Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
Celebrity Interview

বুম্বাদা আমাকে নির্বাচন করে থাকলে সেটা সম্পূর্ণ আমার যোগ্যতায়, অন্য কারণে নয়: রাহুল

কাজ চেয়ে কারও সঙ্গে যোগাযোগ করেননি রাহুল। বরাবর পরিশ্রমে বিশ্বাসী। ভাগ্যের উপরে ভরসা করেন। জানেন, ঠিক সময়ে ঠিক জিনিসটাই তাঁর সঙ্গে ঘটবে।

Image of Rahul Dev Bose

রাহুল দেব বোস। ছবি: সংগৃহীত।

উপালি মুখোপাধ্যায়
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৪ জুলাই ২০২৪ ১৩:০২
Share: Save:

প্রেমিকা দেবাদৃতা বসু তাঁর সৌন্দর্যে মুগ্ধ। অনুরাগীরাও তাই-ই। সৃজিত মুখোপাধ্যায় বলেছিলেন, বাংলায় সুপুরুষ খলনায়কের অভাব। রাহুল দেব বোস সেই ফাঁক অনায়াসে ভরাট করতে পারবেন। অভিনেতা কি শুধুই ‘সুদর্শন’ তকমাধারী হয়ে রয়ে গেলেন? আনন্দবাজার অনলাইনের সঙ্গে একান্ত আলাপচারিতায় অতীত-বর্তমান ছুঁয়ে ভবিষ্যৎ নিয়ে কথা বললেন রাহুল।

প্রশ্ন: কেমন আছেন?

রাহুল: ভালই আছি। মাঝে বড্ড গরম পড়েছিল। এখন বৃষ্টির দৌলতে কিছুটা স্বস্তি মিলেছে (হাসি)।

প্রশ্ন: কাজের ক্ষেত্রেও কি একই রকম স্বস্তিতে রাহুল?

রাহুল: সদ্য ছোট পর্দার কাজ শেষ হল। ‘কার কাছে কই মনের কথা’ ধারাবাহিকে পুলিশ অফিসারের চরিত্রে অভিনয় করলাম। দুই মুখ্য চরিত্র ‘শিমুল’ আর ‘পরাগ’-এর সঙ্গে সমান্তরাল ভাবেই আমার গল্প চলছিল। ‘নষ্টনীড় ২’ সিরিজ়ের শুটিং শেষ করলাম। এই সিরিজ়ে নায়িকা সন্দীপ্তা সেনের দেওর আমি। বড় পর্দায় আবারও ফেরার ইচ্ছে, কথাবার্তা চলছে। দেখা যাক।

প্রশ্ন: এই কেরিয়ারগ্রাফে আপনি খুশি?

রাহুল: (একটু থেমে) আমি কর্মে বিশ্বাসী। এ-ও বিশ্বাস করি, আমাকে চেষ্টা করে যেতে হবে। ফলাফল উপরওয়ালার হাতে। আমার ফাঁকি দেওয়া চলবে না। তা ছাড়া, আমি খুব ছোট ছোট জিনিস থেকে আনন্দ খুঁজে নিই। কোনও দিন ভেবেছিলাম, অভিনয়জগতে আসব? ৭-৮ বছর বিনোদন দুনিয়ায় টিকে যাব? লোকে রাস্তায় দেখলে চিনতে পারবে? দর্শক আমাকে তাদের পছন্দের চরিত্রে দেখতে চেয়ে অনুরোধ জানাবেন? আমি এত পাব কোনও দিন ভাবিনি। এগুলো আমার মন ভাল করে দেয়।

প্রশ্ন: এ তো তত্ত্বকথা...

রাহুল: একেবারেই না। দেখুন, অভিনেতা হিসেবে আমার একটা দায়িত্ব আছে। দর্শকদের মনোরঞ্জন করে তাঁদের মন ছুঁয়ে যাওয়া। তার জন্য শেষ বিন্দু পর্যন্ত নিজেকে নিংড়ে দিতে হবে। আমি সারা ক্ষণ সেই চেষ্টাই করছি। আর পুরুষ অভিনেতাদের পেশাজীবনে জনপ্রিয়তা আসে কাজ শুরুর দশ বছর পরে। অবশ্যই ব্যতিক্রম আছে। টলিউডের হাতেগোনা কয়েক জন অভিনেতা শুরু থেকেই সফল। আমার এখনও দশ বছর হয়নি। তাই সাফল্যের চুড়োয় পৌঁছনোর তাড়া নেই। এটুকু বলতে পারি, যেখানে যা কাজ করেছি দর্শকের ভাল লেগেছে। যেখানে যাই, লোকজন চিনতে পারেন। তখন মনে হয়, কোথাও তো ছাপ ফেলতে পেরেছি। পরিচালকেরাও আমার কাজে সন্তুষ্ট। বাকিটা ভাগ্যের হাতে ছেড়ে দিয়েছি। যে দিন ভাগ্য সহায় হবে, সে দিন আর পিছনে ফিরে তাকাতে হবে না।

Image of Rahul Dev Bose and Debadrita Basu

রাহুল ও দেবাদৃতা। ছবি: সংগৃহীত।

প্রশ্ন: শুরুতে চিত্রনাট্যকার। পরিচালক সৃজিত মুখোপাধ্যায়ের সহকারী হিসেবেও কাজ করেছিলেন। তিনিই আপনার অভিনয়ে আসার অনুপ্রেরণা। সৃজিত এখনও আপনাকে পরামর্শ দেন?

রাহুল: হ্যাঁ, দেন। ওঁর ছবি দিয়ে অভিনয়ে হাতেখড়ি। এখনও বছরে সৃজিতদার একটা ছবিতে অভিনয় করি-ই। যেমন, ‘পদাতিক’-এ একটা বিশেষ চরিত্রে আমাকে দেখতে পাবেন। সৃজিতদা কিন্তু আমার অভিনয়ের ধারাবাহিকতায় খুশি। বলেছেন, ‘‘লেগে থাক। চালিয়ে যা। পরিশ্রম কর। তুই পারবিই।’’ এর চেয়ে বেশি আর কী বলবেন?

প্রশ্ন: তার পরেও সৃজিতের ছবির নায়ক কিন্তু আপনি নন! কিংবা খলনায়ক। সৃজিত নতুন অভিনেতাকে নায়ক করে ‘এক্স=প্রেম’ বানিয়ে ফেলেন...

রাহুল: এক বার আমার সঙ্গে একটি ছবির কথা হয়েছিল। কোনও কারণে সেটি হয়নি। তার পরেও জানি, আমি ওঁর মনের কোথাও না কোথাও রয়েই গিয়েছি। যাঁরা সৃজিত মুখোপাধ্যায়কে চেনেন তাঁরা এটাও জানেন, চরিত্রে মানালে তবেই উনি কাউকে তাঁর ছবির জন্য বেছে নেন। পরিচিত লোকজনদের জোর করে চরিত্র দিয়ে দেবেন— এমন ভাবনায় সৃজিতদা বিশ্বাসী নন।

প্রশ্ন: কখনও মনে হয়েছে, পরিচালনায় থাকলেই ভাল হত?

রাহুল: কখনও মনে হয়নি। কারণ, অভিনয় আমার নেশা। পর্দায় আসার আগে মঞ্চে অভিনয় করতাম। তখনও অভিনয় করতাম ভালবাসা থেকে। পর্দায় আসার পরেও ভালবাসা থেকে কাজ করছি। বরং, এক এক সময় মনে হয়, গত ৭-৮ বছর ধরে আমি যে জায়গায়, সেই জায়গায় রোজ হাজার হাজার মানুষ পৌঁছনোর চেষ্টা করে যাচ্ছেন। তাঁদের সকলে সফল হচ্ছেন এমন নয়। সেই জায়গা থেকে নিজেকে ভাগ্যবান মনে করি।

প্রশ্ন: আপনার জনপ্রিয়তা শুধুই অভিনয়ের কারণে, না কি আপনার সৌন্দর্যও বিরাট ভূমিকা পালন করছে? মানে, দর্শক আগে রাহুল দেব বোসের সৌন্দর্যের প্রশংসা করেন...

রাহুল: দর্শক আমাকে ভালবাসেন, এটাই আমার কাছে যথেষ্ট। এত গভীরে গিয়ে কোনও দিন ভাবিনি। ভাবলে অভিনয় করতে পারব না। আর দর্শক যদি আমায় ‘সুপুরুষ অভিনেতা’ হিসেবেই দেখে থাকে তাতেই বা সমস্যা কোথায়! এটা তো আমার মুকুটের বাড়তি পালক। কিন্তু শুধু দেখতে ভাল বলেই যে দর্শক আমাকে ভালবাসেন, এমন নয়। তবে আমাকে যদি জিজ্ঞেস করেন, আমি কী চাই, তা হলে বলব, ‘সুপুরুষ’ বলার আগে আমাকে ‘ভাল মানুষ’ বলুন।

প্রশ্ন: ‘সুপুরুষ’ নায়কের অনুরাগীর থেকে অনুরাগিনীর সংখ্যা নিশ্চয়ই বেশি?

রাহুল: (হেসে ফেলে) বিশ্বাস করুন, কোনও দিন গুনে দেখিনি।

প্রশ্ন: প্রায়শই বিয়ের প্রস্তাব পান নিশ্চয়?

রাহুল: কী করে জানলেন! (হাহাহাহা) প্রচুর এসেছে। মা-বাবার কাছে এখনও আমার বিয়ে নিয়ে অনেকেই কথা বলেন। এক এক সময় মা-বাবা হাসতে হাসতে জানান। আমার মত আছে কি না জানতে চান। তা হলে কথা এগোবেন।

প্রশ্ন: প্রেমিকা দেবাদৃতা বসু এ রকম প্রশংসা করেন?

রাহুল: সারা ক্ষণ প্রশংসা করে। আমার দিকে কিছু ক্ষণ তাকিয়ে থাকে। তার পর বলে, তুমি খুব সুন্দর। কখনও বলে মিষ্টি। আমিও ওর প্রশংসা করি।

প্রশ্ন: অতীত ছায়া ফেলে না আপনাদের প্রেমে?

রাহুল: অতীত মানেই তো যা ঘটে গিয়েছে। বর্তমানে তার ছায়া কেন পড়বে?

প্রশ্ন: একটা সময় টলিপাড়া বলত, বিনোদন দুনিয়ায় জায়গা করতেই নাকি প্রাক্তন প্রেমিকার সঙ্গে সম্পর্কে জড়িয়েছিলেন। তার পরেই প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায় অভিনীত ‘আয় খুকু আয়’ ছবিতে আপনি...

রাহুল: (হেসে ফেলে) ছবির প্রযোজক জিৎদা। তিনিই প্রস্তাব দিয়েছিলেন আমাকে। আর, প্রাক্তন প্রেমিকার সঙ্গে সম্পর্কের আগেই আমাকে বাছা হয়েছিল। নিজের যোগ্যতায় চরিত্রটি পেয়েছি। যারা বলেছে তারা যদিও মানতে চায় না। আমিও তথ্য-প্রমাণ সহযোগে বিষয়টি প্রমাণ করতে বসে নেই। (একটু থেমে) আর বুম্বাদা (প্রসেনজি়ৎ চট্টোপাধ্যায়) যদিও কোথাও, কখনও আমায় নির্বাচন করেও থাকেন সেটা সম্পূর্ণ আমার যোগ্যতায়। অন্য কোনও কারণে নয়। ওঁর পেশাদারিত্ব দেখে শেখার মতো। সেখানে কোনও ব্যক্তিগত সম্পর্ক জায়গা পায় না। পর্দায় যতই খলনায়কের চরিত্রে অভিনয় করি, কারও সঙ্গে কখনও খারাপ উদ্দেশ্য নিয়ে মিশিনি।

প্রশ্ন: প্রাক্তন প্রেমিকার বিয়ে হয়েছে, মা-ও হয়েছেন তিনি, শুভেচ্ছা জানিয়েছেন?

রাহুল: বিয়ে-সংসার-সন্তান— আমার কাছে ভীষণ পবিত্র জিনিস। এর থেকে শুভ বা ভাল বিষয় মানুষের জীবনে হয় না। তাই এই তিনটি জিনিস কারও জীবনে ঘটলে আমি খুব খুশি হই। কোনও খারাপ অনুভূতি নেই। আমি কখনও কারও খারাপ চাইনি। আমি শুভেচ্ছা ও সমর্থন জানিয়েছি।

প্রশ্ন: ‘কার কাছে কই মনের কথা’ শেষ। প্রায় একই সময়ে ‘আলোর কোলে’ও শেষ। টেলিপাড়ায় খবর, প্রযোজনা সংস্থা নাকি নতুন কিছু আনতে চলেছে। যোগাযোগ করেছেন?

রাহুল: বললে বিশ্বাস করবেন? ঈশ্বরের কৃপায় কাজ চেয়ে আজ পর্যন্ত কারও সঙ্গে যোগাযোগ করিনি। এমনি কথা হয় সকলের সঙ্গে। সংস্থার যদি মনে হয় আমাকে ওদের দরকার, ওরা যোগাযোগ করবে।

প্রশ্ন: বিনোদন দুনিয়ায় না এলে কী করতেন?

রাহুল: সাংবাদিকতা (জোরে হাসি)। এই বিষয়েই পড়াশোনা আমার। যদিও খুব ফাঁকি দিয়েছি। আরও বেশি মনোযোগ দিয়ে পড়াশোনা করলে হয়তো পরীক্ষায় আরও ভাল ফল করতাম। তবু খুব খারাপ ফল করিনি কোনও দিন।

প্রশ্ন: ছবি পরিচালনার পরিকল্পনা রয়েছে?

রাহুল: ইচ্ছে আছে। দেখা যাক। জানেন, আমি খুব ভাগ্যে বিশ্বাস করি। অভিনয়ে আসাটাও হঠাৎ করে। ভাগ্যে থাকলে ছবি পরিচালনাও করব।

প্রশ্ন: এখন তো পাত্রী ঠিক হয়ে গিয়েছে। এ বার বিয়ে করবেন?

রাহুল: (অল্প হেসে) এ সব নিয়ে ভাবছিই না। আমার এবং দেবাদৃতার কাছে আগে পেশাজীবন। সে সব গোছানোর পর বিয়ে নিয়ে ভাবব।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy