ছবির দৃশ্যে কৌশিক।
এক, দুই, তিন, চার, পাঁচ, ছয়, সাত...। সাত নম্বর। সাত নম্বর সনাতন সান্যাল...।
নোনা ধরা দেওয়াল। এক উঠোন দশ ঘরের মধ্যবিত্ত গেরস্থালি। বার বার কাজ হারিয়ে ফেলা গেরস্ত। সংসারের জোয়াল টানা বউ। আর খাঁচাবন্দি টিয়া...
খুব যত্নে মধ্যবিত্তের দৈনন্দিনকে ফ্রেমবন্দি করেছেন পরিচালক অন্নপূর্ণা বসু, তাঁর প্রথম পূর্ণ দৈর্ঘ্যের ছবি ‘সাত নম্বর সনাতন সান্যাল’-এ। জি ফাইভের ওয়েব প্ল্যাটফর্মে এই ছবিটি দেখবেন দর্শক। তার আগে বৃহস্পতিবার দক্ষিণ কলকাতার এক প্রেক্ষাগৃহে ছবিটির স্পেশ্যাল স্ক্রিনিং ছিল।
আরও পড়ুন, হৃতিকের ‘সুপার থার্টি’র প্রথম রিভিউ দিলেন সুজান!
ছবি শুরুর আগে অন্নপূর্ণা বলছিলেন, ‘‘প্রধান চরিত্রের জন্য এমন এক জনকে প্রয়োজন ছিল যিনি নিজের পরিচয় ছাপিয়ে গিয়ে অভিনয় করবেন। কৌশিকদা কাজটা এত ভাল করে করেছেন...।’’ সত্যিই তাই। অন্নপূর্ণার জাজমেন্ট সঠিক। এই চরিত্রে কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায়কে দেখে আরও এক বার মনে হল, পরিচালনা তো আছেই। কিন্তু অভিনেতা কৌশিককে আরও বেশি করে ব্যবহার করা উচিত টলিউডের।
‘সনাতন’। ছোট থেকে বড় হতে থাকা ছেলেটির জীবনে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন সমস্যা এসেছে। যেমন সকলেরই আসে। কিন্তু সব কিছু ছাপিয়ে মুখচোরা ছেলেটিকে ভাবিয়ে তোলে তার অস্বিস্তের সঙ্কট। পড়াশোনা, চাকরি, বউ, সংসার— সব কিছুতেই জড়িয়ে থাকে সনাতনের একক সনাতন হয়ে ওঠার লড়াই।
এই ছবির সবচেয়ে সিনিয়র ‘সনাতন’ হলেন বিভাস চক্রবর্তী।
‘‘এই চরিত্রটা গেলাম আর করে দিলাম তেমন নয়। গভীর ভাবে ভাবার রয়েছে। যাঁরা দেখবেন তাঁরা বুঝবেন এই চরিত্রটা আমার পক্ষে করা কতটা কঠিন ছিল। সনাতন সান্যাল। সে একই নামের বিভিন্ন পেশার মানুষকে খুঁজছে। তাদের সঙ্গে দেখা করছে। এর মধ্যে নিটোল একটা ভাবনা রয়েছে। আর অন্নপূর্ণা প্রথম ছবিতে আমাকে ভেবেছে, এটা আমার কাছে খুব আনন্দের। আমি মন দিয়ে কাজ করার চেষ্টা করেছি’’ বললেন কৌশিক। যাঁর রাস্তায় হাঁটতে হাঁটতে রুমালে ঘাম মোছা, রাতে বিছানায় শুয়ে হতাশ চোখে তাকানো অথবা আতর বিক্রির জন্য কাস্টমারকে কনভিন্স করা দেখলে মনে হবে এই লোকটাকে তো আমি চিনি। আপনিও দেখেছেন কখনও না কখনও।
আরও পড়ুন, মুসলিম ছেলের সঙ্গে দিদির সম্পর্ক নিয়ে মুখ খুললেন হৃতিক
এই ছবির সবচেয়ে সিনিয়র ‘সনাতন’ হলেন বিভাস চক্রবর্তী। যাঁকে সিনে পর্দায় খুব কম দেখা যায়। তা হলে এই চরিত্রটা করতে রাজি হলেন কেন? বিভাস বললেন, ‘‘অন্নপূর্ণার ভাবনা আমার ভাল লেগেছে। আমার বয়স ৮২। ও ৭০ বছরের চরিত্র যখন দিল, একটু অবাকই হয়েছিলাম। তবে গড়পরতা সিনেমার চরিত্র নয় এটা। এর কথা শুনলে কখনও হয়তো পাগলের প্রলাপ মনে হবে। কিন্তু তার মধ্যেও আলাদা একটা ভাবনা রয়েছে। সেটা আমার ভাল লেগেছিল।’’
ছবির দৃশ্যে দেবদূত ঘোষ।
জ্যোতিষী ‘সনাতন’-এর চরিত্রে রয়েছেন দেবদূত ঘোষ। তাঁর কথায়, ‘‘আমার পড়াশোনা বা চিন্তাভাবনা যা, চরিত্র তার থেকে উঁচু বা নিচু হলে ভাল লাগে। এখানে আমার জ্যোতিষীর চরিত্র। জ্যোতিষীদের সম্পর্কে মানুষের শ্রদ্ধা, অশ্রদ্ধা দুটোই আছে। আমি এখানে ভণ্ড জ্যোতিষী। ফলে কাজটা করতে লিবার্টি নিয়েছি। নির্দেশক সেটা অ্যালাও করেছেন।’’
চেনা ছকের বাইরে এই ছবিতে অন্নপূর্ণা কাজ করেছেন শিলাজিৎকে নিয়ে। সাবলীল তাঁর অভিনয়। এ ছাড়াও সাহেব ভট্টাচার্য, অধিকারী কৌশিক, সোহম মিত্র, শাঁওলি চট্টোপাধ্যায়ের অভিনয়ে সমৃদ্ধ এই ছবি।
আরও পড়ুন, পুলিশের জীবন ধরা পড়বে ‘হেডকোয়াটার্স লালবাজার’-এ
মশারির ভিতর ‘সনাতন’-এর শুয়ে থাকা, ব্যাকগ্রাউন্ডে ট্রেনের শব্দ। চায়ের ভিতরে পরে যাওয়া অর্ধেক বিস্কুট। মাছের দোকানির জল দিয়ে বঁটি পরিষ্কার করা। ক্লাসে প্রাইজ হাতে ছোট সনাতনের চোখ মারা পর্যন্ত— ছোট ছোট ডিটেলিংয়ে নজর দিয়েছেন অন্নপূর্ণা। বেশ কিছু সুন্দর দৃশ্য তৈরি করেছেন। এর আগে স্বল্প দৈর্ঘ্যের দু’টি ছবি তৈরি করেছিলেন তিনি। সেখানেও ছিল অস্তিস্ব সঙ্কটের নানা স্তর। সাইকোলজিক্যাল ক্রাইম থ্রিলার ‘সাত নম্বর সনাতন সান্যাল’-এও সেই সঙ্কটকেই তুলে ধরেছেন অন্য আঙ্গিকে। সেখানেই তাঁর মুন্সিয়ানা।
(কোন সিনেমা বক্স অফিস মাত করল, কোন ছবি মুখ থুবড়ে পড়ল - বক্স অফিসের সব খবর জানতে পড়ুন আমাদের বিনোদন বিভাগ।)
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy