‘তুফান’ ছবির পোস্টার। ছবি: সংগৃহীত।
দুই বাংলার যৌথ প্রযোজনায় তৈরি ছবি ‘তুফান’। সম্প্রতি ইদে ছবিটি মুক্তি পায় বাংলাদেশে। গত কুড়ি বছরে বাংলাদেশে ব্যবসায়িক সাফল্যের দিক থেকে এই ছবি নজির গড়েছে। ইতিমধ্যেই বাংলাদেশের বক্স অফিস থেকে প্রায় ২০ কোটি সংগ্রহ করেছে এই ছবি। ৫ জুলাই ছবিটি মুক্তি পাচ্ছে কলকাতায়। শাকিব খান, মিমি চক্রবর্তী, চঞ্চল চৌধুরী, নাবিলার ছাড়াও বাংলাদেশের একাধিক জনপ্রিয় অভিনেতারা রয়েছেন ‘তুফান’-এ। আরও এক অভিনেতা রয়েছেন, তিনি লোকনাথ দে। তবে সে ভাবে নজরে আসেননি তিনি। শোনা যাচ্ছে, তাঁর একাধিক দৃশ্য নাকি বাদ পড়েছে। তবে সে সব নিয়ে নাকি আক্ষেপ নেই লোকনাথের। শাকিবের জন্য সেটে প্রায় ৪০ মিনিটের অপেক্ষার পর কিসের আর্জি জানিয়েছিলেন অভিনেতা? ‘তুফান’ ছবির কাজের অভিজ্ঞতা ভাগ করে নিলেন আনন্দবাজার অনলাইনের সঙ্গে।
‘‘ছবির পরিচালক রায়হান রাফি যে ক্যানভাসে এই ছবি ভেবেছেন, সেটা কুর্নিশ জানানোর মতো। এই ছবি বাংলাদেশে ইতিমধ্যেই নজির গড়ে ফেলেছে। অনেকেই হয়তো বলিউডের ছবির সঙ্গে সাদৃশ্য খুঁজতে পারেন, কিংবা দক্ষিণী ছবি ‘কেজিএফ’-এর তুলনা টানতে পারেন। ‘তুফান’ অবশ্য ওই ধরনের বড় বাজেটের ছবি নয়, কিন্তু রাফির ভাবনার ক্যানভাসটা বড়। যেটা ভাল লেগেছে, এই ছবিতে পরিচালক বাংলাদেশের তারকা শাকিবকে যে মুনশিয়ানা দিয়ে ব্যবহার করেছে সেটা প্রশংসার দাবি রাখে। যদিও শাকিব ছাড়াও চঞ্চল চৌধুরী, মিমি চক্রবর্তী, নাবিলা, গাজী রাকায়েতের মতো তারকারা রয়েছেন। সামগ্রিক ভাবে এটা ‘মাল্টিস্টার’ ছবি।’’ একটানা কথাগুলো বলে গেলেন লোকনাথ।
যদিও ‘দুষ্টু কোকিল’ গানে শাকিবের লুক নিয়ে হইহই হয়। অভিনেতার পরনে নীল সুট, গালভর্তি দাড়ি দেখে সমাজমাধ্যমে অনেকে রণবীর কপূরের ‘অ্যানিম্যাল’ ছবির সঙ্গে সাদৃশ্য খুঁজেছেন। সেটা মানতে নারাজ লোকনাথ। তাঁর কথায়, ‘‘গল্পের দিক থেকে একেবারেই ‘অ্যানিমাল’-এর সঙ্গে এই ছবির তুলনা করা যাবে না। তবে নায়কের সাজসজ্জা মিলতেই পারে, সেটা নিয়ে বিতর্ক তৈরি করা অনর্থক।’’
‘তুফান’-এর সাফল্যে তিনি খুশি, তবে কলকাতার ছবি সে পরিমাণ ব্যবসায়িক সাফল্য পাচ্ছে না বলে আফসোস লোকনাথের কণ্ঠে। অভিনেতার কথায়, ‘‘আমাদের এখানে কোনও ছবি ৫ কোটি ব্যবসা করলেই সাকসেস পার্টি দেখা যায়। সে ক্ষেত্রে আমার মনে হয় ‘তুফান’ হয়তো অনুপ্রেরণা হতে পারে। কী ভাবে সফল বাণিজ্যিক ছবি বানাতে হয়! তবে এটাও ঠিক আমাদের কলকাতায় এখন মিশ্র সংস্কৃতি। হিন্দি ছবি থেকে দক্ষিণী ছবির সঙ্গে একটা প্রতিযোগিতাও রয়েছে। বাংলাদেশের দর্শকের মধ্যে বাংলা ছবি নিয়ে উন্মাদনা রয়েছে, যেটা আমাদের এখানে নেই। তাই খানিকটা কোণঠাসা আমাদের এখানকার ছবি।” তবে তিনি নিশ্চিত, এখনকার ছবি ঘুরে দাঁড়াবে। কারণ মূলধারার বাণিজ্যিক ছবি সাফল্য না পেলে অন্য ধারার ছবিরও ভবিষ্যৎ অন্ধকার, এমনটাই মনে করেন তিনি।
‘তুফান’ ছবির চিত্রনাট্য পড়ে প্রথমে কাজ করতে রাজি হননি বলেই জানান লোকনাথ। প্রথমে খুব একটা সম্মতি না দিলেও, পরে মত বদলান। লোকনাথের কথায়, ‘‘শাকিবের ছবি আগে দেখিনি, তবে নাম শুনেছি। এ ছাড়াও চঞ্চল চৌধুরী, ফজলু রহমানের মতো অভিনেতারা রয়েছেন ছবিতে। তাঁদের সঙ্গে কাজ করার সুযোগটা ছাড়তে চাইনি। একটা আন্তর্জাতিক সম্পর্ক হবে। ভাবলাম, একটা কাজ করলাম। তবে আমি আমার কাজ নিয়ে খুব আশা রেখেছি তেমন নয়। ছবিটা ভাল হয়েছে এটা বলতে পারি।’’
শাকিব খানের ক্যারিশমা এ পার বাংলার দেব-জিৎদের ছাপিয়ে গিয়েছে কি না, সেই নিয়ে খানিক দোনামোনায় তিনি। ‘‘আসলে উত্তরটা হ্যাঁ আবার না। শাকিব খান বাংলাদেশে যে জায়গাটায় রয়েছেন, সেখানে আমার মনে হয় ১ থেকে ১০ তিনিই। সেই জায়গায় অন্য অভিনেতারা ‘ব্যাক ফুটে’। কিন্তু, আমাদের এখানে তো তেমন নয় ব্যাপারটা। আমাদের জিৎ-দেব আছে। ওদের শুধুই শাকিব। জিৎ যেমন চেষ্টা করছেন। দেব অন্যধারার ছবি করছেন। যে ধরনের ছবি করে দেব সেই উচ্চতায় পৌঁছেছেন সেটাকে গুরুত্ব দেওয়া উচিত। তবেই ইন্ডাস্ট্রির ভাল হবে। তবে বর্তমান সময় দুই দেশের যৌথ প্রযোজনায় আরও ছবি হওয়ার দরকার।’’
এই ছবিতে বাংলাদেশের একাধিক অভিনেতার সঙ্গে কাজ করলেও লোকনাথের কণ্ঠে প্রশংসা মোশারফ করিমের। তিনি বলেন,‘‘ ওখানকার মোশারফ করিমকে আমার মনে হয় দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম সেরা অভিনেতা।’’
তবে ‘তুফান’ ছবিতে তারকাদের ভিড়ে লোকনাথের একাধিক দৃশ্যই নাকি বাদ পড়েছে! যদিও এই প্রসঙ্গে মন্তব্য করতে চাননি। তাঁর কথায়, ‘‘আসলে একটা ভাল কাজ হলে তার আনন্দে ভেসে থাকা যায়, প্রতিকূলতাগুলো মাথায় থাকে না। আমারও কিছু ডেট নিয়ে সমস্যা হচ্ছিল, হয়তো কিছু দৃশ্য বাদ পড়েছে। সেটা নিয়ে ভাবিত নই। শুটিংয়ে গিয়ে এত জন বাঙালি বাংলা ভাষায় আড্ডা দিচ্ছি, এটা খুব ভাল লেগেছে। আমাদের এখানে সেই সুযোগ নেই, কেউ ইংরেজি, কেউ হিন্দিতে কথা বলে। সেখানে নিপাট বাংলা ভাষায় আড্ডাটা দারুণ উপভোগ করলাম।’’
তবে শাকিবের জন্য সেটে প্রায় ৪০ মিনিট অপেক্ষা করতে হয়েছে সেটা যেমন মনে হয়েছে, তেমনই অভিনেতা শাকিবের প্রশংসা লোকনাথের কণ্ঠে। অভিনেতা হিসেবে ভীষণ রকমই পরিশীলিত তিনি। লোকনাথের কথায়, ‘‘শাকিব এমন একজন, যাঁকে সাজেশন দেওয়া যায়। আমি থিয়েটার লোক, তাই সিনকে বিভিন্ন ভাবে কী ভাবে করতে হয় সেগুলো বলেই থাকি। সেটা উনি খুবই সহজ ভাবে গ্রহণ করেছেন। তবে সকলের সঙ্গে বসে যে খুব হাসিঠাট্টা করছেন তেমন নয়। স্টারডমটা কেমন করে রাখতে হয় সেটা জানেন।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy