জিত্ গঙ্গোপাধ্যায়।
জিত্ গঙ্গোপাধ্যায়কে মুখোমুখি পাওয়া তো এখন বেশ কঠিন… সকালে কলকাতা তো বিকেলে মুম্বই!
(হাসি) আমি যখন ঘুম থেকে উঠি, চন্দ্রাণী বা মা আমাকে বলে, কখনও কখনও ঘুম থেকে উঠে আমি জিজ্ঞেস করি, আমি কোথায়? কলকাতা, নাকি মুম্বই? তা ছাড়া প্রচুর ট্রাভেলও থাকে। শো করতে পুরো ওয়ার্ল্ডে ঘুরে বেড়াচ্ছি। আমার বাড়ির নাম তো ‘গেছো দাদা’।
ব্যস্ততা নিশ্চয়ই এনজয় করেন?
হ্যাঁ, তা বলতে পারেন। ব্যস্ত থাকতে ভাল লাগে আমার। আসলে মিউজিকের আলাদা পাওয়ার আছে তো। নিজেকে মোটিভেট করা যায়। অসুস্থ মানুষও যদি মিউজিক ঠিক মতো নিতে পারেন, আমার মনে হয় মেডিসিনের থেকেও ভাল কাজ করবে। যে কোনও রকমের স্যাটিসফ্যাকশন রয়েছে মিউজিকে। ফলে সারা ক্ষণ মিউজিক নিয়ে থাকতে ভাল লাগে।
আপনার নেক্সট গিফট তো ‘বিবাহ অভিযান’...
হুম। অনির্বাণ আর দেবরাজ গেয়েছে।
আরও পড়ুন, ‘গোপালভাঁড়’ রক্তিম এখন কী করছে জানেন?
‘বিবাহ অভিযান’-এর মিউজিক করার সময় নিজের ‘বিবাহ অভিযান’-এর কথা মনে রেখেছিলেন?
(অট্টহাসি) ‘ওগো বধূ সুন্দরী’তে বাপিদার করা একটা গান ছিল, ‘নারী চরিত্র বেজায় কঠিন…তারা কোনও ল’ মানে না।’ এটা সবার জন্য সত্যি। ওদের কোনও ‘ল’, মানে আইন নেই। আমরা, ছেলেরা কোনও উকিল হয়তো পাব না, কারণ তাঁর বাড়িতেও ললনা আছেন! নিপীড়িত, জর্জরিত অবস্থা একেবারে।
নিজের ‘বিবাহ অভিযান’ এমন ফাঁস করে দিলেন! চন্দ্রাণী পড়লে তো…
ও যেন না পড়ে এটা (হাসি)। আমার একার নয়, সবার ‘বিবাহ অভিযান’-ই এ রকম। তবে এ রসে যাঁরা মজেছেন, জানেন, তারও আনন্দ আছে। এই কেমিস্ট্রিটাই খুব ভাল। আর ছবিটাও সকলের ভাল লাগবে।
আরও পড়ুন, কোন সম্পর্ক ‘শেষ থেকে শুরু’ করতে চান ঋতাভরী?
‘বিবাহ অভিযান’-এ তো গানের মাধ্যমেও দর্শককে হাসাতে হবে…
দেখুন, কমেডি ছবির গান তৈরি করা শক্ত। কারণ, ডায়লগ বললে লোকে চট করে হেসে ফেলে। কিন্তু গানে হাসানোটা মুশকিল। গানে কাঁদানো যায়। কিছু নোটস, রাগ আছে— কাঁদানো যায়। কিন্তু হাসানো কঠিন। এখানে অনির্বাণ গেয়েছে। ওর টাচ খুব সুন্দর। তার সঙ্গে দেবরাজ। ও নাটক করে আসলে। আমি তো নতুন শিল্পী দেখলেই, তাদের দিয়ে গাওয়াতে চেষ্টা করি।
স্ত্রী চন্দ্রাণীর সঙ্গে জিত্।
ঠিকই। বহু নতুন শিল্পী নিয়ে কাজ করেন আপনি। রিস্কি মনে হয় না?
আমি কোনও বাধ্যবাধকতার মধ্যে থাকতে পারি না। হয়তো আমি জেমিনি বলেই। গিটার হাতে নিলেই বা পিয়ানোর সামনে বসলেই গান তৈরি করতে হবে— আমার এটা মনে হয় না। রাস্তা দিয়ে হাঁটছি বা বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা মারছি— তখনও গান তৈরি হয়। এখন ফোনে রেকর্ড করে নিই। আগে হয়তো ভুলে যেতাম। আমার তো স্বপ্নেও গান আসে। ‘হামারি অধুরি কাহানি’র টাইটেল সং স্বপ্নে এসেছিল। তেমনই প্রতিষ্ঠিত শিল্পীদের দিয়েই গান করাতে হবে, এই বাধ্যবাধকতা আমার ভাল লাগে না। নতুন সিঙ্গাররা আসুক। আমরা তো গড়েপিঠে নিই তাদের। দেবরাজের কিছু গান বিরসা পাঠিয়েছিল। ওর গলায় অদ্ভুত একটা টেক্সচার রয়েছে। আর খুব ভাল লিখেছে শ্রীজাত। অনেক দিন পরে ওর সঙ্গে কাজ করলাম।
রিস্ক নিতে ভালবাসেন তা হলে?
হ্যাঁ, রিস্ক নিতে ভালবাসি। টেনশনও করি। বাবাকে হারিয়েছি এক বছর আগে। স্টেজে ওঠার আগে বাবাকে ফোন করতাম। বাবা বলতেন, ভয় রাখবে তোমার মধ্যে। গান রিলিজ হওয়ার আগে ভয় রাখবে মনে। এটাই তোমাকে আরও এগিয়ে যেতে সাহায্য করবে। ফলে কিছু এক্সপেকটেশন না রেখে ভাল কাজ করার চেষ্টা করি। আর রিস্ক না নিলে নতুনরা আসবে কী করে? জানেন, মিউজিকের জগতে প্রচুর অভাবের সংসার থেকে ভাল গায়ক-গায়িকা আসে। যদি সে ঠিক মতো গাইতে পারে, শো পাবে। সংসারটা টিকে যাবে। আমি এটাও চিন্তা করি। নিজে খুব স্ট্রাগল করে উঠেছি তো। এমনও হয়েছে, কলেজে পরীক্ষা দিচ্ছি। মা গিটার নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। সঙ্গত করতাম সে সময়। পরীক্ষা দিয়েই শোতে গিয়েছি। বাবার একটা অ্যাক্সিডেন্ট হয়েছিল সে সময়। এই দিনগুলো আমি দেখেছি। ফলে ভাল রেওয়াজ থাকলে, ভাল টেক্সচার হলে ডেফিনিটলি তাকে সুযোগ দেওয়া উচিত।
আরও পড়ুন, জয় শ্রী রাম বা বন্দে মাতরম বলে মানুষকে বোকা বানানোর দরকার নেই: দেব
অনির্বাণ গান গেয়েছেন ‘বিবাহ অভিযান’-এ। অনির্বাণের গান আগেও একটা ছবিতে শুনেছেন দর্শক। তুমুল জনপ্রিয় হয়েছিল। কিন্তু নায়কদের গান গাওয়া নিয়ে অনেক সমালোচনা হয়। বিশেষত টেকনিক্যাল হেল্প নিয়ে গান গাওয়াকে আপনি সাপোর্ট করেন?
খুব ভাল প্রশ্ন। অনেকে থাকেন বর্ন সিঙ্গার। কখনও শেখেননি। অনেকে আবার শিখে আসেন। অনির্বাণের গান শুনে মনে হয়, গানটা ওর ভেতরে আছে। কিন্তু অনেকের গলা সফটওয়্যারে প্রসেস করানো হয়। আমার মনে হয়, যারা গান করতে পারে, তাদের গানটা গাওয়া উচিত। যেমন, আলিয়া ভাল গান করতে পারে, শিখেছে। উত্তমকুমার অসম্ভব ভাল গান করতেন। টেকনিক্যাল সাপোর্টে গান গাইলে ন্যাচারাল ব্যাপারটাই তো থাকে না। আর অডিয়েন্স কিন্তু ভাল বোঝে। তারা জানে, একটা সফটওয়্যার আছে, যার নাম মেলোডাইন। সেটা দিয়ে আমরা অনেক জায়গা কারেক্ট করে দিই। অডিয়েন্সের কান কিন্তু তৈরি হয়ে গিয়েছে।
‘বিবাহ অভিযান’-এর ছয় সদস্য।
আপনি দীর্ঘ দিন ধরেই রিয়্যালিটি শোয়ে বিচারকের দায়িত্ব সামলাচ্ছেন। এখনও একটি রিয়্যালিটি শোয়ের সঙ্গে যুক্ত। রিয়্যালিটি শো কতটা রিয়্যাল?
এটার ভাল দিকটা আগে বলি। আমাদের সময়ে এই প্ল্যাটফর্ম ছিল না। এখন এই প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে বিশ্বের প্রতিটা ঘরে গান শুনতে পাবে অডিয়েন্স। কত হিডন ট্যালেন্ট থাকে, আমরা জানিই না। তারা একটা প্ল্যাটফর্ম পাচ্ছে। অনেক অভাবের ঘর থেকে ছেলেমেয়েরা আসে। রিয়ালিটি শো-এর পরে যারা শো পায়। তাদেরও তো সংসার চালাতে হবে। আর নেগেটিভটা হচ্ছে, কেউ কেউ রিয়ালিটি শো জিতলেই মনে করছে লাইফে সব পাওয়া হয়ে গিয়েছে। সেটা হয় না। প্রচুর শিল্পী আসেন। শ্রেয়া এসেছে। সোনু একটা রিয়ালিটি শো চালাত। কিন্তু সবাই তো শ্রেয়া বা সোনু নয়। এটা সাধনার ব্যাপার। পা-টা সব সময় মাটিতে রাখতে হবে। রিয়ালিটি শো শেষ কথা নয়।
আরও পড়ুন, হিরোইনের ক্রেডিটও হিরোকে দেওয়াটা ঠিক নয়, বলছেন রুক্মিণী
বয়সে বড় প্রতিযোগীরা এই সাজেশনের অর্থ বুঝলেও ছোটরা কি পারবে?
এই দায়িত্বটা ছোটদের ক্ষেত্রে তাদের বাবা-মায়েদের নিতে হবে। বাচ্চাদের প্রেশার দেওয়া যাবে না। আমি দেখেছি, কম পয়েন্ট পেলে সামনে কিছু বলবে না। কিন্তু বাড়িতে গিয়ে ধমক দেবে। তাতে বাচ্চা ডিপ্রেসড হয়ে যায়। আমি আমার কথা বলতে পারি। ছোটবেলায় ফুটবল খেলতাম। জুনিয়র মোহনবাগানেও খেলেছি। দাদামশায়ের হাত ধরে মাঠে যাওয়া আমার। উনি ক্রীড়া সাংবাদিক ছিলেন। আর বাবার দিক থেকে আমরা ১৮ পুরুষ মিউজিকে। বাবা-মা ফুটবল খেলতে বাধা দেননি কখনও। মাধ্যমিকের পর বাবা জানতে চাইলেন, কী করবে? মিউজিক নাকি ফুটবল? আমার কোনওটাতেই অসুবিধে নেই। কিন্তু তোমার এ বার বেছে নেওয়ার সময় এসেছে। দুটো জিনিস একসঙ্গে চলতে পারে না। ১০ দিন সময় নিয়েছিলাম। তার পরে বলেছিলাম, মিউজিক নিয়ে থাকতে চাই। তখন উনি বললেন, কাল থেকে মাঠে যাওয়া বন্ধ। ফলে বাচ্চাদের প্রেশার দেবেন না। ওদের সময় দিন। নিজেই বুঝতে শিখবে। যে পথ বেছে নেবে, সেখানে ভাল করাটা ওর দায়িত্ব।
আরও পড়ুন, হায় আল্লা, এটা কী করে করব: জয়া আহসান
এত সোজাসাপ্টা, সাহসী জিতের জীবনে কোনও ভয় রয়েছে?
ভাল গান না করতে পারার ভয় আছে। এই ভয়টা কাটাতে পারি না কিছুতেই।
‘বিবাহ অভিযান’ রিলিজ করছে এ সপ্তাহেই। যাঁরা এখনও এই অভিযানে যাননি, তাঁদের কিছু বলবেন?
‘বিবাহ অভিযান’-এ যে ছেলেরা যাচ্ছ, কোনও দিনই জয়ী হবে না (হাসি)। দ্যাট ইজ কনফার্ম। তবে অভিযানটা করে দেখা উচিত। চন্দ্রাণী না থাকলে আমি কিন্তু জিরো। তাই জেতা, হারা তো থাকবেই। এই অভিযানে দারুণ মজা আছে, এটুকু বলতে পারি।
(সেলেব্রিটি ইন্টারভিউ, সেলেব্রিটিদের লাভস্টোরি, তারকাদের বিয়ে, তারকাদের জন্মদিন থেকে স্টার কিডসদের খবর - সমস্ত সেলেব্রিটি গসিপ পড়তে চোখ রাখুন আমাদের বিনোদন বিভাগে।)
এবার শুধু খবর পড়া নয়, খবর দেখাও। সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের YouTube Channel - এ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy