Advertisement
০৩ নভেম্বর ২০২৪

‘ফেনোমেনাল হিট একবারই হয়’

আপাতত মুম্বইয়ে প্রদীপ সরকারের অ্যাড জিঙ্গলসে কাজ করছেন লগ্নজিতা। তবে যত দিন না বড় কাজ আসছে, মনের মধ্যে তো চরম অনিশ্চয়তা ঘুরপাক খায়ই।

লগ্নজিতা

লগ্নজিতা

মধুমন্তী পৈত চৌধুরী
শেষ আপডেট: ০৭ ডিসেম্বর ২০১৭ ০০:০৮
Share: Save:

উত্তুরে হাওয়া দরজায় কড়া নাড়লে, বসন্ত কি পিছিয়ে থাকতে পারে?

তাঁর কণ্ঠের জাদুছোঁয়ায় বাঙালি মননে বসন্তের পরশ লাগিয়েছিলেন গায়িকা লগ্নজিতা চক্রবর্তী। কলকাতার মেয়ে এখন মুম্বইবাসী। মুম্বইয়ে কত দিন? ‘‘এই আট-ন’মাস হল,’’ ফোনের ও পারে ধরা দিলেন গায়িকা। কলকাতা কতটা মিস করছেন? ‘‘সাধারণত মু্ম্বই এলে মানুষের ভালই লাগে। তবে আমি এত কলকাতার ভক্ত যে, আমার পক্ষে বিষয়টা বেশ কঠিন।’’

আপাতত মুম্বইয়ে প্রদীপ সরকারের অ্যাড জিঙ্গলসে কাজ করছেন লগ্নজিতা। তবে যত দিন না বড় কাজ আসছে, মনের মধ্যে তো চরম অনিশ্চয়তা ঘুরপাক খায়ই। উত্তরে লগ্নজিতা বললেন, ‘‘সে আর বলতে। আমি এখানে একাই থাকি। তাই নিজেই নিজেকে বেশি মোটিভেট করি। কয়েকটা দিন এমন আসে, যখন মনে হয় কলকাতায় ফিরে যাই। আবার সকালে উঠে নিজেকে বোঝাই। কলকাতায় সিনিয়রদের ফোন করি। এখানে যাঁরা অভিজ্ঞ আছেন, তাঁদের সঙ্গেও কথা বলি। সকলেই বলে, মুম্বইয়ে সময় লাগে। ধৈর্য ধরতে হবে।’’ মুম্বইয়ের অভিজ্ঞতা সত্যি সত্যিই লগ্নজিতার ধৈর্য বাড়িয়ে দিয়েছে। বললেন, ‘‘কলকাতায় কাজের ব্যস্ততা খুব বেশি ছিল। আর এখানে কাজের জন্য অপেক্ষা করা, বাড়িতে বসে থাকা সত্যিই একটা স্ট্রাগল। আমি ইনট্রোস্পেকটিভও। সব সময় ভাবি এর পর কী হবে! তাই কলকাতায় লগ্নজিতা যদি মানুষ হিসেবে ওয়ান পয়েন্ট জিরো হয়, এখন টু পয়েন্ট জিরো হয়ে গিয়েছি।’’

লগ্নজিতার ‘বসন্ত এসে গেছে’ যতটা জনপ্রিয় হয়েছিল, অন্য কোনও গান কিন্তু সেই খ্যাতি পায়নি। জবাবে বললেন, ‘‘ওই গানটা ফেনোমেনাল হিট ছিল। সেটা তো এক বারই হয়। তবে ‘বিবাহ ডায়েরিজ’-র ‘এ ভাবে গল্প হোক’ বেশ পপুলার হয়েছিল। ‘প্রজাপতি বিস্কুট’-এর টাইটেল সং-ও মানুষ শুনেছেন। ‘রাজকাহিনী’ ছবিতে একটি কীর্তন গেয়েছিলাম। ওই ধরনের গান সে ভাবে জনপ্রিয় হয় না।’’ আর একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ও তুলে ধরলেন লগ্নজিতা। ‘‘আমি লিপসিঙ্ক করেছি মাত্র একটি গানে। কিন্তু লিপসিঙ্ক বিষয়টি তো এখন ছবি থেকে হারিয়ে যাচ্ছে। তা হলে ছবির গান হবে কী করে?’’ এই নিয়ে কি গায়িকার মনে আক্ষেপ? বললেন, ‘‘আফসোস করি না।’’ সত্রাজিৎ সেনের ‘মাইকেল’ ছবিতে লগ্নজিতার কণ্ঠ শোনা যাবে। এ ছাড়া হাতে রয়েছে আরও কয়েকটি বাংলা ছবি। কাজের জন্য কলকাতা-মুম্বই ট্র্যাভেল তাঁর লেগেই থাকে।

গত বছর আমেরিকার সান ফ্রান্সিসকোয় পারফর্ম করেছিলেন লগ্নজিতা। তাঁর গান শুনতে এসেছিলেন সত্তরোর্ধ্ব এক দম্পতি। লগ্নজিতার সঙ্গে দেখা করার খুব ইচ্ছে ছিল তাঁদের। কিন্তু সেটা সম্ভব হয়নি। এ বছর সান জোসেতে গান গেয়েছেন তিনি। খোঁজ খবর নিয়ে সেই দম্পতি এ বার সেখানেও হাজির। লগ্নজিতার সঙ্গে দেখা করে প্রচুর উপহার আর একটি চিঠি দেন তাঁরা। বাড়ির সফ্‌ট বোর্ডে সেই চিঠি লাগিয়ে রেখেছেন লগ্নজিতা। গায়িকার লেখালেখির প্রতিও বিশেষ ঝোঁক। স্কুলের দৌলতেই সেই অভ্যেস। ‘‘এখন সে ভাবে হয় না। তবে প্রিয়জনদের ইমেল পাঠালে অদরকারি দশ-বারো লাইন লিখে দিই,’’ বললেন তিনি।

লং ডিসট্যান্স ম্যারেজে অসুবিধে হয় না? প্রশ্ন শুনেই তাঁর প্রথম প্রতিক্রিয়া, ‘‘যাঁরা এক বাড়িতে থাকেন, তাঁদেরও অসুবিধে হতে পারে।’’ তার পর অবশ্য খোলসা করলেন, ‘‘ন’বছর প্রেমের পর আমি আর সাত্যকি বিয়ে করি। আমরা কিন্তু বরাবরই লং ডিসট্যান্স সম্পর্কেই ছিলাম। এখন মুম্বইয়ের কাছেই থাকে সাত্যকি। অল্টারনেট উইকএন্ডে দেখাও হয় আমাদের। অসুবিধে হয় তো বটেই। খরচার দিকটাও আছে। অনেক সময় স্পেশ্যাল দিনেও আমরা একসঙ্গে থাকি না। এই নিয়ে আমরা কথাও বলেছি। তবে এই মুহূর্তে প্রফেশনের খাতিরে একসঙ্গে থাকা সম্ভব নয়।’’

খাদ্যরসিক লগ্নজিতা কোলাবা, আন্ধেরিতেও খাওয়ার ভাল জায়গা আবিষ্কার করেছেন। সপ্তাহান্তে বাড়িতে বন্ধুদের গানবাজনার আসরও বসে। তবে তাঁর সাধের স্কুটি কলকাতাতেই সযত্নে গচ্ছিত। যেমন কিনা ঘরছাড়া লগ্নজিতার মনের খানিকটাও পড়ে রয়েছে এই শহরের অলিগলিতে!

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE