মাধুরী দীক্ষিতকে দেখে কী অবস্থা কাঞ্চন মল্লিকের? গ্রাফিক: আনন্দবাজার অনলাইন।
মাধুরী এলেন, বললেন “নমস্কার।” তত ক্ষণে আমার কৈশোর, যৌবন উথালপাথাল হয়ে গিয়েছে। কানের মধ্যে যেন বাজতে শুরু করেছে, “এক দো তিন... তেরা করু গিন গিন গিন ইন্তেজ়ার, আ যা পিয়া আয়ি বাহার...”
শট হল। একসঙ্গে অভিনয় করলাম আমরা। তখনও আমি ভাবতেই পারছি না, কী ঘটে গেল আমার সঙ্গে! কাজ শেষ হতেই মাধুরী দীক্ষিত আমার দিকে তাকিয়ে বললেন, “ভেরি নাইস (খুব ভাল)।” মনে হল, ওরে তোরা আমায় ছেড়ে দে, আমি বাড়ি যাই। বাড়ি ফিরেই সে কথা শ্রীময়ীকে বললাম। ও মা! সে আমাকে বলে, “রাখো তো!” আসলে বাংলার ওই প্রবাদটা বড় সত্যি, ‘গেঁয়ো যোগী ভিখ পায় না।’
তবে সে যাই হোক, আমার কাছে এ এক বড় অভিজ্ঞতা। এক দিকে মাধুরী, অন্য দিকে বিদ্যা বালন। আমার কাছে যে দিন মুকেশ ছাবরার দফতর থেকে ফোনটা এসেছিল, আমি সত্যিই গুরুত্ব বুঝতে পারিনি। আমাকে বলা হয়েছিল, একটা অডিশন দিতে হবে। জিজ্ঞেস করলাম, ‘ভিডিও করে পাঠাব?’ উত্তর এল, “না, মুম্বইতে আসুন।” এর আগে কিছু অডিশন দিয়েছি। বলতে লজ্জা নেই, পাশ করতে পারিনি। ‘কহানি’ আর ‘অনুকূল’-এর জন্য অবশ্য কোনও পরীক্ষা আমায় দিতে হয়নি। সুজয় ঘোষ বলেছিলেন, ‘‘তুমি আবার কী অডিশন দেবে!” ভাবলাম, এ বারও কঠিন পরীক্ষা হবে। কিন্তু উপস্থিত হতেই জানলাম, ‘লুক’ দেখা হবে। আমি তো অবাক। এমনকি বলেই ফেললাম, “আমার তো হিন্দি দুর্বল।” পরিচালক অনীশ বাজ়মি আমাকে আরও অবাক করে দিয়ে বললেন, “আরে, আপনি দারুণ হিন্দি বলেন।” অর্থাৎ, আমি যা বলি, তা-ই যথেষ্ট!
শুরু হল কাজ। মনে হল এ তো রাজসূয় যজ্ঞ। আমার চারপাশে, বিজয় রাজ, রাজপাল যাদব, অশ্বিনী কলসেকরের মতো অভিনেতারা ঘুরছেন। আমি তাঁদের সঙ্গে অভিনয় করছি। তবে, ওঁদের দেখতে দেখতে আমার মনে হয়েছে, বাংলার শিল্পীরাও কোনও দিক থেকে কম নয়। চাইলে কী না করতে পারেন তাঁরা! আমাদের শুধু বাজেটের অভাব। ওই পরিমাণ বাজেট থাকলে আমরা সত্যিই দেখিয়ে দিতে পারি, আমরা কী। এই আত্মবিশ্বাস আমার মধ্যে নতুন করে তৈরি হয়েছে।
তবে, বলিউডের শিল্পীরা কিন্তু কেউ দাম্ভিক নন। আমি তো ভেবেছিলাম, নতুন প্রজন্মের নায়ক কার্তিক আরিয়ান খুব অহঙ্কারী হবেন। কিন্তু একটু মেলামেশার পর খুব সহজ হয়ে গেলেন। কার্তিকও বুঝে ফেললেন আমি আসলে বিরাট ‘ফচকে’। শুনলাম, কলকাতায় এসেও কার্তিক আমার কথা বলেছেন। আমায় মনে রেখেছেন, এটাই আমাদের বন্ধুত্বের নিদর্শন।
প্রথম প্রথম সেটে একটু চুপচাপ থাকছিলাম। ভাবছিলাম, কী কথা বলি! তার পর একটু একটু করে উঠতে শুরু করল থিয়েটারের প্রসঙ্গ। ব্যস! পৃথিবীর যে কোনও প্রান্তের থিয়েটারের ভাষা তো আসলে এক। তিন-চার জন ভিন্ন ভাষার শিল্পী এক হয়ে বসলে আর কোনও বিভেদ থাকে না। শেষ পর্যন্ত আমি আর বিজয় রাজও এক হয়ে গেলাম ওই থিয়েটারের সূত্রেই।
বিদ্যাকে দেখছিলাম। ওই লাস্য, সৌন্দর্যে মুগ্ধ না হয়ে উপায় নেই। বিদ্যা বোধহয় আমাদের থেকে কোনও অংশে কম বাঙালি নন। একদিন খুব গরম পড়েছে। হাঁসফাঁস অবস্থা। আমি বললাম, “উফ, কী গরম!” বিদ্যা আমার পাশে দাঁড়িয়ে বলে ফেললেন, “কী কেলেঙ্কারি কাণ্ড বলুন তো!” আমি তো চমকে গেছি বিদ্যার মুখে ‘কেলেঙ্কারি’ শুনে! সে কথা বলতেই বিদ্যা বললেন, “আমি একটা বাংলা কবিতাও বলে পারি, ‘শুনতে পেলাম পোস্তা গিয়ে/ তোমার নাকি মেয়ের বিয়ে’...” এর পর সত্যিই আমার আর কিছু বলার ছিল না।
এ দিকে কলকাতায় ফিরতেই আমার ভাইপো-ভাইঝিরা ঘিরে ধরল। বলল, “কার্তিকের সঙ্গে কাজ করলে?” কী আর বলব, শুধু বললাম, “কী ভাবিস তোদের কাকাকে!” কিন্তু ওদের কৌতূহল মেটে না। বলে তৃপ্তি ডিমরি কেমন দেখতে? কী যে বলি! তৃপ্তি খুব সুন্দরী। কিন্তু... আমি কি সে দিকে তাকাতে পেরেছি? আমি সত্যিই দেখিনি তৃপ্তি কেমন। দেখব কী! আমার সামনে যে মাধুরী দীক্ষিত। এ স্বপ্ন নয়। সত্যি। তিন সত্যি। পর্দায় দেখা যাবে আমাকে, মাধুরীর সঙ্গে। কলকাতায় বসেই দেখব আমি। আমার জীবনের চূড়ান্ত বাস্তব।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy