প্র: ‘তলওয়ার’-এর সাফল্যের পর ‘রাজি’ নিয়ে আপনি কতটা আত্মবিশ্বাসী?
উ: সত্যি বললে বলব, আমার ভয় করছে। এক জন পরিচালক হিসেবে বলতে পারি, আমি যা বানাতে চেয়েছিলাম আর যা বানিয়েছি, তাতে আমি খুশি। এখন দর্শকের চিন্তাধারার সঙ্গে আমার চিন্তাধারা মিলবে কি না, সেটা বলা খুব মুশকিল। ‘রাজ়ি’র গল্পে এমন কিছু চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য আছে, যা এখন খুব একটা দেখা যায় না। তাই এর গল্পটা বলা খুব জরুরি ছিল। ‘রাজ়ি’ কিন্তু কোনও গুপ্তচরের গল্প নয়। সেহমত (আলিয়া ভট্ট) এক জন মেয়ে, স্ত্রী এবং দেশের প্রতিনিধি। যাঁরা ভাবছেন এই ছবি কোনও গুপ্তচরের গল্প, তাঁদের এটা বলে দেওয়া জরুরি।
প্র: পরিচালক হিসেবে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ কী ছিল?
উ: ১৯৭১-এর পাকিস্তানকে গড়ে তোলা। গুগল আমাকে অনেক সাহায্য করেছে। কারণ নির্দেশক হিসেবে আমার প্রধান উদ্দেশ্য ছিল দর্শককে ফিল্মের সঙ্গে জড়িয়ে রাখা। তাঁরা যেন ছবিটা দেখতে দেখতে বিভ্রান্ত না হয়ে যান। পাকিস্তানের কিছু পুরনো নাটক আমি অনলাইনে দেখেছি। যেখান থেকে ওখানকার ঘরের অন্দরসজ্জা সম্পর্কে জানতে পেরেছি। এ ছাড়া আমার কাছে ছিলেন সুব্রত চক্রবর্তী এবং অমিত রায়ের মতো সেট ডিজ়াইনার। ওঁদের আমি ম্যাজিশিয়ান বলি।
প্র: গুলজার সাবের মেয়ে হিসেবে মেঘনা গুলজারকে কতটা চাপ নিয়ে ছবি বানাতে হয়?
উ: গত ১৮ বছর ধরে আমি ইন্ডাস্ট্রিতে কাজ করছি। আর এই প্রশ্নের সম্মুখীন আমি শুরু থেকেই হয়ে আসছি। সংক্ষেপে জবাব দিই, আমার কোনও চাপ নেই। আমাদের দু’জনের সিনেম্যাটিক এক্সপ্রেশন ভীষণ আলাদা। আর সেটা আমার প্রথম ছবি ‘ফিলহাল’ থেকেই বাবা বুঝতে পেরেছিলেন। আমরা যখন একসঙ্গে লিখতে শুরু করি, কিছু দিন পরই আমাদের ঝগড়া শুরু হয়ে যায়। বাবাকে বলি, ‘‘আমি গল্প লিখে তোমায় দেখাব।’’ বাবা নিজে আমাকে বলেছিলেন, ‘‘এই ‘ফিলহাল’-এর গল্প বা নির্দেশনা কোনওটাই আমি করব না।’’ তাই তুলনাটা সেখানেই শেষ হয়ে যাওয়া উচিত ছিল। আর আমি যদি এক জন পরিচালক না হয়ে অভিনেত্রী হতাম, তা হলে আমার তুলনা মাম্মির (রাখি গুলজার) সঙ্গে করা হতো। আসলে আমি যখন ছবিতে কাজ করি, তখন বাবার কথা মাথায় রাখিই না। কারণ আমার যুদ্ধ তো বাবার সঙ্গে নয়। বাবা যদিও আমায় বলেন, আমি নাকি ওঁর চেয়ে ভাল নির্দেশক। এ-ও বলেন, বাবা প্রাথমিক ভাবে এক জন লেখক আর আমি এক জন ভিস্যুয়াল ন্যারেটর। আমাদের দু’জনের সময়টাও তো কত আলাদা!
প্র: আপনি কতটা বাবার মতো? আর মায়ের মতোই বা কতটা?
উ: দেখতে তো আমি মায়ের মতো। বাবার কাছে থেকে পেয়েছি লেখার হাত। আমি আমার মা-বাবার সফল মিশেল। বাবার সেন্সিবিলিটি আমি পেয়েছি, আর মায়ের কাছ থেকে পেয়েছি মেজাজটা। মায়ের মতো আমিও একটু বদরাগী। তাই কারও কাছ থেকে অযাচিত কিছু শুনি না। বাচ্চাকে যখন মা-বাবা বড় করেন, তখন তাঁদের দু’জনের সুরই বাচ্চার মধ্যে শুনতে পাওয়া যায়।
প্র: আপনার মধ্যে বাঙালিয়ানা রয়েছে কতটা?
উ: বাংলা খুব ভাল বলতে পারি। লিখতে বা পড়তে পারি না, সেটা খারাপই লাগে। বলতে শিখেছি, কারণ আমার দাদু-দিদা হিন্দি বলতে পারতেন না। তাই তাঁদের সঙ্গে আমার কথোপকথন সব সময়ে বাংলায় হতো। আর এখন আমি আর মা আমার ছেলে সময়ের কাছ থেকে যদি কিছু লুকোতে চাই, তখন বাংলায় কথা বলি। যাতে সময় সেটা বুঝতে না পারে (হাসি)। আর হ্যাঁ, আমি কিন্তু মাছ খাই না!
প্র: কোনও দিন বাংলা ছবি পরিচালনা করবেন না?
উ: খুব মুশকিল। যেহেতু বাংলা লিখতে বা পড়তে পারি না, সেটা এক জন পরিচালকের পক্ষে বেশ বড় একটা বাধা।
প্র: ছেলে সময় আর আপনার মা অনেক বছর একসঙ্গে কাটিয়েছেন। দু’জনের মধ্যে সম্পর্ক কী রকম?
উ: এখনও কাটান। আমি যখন ‘তলওয়ার’ পরিচালনা করতে শুরু করি, তখন থেকেই সময় আমার মায়ের কাছে থাকে। আমি যখন ছোট ছিলাম, মাকে ভীষণ মিস করতাম। ছেলের সঙ্গেও সেটা হোক, একদম চাইনি। মা আর সময়ের মধ্যে বন্ডিং দেখার মতো। আমার সঙ্গে কথা না হলেও সময়ের সঙ্গে মা রোজ কথা বলেন। মা আমাকে বলেছেন, সময়ের মধ্য দিয়ে আমার শৈশব খুঁজে পেয়েছেন।
প্র: ‘তলওয়ার’ মুক্তি পাওয়ার পর গুলজার সাব আপনাকে বলেছিলেন, ‘তুমি আমাকে গর্বিত করেছ।’ ‘রাজ়ি’ দেখে কী বললেন?
উ: বাবা ভীষণ খুশি হয়েছিলেন ‘তলওয়ার’ দেেখ। ‘রাজ়ি’ দেখার পর বাবা আমাকে জড়িয়ে ধরেছিলেন। কী বলেছিলেন সেটা এখন বলব না। ছবি মুক্তি পেলে জানাব। কথা ছিল, মা-বাবা-আমি সকলে মিলে ছবি দেখার পর বাইরে ডিনার করতে যাব। ছবি শেষে মা আমাকে বললেন, ‘তোমরা খেতে যাও। আমাকে বাড়ি যেতে দাও। আমি একা থাকতে চাই।’ মা আমার সবচেয়ে বড় সমালোচক। যা মনে করেন, মুখের উপর বলে দেন। মা আমার উপর ভীষণ দুর্বলও। আমি যখন অনেক দিনের জন্য বাড়ির বাইরে যাই, মায়ের চোখে জল চলে আসে। মা জানেন, এক জন নির্দেশক হিসেবে আমার ডেডিকেশন কতটা। মাকে তখন বোঝাই, আমি যুদ্ধে যাচ্ছি না!
প্র: মায়ের সঙ্গে কাজ করবেন না?
উ: মা অনেক কাজ করেছেন। এমন সব চরিত্র করেছেন, যা যে কোনও অভিনেত্রীর কাছে স্বপ্ন। এখন আমি চাই, মা বিশ্রাম নিন। মায়ের সঙ্গে কাজ করলে সেটা পরিকল্পনামাফিক হবে না। হওয়ার হলে এমনিই হবে।
প্র: মাতৃত্ব আর পেশার মধ্যে ভারসাম্য রাখেন কী করে?
উ: এই ক্ষেত্রে আমার স্বামীর কৃতিত্ব অনেক বেশি। ও আমাকে সেই সাহস আর মনোবল জুগিয়েছে যাতে আমি বাইরে গিয়ে, দিনের পর দিন থেকে, ছবি পরিচালনা করে নিজের স্বপ্নপূরণ করি।
প্র: আপনি মা হিসেবে কী রকম?
উ: খুব কড়া। সময়ের এখন খুব দুঃখ। কারণ ছবির কাজ শেষ হয়ে যাওয়ার পর আমি ওর সঙ্গেই সবচেয়ে বেশি সময় কাটাব (হাসি)।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy