সকলেই। কিন্তু গানটা নিয়েও যে এত কথা হচ্ছে, ভাল লাগছে।”
শুধ তা-ই নয়, এই প্রসঙ্গে মধুবন্তী তুলে ধরেছেন শিল্প মহলের আরও একটি দিক। তিনি বলেন, “আরও ভাল লাগছে, একটি গান যে একক মহিলা কণ্ঠের জোরেও জনপ্রিয় হতে পারে, সেই বিষয়টা পরিষ্কার হল। আসলে আজকাল বেশির ভাগ গানেই পুরুষকণ্ঠের আধিক্য। এই গানটা যেন একটা সাম্যের বার্তা দিয়ে গেল।”
এই ছবির মিউজ়িক লঞ্চ অনুষ্ঠানে থাকতে পারেননি মধুবন্তী। তাই সে ভাবে ছবির অভিনেতা-অভিনেত্রীদের প্রতিক্রিয়া জানা হয়নি। যদিও প্রিমিয়ারে উপস্থিত থাকবেন তিনি। সে দিনই হয়তো তাঁর দেখা হবে তমান্নার সঙ্গে, জানালেন মধুবন্তী।
এই গানটি গাওয়ার প্রস্তাব মধুবন্তী পেয়েছিলেন রাত ১১টায়। সঙ্গীত পরিচালক সচিন-জিগার ফোন করে ডেকে পাঠান মধুবন্তীকে। স্টুডিয়োয় বসে গান নিয়ে আলোচনার সময় তাঁরা নাকি মধুবন্তীকে বলেন, “আমরা চাই না এই গানটা অন্য কারও গলায় রেকর্ড করা হোক। এমন কিছু একটা ‘ম্যাজিক’ করুন যাতে গানটা শুনে মনে না হয় অন্য কেউ গাইলে আরও ভাল হত।”
মধুবন্তী বলেন, “এই কথাটি ভীষণ অনুপ্রাণিত করেছিল। তখন মনে হয়েছিল, এমন ভাবে গাইব যাতে এটা আমার গান হয়েই রয়ে যায়। আসলে মুম্বইয়ে এটা ভীষণ চলতি একটা ব্যাপার। একটা গান অনেকের গলায় থাকে। কিন্তু এই গানটির ক্ষেত্রে সেটা হয়নি, এটা পাওনা আমার কাছে।”
বেশ কয়েক বছর পাকাপাকি ভাবে মুম্বইয়ে থাকছেন মধুবন্তী। বাংলা ছবিতে গান কমেছে তাঁর। কলকাতায় আসা-যাওয়াও কমেছে। গায়িকার কথায়, “আসলে মুম্বইয়ে বেশ ব্যস্ততার মধ্যে দিন কাটে। এ ছাড়াও আমি মানুষটা খুব যে জনসংযোগ করতে পারি তেমন নয়। যাঁরা প্রথম থেকে আমার বন্ধু, অনিন্দ্য (অনিন্দ্য চট্টোপাধ্যায়) ও উপলদা (উপল সেনগুপ্ত)— ওঁরা খোঁজখবর নেন। কথাও হয় মাঝেমধ্যে। কলকাতায় গেলে আমি উপলদার বাড়ি অবশ্যই যাই।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy