কাজল উবাচ: ‘‘যত পারো হ্যাশট্যাগ দিয়ে পোস্ট করো’’
ইলা তো চক্কর কেটেই যাচ্ছিল। লখনউ, দিল্লি, মুম্বই... লাস্ট ডেস্টিনেশন ছিল কলকাতা। পুজোর ঠিক পাঁচ দিন আগে শহরে কাজল। সঙ্গে তাঁর আগামী ছবি ‘হেলিকপ্টার ইলা’র টিম— পরিচালক প্রদীপ সরকার, টোটা রায়চৌধুরী এবং ঋদ্ধি সেন।
কাজল মানেই গ্ল্যামার আর সারল্যের সহাবস্থান। উজ্জ্বল হলুদ শাড়িতে নায়িকার দ্যুতি ঠিকরে পড়ছিল। ঝুমকো, ব্যাঙ্গল আর ছোট্ট লাল টিপেই তিনি স্নিগ্ধ।
‘হেলিকপ্টার ইলা’র টিমের অভ্যর্থনায় আয়োজন করা হয়েছিল কাস্টমাইজ়ড কেক। সেটা দেখে বাচ্চাদের মতো উচ্ছ্বসিত হয়ে উঠলেন কাজল। এক বার টোটা, ঋদ্ধি, প্রদীপকে নিয়ে কেকের সঙ্গে ছবি তুলছেন, এক বার নিজে ছবি তুলে ইনস্টাগ্রামে পোস্ট করছেন! ‘‘আচ্ছা, আমি এটা কেটে খাচ্ছি কিন্তু,’’ বলতে বলতে কেকে ছুরি চালিয়ে দিলেন।
কাজল মানেই অনর্গল কথা! শহরের স্মৃতি জিজ্ঞেস করতে গল্পের ঝাঁপি খুলে বসলেন, ‘‘আপনারা এত খাবার সাজিয়ে দেন যে, এখানে এলেই নিজের বাড়ি মনে হয়! ছোটবেলায় এক-দু’বার এসেছি। বেশি কিছু মনে নেই। শুধু মনে আছে, খুব লো়ডশেডিং হতো। সেটা অ্যামেজ়িং লাগত! অন্ধকারে বসে থাকতাম। আর একটা জিনিস দারুণ মজার ছিল। আমার আত্মীয়ের বাড়ির বাথরুমে পাখা লাগানো ছিল। কারও বাথরুমে পাখা লাগানো থাকতে পারে ভেবেই অবাক হয়ে গিয়েছিলাম!’’ কাজলের কথায় বাকিরা হেসে কুটিপাটি। ‘‘তার পর উনিশ বছর বয়সে বাবাকে নিয়ে এক বার এসেছিলাম। তারাপীঠ, কালীঘাট সব দর্শন করিয়েছিলাম। আর সারা দিন ধরে মিষ্টি দই খেয়েছিলাম। ব্রেকফাস্ট, লাঞ্চ, ডিনার সবেতেই এক!’’
‘হেলিকপ্টার ইলা’ পুজোয় মুক্তি পাচ্ছে। তা ছাড়া আর কী পরিকল্পনা? ‘‘আমাদের বাড়ির পুজো আছে। বিরাট করে হয়। হাজার পাঁচেক লোক আসে প্রায়। তবে ছোটবেলার পুজোর স্মৃতিগুলো খুব প্রিয়। মেঝেতে বসে খাওয়া হতো। সার দিয়ে আসন পাতা থাকত। ওই কাজটা ছোটদের ছিল। আমরাই কলাপাতা দিতাম। তার বেশি কিছু পারতামও না। সারা দিন খালি পায়ে প্যান্ডেলে ঘুরে বেড়াতাম। হ্যাঁ, আর ভাজা পরিবেশন করতাম। লোকের পাতে দিতাম, আর নিজে খেতাম। এটা এখনও করি!’’ কথা বলতে বলতে ফিশ ফ্রাইয়ের টুকরো ভেঙে মুখে পুরলেন। সঙ্গে সঙ্গে বদলে গেল অভিব্যক্তি, ‘‘এটা এত ভাল খেতে যে, আমি সব খেয়ে নেব! তার পর আমাকে হেঁটে হেঁটে মুম্বই ফিরতে হবে। ঋদ্ধি, তুইও ফিরবি আমার সঙ্গে।’’
ছবির নামে ‘হেলিকপ্টার’ যোগ করার রহস্যটা ব্যাখ্যা করলেন প্রদীপ সরকার। ‘‘নতুন প্রজন্মের সঙ্গে কাজ করতে গিয়ে কত নতুন ভাষা শিখছি। যে মায়েরা সারাক্ষণ ছেলেমেয়েদের উপরে নজরদারি করেন, তাঁরা হেলিকপ্টার মম। এখন শুনলাম, বাবাদের নাকি ‘পেঙ্গুইন ফাদার’ বলা হয়। কারণ বাবারা খুব প্রোটেক্টিভ হন।’’ কাজলও কি ছেলেমেয়ের উপরে নজরদারি করেন? ‘‘করলেও পাত্তা দেবে না। ওটার জন্য ওদের বাবা আছে। সারাক্ষণ চোখে চোখে রাখতে চায়!’’
অভিনেত্রী সুলভ গাম্ভীর্য কাজলের একেবারে নেই। বরং খুব আটপৌরে তিনি। প্রশ্ন ছিল, ছেলেমেয়েদের তাঁর কোন ছবিটা ভাল লাগে। দুঃখী দুঃখী মুখ করে উত্তর দিলেন, ‘‘একটাও নয়। ওদের মতে, আমি খুব খারাপ ছবি করি। সব ছবিতে কান্নাকাটি করি। অজয়ের ছবি ওদের ভাল লাগে। বলে,‘বাবা ‘গোলমাল’-এর মতো ছবি করে। তুমি করতে পারো না?’ আমিও কিন্তু মায়ের ছবি দেখতাম না। আমার একটা অন্য পয়েন্টও ছিল। ছবিতে মাকে অন্য কেউ ‘মা’ বলে ডাকলে সেটা পছন্দ করতাম না। রাগারাগি করতাম। তখন মা বলেছিল, ‘দেখবি এক দিন আমার মতোই অবস্থা হবে তোর’। এখন সেটা বেশ বুঝতে পারছি।’’
প্রদীপ সরকারের সঙ্গে এটা কাজলের প্রথম ছবি হলেও এর আগে বিজ্ঞাপন করেছেন তাঁরা। পরিচালকের সেন্স অব হিউমারের প্রশংসা করছিলেন অভিনেত্রী। তাঁর নিজের রসবোধও কম নয়। কাজলের কথা শোনার পাশাপাশি দেখার মতোও। এতটাই স্বতঃস্ফূর্ত তিনি। ঋদ্ধি কাজলকে ‘ম্যাম’ বলে সম্বোধন করলেও অভিনেত্রীর সঙ্গে তাঁর সম্পর্কটা ঠাট্টা-ইয়ার্কির। ছবিতে ঋদ্ধিকে চ়ড় মারার দৃশ্য রয়েছে কাজলের। সেই ঘটনা ফাঁস করলেন কাজল। ‘‘ওকে বললাম, স্বাভাবিক অ্যাক্টিং কর। সিরিয়াস হওয়ার দরকার নেই। এর জন্য কেউ ন্যাশনাল অ্যাওয়ার্ড দেবে না তোকে। সেটা শুনলে তো! বলছে, স্ল্যাপ মি। আই ওয়ন্ট টু ফিল ইট। মজার ব্যাপার, ঋদ্ধিকে চড় মারার দৃশ্যে গোটা ইউনিট খুব খুশি হয়ে যেত। (ফিচেল হেসে) ও কিছু করেছিল বোধহয় ওদের সঙ্গে! ও ন্যাশনাল অ্যাওয়ার্ড পাওয়ার পরে আমরা জোকটা বদলে দিয়েছিলাম!’’
পুজো আসছে, সেটা কাজলকে দেখে বোঝা যাচ্ছে। সাক্ষা়ৎকার মিটতেই মন দিলেন ফিশ ফ্রাইয়ে। কাসুন্দি মাখিয়ে মুখে দিতে দিতে বললেন, ‘‘ভাবছি এক বোতল কাসুন্দি নিয়ে যাব। প্রচারের কাজ শেষ। এ বার মন দিয়ে খাব। মুম্বই ফিরেও এটাই আমার রুটিন!’’
ছবি: সুমন বল্লভ
ফুড পার্টনার: সিক্স বালিগঞ্জ প্লেস
কেক: লিটল প্লেজ়ার্স প্যাটিসেরি
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy