গায়ক মহম্মদ আজিজ প্রয়াত।—ফাইল চিত্র।
হরিপুরের সঙ্গে তাঁর নাড়ির টান। কিন্তু পেশার টানে অনেক আগেই গিয়েছিলেন এলাকা ছেড়ে। প্রবীণ মানুষজনের কাছে মুন্নার স্মৃতি অনেকটাই ফিকে হয়ে এসেছে। তবু সেই ছেলের প্রয়াণে ফিরে আসছে পুরনো নানা কথা।
মুন্না— আশি-নব্বইয়ের দশকে সুললিত কণ্ঠে যিনি মাতিয়ে রেখেছিলেন মুম্বইয়ের হিন্দি ফিলম্ জগৎ। খ্যাতির শিখরে পৌঁছে তখন তিনি ‘মহম্মদ আজিজ’।
মঙ্গলবার মারা গিয়েছেন আজিজ। অশোকনগরের হরিপুরে গিয়ে দেখা হল পুরনো অনেক মানুষজনের সঙ্গে। যাঁরা এখনও মনে রেখেছেন এলাকার ছেলে মুন্নার কথা। জানা গেল, এলাকার এক তরুণীর প্রেমে বুঁদ ছিলেন শিল্পী। সেই ভালবাসা পূর্ণতা পায়নি। কিন্তু সেই প্রেমকে মনে রেখেই মুন্না নাকি পরবর্তীতে গেয়েছিলেন, ‘‘লিখেও চিঠি এই ঠিকানায়/ জবাব তোমার পেলাম কোথায়/ কী করে আর বুঝব, তুমি আমার নীলাঞ্জনা/ গ্রাম হরিপুর ডাকঘর হাবড়া...।’’ স্থানীয় মানুষজন অনেকেই গুনগুন করলেন আজিজের কণ্ঠের এই গান।
ফিরে-দেখা: এই বাড়ি থেকেই ভেসে আসত আজিজের রেওয়াজের শব্দ। ছবি: সুজিত দুয়ারি
অশোকনগরের কাউন্সিলর অতীশ সরকার গানবাজনা করেন। জানালেন, এই গান তিনি ক্যাসেটে শুনেছেন। বিভিন্ন অনুষ্ঠানেও এই গান গাইতেন আজিজ। নিজেদের ব্যান্ডে এখন এই গান করেন অতীশরাও।
বুধবার সকালে স্থানীয় বিবেকানন্দ সঙ্ঘ-সংলগ্ন মাঠে গিয়ে দেখা গেল, ঠিক কোন বাড়িতে মুন্নার ছোটবেলা কেটেছে, তা নিয়ে বিতর্ক চলছে। অনেকেরই মত, সেই বাড়িটি অনেক কাল আগে ভাঙা পড়েছে। আজিজের নিক আত্মীয় কেউই থাকেন না এলাকায়। সত্তরের দশকেই এখান থেকে চলে গিয়েছিলেন সকলে, এমনটাই দাবি করছেন স্থানীয় মানুষজন। বিবেকানন্দ সঙ্ঘের মাঠের পাশে একটি সবুজ দোতলা বাড়ি দেখিয়ে বাবু দাস নামে এক প্রবীণ বললেন, ‘‘ছোটবেলায় আমি তখন মাঠে গরু বাঁধতে আসতাম। উনি বোধ হয় তখন ওই বাড়িতে বসে গানের অনুশীলন করতেন। বাড়ির ভিতর থেকে সুর ভেসে আসত। থমকে দাঁড়িয়ে যেতাম ওঁর গান শুনতে।’’
পাওয়া গেল অন্য ছবিও। স্থানীয় রাধা কেমিক্যাল মোড়ের কাছে একটি চায়ের দোকানে মুন্না নিয়মিত চা খেতেন, জানালেন কয়েকজন প্রবীণ। কেউ কেউ জানান, অতীতে মুন্না যখন ‘আজিজ’ হননি, তখন এলাকাতেই শিবাজী চট্টোপাধ্যয়ের সঙ্গে মঞ্চে এক সঙ্গে গান করেছিলেন। এক বৃদ্ধ জানালেন, বাংলায় থাকার সময়ে মুন্না হোটেলেও গান করতেন। পাড়ায় পাড়ায় জলসাতেও দেখা যেত। বৃদ্ধের কথায়, ‘‘খুব লড়াই করেছিল ছেলেটা।’’ পরিমল দাস নামে এক প্রৌঢ়ের সঙ্গে সখ্য ছিল আজিজের। পরিমল বলেন, ‘‘আজিজ আমার থেকে বয়সে বড় হলেও ওকে মুন্না বলেই ডাকতাম। গল্পগুজব করতাম। ও মুম্বই চলে যাওয়ার পরে আর কখনও দেখা হয়নি। ওর মৃত্যুর খবর পেয়ে খুবই খারাপ লাগছে।’’
হরিপুরের সঙ্গে যে আজিজের নাড়ির টান ছিল, বছর দু’য়েক আগে হাবড়ায় এক অনুষ্ঠানে এসে নিজে সে কথা বলেও গিয়েছিলেন আজিজ। এক ব্যক্তি জানালেন, ওই অনুষ্ঠানে এসে আজিজ জানিয়েছিলেন, হরিপুরের সঙ্গে তাঁর শৈশব-কৈশোরের বহু স্মৃতি জড়িয়ে। এখানকার রাস্তাঘাট সব তাঁর চেনা। সে দিনের অনুষ্ঠানে উপস্থিত ব্যক্তিদের অনেকেই জানান, অনুষ্ঠানের পরে আজিজ গাড়ি নিয়ে হরিপুরে ঘুরে গিয়েছিলেন। গাড়ির গতি ছিল খুব ধীরে। দু’চোখ ভরে রাস্তাঘাট, বাড়িঘর দেখছিলেন শিল্পী। জানা গেল, বিবেকানন্দ সঙ্ঘের তরফে মুন্নার স্মৃতিতে একটি স্মরণসভার আয়োজন করা হবে। এ দিন সঙ্ঘের তরফে আজিজের ছবিতে মাল্যদান করে তাঁকে শ্রদ্ধা জানানো হয়েছে।
বহু বছর আগে ছেড়ে যাওয়া শৈশবভূমিতে ফের প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠেছেন আজিজ, ওরফে মুন্না।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy