মৈনাক বন্দ্যোপাধ্যায়।
রাজ চক্রবর্তী ‘বরবাদ’-এ হিরোর অফার দিয়ে ভিলেন বানিয়ে দিলেন কেন আপনাকে?
বেশ লম্বা একটা ঘটনা। রাজ চক্রবর্তী প্রথমে যখন বলেছিলেন, ‘‘তোকে বরবাদ-এর হিরো ভাবছি। কিন্তু এত হিরোসুলভ চেহারা হলে হবে না। কালো আর রোগা হতে হবে। তুই রোগা হতে শুরু কর।’’ উফ্! আমি তো সঙ্গে সঙ্গে কাজে নামলাম। মাস দুয়েকে দশ কেজি কমল আর ছাদে বোরোলীন মেখে শুয়ে কালো হলাম। প্রচুর পরিশ্রম করে যখন রাজদার সামনে গেলাম, রাজদা বলল, ‘‘তুই হিরো করবি না। ভিলেন করবি!’’ কষ্ট তো হয়েছিল, তবে পরে দেখেছি, ‘বরবাদ’-এ ইমরানের (আমার চরিত্রের নাম) সংলাপ আজও লোকের মুখে ফিরছে। বলুন তো, মশালা ছবিতে ভিলেনের ডায়লগ ক’জন মনে রাখে?
সেই অহঙ্কার নিয়েই কি আর ধারাবাহিক করছেন না?
নাহ্। এটা একেবারেই অহঙ্কারের বিষয় নয়। তবে ধারাবাহিকের অফার ঘুরে ফিরে আসতেই থাকে। কিন্তু আমি করব না।
কেন বলুন তো?
ধারাবাহিকে যা দেখানো হয় তার সঙ্গে আমাদের রিয়েল লাইফের আদৌ কোনও মিল আছে? কোটিপতির ছেলে হঠাৎ গ্রামের মেয়েকে বাড়িতে আনে। তার গার্লফ্রেন্ড আছে যে ইংরিজি বলে, শর্ট স্কার্ট পরে, আর সে অবশ্যই খারাপ মেয়ে! আর গ্রামের মেয়েটি ইংরিজি শেখে। স্বামী সেবা করে। আজকের দিনে ধারাবাহিকের এই কনটেন্ট বলেই নেটফ্লিক্সের এত রমরমা। ‘স্যাক্রেড গেমস্’ কী জনপ্রিয়! নতুন প্রজন্মের শিক্ষিত মন এখনকার ধারাবাহিক দেখবে না। নেটফ্লিক্স না হয় ছেড়েই দিলাম। বাংলা ছবি দেখেনি, এমন অনেক মানুষ আমার ওয়েব সিরিজ ‘কার্টুন’ দেখে আমায় ইনস্টাগ্রাম আর ফেসবুকে লিখেছে। পরে তারা জেনেছে আমার ছবি করার কথা। একতা কপূর বাংলা ইন্ডাস্ট্রির সর্বনাশ করে দিয়েছে। এই চারটে বিয়ে, কুটিল মেয়ের ধারাবাহিক দেখতে দেখতে মানুষ অন্য ধারার ছবি দেখার অভ্যেসও ভুলে যাচ্ছে। ওটাকেই আঁকড়ে ধরে আছে। ভাবুন তো আগেকার ‘তেরো পার্বণ’-এর কথা! বেণুদা (সব্যসাচী চক্রবর্তী) ওখান থেকে উঠে এল! এখন এই ধারার সিরিয়াল কই?
আরও পড়ুন, বলি তারকাদের যে সব চুমু নিয়ে তুমুল হইচই হয়েছিল
আপনার তো বেশ বিপদ! এ ভাবে মুখের ওপর ধারাবাহিক নিয়ে বলছেন! এই মনোভাব নিয়ে টিকে আছেন কী করে?
আমি সমঝোতা করতে পারি না। অনেক পরিচালক, প্রযোজক বলেন আমায় ভুল করছি। কিন্তু আমি এ রকমই। আর এই সাক্ষাৎকার পড়ার পর অনেকে বলতেও পারেন, খুব বড় বড় কথা বলছে। ওকে আর কাজই দেব না! আবার এমনও হতে পারে, ধারাবাহিক নিয়ে এত কিছু বলে টাকার জন্য আমিই ধারাবাহিক করতে আরম্ভ করলাম!
মুম্বই যাওয়ার কথা ভাবেন না?
নাহ্। আমার বাবা ক্যানসার পেশেন্ট। তাঁকে ফেলে কোথাও যাওয়া অসম্ভব।
তা হলে কেরিয়ার প্ল্যান কী?
প্ল্যান করলেই কি সব হয়ে যাবে? নাহ্। তবে ভাল ছবির অপেক্ষায়।
বেড়ানো মৈনাকের অন্যতম নেশা।
শেষ ভাল বাংলা ছবি কী দেখেছেন?
উড়নচণ্ডী আর পিউপা।
আপনার পছন্দের ছবি কিন্তু ব্লক বাস্টার নয়...
কী করা যাবে? ঋত্বিক ঘটক আর সত্যজিতের সব ছবি কি সুপারহিট? বাজার দিয়ে সৃজনশীলতা ধরা যায় না।
হাতে কী কাজ আছে?
‘রডোডেনড্রন’ আসার কথা। একটা ওয়েব সিরিজ আর ওয়েব ফিল্ম আসবে। আর ‘ক্রিসক্রশ’ সদ্য মুক্তি পেল।
আপনার সামনে বড় ব্যানার বা বড় পরিচালক...
দেখুন ও সব আমার নেই। কোনও বড় পরিচালক আমার মাথায় হাত রাখেননি। কী করব? তবে ছবি প্রসঙ্গে আরও একটা কথা বলতে চাই।
আরও পড়ুন, বলিউডের ইতিহাসে হাজার কোটির গণ্ডি ছাড়িয়েছিল এই ছবিগুলি
বলুন না...
বড্ড বেশি বাংলা ছবি হচ্ছে। এক সপ্তাহ যেতে না যেতেই ছবি তুলে নেওয়া হয়, হল নেই। মারাত্মক অবস্থা!
আপনার প্রেমের অবস্থা কী?
নেই। আগে ছিল। ওই জায়গা থেকে বেরোতে খুব কষ্ট হয়েছে। এখন আর এ নিয়ে কথা বলতে চাই না। শুধু এক ছুটে বেরিয়ে পড়তে চাই।
কোথায়?
ট্রেকিংয়ে। অজানা এক ভয়ঙ্করের কাছে!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy