কুড়ি বছর ধরে বলিউডের অন্যতম নায়িকা ছিলেন জুহি। কিন্তু কোনওদিন এক নম্বর নায়িকা হয়ে উঠতে পারেননি। হয়ে ওঠার চেষ্টাও করেননি। জুহি অভিনয় করে গিয়েছেন নিজের পছন্দ ও নিজের শর্তে।
নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ১৮ অগস্ট ২০২০ ১৫:৫৫
Share:Save:
এই খবরটি সেভ করে রাখার জন্য পাশের আইকনটি ক্লিক করুন।
০১২২
অভিনয়ের পাশাপাশি মুক্তোর মতো হাসিতেও জুহি চাওলা মন জয় করেছিলেন অনুরাগীদের। গ্ল্যামারের মধ্যেও তাঁর সৌন্দর্যের নিষ্পাপ দিকটি মুগ্ধ করত দর্শকদের। কেরিয়ারের সেরা সময়ে তাঁর সঙ্গে কাজ করতে আগ্রহী ছিলেন বলিউডের প্রথম সারির পরিচালক-প্রযোজকরা।
০২২২
১৯৮৪ সালে ‘মিস ইন্ডিয়া’ শিরোপা জয়ী হওয়ার পর থেকেই জুহি হয়ে ওঠেন ইন্ডাস্ট্রির অন্যতম আকর্ষণ। তাঁর কদর বাড়তে থাকে ছবির জগতে। ভারতসেরা সুন্দরী হওয়ার পরেই জুহি অভিনয় করেন ধর্মেন্দ্র, সানি দেওলের মতো অভিনেতার সঙ্গে। জুহির প্রথম ছবি ‘সালতানত’ মুক্তি পায় ১৯৮৬ সালে।
০৩২২
তার দু’ বছর পরে মুক্তি পায় ‘কয়ামত সে কয়ামত তক’। সুপারহিট এই ছবির সুবাদে রাতারাতি তারকা হয়ে ওঠেন আমির খান এবং জুহি চাওলা। এর পরে বলিউডের প্রথম সারির নায়করা জুহির সঙ্গে কাজ করতে আগ্রহী হন।
০৪২২
কুড়ি বছর ধরে বলিউডের অন্যতম নায়িকা ছিলেন জুহি। কিন্তু কোনওদিন এক নম্বর নায়িকা হয়ে উঠতে পারেননি। হয়ে ওঠার চেষ্টাও করেননি। জুহি অভিনয় করে গিয়েছেন নিজের পছন্দ ও নিজের শর্তে।
০৫২২
কেরিয়ারের প্রথম দিকে শ্রীদেবী ও মাধুরী এবং শেষ দিকে কাজল, করিশ্মা কপূরের সঙ্গে তুলনার মুখে পড়তে হয়েছে জুহিকে। কড়া প্রতিযোগিতার পরেও জুহি ছিলেন ইন্ডাস্ট্রির জনপ্রিয় নায়িকাদের মধ্যে অন্যতম।
০৬২২
প্রথম থেকেই জুহি চাওলা নিজের মর্জিমাফিক পথ চলতে ভালবেসেছেন। ইচ্ছে হলে তবেই কোনও ছবিতে অভিনয়ের প্রস্তাবে রাজি হয়েছেন। প্রতিষ্ঠা পাওয়ার পরেও স্বচ্ছন্দে কাজ করেছেন নবাগত নায়কদের বিপরীতে।
০৭২২
কেরিয়ারের প্রথম ছবি ‘সালতানত’-এ জুহির নায়ক ছিলেন নবাগত কর্ণ কপূর। এরপর ‘কয়ামত সে কয়ামত তক’-এ আমির এবং ‘ডর’-এ শাহরুখ, দু’জনেই ছিলেন ইন্ডাস্ট্রিতে নবাগত। ‘সালতানত’ সফল না হলেও আমির ও শাহরুখের বিপরীতে জুহির ছবি ছিল সুপারহিট।
০৮২২
কিন্তু জুহি কোনওদিন সলমন খানের বিপরীতে অভিনয় করতে রাজি হননি। সেলিম খানের ছেলে নবাগত সলমনের প্রতিশ্রুতিমান ভবিষ্যৎ সত্ত্বেও নব্বইয়ের দশকে তাঁর নায়িকা হননি জুহি। কিন্তু ‘চাঁদনি’ ছবিতে বিনোদ খন্নার বিপরীতে ক্যামিয়ো ভূমিকাতেও অভিনয় করেছেন তিনি।
০৯২২
ছবি স্বাক্ষর করার সময় জুহি চিত্রনাট্যে সবথেকে বেশি গুরুত্ব দিতেন। বাকি কোনও দিক বিবেচনা করতেন না। এর মাসুলও দিতে হয়েছে জুহিকে। ‘কুরবান’ ছবির সুযোগ তিনি ফিরিয়ে দেন। আবার তাঁর মনের মতো চিত্রনাট্য হলেও বক্স অফিসে ব্যর্থ হয় ‘লভ লভ লভ’, ‘গুঞ্জ’ এবং ‘কাফিলা’।
১০২২
পরেও নিজের কেরিয়ারে কোনওদিন জুহির সঙ্গে জুটি বেঁধে অভিনয় করেননি সলমন খান। ইন্ডাস্ট্রিতে গুঞ্জন, জুহির প্রত্যাখ্যান মনে রেখেছিলেন সলমন। তিনিও এভাবে ফিরিয়ে দিয়েছিলেন প্রত্যাখ্যানের জবাব। অনুরাগীরা মনে করেন, সলমনের নায়িকা হতে না পেরে জুহি অনেকটাই পিছিয়ে পড়েন এক নম্বর হওয়ার দৌড়ে।
১১২২
আশি ও নব্বইয়ের দশকে হিন্দি ছবির গুরুত্বপূর্ণ দিক ছিল বৃষ্টিস্নাত নায়িকার নাচ। শ্রীদেবী, কাজল, করিশ্মা, রানি-সহ বহু নায়িকাই এই স্রোতে গা ভাসিয়েছেন। কেরিয়ারের শুরুতে মাধুরী দীক্ষিতও ‘দয়াবান’ ছবিতে ঘনিষ্ঠ দৃশ্যে অভিনয় করেছিলেন বিনোদ খন্নার সঙ্গে।
১২২২
অনেক ক্ষেত্রে নায়িকারা নিজেদের অস্তগামী কেরিয়ারকে আবার ফিরিয়ে আনার জন্যেও ভরসা করেছেন ঘনিষ্ঠ দৃশ্যের উপর। কিন্তু জুহি প্রথম থেকেই একরোখা। কোনও মতেই তাঁকে পর্দায় খোলামেলা পোশাকে শয্যাদৃশ্যে অভিনয় করানো যায়নি। এই কারণে জন্য অনেক বড় প্রজেক্ট হাতছাড়া হয়েছিল জুহির।
১৩২২
নব্বইয়ের দশকে অন্যতম উপভোগ্য ছিল মাধুরী-জুহি প্রতিদ্বন্দ্বিতা। বক্সঅফিস সফল ছবির নিরিখে কিছুটা হলেও মাধুরী এগিয়ে থাকতেন। মাঝে, সঞ্জয় দত্ত এবং অজয় জাডেজার সঙ্গে নাম জড়িয়ে যাওয়ায় কিছুটা হলেও ব্যাহত হয় মাধুরীর কেরিয়ার।
১৪২২
সেই সময়েও এক নম্বর নায়িকার জায়গা দখল করতে চেষ্টা করেননি জুহি। বরং, তিনিও অভিনয় ছেড়ে বিয়ে করে নেন ১৯৯৫ তে। বলিউডের চেনা গসিপ থেকে বহু দূরে তাঁর বিয়ে ছিল অন্যরকম। ইন্ডাস্ট্রির বাইরে শিল্পপতি জয় মেটার প্রেমে পড়েছিলেন তিনি।
১৫২২
একান্ত ঘরোয়া অনুষ্ঠানে বিয়ে হয়েছিল জয় এবং জুহির। স্বামী ও সন্তানদের নিয়ে জুহি ব্যস্ত ঘরকন্নায়। জানিয়েছেন, তাঁর মেয়ে জাহ্নবী মায়ের মতো অভিনেত্রী হতে চান না। তাঁর ইচ্ছে, লেখিকা হওয়ার।
১৬২২
ব্যক্তিগত জীবনে যথেষ্ট ঝড়ের মুখেও পড়তে হয়েছে জুহিকে। চার বছর কোমায় থাকার পরে ২০১৪ সালে প্রয়াত হন তাঁর ভাই ববি চাওলা। তার দু’ বছর আগে এক পথ দুর্ঘটনায় জুহি হারান তাঁর বোন সনিয়াকে।
১৭২২
বিয়ে করার পরে জুহি চাওলা অভিনয় কার্যত ছেড়েই দেন। জুহিবিহীন ইন্ডাস্ট্রিতে মাধুরী ছিলেন আরও চার বছর। ১৯৯৯ সালে প্রবাসী চিকিৎসক শ্রীরাম নেনেকে বিয়ে করে তিনিও প্রবাসী হয়ে যান। জুহির মতো অভিনয়কে বিদায় জানান মাধুরীও।
১৮২২
তখন বিবাহিত নায়িকাদের গুরুত্ব ছিল না ইন্ডাস্ট্রিতে। এখন অবশ্য ছবিটা অনেক পাল্টে গিয়েছে। করিনা, দীপিকা, বিদ্যার মতো নায়িকারা বিয়ের পরেও শাসন করছেন ইন্ডাস্ট্রি।
১৯২২
অভিনয়-দক্ষতা এবং সৌন্দর্য, এই দু’টি গুণ প্রথম থেকেই জুহির তুরুপের তাস। কিন্তু একটি বিষয়ে তিনি পিছিয়ে ছিলেন মাধুরী ও শ্রীদেবীর থেকে। তা হল, নাচ। জুহি কোনওদিন ডান্সিং সুপারস্টার হয়ে উঠতে পারেননি। পরে হিন্দি ছবির ট্রেন্ড পাল্টে গেলেও জুহির সময়ে নায়িকা হওয়ার অন্যতম শর্ত ছিল নাচে পারদর্শিতা।
২০২২
কেরিয়ারে একটা সময়ে আমিরের সঙ্গে সম্পর্ক খারাপ হয়ে যায় জুহির। শোনা যায়, ‘ইশক’ ছবির সেটে আমিরের রসিকতা জুহির ভাল লাগেনি। এর জেরে তিনি বহু বছর কথা বলেননি আমিরের সঙ্গে। ফলে পরবর্তী সময়ে আমিরের সঙ্গে তাঁর অনস্ক্রিন জুটিও অধরা থেকে যায়।
২১২২
শাহরুখের সঙ্গে জুহির সম্পর্ক বরাবর ভাল। শাহরুখ যখন টেলিভিশনের অভিনেতা, তখনও তাঁর বিপরীতে নায়িকা হতে দ্বিধা করেননি জুহি। কিন্তু শাহরুখ যখন ইন্ডাস্ট্রিতে অপ্রতিরোধ্য হয়ে উঠলেন, তখন বড় ছবিতে নিজের বিপরীতে জুহিকে নায়িকা করেননি। সে জায়গা ছিল কাজলের। অন্যদিকে, শাহরুখ-জুহির ‘ফির ভি দিল হ্যায় হিন্দুস্তানি’ এবং ‘ওয়ান টু কা ফোর’ সফল হয়নি বক্স অফিসে।
২২২২
অনেকেই মনে করেন, বলিউডে যে উচ্চতায় পৌঁছনর কথা ছিল জুহির, সেটা তিনি পারেননি। কিন্তু প্রত্যাশিত জায়গা অধরা থাকার পরেও তিনি খুশি থেকেছেন নিজের শর্তেই।