Advertisement
১৫ জানুয়ারি ২০২৫
নজরে একাধিক পঞ্চায়েত
Pradhan Mantri Awas yojana

বাড়ির টাকা থেকে ভাগ ‘উন্নতি-খাতে’

মেমারি ১ পঞ্চায়েত সমিতির সদস্যদের একাংশের দাবি, ওই ব্লকে প্রায় সাড়ে চার হাজার জন বাংলার বাড়ি প্রকল্পে সরকারি অনুদান পাচ্ছেন।

—প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।

—প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।

সৌমেন দত্ত
শেষ আপডেট: ১৫ জানুয়ারি ২০২৫ ০৮:৫১
Share: Save:

মুখ্যমন্ত্রী স্পষ্ট করে ‘বাংলার বাড়ি’ প্রকল্পে পঞ্চায়েতকে নাক গলাতে নিষেধ করেছেন। জেলা প্রশাসনও উপভোক্তাদের নিয়ে বৈঠক করে, ফ্লেক্স টাঙিয়ে ওই প্রকল্পের টাকা কাউকে দিতে নিষেধ করেছে। তার পরেও মেমারি ১ ব্লকের বেশির ভাগ পঞ্চায়েত আবাস প্রকল্পে সরকারি অনুদান প্রাপকদের কাছ থেকে ‘ডেভেলপমেন্ট ফি’ বা উন্নয়নের স্বার্থে পাঁচশো থেকে হাজার টাকা করে নিচ্ছে বলে অভিযোগ। সপ্তাহ খানেক আগে বিডিও (মেমারি ১) শতরূপা দাসের কাছে দল বেঁধে অভিযোগ করেছিলেন পঞ্চায়েত সমিতির কয়েক জন সদস্য। বিধায়ক (মেমারি) মধসূদন ভট্টাচার্যও বিডিওকে মৌখিক ভাবে ওই অভিযোগ জানান। বিডিও পঞ্চায়েত সমিতির সদস্যদের কাছে বিষয়টি খোঁজ নিয়ে দেখার আশ্বাস দিয়েছিলেন। মঙ্গলবারও সেই একই আশ্বাস দেন। জেলাশাসক আয়েষা রানি এ তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন।

মেমারি ১ পঞ্চায়েত সমিতির সদস্যদের একাংশের দাবি, ওই ব্লকে প্রায় সাড়ে চার হাজার জন বাংলার বাড়ি প্রকল্পে সরকারি অনুদান পাচ্ছেন। বেশির ভাগ প্রাপকের কাছেই প্রথম কিস্তির ৬০ হাজার টাকা ঢুকে গিয়েছে। যাঁরা বাড়ি তৈরি করতে শুরু করছেন, তাঁদের কাছ থেকেই ‘উন্নয়ন খাতে’ টাকা নেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ। দলুইবাজার ২ পঞ্চায়েত মাইকে করে প্রচার করে ওই টাকা দেওয়ার কথা জানিয়েছে। ওই পঞ্চায়েতের সদস্য রাজীব মালিকের দাবি, “পঞ্চায়েত থেকে মাইকে করে ‘বাংলার বাড়ি’ প্রকল্পের জন্য শংসাপত্র নেওয়ার কথা বলা হয়। তখনই পঞ্চায়েতকে ঘর তৈরির জন্য হাজার টাকা করে দেওয়ার কথাও বলা হয়।’’ পঞ্চায়েত সমিতির সদস্য অর্ক বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “দলুইবাজার ২ পঞ্চায়েত থেকে টাকা নেওয়ার খবর পেয়েছিলাম। সেই মতো সপ্তাহ খানেক আগে বিডিওর কাছে গিয়ে অভিযোগ করা হয়। এখন দুর্গাপুর, নিমো ২-সহ বেশির ভাগ পঞ্চায়েতই ‘বাংলার বাড়ি’ প্রাপকদের কাছ থেকে টাকা নিচ্ছে বলে জেনেছি।’’

বিধায়ক (মেমারি) মধুসূদন ভট্টাচার্য বলেন, “কোনও ভাবেই পঞ্চায়েত বাংলার বাড়ি প্রাপকদের কাছে অর্থ নিতে পারে না। অথচ মেমারি ১ ব্লকের বেশ কিছু পঞ্চায়েত ‘ডেভেলপমেন্ট ফি’ নিচ্ছে। বিডিও-কে তদন্ত করে দেখতে বলেছিলাম। পঞ্চায়েতগুলি যাতে এই ভাবে টাকা আদায় না করে সেই নির্দেশ দিতেও অনুরোধ করেছিলাম।”

মেমারি ১ ব্লকের বেশির ভাগ পঞ্চায়েত তৃণমূলের ব্লক সভাপতি তথা জেলা পরিষদের কর্মাধ্যক্ষ নিত্যানন্দ বন্দ্যোপাধ্যায়ের অনুগামীদের ‘দখলে’ রয়েছে। নিত্যানন্দ বলেন, “এ ভাবে বাংলার বাড়ি প্রাপকদের কাছ থেকে কেউ টাকা নিতে পারে না, এটাই সরকার ও দলের নির্দেশ। সম্ভবত অন্য কোনও কারণে টাকা নিয়েছে পঞ্চায়েত।” ব্লক সূত্রে জানা যায়, পঞ্চায়েতকে এ ব্যাপারে কোনও নির্দেশ দেননি বিডিও। তবে জেলা প্রশাসন জানার পরেই তদন্ত করে দেখার নির্দেশ দিয়েছে।

নিমো ২ পঞ্চায়েতের উপপ্রধান শেখ আব্দুল রহমানের দাবি, “যে সব প্রাপকরা প্রকল্পের অনুদানকে কাজে লাগিয়ে বড় বাড়ি তৈরি করছেন, একমাত্র তাঁদের কাছ থেকেই ‘ডেভেলপমেন্ট ফি’ নেওয়া হচ্ছে। যাঁরা মডেল অনুযায়ী বাড়ি করছেন, তাঁদের কাছ থেকে কোনও টাকা নেওয়া হচ্ছে না।” ওই পঞ্চায়েত এখনও পর্যন্ত ৭০ জনের কাছ থেকে টাকা নিয়েছে বলে জানা গিয়েছে। দুর্গাপুর পঞ্চায়েতের উপপ্রধান নিতাই ঘোষের দাবি, “রসিদে কোথাও বাংলার বাড়ির জন্য টাকা নেওয়া হচ্ছে লেখা আছে না কি? আমরা কাউকে জোর করে উন্নয়ন খাতে অর্থ দিতে বলিনি। যাঁদের ইচ্ছে, তাঁরাই দিচ্ছেন।’’ প্রকল্পের উপভোক্তারা মুখ খুলতে নারাজ। তাঁদের ভয়, পাঁচশো-হাজার টাকার জন্য মুখ খুললে দ্বিতীয় কিস্তিটাই না আটকে যায়।

অন্য বিষয়গুলি:

Awas Yojana Memari
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy