বিমলা-সন্দীপ-নিখিলেশ দাঁড়িয়ে আছে এখনকার ভারতে। যে দেশ সাম্প্রতিক সময়ে দেখেছে ধর্মের দোহাই দিয়ে গণপিটুনি, সাংবাদিক গৌরী লঙ্কেশের হত্যার মতো নির্মম ঘটনা। যে দেশে ‘জয় শ্রীরাম’ শব্দবন্ধের ভিন্ন তাৎপর্য দাঁড়িয়েছে এখন। নষ্ট হতে বসা একটা সময়ের দলিলের সামনে দাঁড়িয়ে রয়েছে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের তিন চরিত্র। সত্যজিৎ রায় তাদের এক রকম করে ইন্টারপ্রেট করেছিলেন। আর ২০১৯-এ করলেন অপর্ণা সেন। সেই অর্থে আজকের ছবি হয়ে উঠেছে ‘ঘরে বাইরে আজ’। তবে সব উপকরণ মজুত থাকলেও গল্প বলার ধরন হতে পারত আরও মনোগ্রাহী।
বিমলা এখানে বৃন্দা (তুহিনা)। সে এখানেও সন্দীপের (যিশু) ‘মক্ষীরানি’। আজকের সন্দীপ তার ‘মক্ষী’কে ডাকে ‘বি’ বলে। নিখিলেশ (অনির্বাণ) ডাকসাইটে আদর্শবাদী সাংবাদিক, স্বপ্ন দেখে সেকুলার ভারতের। বৃন্দা নামী প্রকাশনা সংস্থার প্রুফ রিডার। সন্দীপ বামপন্থা, উগ্র বামপন্থার পরে এখন ঝুঁকেছে উগ্র হিন্দুত্ববাদে। যথারীতি তার জালে এক সময়ে জড়িয়ে পড়ে বৃন্দা। শিক্ষিত, যুক্তিবাদী বৃন্দা চার্মিং, বাগ্মী সন্দীপের প্রেমে পড়ে ফর্মুলা মেনেই। যদিও আজকের সন্দীপের বক্তৃতায় যুক্তিহীন জাতীয়তাবাদের ঝাঁজ যেন একটু বেশিই। তার ছাত্র অমূল্য (ঋতব্রত) রোমিলা থাপার, ইরফান হাবিবের লেখা পড়ে তাঁদের ‘শত্রুপক্ষ’ মনে করে। শেষে তার ভ্রাতৃসম বন্ধুকে সংখ্যালঘু হওয়ার অপরাধে যখন প্রাণ দিতে হয়, তখন চেতনা ফেরে সেই তরুণ তুর্কির।
ছবির শেষে রাষ্ট্রযন্ত্রের লাঠি, ইট-পাথরের মুখে মোমবাতি মিছিলে ‘আমরা করব জয়’ বা ‘ইন্টারন্যাশনাল’-এর সুর দিয়ে টিপিক্যাল প্রতিবাদের ভাষা তৈরি করতে চেষ্টা করেছেন পরিচালক। ক্লাইম্যাক্সে দুষ্টের দমনও। ড্রয়িং রুমের বাইরে বেরিয়ে আসল দেশটাকে চেনার কথাও বলা হয়েছে। কিন্তু সত্যিই কি সেটা চেনানো গিয়েছে? পরতে পরতে বৈভবের ছোঁয়া যে ছবির নির্মাণে, সেখানে ভূমিপুত্রদের জন্য কান্নার মোচড় ভিতরে এসে ধাক্কা দেয় না। এক থালা ভাত শুধু নুন দিয়ে খাওয়ার যে উপলব্ধি, তা ফুটে ওঠে না চরিত্রদের চোখেমুখে। শুধু সংলাপসর্বস্ব হয়েই থেকে যায়।
ফিল্ম: ঘরে বাইরে আজ
পরিচালনা: অপর্ণা সেন
অভিনয়: যিশু সেনগুপ্ত,
অনির্বাণ ভট্টাচার্য, তুহিনা দাস
৫.৫/১০
যিশু কিংবা অনির্বাণ, দু’জনেই দক্ষ অভিনেতা। তাই তাঁরা যে আজকের সন্দীপ আর নিখিলেশকে যথার্থ ভাবে পর্দায় তুলে ধরবেন, তা প্রত্যাশিতই ছিল। বিমলার চরিত্রে তুহিনা যে সুযোগ পেয়েছেন, তা তিনি পূর্ণমাত্রায় কাজে লাগানোর চেষ্টা করেছেন। সত্যজিতের ‘ঘরে বাইরে’তে বিমলার সধবা চেহারার বৈধব্যে পরিবর্তন যে এফেক্ট তৈরি করেছিল, তার সঙ্গে সাযুজ্য রেখে এখানেও সব হারানো বৃন্দার দুনিয়াকে সাদা-কালো করে দেওয়া হয়েছে শেষে। তুহিনার শূন্য দৃষ্টি সেখানে বাঙ্ময়। তবে সন্দীপ ও তার প্রেমপর্ব আরও সংক্ষিপ্ত করাই যেত।
অনেক দিন পর আবারও ফিরেছে অস্থির সময়। তার দমকায় নষ্ট হয়ে যায় আজকের বিমলা-নিখিলেশের সাজানো নীড়। সন্দীপরাও প্রবল প্রতাপে ঘুরে বেড়াচ্ছে চারপাশে। তাই পরিণতিটা আরও বাস্তবোচিত হতেই পারত। এবং আরও একটু মাটির কাছাকাছি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy