চুপিসারে শরীরের ক্ষতি করে রক্তচাপ। আলাদা করে রোগ হিসাবে চিহ্নিত করেন না অনেকেই। কিন্তু এড়িয়ে গেলে বয়সের আগেই জটিল অসুখ দানা বাঁধবে শরীরে। কেউ কেউ ওষুধ খেয়ে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখেন, কেউ বা জানেনই না যে তাঁর উচ্চ রক্তচাপের সমস্যা রয়েছে। কিন্তু সকলের জন্যই সুরাহা করে দিলেন কলম্বাসের ওহায়ো স্টেট ইউনিভার্সিটির মেডিক্যাল সেন্টারের খাদ্যতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক কোলিন স্পিজ়।
এমনিতেই চিকিৎসকেরা উচ্চ রক্তচাপের রোগীদের রোজ একটি করে কলা খাওয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন। এ বার কোলিনের বক্তব্য, প্রেশার নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য কলার থেকে সেরা কিছু নেই। আমেরিকান জার্নাল অফ ফিজ়িওলজি-রেনাল ফিজ়িওলজির নতুন এক গবেষণায় দেখা গিয়েছে, উচ্চ পরিমাণে পটাশিয়াম গ্রহণের ফলে রক্তচাপের সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব। আর পটাশিয়ামের সেরা উৎস হল কলা।

ব্লাড প্রেশার কমানোর জন্য কলার অবদান অপরিসীম। ছবি: সংগৃহীত।
স্পিজ়ের কথায়, ‘‘প্রথমত, কলা এমন একটি ফল, যা সস্তা, সহজলভ্য, গোটা পৃথিবীর কাছে জনপ্রিয় এটি। দ্বিতীয়ত, পুষ্টিগুণ এবং ফাইবারে ভরপুর কলা। তাই সব দিক থেকেই কলা নির্ভর ডায়েট খুব কার্যকরী। আমাদের হার্টের সুস্থতার জন্য পটাশিয়াম অপরিহার্য। আর ব্লাড প্রেশার নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্যও খুব গুরুত্বপূর্ণ খনিজ এটি।’’
‘জার্নাল অফ হিউম্যান হাইপারটেনশন’ শিরোনামে প্রকাশিত গবেষণাপত্রে দেখানো হয়েছে, রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য নুন খাওয়ার পরিমাণ কমানোর থেকে পটাশিয়াম সমৃদ্ধ খাবার বেশি খেলে কাজ দেবে। গবেষণায় পাঁচ জনের মধ্যে চার জনের ক্ষেত্রে এই সূত্র কার্যকরী হচ্ছে।
কী কী কারণে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণের জন্য কলা খাওয়া উচিত?
১. পটাশিয়ামে ভরপুর থাকে কলা। একটি সাধারণ মাপের কলায় ৪০০-৪৫০ মিলিগ্রাম পটাশিয়াম পাওয়া যায়। আপনার শরীরে সোডিয়াম (নুন) যে কুপ্রভাব ফেলে, তার মাত্রা কমিয়ে দিতে পারে পটাশিয়াম। ফাস্ট ফুডের জমানায় এখন মানুষের প্রয়োজনের অতিরিক্ত নুন প্রবেশ করে। এর ফলেই রক্তচাপ বৃদ্ধি পায়। অন্য দিকে, পটাশিয়াম প্রস্রাবের মাধ্যমে অতিরিক্ত সোডিয়াম বার করে দিতে সক্ষম। সুতরাং উচ্চ পটাশিয়াম সোডিয়ামের মাত্রা কমাতে সক্ষম, আর সোডিয়ামের মাত্রা কমলে ব্লাড প্রেশারের মাত্রা কমে যায়।
২. কলা মানেই কেবল পটাশিয়াম নয়। দ্রবণীয় ফাইবারের উৎস এই ফল, রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করার ক্ষেত্রে যেটির অবদান রয়েছে। দ্রবণীয় ফাইবার শরীরে খারাপ কোলেস্টেরলের পরিমাণ কমাতে সাহায্য করে। কলায় থাকা এই ফাইবারগুলি হজমের প্রক্রিয়ার গতি ধীর করে দেয়। ফলে রক্তে শর্করা এবং ইনসুলিনের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে থাকে। শর্করা নিয়ন্ত্রণে থাকলে রক্তচাপও সাধারণত নিয়ন্ত্রণেই থাকে।
৩. কলায় প্রচুর পরিমাণে ম্যাগনেশিয়াম থাকে। এই খনিজটি মানসিক চাপ কমাতে পারে, ফলে ঘুমও ভাল হয়। মানসিক চাপ এবং ঘুমের হেরফেরে রক্তচাপের মাত্রা ওঠানামা করে। তাই ম্যাগনেশিয়ামের মাধ্যমে শরীরে এ ভাবেই ব্লাড সুগারের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করা যায়।