Advertisement
০২ নভেম্বর ২০২৪

পনেরো বছর লেগে গেল ঘুরে দাঁড়াতে…

আবার তিনি শিরোনামে। ‘পটলকুমার গানওয়ালা’র ফ্লোর থেকে কেরিয়ার, জীবন, সম্পর্ক নিয়ে অকপট সাহেব চট্টোপাধ্যায়। শুনলেন স্রবন্তী বন্দ্যোপাধ্যায়।আবার তিনি শিরোনামে। ‘পটলকুমার গানওয়ালা’র ফ্লোর থেকে কেরিয়ার, জীবন, সম্পর্ক নিয়ে অকপট সাহেব চট্টোপাধ্যায়। শুনলেন স্রবন্তী বন্দ্যোপাধ্যায়।

ছবি: কৌশিক সরকার।

ছবি: কৌশিক সরকার।

শেষ আপডেট: ১১ মার্চ ২০১৬ ০০:২১
Share: Save:

সদ্য মুম্বইতে একটি শো করতে গিয়ে আলাপ করেছেন সলমন খান আর কর্ণ জোহরের সঙ্গে। উচ্ছ্বাস এতটাই যে আনন্দplus-এর ফোটোশ্যুটে টি শার্ট আর হাওয়াই চপ্পলে রাস্তায় শুয়ে পড়লেন টেলিভিশনের সুপারহিট ‘পটলকুমার’য়ের বাবা সুজনকুমার ওরফে সাহেব চট্টোপাধ্যায়, বলছেন ‘‘ইশশ্, সলমন খানের মতো যদি ফিজিকটা বানাতে পারতাম, ভাগ্যটা যদি সঙ্গে থাকত!’’

সেকী! ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত, প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে ছবি করেছেন আপনি। সিডনির অপেরা হাউজে গান গেয়েছেন। তার পরেও বলছেন ভাগ্য খারাপ?

ঋতু আমাকে সত্যি খুব সাহায্য করেছেন। ওঁর সঙ্গে ‘মন আমুর’ করেছিলাম। আর শুধু ছবি করাই নয়, আমার মেন্টাল ক্রাইসিসের সময় ঋতু যে ভাবে বুস্ট করেছিল আমায়, কোনও দিন ভুলব না। আর বুম্বাদার সঙ্গে তো ‘বাজি’ ছবিতে কাজ করেছিলাম। আজও মনে আছে, শট দিতে গিয়ে বুম্বাদার উল্টো দিকে দাঁড়িয়ে কাঁপছি। সিডনি অপেরা হাউজে বাংলায় গান গেয়েছি, ইংরেজিতে নাটক করেছি। তবে এটাও ঠিক ২০০১ থেকে ২০১৬— প্রায় ১৫ বছর লেগে গেল ঠিক ভাবে ঘুরে দাঁড়াতে।

ইন্ডাস্ট্রির এ রকম দু’জন বিখ্যাত মানুষের সাহায্য পেয়েও এত দেরি হল কেন?

আমি আজ অবধি কখনও সংবাদপত্রের অফিসে গিয়ে আড্ডা মারিনি বা বলিনি যে আমার সাক্ষাৎকার ছাপাও। কোনও গ়ডমাদার, গডফাদার ছিল না, লোকে ভাবত আই ওয়াজ বর্ন উইথ গোল্ডেন স্পুন। আমার বাড়িতে গাড়ি ছিল। কিন্তু আমি বাসে ঝুলতে ঝুলতেই ফিরেছি। বাড়িতে যা রসদ ছিল আমার, আমি নিজেই একটা প্রোডাকশন হাউস করে ফেলতে পারতাম। কিন্তু বাবা-মা’র শিক্ষা ছিল অন্য রকম। তাই বড় হতে গেলে স্ট্রাগলটা নিজেকেই যে করতে হবে সেটা বুঝতাম। বাবা চলে গেছেন, খুব মিস করি।

কখনও কি মনে হচ্ছে গান, অভিনয় দু’টো একসঙ্গে করতে গিয়ে দু’টো ক্ষেত্রেই কাজ পেতে অসুবিধে হল?

অ্যালবাম করার কথা হলে কোম্পানিগুলো বলত আমি নাকি অভিনয়ে ব্যস্ত, আমার টাইম নেই। আর পরিচালক বলেছেন তুমি গানে ব্যস্ত, অভিনয়ে কী করে সময় দেবে? আমার জন্য সব সময় এক্সকিউজ ছিল আর ইন্ডাস্ট্রি আমাকে আন্ডাররেট করেছে। আমি কিন্তু দু’টোই পারতাম। আর সবচেয়ে বড় কথা, দর্শক আমার কাছে কিন্তু দুটোই চেয়েছে।

সেটা বুঝলেন কী ভাবে?

‘মন আমুর’ ছবিটা চলেনি হয়তো। কিন্তু আনন্দবাজারেই আমার অভিনয় আর গান নিয়ে আলাদা করে লেখা হয়েছিল। যেমন ঋতু আর টোটাদা সম্পর্কেও লেখা হয়েছিল। সত্যি যদি অভিনয় ভাল না হত, তা হলে কেউ লিখতেন কেন? কিন্তু ওটা হওয়ার পর আমাকে আর মেন লিড ভাবা হয়নি! এর পরে ‘শুকনো লঙ্কা’, ‘যদি একদিন’, সন্দীপ রায়ের ‘হিট লিস্ট’ করলাম। ‘যোগাযোগ’য়ে নবীনের চরিত্রে গান-অভিনয় দুটোই করেছি। আর রাজা সেন-এর ‘ল্যাবরেটরি’— সেটাও চলল না…আই ওয়াজ অলওয়েজ আন্ডারএস্টিমেটেড বাই ইন্ডাস্ট্রি।

শুধুই ইন্ডাস্ট্রি? কখনও মনে হয়নি আপনার চেহারা, আপনার চকোলেট বয় ইমেজ আপনার অভিনয়ের ক্ষেত্রে বাধা হচ্ছে?

আমার সেই বয়স নেই যে প্রযোজক-পরিচালকেরা আমাকে হিরো করবে। আমি হয়তো টু গুডলুকিং ফর দ্য বেঙ্গলি ইন্ডাস্ট্রি। টালিগঞ্জে একমাত্র আমার চোখই বোধহয় নীল রঙের। সেই কারণে অনেক সময়ই নেগেটিভ রোল পেয়েছি আমি। রোম্যান্টিক চকোলেট বয় ইমেজটাও এগেনস্ট-এ গিয়েছে। আমি যখন অভিনয় করতে এলাম, তখন বাংলা ছবির দর্শক আলাদা ছিল। গ্রামের চাষি সারা দিন খেটে এসে যে বাংলা ছবি দেখে, সেখানে সে তার গল্পে রতনকে চায়। আমি রতন হতে পারলাম না, নেক্সট ডোর হিরো হতে পারলাম না। তবে ‘বাজি’তে আমাকে ব্ল্যাক লেন্স পরে প্রজেক্ট করা হয়েছিল। সেটা মাচা করতে গিয়েছি, দেখেছি লোকে নিয়েছে। আসলে আমার প্রজেকশনটাই ভুল ছিল। খুব সোজাসাপ্টা মানুষ আমি। আমার পার্সোনাল লাইফে কিছু অঘটন ঘটলেও লোকে সেটা জেনে যায়। আমার দুঃখ হলে চোখমুখ দেখলেই সবাই জেনে যাবে। এই অনেস্টির জন্য ঠকেওছি আমি।

মুমতাজের সঙ্গে পার্সোনাল লাইফে যেটা হল…

প্লিজ, আজ আমাকে পুরনো কাসুন্দি ঘাঁটতে বলবেন না।

পুরনো কাসুন্দি বলতে?

এ বিষয়ে কথা কি বলতেই হবে?

নাহ, আমি জানতে চাইছিলাম বিষয়টা কী?

দেখুন মুমতাজের সঙ্গে সম্পর্কটা আমার ভুল ছিল। ভুল সবাই করে। আমি তখন এত ম্যাচিওর ছিলাম না। জীবনের ওই অধ্যায়টাকে সম্পূর্ণ ভুলে গেছি আমি। মুমতাজ খুব ট্যালেন্টেড, খুব ভাল মনের মানুষ। ওদের বাড়ির একটা ঐতিহ্য আছে। অযথা ওই বিষয়টা নিয়ে ঘাঁটাঘাঁটি হোক, চাই না। আমি আমার বৌকে নিয়ে খুব হ্যাপি আছি আর থাকব। নতুন করে মিলির প্রেমে পড়েছি।

আপনি তো নতুন করে সিরিয়ালের প্রেমেও পড়লেন। এক সময় তো সিরিয়াল শুনলেই নাক কুঁচকোতেন…

সে আর বলতে? আমি সব সময় চেয়েছিলাম সিনেমা করব, সে যত খাজা সিনেমা হোক। কিন্তু সিরিয়াল করব না আর। শেখানো হয়েছিল সিরিয়াল করলে অভিনয় ভুলে যাবে। মাথায় সেই ভুলটা ঢুকে গিয়েছিল। আমি গোয়েন্দাগিন্নি তো করতে চাইনি। আর পটলকুমার গানওয়ালা করতে কিছুতেই রাজি হচ্ছিলাম না। থ্যাঙ্কস টু ভেঙ্কটেশ ফিল্ম, সাহানা—এরা না থাকলে আমার জীবনটা আজ সেই একঘেয়ে স্ট্রাগলের খাতেই বয়ে যেত। ভেঙ্কটেশ-এর অফিস থেকে যেদিন ফোন আসে, জিজ্ঞেস করেছিলাম ছবি তো? সময় শেখাল সিরিয়াল, সিনেমা, মঞ্চ— যা-ই করো তুমি অভিনেতা। এখন কিন্তু লোকে বলে সাহেব চট্টোপাধ্যায় যাচ্ছে। উত্তমকুমারের যুগ চলে গেছে। এখন মানুষের কাছাকাছি থাকতে হবে।

ইন্ডাস্ট্রির এক বিখ্যাত প্রোডিউসর জানিয়েছেন এখন নাকি আপনার আয় বছরে পঞ্চাশ লক্ষ টাকা?

(আকাশ থেকে পড়লেন) কে বলেছে এই সব? সবে তো অগস্ট মাস থেকে সিরিয়ালে কাজ করছি। এত টাকা কী করে হবে আমার? বছরের শেষে অ্যাকাউন্টে এই রকম একটা অঙ্ক দেখলে কার না ভাল লাগে বলুন তো? কথা দিলাম এমন কিছু হলে আনন্দplus-কে পার্টি দেব।

‘গোয়েন্দাগিন্নি’র পরিমল মিত্র, নাকি পটলকুমারের সুজনকুমার— কোন চরিত্র প্রিয়?

দুটোই। তবে এ কথাও ঠিক আমি এমন একটা চরিত্রের কথা ভাবতাম যে গান, অভিনয় দুটোই করবে। সুজনকুমার তো এই রকম একটা চরিত্র। প্রচুর টানাপড়েন আছে, অভিনয়ের স্কোপ আছে, একজন অভিনেতা যা যা দিতে চায়, সেটাই দিতে পারছে। আর ‘গোয়েন্দাগিন্নি’তে লাভিং হাজব্যান্ড একটা সাপোর্টিভ রোল… আমি যেমন বাড়িতে মিলির সঙ্গে।

দু’টো চরিত্র দর্শকের কাছে কোনও বিরোধ তৈরি করছে?

একেবারেই না। এটা ভেবেই ভাল লাগে দু’টো চরিত্র আলাদা করতে পারছি। ফেসবুক, হোয়াটসঅ্যাপে সারাক্ষণ সেটাই লিখছে দর্শক।

‘পটলকুমার’ করে কি মাচার রেট বা ফিতে কাটার রেট বেড়ে গেল?

না, না। তবে অভিনেতা-গায়ক সাহেব চট্টোপাধ্যায়ের চেয়ে সুজনকুমারকে দর্শকরা বেশি দেখতে চাইছে। কিন্তু ‘গোয়েন্দাগিন্নি’ না করলে ‘পটলকুমার গানওয়ালা’ পেতাম না।

ইন্ডাস্ট্রিতে ‘পটলকুমার’-এর প্রতিক্রিয়া কেমন?

বুম্বাদা দেখে ভাল বলেছেন। এটা অনেক পাওয়া। শাহরুখ খান যদি কিং খান অব বলিউড হন, প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায় কিং অব টলিউড। কিং চট্টোপাধ্যায় ভাল বলেছেন আমায়, আর কী চাই?

সাহেব চট্টোপাধ্যায়ের রবীন্দ্রসঙ্গীত শিল্পী হিসেবে স্ট্যাম্প লেগে গিয়েছিল। সুজনকুমার তো সব রকম গান গায়। এটা একটা দারুণ পাওয়া। আমি যে সব রকম গান গাইতে পারি, সেটা লোকে এবার বুঝতে পারবে…

১৫ বছরে আপনাকে জীবন কী বোঝাল?

বাবার মৃত্যু আমাকে জীবন চিনিয়েছে। নিজের প্রেম, ভালবাসা, কাজ এগুলোই শেষ কথা নয়। আমরা সবাই মুভ অন করে যাই, সবই ঠিক হয়ে যায়, কিন্তু বাবাকে তো আর পাব না। বাবাকে সময় দিতে পারলাম না। মিলিকেও কষ্ট দিয়েছি, সেটা কি আর মুছে ফেলা যায়? আর আমার বাবা ‘হম দিল দে চুকে সনম’য়ে সলমনের বাবার মতোই ওপর থেকে সব ঠিক করে দিচ্ছে। এখন ভাল সময়। জানি ‘পটলকুমার’ শেষ হলে আরও একটা জার্নি শুরু হবে…

অন্য বিষয়গুলি:

saheb chattopadhay interview srobonti bandopadhay
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE