Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
Usha Uthup

Usha Uthup: কোনও দিন অশালীন কিছু করিনি! খারাপ লেগেছিল যখন যতীন চক্রবর্তী নিষিদ্ধ করেছিলেন: ঊষা

“আমার খারাপ সময় আনন্দবাজার পত্রিকা আমায় সমর্থন করেছিল। না হলে হয়তো আমার পেশা জীবন থেমে যেত’’

ঊষা উত্থুপ।

ঊষা উত্থুপ।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৪ মার্চ ২০২২ ১২:৪৯
Share: Save:

প্রশ্ন: ৫০ বছর ধরে দর্শক-শ্রোতাকে মুগ্ধ করেছে আপনার নানা স্বাদের গান, তার পরেই আত্মজীবনী ‘দ্য কুইন অফ ইন্ডিয়ান পপ’?

উষা: এক কথায় আমি অভিভূত, মুগ্ধ। আমার গানের ৫০ বছর। উদযাপন তো চাইই। সেই ভাবনা থেকেই প্রকাশনা সংস্থা আমার সঙ্গে যোগাযোগ করেছিল। আবদার, আমার জীবন নিয়ে বই লেখা হবে। জনপ্রিয় সাংবাদিক, লেখক বিকাশ কুমার ঝা কলম ধরবেন। দীর্ঘ দিন ধরে আমার সঙ্গে কথা বলে আমায় দু’মলাটে ধরেছেন। যদিও অনেক দিন ধরেই আমার আত্মজীবনী লেখার ইচ্ছে প্রকাশ করেছেন অনেক লেখক-সাংবাদিক। আমায় নিয়ে, আমার জীবন নিয়ে, পপ গান গাই বলে আমার ভাষা-সংস্কৃতি নিয়ে সবার আগ্রহ। কিন্তু তার পরেও হয়ে ওঠেনি। আসলে, সঠিক সময় না এলে তো কিছুই হয় না, তাই না?

প্রশ্ন: স্মৃতিপথে হাঁটতে হাঁটতে একবারও মনে হয়েছে, এত গুলো বছর কাটিয়ে ফেললাম!

উষা: অবশ্যই মনে হয়েছে। কত রকমের স্মৃতি। কত কথা জমে আমার ভিতরে। ছোট বেলার। একটু একটু করে বেড়ে ওঠার। স্কুল জীবনের। কত দুষ্টুমি করেছি। লেখককে সাক্ষাৎকার দিতে দিতে সে সব যেন হুড়মুড়িয়ে সামনে এসে দাঁড়িয়েছে। স্কুলের শিক্ষিকারা বলেছেন, ছোট থেকেই আমার গলা অন্য রকমের। সবার থেকে আলাদা। যা নাকি তাঁদের শুনতে ইচ্ছে করত। স্কুলেও গান গাইতাম। বাড়ির সবার সঙ্গে রাগ-দুঃখ-অভিমান-ভালবাসার গল্প, কিচ্ছু বাদ পড়েনি।

প্রশ্ন: ঊষা উত্থুপের গোটা জীবন বইয়ে বন্দি করতে কত সময় লাগল?

উষা: এক গায়িকার ৫০ বছরের গান-জীবন কি এত সহজে ধরা যায়? দীর্ঘ আলাপচারিতা, দীর্ঘ সাক্ষাৎকার। সেই সব গুছিয়ে এক জায়গায় করে তার পর লিখতে শুরু করেছেন বিকাশ। নিজেও আমায় নিয়ে গবেষণা করেছেন প্রচুর! কত কথা আমি জানি না কিন্তু বিকাশ জানেন। কথায় কথায় উঠে এসেছে সে সব। আমায় চেনেন এমন অনেকের সঙ্গেও কথা বলেছেন। তার পর বই লেখায় হাত দিয়েছেন। কম করে দেড় বছর তো লেগেইছে।

প্রশ্ন: মুম্বই, দক্ষিণ ভারত, কলকাতাকে নিজের হাতের তালুর মতো চেনেন, আপনার জীবনে তিনটি জায়গার প্রভাব কতটা?

উষা: জন্মসূত্রে মুম্বই চিনি। মধ্যবিত্ত, মাদ্রাজি পরিবারে জন্ম। আমরা অনেক ভাই-বোন। বড় বোনের থেকে আমি অনেক ছোট। আমার দিদি-বোনেরাও খুব ভাল গাইতে পারেন। ওঁরাও গানকেই পেশা বেছে নিয়েছিলেন। শুরু থেকেই নাইট ক্লাবে গান গেয়েছি। মাদ্রাজ, মুম্বই হয়ে কলকাতার প্রথম সারির নিশি ঠেকে। কিন্তু কোথাও অসম্মানিত হইনি। একটা মজার ঘটনা বলি। কলকাতায় যখন প্রথম রাতে গাইতে উঠেছি সবাই ভীষণ চমকে গিয়েছিলেন! শাড়ি পরা, মাথায় ফুল লাগানো এক মহিলা পপ গাইবেন? আমার গান শুনে কিন্তু হাততালির ঝড় বয়েছিল। আমার জন্মভূমি যদি মুম্বই হয়, কলকাতা আমায় লালন করেছে।

প্রশ্ন: ভারী কণ্ঠস্বর, হাস্কি টোন... তাই আপনি পপ গায়িকা?

উষা: জানি, সবাই এটাই ভাবেন। কিন্তু খুবই ভুল ধারণা। আমি কিন্তু কোনও গানই শিখিনি। বলতে পারেন, ঈশ্বরের আশীর্বাদে গান নিয়ে জন্মেছি। ফলে, এই গলা নিয়েই সব ধরনের গান গাওয়ার চেষ্টা করেছি শুরু থেকে। কারণ, কী ধারার গান গাইব কিছুই ঠিক করিনি কোনও দিন। পরে গানের দুনিয়ার অনেক বিশিষ্ট ব্যক্তিত্ব বলেছেন, আমার গলায় হিন্দি এবং ইংরেজি গান বেশি ভাল মানাবে। কণ্ঠস্বরের কারণেই। আমি শুনিনি। কারণ, আমার স্বপ্ন দর্শকদের সামনে উপস্থিত থেকে গান শোনাব। তাই ধীরে ধীরে আমার সীমাবদ্ধতাকে উন্নতির হাতিয়ার বানিয়েছি। কখনও কাউকে নকল করিনি। তাই হয়তো সবাই এত ভালবেসেছেন। পাশ্চাত্যের বদলে সনাতনী সাজও আমায় খুবই সাহায্য করেছে।

প্রশ্ন: সেই সময়ের কলকাতার নিশি ঠেক কেমন ছিল? তারকারা আসতেন সেখানে?

উষা: আমার আগে নাকি কলকাতার নিশিঠেকে পুরুষদের আধিপত্য ছিল। আমি আসার পরে সেই ছবিটা বদলেছে। সেই সময়ের তরুণ প্রজন্ম আমার গান শুনতে ভালবাসতেন। পরিবেশও অন্য রকম ছিল। জাতি-ধর্ম নির্বিশেষে নারী-পুরুষ সবাই আসতেন আমার গান শুনতে। কেন? ওই যে, শাড়ি পরা এক নারী পাশ্চাত্য গান গাইছেন! লোকের মুখে মুখে এই খবর ছড়াতেই সবাই নাকি বলতেন, ভারতীয় নারী সনাতনী পোশাকে পাশ্চাত্য গান গাইছেন! এঁকে দেখতেই হবে। এই কৌতূহলীদের তালিকায় শর্মিলা ঠাকুর, নবাব পতৌদি, কপিল দেব, সত্যজিৎ রায়, উত্তমকুমার, সুপ্রিয়া দেবী, জ্যোতি বসু, লোকসভার প্রাক্তন স্পিকার সোমনাথ চট্টোপাধ্যায়--- কে না ছিলেন!

“আমার খারাপ সময় সময় আনন্দবাজার পত্রিকা আমায় সমর্থন করেছিল। না হলে হয়তো আমার পেশা জীবন থেমে যেত’’

“আমার খারাপ সময় সময় আনন্দবাজার পত্রিকা আমায় সমর্থন করেছিল। না হলে হয়তো আমার পেশা জীবন থেমে যেত’’

প্রশ্ন: শাড়িতে, কপালের বিন্দিতে কলকাতা আপনার সঙ্গে, ঊষা উত্থুপকে এই শহর ততটাই ভালবাসে?

উষা: আমার কর্মভূমি থেকে আমার দোসর হয়ে উঠেছে কলকাতা। তাই আমার সারা শরীরে শহরকে জড়িয়ে নিয়েছি। সাজ-সজ্জায়, ভাবনায়, কথায়। একই ভাবে কলকাতাও আমায় অঢেল দিয়েছে। আমায় জনপ্রিয়তা দিয়েছে। আমায় পরিচিতি দিয়েছে। আপন করে নিয়ে জন্মভূমি থেকে দূরে থাকার কষ্ট ভুলিয়ে দিয়েছে। কিছু সময়ের জন্য স্বামীর চাকরির সুবাদে কলকাতা ছেড়েছিলাম। ফের এখানেই ফিরে এসেছি। এখানকার মানুষ আমার গান ভালবাসেন। আমায় ভালবাসেন। আমার অনুষ্ঠান শুনতে ভালবাসেন। আজও প্রথম রাতের অনুষ্ঠানের কথা খুব মনে পড়ে। গান থামতেই সবাই উচ্ছ্বসিত। খুব ভয় নিয়ে মুম্বই ছেড়েছিলাম। এত উষ্ণ অভ্যর্থনা কেবল কলকাতাই দিতে পারে।

প্রশ্ন: জীবনে কোনও খারাপ অভিজ্ঞতা নেই? আত্মজীবনীতে তো কিছুই লুকনো থাকে না...

উষা: ১৯৬৯ কি ১৯৭০ সাল। আমার বাঁ দিক পক্ষাঘাত হয়ে গিয়েছিল। সেই সময় দীনেশ বাজাজকে পাশে পেয়েছিলাম। খুব খারাপ লেগেছিল যখন যতীন চক্রবর্তী আমায় নিষিদ্ধ করেছিলেন। কেন করেছিলেন? জানি না। আমি তো কোনও দিন অশালীন কিছু করিনি! সেই সময় আনন্দবাজার পত্রিকা আমায় সমর্থন করেছিল। না হলে হয়তো আমার পেশা জীবন থেমে যেত। ওই দিনগুলোর কথা মনে পড়লে খুবই খারাপ লাগে এখনও। তাই মনে করতে চাই না। আর বিতর্কও ভালবাসি না। ভাল লাগে না, নিজের দুঃখের কথা সবার সামনে তুলে ধরতে। চর্চা নয়, প্রতিভার জোরে, গান শুনিয়ে সবার হৃদয়ে বেঁচে থাকতে চাই।

অন্য বিষয়গুলি:

Usha Uthup Pop singer Interview
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy