Advertisement
২০ ডিসেম্বর ২০২৪
koel mallick

আমিই একতরফা ঝগড়া করি, রানে চুপ করে থাকে: কোয়েল

সুন্দর গোছানো সংসার। নাহ! এ শুধু অভিনেত্রী কোয়েল মল্লিকের বাড়ি নয়। এ রানে আর কোয়লের ভালবাসার পরিসর।

পুরনো বন্ধুদের বাড়ি গিয়ে আচার খেতে খেতে গল্প করতে আজও তিনি বিশেষ আগ্রহী

পুরনো বন্ধুদের বাড়ি গিয়ে আচার খেতে খেতে গল্প করতে আজও তিনি বিশেষ আগ্রহী

স্রবন্তী বন্দ্যোপাধ্যায়
শেষ আপডেট: ০৬ নভেম্বর ২০১৯ ১৬:৪১
Share: Save:

হোয়াটস্অ্যাপে তাঁর ডিপিতে ছবি নেই। ফটোশুট করে রোজ নিজের ছবি পোস্ট করার চেয়ে পুরনো বন্ধুদের বাড়ি গিয়ে আচার খেতে খেতে গল্প করতে আজও তিনি বিশেষ আগ্রহী। বালিগঞ্জে ষোলো তলার ফ্ল্যাটে বেল বাজাতেই দরজা খুলে দিলেন নিসপাল সিংহ রানে। বাংলা ইন্ডাস্ট্রির অনেকখানি আজ তাঁর দিকে চেয়ে।

ঠিক তাঁর পাশেই ঝরনা হাসিমুখ। কোয়েল মল্লিক। শরীর জড়ানো লাল ছাপা লং ড্রেসে।

সুন্দর গোছানো সংসার। নাহ! এ শুধু অভিনেত্রী কোয়েল মল্লিকের বাড়ি নয়। এ রানে আর কোয়লের ভালবাসার পরিসর।

‘‘আসলে আমার আর রানের বন্ধুত্ব পারস্পরিক মুগ্ধতা আর শ্রদ্ধার ওপর যে ভাবে গড়ে উঠেছিল তাতে মনে হয় আমরা দু’জন মেয়ে হলেও আমাদের বন্ধুত্ব দীর্ঘকালীন হত।’’ কাজলচোখে বলে উঠলেন কোয়েল। ‘মিতিনমাসি’-র পঞ্চম সপ্তাহ চলছে। তাঁর কেরিয়ারে গুরুত্বপূর্ণ ছবি বলে মনে করেন তিনি। এর মধ্যেই ঠিক হয়ে গিয়েছে, পরের পুজোয় অরিন্দম শীলের পরিচালনায় আবার দেখা যাবে মিতিন মাসিকে।

‘‘মিতিন মাসি আরও পরিণত হবে। সব মেয়ের মধ্যেই মিতিন মাসি আছে। এই যে পরিস্থিতি, আমার বিয়ে হয়ে গেল, তার পর আমি কিছু করলাম না— এই ভাবনা থেকে সব মেয়েকে বেরিয়ে আসতে হবে। আর সিনেমার মাধ্যমে কোনও কিছুকে তুলে ধরা সবচেয়ে সহজ...,’’ বলে চলেছেন কোয়েল। মাঝে মাঝে একটু জল খেয়ে নিচ্ছেন।

পরের পুজোয় অরিন্দম শীলের পরিচালনায় আবার দেখা যাবে মিতিন মাসিকে

এই কোয়েলেরই ‘মিতিন মাসি’ মুক্তির আগে মনে হয়েছিল দর্শক তাঁকে গ্রহণ করবে তো? সতেরো বছর ইন্ডাস্ট্রিতে থাকা কোয়েল মল্লিকের কাছে প্রতিটা ছবি ওয়ানডে ম্যাচের মতো। আগের সব সাফল্য ভুলে নতুন করে স্কোরবোর্ড তৈরি করা।

সেই স্কোরবোর্ডে আসছে সায়ন্তন ঘোষালের পরিচালায় ‘সাগরদ্বীপে যখের ধন’। ‘‘৬ তারিখে মুক্তি। ট্রেজার হান্টের ওপর ছবি বাংলায় সচরাচর তো হয় না। খুব এনজয় করেছি এই চরিত্রে কাজ করে। এমনিতে আমি কিন্তু খুব একটা অ্যাডভেঞ্চার প্রিয় মানুষ নই। তবে একটা আইল্যান্ডে গিয়ে আটকে পড়েছিলাম আমরা! শুট করতে গিয়ে শুটের বাইরেই অ্যাডভেঞ্চার!’’ হাসতে হাসতে বললেন ‘ইন্ডিয়ানা জোনস্’ প্রিয় কোয়েল।

সতেরো বছর ইন্ডাস্ট্রিতে থাকা কোয়েল মল্লিকের কাছে প্রতিটা ছবি ওয়ানডে ম্যাচের মতো

নতুন পরিচালক, ভাল চরিত্র, কাজের মানুষের খোঁজ রাখেন তিনি। হাজার হোক সুরিন্দর ফিল্মস্-এর সম্রাজ্ঞী। বিস্ময়ের চোখ কোয়েলের, ‘‘রানের মতো অভিজ্ঞ মানুষ থাকতে আমার দরকার পড়ে না। তবে স্ক্রিপ্ট শোনা, গল্প পড়া, নতুন কিছুর সন্ধানে থাকি আমি।’’ সেখান থেকেই সৌকর্য ঘোষালের ‘রক্ত রহস্য’। ‘‘অদ্ভুত একটা চরিত্র। এমন এক জন বেচারা মেয়ে যে জীবনে নানা ঘাত-প্রতিঘাতের মধ্যে এক্সপ্লয়েটেড হয়। অথচ সেটা বুঝতে পারে না। ওই শুট চলাকালীন রাতে ঘুমোতে পারতাম না। দমবন্ধ করা এমন চরিত্র!’’ বললেন কোয়েল। পরমব্রতর পরিচালনায় কাজ করেছেন বনি ছবিতে। এক ইঞ্জিনিয়ার মেয়ের মা হয়ে ওঠার গল্প। শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়ের লেখা।

বাংলায় কমার্শিয়াল ছবির ধারা বদলে যাচ্ছে বলে তিনি বিশ্বাস করেন

আজ কি তিনি আবার ‘পাগলু’ করতে পারেন?

‘‘ও রকম একটা ব্লকবাস্টার ছবি চাইলে আবার করা যায়। তবে আমি রিপিট করতে চাই না। আর এখন কমার্শিয়াল ছবির মানেটাই বদলে গিয়েছে। মৈনাকের ‘ঘরে অ্যান্ড বাইরে’ আমার কাছে কমার্শিয়াল ছবি। এই ছবি কমার্শিয়াল হলেও কোনও আনরিয়েলিটি নেই!’’ সাফ জবাব কোয়েলের। তবে তিনি মনে করিয়ে দিলেন ‘সিম্বা’ বা ‘ওয়ার’ সুপারহিট। মনে করেন, জাতীয় স্তরে দর্শক আলাদা। কিন্তু বাংলায় কমার্শিয়াল ছবির ধারা বদলে যাচ্ছে বলে তিনি বিশ্বাস করেন। কথা শুনতে শুনতে মনে হয়, কেবলমাত্র অভিনেত্রী নন, কথা বলছেন নামকরা প্রযোজনা সংস্থার কর্ণধারের সহধর্মিণী।

ঝগড়া করেন আপনারা?

প্রচন্ড হেসে বললেন, ‘‘আমিই একতরফা করে যাই। বড় জোর আধ ঘণ্টা। কারণ, আর এক দিক একেবারে চুপ! বিয়ের পর অনেকে বলত কাজ করব কী করে? যেন বিয়ে হলে আর অভিনেত্রী থাকা যায় না! আমার ২০১৩-তে বিয়ে হয়েছিল আর সে বছরই ‘রংবাজ’ সুপারহিট। কাজ দিয়ে সব বুঝিয়ে দিতে হয়। কথা নয়, দিনের শেষে আমার কাজ কথা বলবে।’’ সমঝোতা আর ভালবাসার নিরিখে জীবনের অর্থ বুঝিয়ে দিলেন কোয়েল।

তিনি জানেন, তাঁর প্লেটে যা খাবার আসছে তিনি সেটাই খাবেন মন দিয়ে। পাশের প্লেটে কে কতটা বেশি পেল সেটা ভাবতে গিয়ে কাজ আর সময়ের ক্ষতি ছাড়া আর কিছুই হবে না।

প্রথমে ডিস্ট্রিবিউশন, তার পর প্রযোজনা, ২০০০ সাল থেকে ধারাবাহিক, ওয়েব সিরিজ, ছবি— ক্রমশ বৃহৎ থেকে বৃহত্তর হয়ে উঠছে এই প্রযোজনা সংস্থা। ‘ভূতপরি’ ছবিটা ভীষণ ভাল। আমি প্রেজেন্ট করছি। প্রথম ‘টেকো’ হল আমাদের প্রোডাকশনে, তার পরে ‘উজরা চামান’ হয়েছে কিন্তু। এখানে অভিমন্যু ভাল কাজ করেছে। আর কৌশিকদার ছবি আসছে চূর্ণী আর জয়াকে নিয়ে। আমার বাবা আর ঋত্বিককে নিয়ে হরনাথ চক্রবর্তীর পরিচালনায় ছবি করছেন। নামটা এখনও ফাইনাল হয়নি,’’ ঘরের প্রডাকশনের কাজ তাঁর নখদর্পণে।

ইচ্ছে আছে ওয়েব সিরিজ করার। সিনেমার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে কাজ হচ্ছে ওয়েব সিরিজে।

‘‘জোয়া আখতার থেকে অনুরাগ কাশ্যপ, সবাই ওয়েব সিরিজে,’’ বললেন কোয়েল। তবে ধারাবাহিকের মর্যাদা কোথাও কমবে বলে তিনি মনে করেন না।

ক্যামেরার সামনেই শুধু তিনি কোয়েল মল্লিক। তার বাইরে তাঁর আস্ত জীবনে তিনি কোথাও কারও মেয়ে-সহধর্মিণী-ছেলের বউ-বন্ধু।

‘‘অভিনয়টা একটা কাজের মতো। আমার কাছে অফিস যাওয়ার মতো। এর বাইরের জীবনটাকে তারিয়ে তারিয়ে উপভোগ করতে চাই আমি,’’ দুষ্টু হেসে বললেন কোয়েল। তাই সুযোগ পেলেই বেরিয়ে যান রানের সঙ্গে। নাহ, ফেসবুক বা ইনস্টাতেও তাঁদের পাওয়া যায় না।

তাঁর গ্ল্যামারের আলোয় মুগ্ধ তাঁর ফ্যানেরা। কিন্তু তিনি আঁকড়ে আছেন তাঁর পরিবার আর ছোটবেলার হারিয়ে যাওয়া ‘তানু’-কে।

‘‘আমার এক বছর বয়সে তানুকে হারাই। তানু আমার জীবনে গল্প বুনে দিয়েছিল। যে গল্পে জীবন ধরা...! তানু বলেছিল জীবন পাহাড় ছোঁয়া ‘ইকো’র মতো। পাহাড়কে জোরে ‘ভালবাসি’ বললে পাহাড় আরও বড় করে ‘ভালবাসি’ ফিরিয়ে দেয়। মানে, আমি যা দেব তাই দ্বিগুণ হয়ে আমার কাছে ফিরবে... তানু আমার দিদিমা। তার ওই পাহাড় আমার কাছে জীবন...’’, ষোলো তলার কার্তিকের রোদ তাঁর গায়ে লেগে আছে।

কোয়েল পাখির মিষ্টি সুরে এই বিশ্বাসে আলো ছড়াচ্ছেন তিনি।

আরও পড়ুন : ভৌতিক পৃথিবীর স্বপ্ন

আরও পড়ুন: এ বার ফেলুদাকে নিয়ে ওয়েব সিরিজে আসছেন সৃজিত

অন্য বিষয়গুলি:

Interview Koel Mallick
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy