কপালে আবিরের আলপনা। বৈষ্ণবদের মতো সযত্নে তিলক কেটেছেন। গৌরবর্ণে ঘিয়ে রঙের সিল্কের পাঞ্জাবির আলাদাই জৌলুস। গলায় উত্তরীয়। ঠোঁটে মৃদু হাসি। দোলের সকালে এটাই দিব্যজ্যোতি দত্ত। যিশু সেনগুপ্ত, পরমব্রত চট্টোপাধ্যায়ের মতো তারকা অভিনেতাদের পেরিয়ে সৃজিত মুখোপাধ্যায়-রানা সরকারের ‘লহ গৌরাঙ্গের নাম রে’ ছবির ‘শ্রীচৈতন্যদেব’। পরিচয়পর্বের দিনে তাঁর এই সাজ অনুরাগীদের মনে আলোড়ন তৈরি করেছে।
কেন তাঁকে বেছে নিলেন পরিচালক-প্রযোজক? ছোট পর্দায় যদিও দিব্যজ্যোতি যথেষ্ট পরিচিত নাম। এই ছবি দিয়ে বড় পর্দায় তিনি পা রাখতে চলেছেন। শুরুতেই ঐতিহাসিক চরিত্রে অভিনয়। অভিনেতার পক্ষে বিষয়টি কি চাপের হয়ে দাঁড়াল? চরিত্রের উপযুক্ত হয়ে উঠতে তিনিই বা কী ভাবে নিজেকে প্রস্তুত করছেন?
আনন্দবাজার ডট কম প্রশ্ন নিয়ে হাজির দিব্যজ্যোতির কাছে। অভিনেতা এই মুহূর্তে ব্যস্ত স্টার জলসার জনপ্রিয় ধারাবাহিক ‘অনুরাগের ছোঁয়া’ নিয়ে। বছর তিনেক তিনি এই ধারাবাহিকের নায়ক। তা হলে কি জুন মাসের মধ্যে ধারাবাহিকের শুটিং শেষ হতে চলেছে? কৌতূহল প্রকাশ করতেই দিব্যজ্যোতি বললেন, “আমার কাছে তেমন কোনও খবর নেই।” একসঙ্গে বড় পর্দা, ছোট পর্দা সামলাতে পারবেন? দুটো ভিন্ন ধারার চরিত্র। দুটো ভিন্ন ধারার কাজ এ ক্ষেত্রে বাধা হয়ে দাঁড়াবে না তো? অভিনেতার ঝুলিতেও যুক্তি রয়েছে। তাঁর বক্তব্য, “চ্যালেঞ্জিং কাজ করতেই বেশি ভালবাসি। সমান্তরাল ভাবে দুই ধারার দু’টি চরিত্রে একসঙ্গে অভিনয় যে কোনও অভিনেতার কাছেই কাম্য। আমি নিজেকে উজাড় করে দেব, যাতে কাজে কোনও ত্রুটি না থাকে।”
আর যদি যিশুর মতো গায়ে তকমা এঁটে যায়! তা নিয়ে বিন্দুমাত্র ভীত নন অভিনেতা। জানিয়েছেন, সুযোগ পেলেই যিশু অভিনীত ‘মহাপ্রভু’ ধারাবাহিক দেখেন। গায়ে কাঁটা দেয় তাঁর। ইতিমধ্যেই চরিত্রের উপযুক্ত হয়ে উঠতে চৈতন্যদেবকে নিয়ে পড়াশোনা শুরু করেছেন অভিনেতা। শুরু করেছেন বাড়তি শরীরচর্চাও। চরিত্রের খাতিরে তাঁকে ওজন কমাতে হবে। ইতিহাস বলছে, ‘রাধাভাব’ থাকার কারণে শ্রীচৈতন্যদেবের চেহারায় নারীসুলভ পেলবতা, লালিত্য বেশি ছিল। ছিপছিপে গড়নের ছিলেন তিনি। ইতিমধ্যেই সপ্তাহে দু’দিন নিরামিষ খাওয়া শুরু করেছেন। শুটিং শুরুর আগে চেষ্টা করবেন পুরোপুরি নিরামিষাশী হয়ে যেতে।
প্রথম যখন শুনলেন, সৃজিতের ছবিতে তিনি নির্বাচিত হয়েছেন, নিজের কানকে বিশ্বাস করতে পারছিলেন না দিব্যজ্যোতি। বললেন, “সৃজিতস্যর ফোন করার প্রথম দু’সেকেন্ড কিছুই শুনতে পাচ্ছিলাম না। তার পর নিজেকে সামলে নিয়ে কথা বলি। আমিও শুনেছি যিশু সেনগুপ্ত, পরমব্রত চট্টোপাধ্যায়কে আমার আগে ভেবেছিলেন পরিচালক। শেষে আমি সুযোগ পেলাম। আমার জীবনের বড় পাওনা।” বাড়ি এবং ধারাবাহিকের সেটে খবর ছড়াতেই প্রত্যেকে তাঁকে আন্তরিক অভিনন্দন জানিয়েছেন।

সৃজিত তাঁর ‘গৌরাঙ্গ’ দিব্যজ্যোতির সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিচ্ছেন। ছবি: সংগৃহীত।
অভিনেতার পাশাপাশি আনন্দবাজার ডট কম কথা বলেছিল প্রযোজক রানা সরকারের সঙ্গেও। ২০২১-এর ঘোষিত ছবির শুটিং ২০২৫-এ হচ্ছে! বিষয়টি বাস্তবায়িত হতে অনেকটা সময় লেগে গেল? অস্বীকার করেননি প্রযোজক। তাঁর মতে, ঈশ্বর চেয়েছেন বলেই এ বছর শুটিং শুরু হল। একটু বেশি সময় লেগে গেল। দিব্যজ্যোতিকে বাছার কারণ জানাতে গিয়ে প্রযোজক ‘শ্রীশ্রীচৈতন্য ভাগবত’-এর কয়েকটি উক্তি ধার নিয়েছেন। বৃন্দাবন দাস রচিত এই গ্রন্থে লেখা আছে, ‘আজানুলম্বিত-ভুজৌ কনকাবদাতৌ, সঙ্কীর্ত্তনৈক-পিতরৌ কমলায়তাক্ষৌ’। অর্থাৎ, গৌরাঙ্গের গায়ের রং সোনার মতো, জানু পর্যন্ত লম্বা বাহু, পদ্মের পাপড়ির মতো চোখ। এই বর্ণনার সঙ্গে দিব্যজ্যোতির চেহারা অনেকটাই মিলে যায়। রানার আরও দাবি, “ছবির শুটিং পিছিয়ে যাওয়ার ফলে আগের অভিনেতাদের বয়স বেড়েছে। ছবিতে শ্রীচৈতন্যের ২৪ থেকে ৪৮ বছর বয়স পর্যন্ত দেখানো হবে। যিশু বা পরম ৪৮ বছর বয়সের উপযুক্ত, ২৪ বছরের জন্য নয়। দিব্যজ্যোতি এখন ২৪। প্রয়োজনে রূপটান দিয়ে ওর বয়স বাড়ানো যাবে।”
আরও পড়ুন:
দোলের দিন আনুষ্ঠানিক ঘোষণার সময় দিব্যজ্যোতির আবিররাঙা মুখে অনুরাগীরা যিশুর ছায়া দেখেছেন। বড় পর্দাতেও নিজেকে প্রমাণ করতে পারবেন তো তিনি?
প্রশ্নের জবাবে প্রযোজকের মত, “ছোট পর্দায় দিব্যজ্যোতি প্রমাণিত। একাধিক ধারাবাহিকের নায়ক হিসেবে যথেষ্ট জনপ্রিয়। আর সৃজিত যখন দায়িত্ব নিয়েছেন তখন এ বিষয়ে আর মাথা ঘামানোর প্রয়োজন বোধ করছি না।” জুন মাস থেকে কলকাতা, পুরী, নবদ্বীপ মিলিয়ে ছবির শুটিং শুরু হবে। শোনা যাচ্ছে, অতীত-বর্তমান মিলিয়ে তিনটি পর্যায়ে শ্রীচৈতন্যের জীবন দেখাবেন পরিচালক। তা-ই কি? প্রশ্ন ছিল রানার কাছে। এখনই এ বিষয়ে কিছু বলতে রাজি নন তিনি। জানিয়েছেন, এর উত্তর পর্দার জন্য বরং তোলা থাক।