Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
Tollywood

ছাড়পত্র মেলার পর শুটিং শুরু কবে? কতটা প্রস্তুত টলিপাড়া?

ছাড়পত্র পাওয়া গেল। এ বার সুরক্ষাবিধি মেনে দ্রুত কাজে ফিরতে চাইছে টলিপাড়া।

বাঁ দিক থেকে: ইন্দ্রাণী হালদার, মানালি দে এবং দিতিপ্রিয়া রায়।

বাঁ দিক থেকে: ইন্দ্রাণী হালদার, মানালি দে এবং দিতিপ্রিয়া রায়।

বিহঙ্গী বিশ্বাস
কলকাতা শেষ আপডেট: ৩১ মে ২০২০ ১৯:৪৪
Share: Save:

মিলেছে সরকারি নির্দেশিকা। শুটিং শুরুর ছাড়পত্র পাওয়া গিয়েছে শনিবার। কিন্তু প্রায় আড়াই মাস কাজহারা টলিউড সমস্ত সুরক্ষাবিধি মেনে কত দ্রুত ফিরতে পারবে কাজে? যে হারে সংক্রমণ বাড়ছে তাতে আদৌ কি কাজে ফিরতে চাইছে টলিপাড়া? ঠিক কী অবস্থায় দাঁড়িয়ে ইন্ডাস্ট্রি? খোঁজ নিল আনন্দবাজার ডিজিটাল।

শনিবার রাতে রাতারাতি শুটিং শুরুর নির্দেশিকা আসতেই কিছুটা আতান্তরে পড়েছিল টলিউড। মাত্র দু’দিনের নোটিসে আবার শুটিং শুরু করা যে কার্যত অসম্ভব সে কথা এক বাক্যে জানিয়ে দিয়েছিল আর্টিস্ট ফোরাম, ফেডারেশন, ইম্পা-সহ সমস্ত সংগঠন। তাদের বক্তব্য ছিল, সুরক্ষাবিধি এখনও নির্ধারিত হয়নি। তা ছাড়া আড়াই মাস বন্ধ থাকা শুটিং ফ্লোরও অপরিষ্কার হয়ে পড়ে রয়েছে। সে সবের ব্যবস্থা না করে কী ভাবেই বা শুরু হবে শুটিং?

পরিচালক রাজ চক্রবর্তী যেমন রবিবার জানিয়ে দিলেন, “সোমবার থেকে শুটিং শুরু করা আমার পক্ষে একেবারেই অসম্ভব। আগে সবার সঙ্গে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে সুরক্ষাবিধি তৈরি হোক, সবার নিরাপত্তা সুনিশ্চিত হোক, তার পরেই আবার কাজে ফিরতে পারব আমি এবং আমার টিম।”

কথা ছিল, মঙ্গলবার, ২ জুন আর্টিস্ট ফোরাম, ফেডারেশন, ইম্পা, প্রোডিউসারস গিল্ড প্রত্যেকটি সংগঠন একটি বৈঠকে সুরক্ষাবিধি মেনে শুটিং চালু নিয়ে আলাদা আলাদা ভাবে নিজেদের মতামত জানাবে। সেই বৈঠকে যা সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে তাতে সকলে একমত হলে ৪ জুন, বৃহস্পতিবার মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাসের কাছে তা পেশ করা হবে। এরপর সেই সুপারিশ যাবে সরকারের কাছে। সেখান থেকে সবুজ সঙ্কেত মিললেই শুরু হবে শুটিং। কিন্তু সরকারের তরফে সবুজ সংকেত আগেই পেয়ে যাওয়ায় কিছুটা অপ্রস্তুত ইন্ডাস্ট্রি। আর্টিস্ট ফোরামের একটি সূত্রে যেমন এ দিন বলা হয়েছে, এরকম একটি নির্দেশ যে আসতে চলেছে সে বিষয়ে বিন্দুমাত্র তাঁদের বিন্দুমাত্র ধারণা ছিল না।

এ দিকে সিনেমার ক্ষেত্রে খানিক সময় নেওয়া গেলেও ধারাবাহিকের শুটিং যে খুব তাড়াতাড়ি শুরু করা দরকার, সে বিষয়ে সকলের গলাতেই একই সুর। সোমবার সরকার থেকে নির্দেশিকায় বলা হয়েছে, শুটিং ইউনিটে একই সঙ্গে ৩৫ জনের বেশি মানুষকে নিয়ে কাজ করা যাবে না। সেই ৩৫ জনের মধ্যে কতজন টেকনিশয়ান এবং কতজন অভিনেতা সে বিষয়ে সরকারের তরফে কিছু জানান হয়নি। সমস্যার এখানেই শেষ নয়। কোনও ধারবাহিকের শুটিং ইউনিটে কমপক্ষে ৬০/৭০ জন লোকবল প্রয়োজন। এত কম সংখ্যক মানুষকে নিয়ে কাজ করা যে বেশ অসুবিধের সে কথা মেনে নিচ্ছে ইন্ডাস্ট্রি। কিন্তু উপায়ও তো নেই। ৩৫ জন লোক নিয়ে কাজ করার নির্দেশ মানতে গিয়ে কাদেরকে ছাঁটা হবে, নাকি ঘুরিয়ে ফিরিয়ে (রোটেশন পদ্ধতি) ডাকা হবে তা-ও এখনও পরিষ্কার নয়।

সমস্যার এখানেই শেষ নয়। টেকনিশিয়ান-জুনিয়ার আর্টিস্টদের অনেকেরই নিজস্ব গাড়ি নেই। ট্রেন এবং মেট্রো চালু না হওয়ায় যাতায়াতের ক্ষেত্রেও অসুবিধা হবে একাংশের, ভরসা প্রোডাকশন হাউজের গাড়ি। সে ক্ষেত্রেও এক গাড়িতে আগের মতো অনেককে নিয়ে যাতায়াত করার ক্ষেত্রে সংক্রমণের ভয় থেকেই যাচ্ছে।

অভিনেতা-অভিনেত্রীরা কী ভাবছেন?

৪ জুনের মিটিংয়ের পর যদি সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, ৫ তারিখ থেকেই শুরু হয় শুটিং তা হলে কি ফ্লোরে যাবেন তাঁরা? “করুণাময়ী রাণী রাসমণী” ধারাবাহিকের মুখ্য ভূমিকায় রয়েছেন দিতিপ্রিয়া। তাঁর কথায়, “শুটিং শুরু হলে সবার মতো আমাকেও ফ্লোরে যেতে হবে। ভয় যে লাগছে না তা নয়। কিন্তু কিছু করার নেই। শো মাস্ট গো অন। এমনিতেই এত দিন কাজ বন্ধ থাকায় অনেক ক্ষতি হয়েছে ইন্ডাস্ট্রির। এতগুলো মানুষ জড়িয়ে থাকেন এক একটি ধারাবাহিকের সঙ্গে। চেষ্টা করব যতটা সম্ভব সুরক্ষাবিধি মেনে চলার।”

একই সুর শোনা গেল ‘নকশিকাঁথা’ ধারাবাহিকের প্রধান চরিত্র অভিনেত্রী মানালি দে’র গলাতেও। “করোনার হানা কবে যে শেষ হবে তা কেউ আমরা জানি না। যদি দু’বছর লেগে যায়, তা হলে সে ক্ষেত্রে দু’বছর কাজ না করে বসে থাকব এমনটা তো হতে পারে না। তাই যে মুহূর্তে আমাদের কাছে শুটিং ফ্লোরে আসার নির্দেশ আসবে, অন্য কেউ কী করবেন আমি জানি না। তবে আমি যাব।”

সংক্রমণের ভয়? “হ্যাঁ, সেটা তো উড়িয়ে দিতে পারি না। তবে প্রযোজনা সংস্থা নিশ্চয়ই এ নিয়ে ভাবনাচিন্তা করছে। নিজেও সচেতন থাকব।”

খুব শীঘ্রই ফিরতে চলেছে এই চেনা চিত্র

এ বিষয়ে প্রযোজকরা এবং বিভিন্ন চ্যানেলের কর্মকর্তারা কী বলছেন? কী ভাবে এবং কবে থেকে নিজেদের ধারাবাহিক, সিনেমার শুটিং শুরু করতে পারবেন তাঁরা?

জি বাংলার ক্লাস্টার হেড (পূর্ব) সম্রাট ঘোষের কথায়, “যে মুহূর্তে সুরক্ষাবিধি নিয়ে যাবতীয় গাইডলাইন আমাদের কাছে এসে পৌঁছবে সেই মুহূর্তেই আমরা শুটিং শুরু করব। টেকনিশিয়ান, কলাকুশলীদের যাবতীয় সুরক্ষার কথা মাথায় রেখেই আবারও শুটিং চালু করতে আমরা প্রস্তুত।

এ দিকে আকাশ আট চ্যানেলের তরফে জানান হয়েছে, “৩৫ জন মানুষকে নিয়ে একটি মেগা সিরিয়াল শুট করা খুবই অসুবিধের আমাদের পক্ষে। এই লোকবল নিয়ে কীভাবে শুটিং করব সে ব্যাপারে এখনই চ্যানেলের পক্ষ থেকে কিছু নির্ধারণ করা হয়নি। তবে একবার শুটিং শুরু হলে, ফ্লোরে যাতে সামাজিক দূরত্ব এবং যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি বজায় রাখার চেষ্টা করব আমরা।”

এসভিএফ প্রযোজনা সংস্থার কর্ণধার মহেন্দ্র সোনি বলেন, “ আমরা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছি। কীভাব সুরক্ষাবিধি মেনে শুট করা যায় সে বিষয়ে গাইডলাইন বানানো হচ্ছে। বিভিন্ন স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গেও কথাবার্তা চলছ। আমরা আশা করছি আগামী সপ্তাহের মধ্যে শুটিং শুরু করতে পারব। তবে ইতিমধ্যেই বিরাট অঙ্কের টাকা ক্ষতি হয়ে গিয়েছে। তাই প্রোডাকশনের খরচ খানিক কমিয়ে কীভাবে শুটিং চালানো যায়, সে বিষয়ে কথাবার্তা চলছে।”

তবে মাত্র ৩৫ জনকে নিয়ে কাজ করতে যে অসুবিধে হতে চলেছে সে কথার রেশ টেনেই তিনি বলেন, “ধারাবাহিক বা ওয়েব সিরিজের ক্ষেত্রে খুব একটা অসুবিধে না হলেও মাত্র ৩৫ জনকে নিয়ে সিনেমার শুটিং করা বেশ কষ্টকর। সে জন্যই আপাতত দেব অভিনীত ‘গোলন্দাজ’ ছবির শুটিং শুরু করতে পারব না আমরা।”

এ দিকে লেখক, চিত্রনাট্যকার লীনা গঙ্গোপাধ্যায় শনিবার রাতেই জানিয়ে দিয়েছেন, “শুটিং সোমবার থেকে শুরু করা অসম্ভব। আলোচনা চলছে। ২ তারিখ এবং ৪ তারিখের মিটিংয়ের পর কবে শুটিং শুরু হবে সে ব্যাপারে নিশ্চিত বলা যাবে। তবে যতদূর মনে হচ্ছে শুটিং শুরু হতে হতে জুনের ৭ বা ৮ তারিখ।”

দিন কয়েক আগে, মে মাসের মাঝামাঝি সংক্রমণহীন এলাকায় টেলিভিশন শুটিং ও তাঁর সঙ্গে যুক্ত কাজকর্মের অনুমতি দিয়েছিল রাজ্য সরকার। সে সময় শুটিং শুরু করা নিয়ে পরিচালক শিবপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় বলেছিলেন, “আমাদের অনেকগুলো ছবি তৈরি আছে। ‘ব্রহ্মা জানেন গোপন কম্মটি’ মুক্তি পাবে আবার। ‘বেলাশুরু’ আর ‘লক্ষ্মী ছেলে’ও তৈরি। এখনই শুটের প্রয়োজন নেই আমাদের। এমনিতেই গরমে আমি শুট করি না। টপ সানে শুট হয় না। সব কিছু দেখি আগে। এমন হয়ত হল, সাত দিনে সংক্রমণ বেশি ছড়িয়ে গেল, তখন আবার কাজ বন্ধ। আমরা একটু সময় নিতে চাই”।

অসুবিধা রয়েছে, রয়েছে ভয়ও। কিন্তু তা সত্বেও কাজে ফিরতে চাইছেন টেকনিশিয়ানরাও। পেটের দায়। ‘শ্রীময়ী’ ধারাবাহিকের হেয়ার স্টাইলিস্ট মুনমুন মারিক যেমন বললেন, “ভয় যে হচ্ছে না তা কী করে বলি। কিন্তু ১৭ মার্চ শুটিং বন্ধ হওয়ার পর এক টাকাও আয় হয়নি। আমাদের তো ‘নো ওয়ার্ক নো পে’। তাই যে দিন থেকে ডাকবে, সে দিনই যাব।” হেয়ারড্রেসার হেমা মুন্সির গলাতেও একই সুর।

ছাড়পত্র পাওয়া গেল। এ বার সুরক্ষাবিধি মেনে দ্রুত কাজে ফিরতে চাইছে টলিপাড়া।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy